রোমান কবির: সবেমাত্র দেশভাগ হয়েছে। মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। কিন্তু যতো গেছে দিন, ততো বেড়েছে বৈষম্য। পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বিভাজনরেখা স্পষ্ট হতেই মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তানের উদারপন্থী ও অসাম্প্রদায়িক নেতারা একজোট হন। সম্মিলিতভাবে মুসলিম লীগের গোঁড়ামি আর কট্টরনীতির বিরোধিতা করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে দলের উদারপন্থী নেতারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সিদ্ধান্ত নেন। আর এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে একটি সভা ডাকা হয়। পাকিস্তানের স্বাধীনতার মাত্র দুই বছর পেরিয়েছে। সেদিন ছিলো ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। এদিন বিকেলে পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনে অবস্থিত কাজী হুমায়ুন রশীদের মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে প্রায় আড়াইশ’র উপরে নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় গঠন করা হয় 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'। যার সভাপতি হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। পুরো পাকিস্তানের অর্থাৎ 'নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'র সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সাধারণ সম্পাদক করা হয় শামসুল হককে। সে সময়ের তরুণ ছাত্রলীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারে আটক। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচিত হন দলের যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে। অসাম্প্রদায়িকতা ও অসাম্যের কথা বলে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ ১৯৫৪ সালে ‘যুক্তফ্রন্ট’র সঙ্গে নির্বাচন করে সরকারে অংশ নেয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করলে অনেকেই দল থেকে ছুটে যান। তবে দল, মত, ধর্মের বিভাজিত মানুষও যুক্ত হন আওয়ামী লীগের সঙ্গে। পরবর্তীতে অসাম্প্রদায়িক দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন তরুণ নেতা শেখ মুজিবর রহমান। ১৯৬৬ সালে যিনি পাকিস্তান সরকারের কাছে ৬ দফা দাবি তুলে ধরেছিলেন। যেই ৬ দফা স্বাধীনতার দলিল। বাঙালি জাতির মুক্তির একমাত্র সনদ হিসেবে বিবেচিত।রোজ গার্ডেনের সেই সভায় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় তৈরি হওয়া ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থেকে শেখ মুজিবের হাতে তৈরি ‘আওয়ামী লীগ’ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়। সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকার গঠন করে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে আওয়ামী লীগ পার করে ২১ বছর। এ সময়ে প্রতিষ্ঠাকালীন অনেকেই দল ছেড়ে দেন। কেউ রাজনীতিও ছেড়ে দেন। কিন্তু বাঙালির মুক্তির দূত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশের হাজারও তরুণ নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যান। মাসের পর মাস আন্দোলন, সংগ্রাম করেন, জেল খাটেন। তাঁর নেতৃত্বে তাঁর বলিষ্ঠ হুংকারে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয় সারা দেশে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছিষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এর সবই আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী, হানাদার বাহিনী ও এদেশের কতিপয় পাকিস্তানপ্রেমী ব্যাক্তিত্বদের ষড়যন্ত্র, কুপরামর্শ, মামলা-হামলা সবকিছুই ছিলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রথম অধ্যায়ে এর সফলতা অবাক করার মতো।আওয়ামী লীগের জন্মই হয়েছে স্বাধীনতার আকাঙ্খা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। সরকারে থেকেও তারা আন্দোলন সংগ্রামের ধারক বাহক ছিল। এখনও আছে। জনতা ও জনগণের দল বলতে যদি কিছু বুঝায় তা শুধু খাটে আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেই। দলটির সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকেই এর প্রমাণ মিলেছে। স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে বাঙালির স্বাধীনতার জন্য যারাই সচেষ্ট থেকেছেন তাদেরই ধারস্থ হতে হয়েছে আওয়ামী লীগের। তৎকালীন সময়ের বাংলার বাঘ শেরে বাংলা একে ফজলুল হক কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টি করেছিলেন। কিন্তু তিনিও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই দলটির সঙ্গে থেকেছেন।পাকিস্তান সামরিক সরকারের সেই কঠোর শাসনের সময়েও আন্দোলন, সংগ্রাম, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের পথ-ই বেছে নিয়েছে দলটি। সত্তরের নির্বাচনে জনগণের বিশাল ম্যান্ডেট নিয়ে জয়ী হয়েছে। আর তাতেই সম্ভব হয়েছে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘঠিত করার মতো কঠিন কাজ। যদিও নিজেদের নানা ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের কারণেই স্বাধীনতাউত্তর দেশে দলটির সাথে থাকা অনেক রথী ও মহারথী দল ত্যাগ করেছে। কিন্তু কিছু ত্যাগী নেতা ও কর্মী দলে থেকে দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। অনেক স্বার্থবাদী কিন্তু জড়োও হয়েছে এ দলে। তবে আদর্শ ও ত্যাগের মহিমায় কিছু কর্মী দলকে বাঁচিয়েছে সযত্নে।স্বাধীনতার পর পুরোদমে আওয়ামী লীগ নিজেদের গোছানোর, দেশকে গোছানোর দায়িত্ব পেয়েছিলো। কিন্তু তাদের-ই একটা অংশের নতুন দল গঠনসহ বিরোধিতা, এমনকি বিরোধীদের সীমাহীন বিরোধিতার পাশাপাশি গোপন শত্রুদের দলে বিচরণ আটকাতে পারেনি তাদের। পঁচাত্তরে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বিশ্ব রাজনীতির দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব মহান মানুষ, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতির পিতার পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়ার যে মাস্টরপ্লান সেটি কিঞ্চিত বাস্তবায়িত হয়েছে মনে হলেও মৃত্যুঞ্জয়ী আওয়ামী লীগ ও মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধুর পরিবার বাঙালিদের আশ্রয় হয়ে আবারও ফিরে এসেছে।যখন বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নাম পুরোপুরি মুছে ফেলার শেষ পেরেক মারার জন্য প্রস্তুত বিরোধী শক্তি। সে সময় আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও মৃত্যুঞ্জয়ী কর্মীদের দৃঢতায়, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় ৮১ সালে। তিনি হন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার সাথে থেকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিয়েছেন তার বোন শেখ রেহানা।শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার হাতে আওয়ামী লীগের পতাকা, আর তার ছায়াতলে হাজার হাজার নেতাকর্মী। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল দল, গণতান্ত্রিক দল, যুদ্ধ-বিগ্রহ, নির্বাচন, সামরিক শাসনের যাতাকল, হত্যা, নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রের ডামাডোলের মধ্যেও আওয়ামী লীগ ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে। নিয়মিত কাউন্সিলের মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে দল গুছিয়েছে।স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি গোছাতে বঙ্গবন্ধু সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। এরপর ঘটে ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড। বাঙালি জাতির পিতাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া, জাতির পিতার পরিবার ও দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ঘৃণ্য চক্রান্ত। বিশেষ করে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেওয়া আওয়ামী লীগকে শেষ করে পাকিস্তানি ধারায় দেশকে ফেরানোই যখন লক্ষ্য। ফিনিক্স পাখির মতো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দায়িত্ব গ্রহণ। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম আর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় এনে বাঙালিকে কলঙ্ক থেকে মুক্তি দেওয়ার সংগ্রাম। ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার।পুনর্জীবিত আওয়ামী লীগ, পুনর্জীবিত বাঙালি, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা, বৈষম্যহীন বাংলা। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলা। এর মাঝেও ২১ আগস্টে শেখ হাসিনাকেসহ পুরো আওয়ামী লীগকে শেষ করে দিতে সিরিজ বোমা হামলা করা হয়। মাইনাস ২ ফর্মুলার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে মাইনাস করে দ্বিধা-ত্রিধা বিভক্ত আওয়ামী লীগে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করা হয়।টানা চতুর্থ মেয়াদে ১৬ বছর বাঙালিরা ক্ষমতায় রেখেছে আওয়ামী লীগকে। ভাষানী-সোহরাওয়ার্দী থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতে। ষড়যন্ত্র এখনও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে। সুযোগ পেলেই মারবে ছোবল। তাই সদা সতর্ক থাকা জরুরি আওয়ামী লীগের। আত্মতুষ্টিতে না ভুগে আত্মসমালোচনা করা জরুরি আওয়ামী লীগের। শত্রু-মিত্র চেনা জরুরি আওয়ামী লীগের। রোজ গার্ডেন থেকে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে যাত্রা করেছিলো আওয়ামী লীগ। সেই যাত্রা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের অত্যাধুনিক ভবনে সদা ভাস্বর। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার এখন ক্ষমতায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তব। আওয়ামী লীগ সরকারের এখন লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে দেশ।লেখক: সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
১ বছর আগে
আসিফ আহনাফ: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের সংকল্পকে প্রাধান্য দেওয়ায় সাধুবাদ জানাই। স্মার্ট বাংলাদেশ এর জন্য প্রয়োজন স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট বাণিজ্য। দেশের সকল ট্রেডিশনাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ই-কমার্স এ ট্রান্সফর্ম করার জন্য প্রয়োজন আইটি ইনফাস্ট্রাকচার। সেজন্য আইটি ও সফটওয়্যার খাতকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেওয়ার জন্য ই-ক্যাব সহ আইসিটি সংগঠনগুলো দাবি জানিয়ে এসেছে। যা এবারের বাজেটে ৩ বছরের জন্যে প্রস্তাবিত হয়েছে, বিশেষ করে ই-ক্যাব প্রস্তাবিত ই-লার্নিং ও ই অ্যাপ্লিকেশন এর উপর এই কর অব্যাহতি রাখায় এই খাতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তবে পুরো ডিজটাল ইন্ড্রাস্ট্রির ব্যাকবোন ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ ওয়েবসাইট হোস্টিং ও ক্লাউড সার্ভিসকেও কর অব্যাহতির আওয়াত নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি। ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান সমূহের কার্যক্রমে সচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠাকল্পে বিজনেস আইডেন্টিটি প্ল্যাটফর্ম (DBID) ইক্যাবের জোরালো প্রস্তাবনা ছিল। ইতোমধ্যে এটি চালু হলেও ডিজিটাল কমার্স সেক্টরের পৃথক কোন কর্তৃপক্ষ না থাকায় DBID গ্রহনে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানসমূহকে এখনো ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। এছাড়াও DBID এর কার্যকারিতাও এখনো স্পষ্ট হয়নি। এছাড়াও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় ইক্যাব এর প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল কম্পলায়েন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর পাইলটিং পরবর্তী ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি প্রয়োজন। ই কমার্স এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্মার্ট লজিস্টিক্স। এ বিষয়ে সরকারের ‘জাতীয় লজিস্টিক নীতি’ প্রনয়নে ই-ক্যাব সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে। তবে এই নীতিমালার বাস্তবায়নে স্মার্ট লজিস্টিকস প্রতিষ্ঠানসমূহ কে ন্যূনতম পাঁচ বছর কর অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন এবং গ্রামীণ পর্যায়ে ও ক্রস বর্ডার ই-কমার্স সম্প্রসারণে ‘স্মার্ট পোস্ট অফিস’ এর পাশাপাশি স্মার্ট লজিস্টিক্স প্রতিষ্ঠানসমূহ কে ডাক মাশুল থেকেও অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি প্রস্তাবিত বাজেটে লজিস্টিক খাতকে অগ্রাধিকার খাত ঘোষণা করায় স্মার্ট লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানসমূহ এর ওয়্যারহাউজ ও ট্রাস্পোর্টেশন এর উপর প্রযোজ্য ভ্যাট মওকুফ করার আহবান জানাচ্ছি। এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে ক্যাশলেস পেমেন্ট কে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হলেও পেমেন্ট গ্রহনে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসমূহকে পেমেন্ট চার্জ প্রদান করতে হয়, তাই ডিজিটাল পেমেন্ট কে উৎসাহিত করতে এই সেক্টরে পেমেন্ট চার্জ সমমানের ন্যূনতম দুই শতাংশ ক্যাশ ইন্সেটিভ প্রদান করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়াও শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে ক্যাশলেস পদক্ষেপ নেওয়া বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে যা সামগ্রিক পর্যায়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সহজ করবে। ই-কমার্স দেশের সবথেকে ক্রমবর্ধমান সেক্টর, এই সেক্টরে গত ৫ বছরে প্রায় ২ লক্ষ নারী ও তরুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে এবং ৫ লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, তাই এই সেক্টরের বিকাশে ২০৩১ সাল পর্যন্ত ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের কর অব্যাহতি দেওয়াও দাবি জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এবং স্মার্ট অর্থনীতির সংকল্পে ই-কমার্স সেক্টরকে আরো অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং ই-ক্যাব এর প্রস্তাবিত দাবি সমূহ সরকার বিশেষ বিবেচনায় নিতে পারে। লেখক: অর্থ সম্পাদক, ই-ক্যাব এবং সিইও, ব্রেকবাইট ইবিজনেস
১ বছর আগে
এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ: মহান রাব্বুল আলামিনের বিধানানুসারে চারটি মাস পবিত্র ও সম্মানিত। এই চারটি মাসের মধ্যে অনন্য একটি মাস হল জিলহজ্ব মাস। আর এ মাসের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও মর্যাদাপূর্ণ সময় হলো আশারায়ে জিলহজ্ব তথা জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশক।দুটি ইবাদত এই দশকের মর্যাদাকে আরও অধিক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছে। কুরআন-হাদীসে এই দশকের বিশেষ ফজিলত ও অসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্যের কথা বর্ণিত হয়েছে।স্বয়ং আল্লাহ তাআলা এই দশকের সম্মান ও পবিত্রতা প্রকাশান্তে এই দশকের রজনীগুলোর নামে শপথ করেছেন। সূরা ফজর-এ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন: ‘শপথ ভোরবেলার, শপথ দশ রাত্রির।’ (সূরা ফজর : ১-২)হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) ও মুজাহিদ (রহ.)সহ অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও মুফাসসিরের মতে, এখানে দশ রাত্রির দ্বারা জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ রাতকেই বুঝানো হয়েছে। হাফেয ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, এটিই বিশুদ্ধ মত। -(তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৫৩৫-৫৩৬)হাদীস শরীফে এই দশককে দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম ও মর্যাদাবান দশক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হলো জিলহজ্বের দশ দিন। জিজ্ঞাসা করা হলো, আল্লাহর রাস্তায়ও কি তার সমতুল্য নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায়ও তার সমতুল্য নেই, তবে ঐ ব্যক্তি, যার চেহারা ধূলিযুক্ত হয়েছে, অর্থাৎ শাহদাতের মর্যাদা লাভ করেছে।’ -(মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১১২৮, মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ২০১০)জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ দিনসমূহ হলো জিলহজ্বের প্রথম দশ দিন। -(সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ২৮৪২, আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, ১৭৮৫)জিলহজ্ব মাসের তাৎপর্যের বিষয়ে বিশ্ববিখ্যাত হাদীস বিশারদ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জিলহজ্বের প্রথম দশকের বিশেষ গুরুত্বের কারণ হলো, এই দিনগুলোতে ইসলামের পাঁচটি রুকন বা মৌলিক কাজের সমাহার রয়েছে। যেমন ঈমান ও সালাত অন্য দিনগুলোর মতো এই দিনগুলোতেও বিদ্যমান। যাকাত বছরের অন্য যে কোনো সময়ের মতো এসময়েও আদায় করা যায়। আরাফার দিনে রোজার নির্দেশ থাকায় ইসলামের আরেকটি রুকন রোজার নজিরও এই দশকে পাওয়া যায়। আর পঞ্চম রুকন হজ এই দশকেই পালনযোগ্য। আবার ইসলামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কুরবানিও এই সময়ে আদায় করতে হয়। সুতরাং মাস হিসেবে রমাদান আর দিন হিসেবে জিলহজ্বের প্রথম দশক শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ। আর তাই এই দিনগুলোতে আমাদের ইবাদত-বন্দেগিতে বিশেষভাবে মগ্ন হওয়া উচিত।আল্লাহ তায়ালা সকলকে এই দিনগুলোর সঠিক মর্যাদা আদায় করে ইবাদত-বন্দেগি পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া মারকাযুদ দ্বীন, তিতাস, কুমিল্লা।
১ বছর আগে
মো. বকুল আলী: আমাদের দেশে কোথাও গাছ কাটা হলে তার কৈফিয়ত স্বরূপ বলা হয় সেখানে উন্নয়ন প্রকল্প হবে কিংবা অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। জাতিসংঘের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান (ইউএনআইটিআর) দুর্যোগকে ৪টি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। অপরিকল্পিত নগরায়ন, বনাঞ্চল ধ্বংস, পরিবেশ দূষণ প্রভৃতি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বৃহৎ এলাকার গাছপালা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। শরীয়তপুর জেলার ছয়টি উপজেলায় চলতি অর্থবছরে ১৯ কিলোমিটার সড়কের পাশ থেকে ১৭০০ গাছ কেটেছে বন বিভাগ। গত মে মাসের শুরুতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরা ঝিলিম বাজারে সড়কের একপাশে ২৫০ মিটারের ড্রেন নির্মাণের জন্য সড়কের দুইপাশের ২ কিলোমিটারে ২৫৮টি গাছ কাটা হয়েছে। অথচ, উচিত ছিল বৃক্ষনিধন না করে বিকল্প উপায়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। বৃক্ষনিধনের মাধ্যমে অপরিকল্পিত নগরায়ন একটি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। আর এই মানবসৃষ্ট দুর্যোগের ফলে আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক ভয়াবহ দুর্যোগের সম্মুখীন হবো। চলতি বছরে তীব্র তাপদাহ আমাদের কর্ণকুহরে সেই বার্তাই উঁকি দিচ্ছে।বৃক্ষের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন গড়ে তুলতে হবেএকটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তার আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অধিকিন্তু দিন দিন অযাচিতভাবে আরও বৃক্ষনিধন করা হচ্ছে। ফলে দেশের পরিবেশের ভারসাম্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের গাছের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। আমরা যেমন মা-বাবা, ভাই-বোনকে ভালোবাসি তেমনি গাছকে আপন করে নিতে হবে। কোনো শত্রুর আক্রমণে আমরা যেমন মা-বাবা, ভাই-বোনকে রক্ষায় এগিয়ে আসি, তেমনি গাছপালা রক্ষায় সোচ্চার হতে হবে। তাহলে গাছপালার গায়ে নিজেও সহজে কুঠার তুলতে পারব না, অন্যরা গাছ কাটলে তার তীব্র প্রতিবাদ করতে পারব। আমাদের ভালোবাসার আচ্ছাদনে গাছপালা সুরক্ষিত হবে।পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ এমন গাছ অপসারণ করতে হবেইউক্যালিপটাস, আকাশমণি, বোতলব্রাশ প্রভৃতি গাছ পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। একটি ইউক্যালিপটাস গাছের শিকড় মাটির ১৫ মিটার গভীরে থাকে। পানি ও খনিজ লবণ শোষণ ছাড়াও অতিরিক্ত পানি শুষে ডালপালায় জমা রাখে। ফলে যে স্থানে গাছটি লাগানো হয়,সে স্থানটি পানিশূন্য হয়ে পড়ে ও উর্বরতা শক্তি কমে যায়। এছাড়াও এর ডালপালাগুলো জমিতে পড়লে জৈব সারের পরিবর্তে অজৈব/রাসায়নিক পদার্থের মতো কৃষিজমিকে অনুর্বর করে। আকাশমণি, বোতলব্রাশ প্রভৃতি গাছের পরাগরেণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণে অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে গত ডিসেম্বরে ঢাকা নগরের রমনাপার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, এসব এলাকার ৫৮ শতাংশ গাছই বিদেশি প্রজাতির এবং শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ আছে ৩৩ শতাংশ। এসব গাছ অনেকাংশে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। পরিবেশ সুন্দর, নির্মল রাখতে ঔষধি, বনজ ও ফলজ প্রজাতির গাছ যেমন- নিম, শাল, বহেরা, অশোক, জারুল, হরিতকী, জাম প্রভৃতি গাছ লাগাতে হবে।পরিকল্পনা বিভাগে পরিবেশবিদ নিয়োগ জরুরিরাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে গাছ কাটার প্রতিবাদ করা হলে বলা হয়, পরিকল্পনা শাখা, জেলা পরিষদের অনুমতি নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বিভাগে প্রকৌশলী যেমন প্রয়োজন, তেমনি পরিবেশবিদও প্রয়োজন। একজন পরিবেশবিদ ভালো জানেন কীভাবে পরিবেশের ক্ষতি না করে অবকাঠামো নির্মাণ করা যায় এবং কোনো অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে আশেপাশের পরিবেশ কীভাবে গাছপালা দিয়ে ভরিয়ে তোলা যায়। তাই, পরিকল্পনা বিভাগে প্রয়োজন মতো পরিবেশবিদ নিয়োগ করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক।বৃহৎ পরিসরে বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষের পরিচর্যা করতে হবে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ সরকারি কর্মজীবী রয়েছেন। যদি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এমন পরিকল্পনা করা হয় যে, প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীকে কমপক্ষে ৩টি গাছ লাগাতে হবে এবং সেই গাছগুলোর পরিচর্যাসহ প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রদান করতে হবে। তাহলে শুধুমাত্র সরকারি কর্মজীবীদের দ্বারাই দেশের মাটিতে কমপক্ষে সাড়ে ৪৫ লাখ গাছ লাগানো সম্ভব। এতে যেমন গাছপালা বৃদ্ধি পাবে তেমনি উনাদের গাছের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। ফলে সরকারি পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে উনাদের পরিবেশের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।আমাদের দেশে বিভিন্ন গোষ্ঠী, সংগঠন এমনকি ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিবছর যথেষ্ট বৃক্ষরোপণ করা হয়। কিন্তু সঠিক পরিচর্যার অভাবে সেগুলো দেশের মাটিতে আলোর মুখ দেখে না। বৃক্ষরোপণ যেমন জরুরি বৃক্ষের পরিচর্যা তেমনি জরুরি। যেমন- নিয়মিত পানি দেয়া, খুঁটি দেয়া, জৈব সার প্রয়োগ, গরু-ছাগল থেকে রক্ষার জন্য বেড়া দেওয়া জরুরি ইত্যাদি কাজ অবশ্যই করতে হবে। সরকারি, বেসরকারি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়,ব্যক্তি উদ্যোগে বৃহৎ পরিসরে বৃক্ষরোপণ ও সেগুলোর পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে তুললেই সবুজ বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব।লেখক: সভাপতি, গ্রীণ ভয়েস, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
১ বছর আগে