পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে এফডাব্লিউভি পদে
Admin
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১২:৫৮ পিএম
চাকরিপ্রার্থীরা আর কত অপেক্ষা করবেন
বিশেষ প্রতিবেদক: নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাড়ে তিন বছর পর লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলপ্রকাশ হয়। এক হাজার ৮০টি পদের বিপরীতে ‘চাকরিযুদ্ধে’ অংশ নেয় তিন লাখ ৩১ হাজার প্রার্থী; উত্তীর্ণ হয় মাত্র ৭ হাজার ৬২১ জন। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতায় পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার চিত্র। ঘোষণা করা হয় মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা যখন মৌখিক পরীক্ষার অপেক্ষা করছিলেন, তখন হঠাৎ একদিন ঘোষণা আসে লিখিত পরীক্ষায় ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে। এ কারণে ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। এরপর শুরু হয় নানা জটিলতা, ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে যাওয়া পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আইনি লড়াইয়ে নামেন চাকরিপ্রার্থীরা। উচ্চ আদালতে তাদের পক্ষে রায় দিলেও এখনও চূড়ান্ত নিয়োগ পাননি এফডব্লিউভি চাকরিপ্রত্যাশীরা। এ অবস্থায় আজ রোববার থেকে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ ও চূড়ান্ত নিয়োগের দাবিতে আবারও আন্দোলন নামছেন তারা।
এফডব্লিউভি পদে নিয়োগপ্রত্যাশী কানিজ মারিয়া ভোরের আকাশকে বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ২০২০ সালের ১০ মার্চ এফডব্লিউভি পদে এক হাজার ৮০ জন প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়নের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তির আলোকে প্রায় ৩ লাখ ৩১ হাজার প্রার্থী আবেদন করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দীর্ঘ তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই পদের লিখিত পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ওই বছরের ১১ মে প্রকাশ করা হয় এবং ২৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষার নোটিশ প্রকাশ করা হয়। এই পরীক্ষা যাতে স্বচ্ছ হয়, এজন্য বারবার কমিটি গঠন করা হয়। তারপরও দুর্নীতির অজুহাতে এই নিয়োগ বাতিল করা হয়েছিল।
নিয়োগ বাতিল হল যেভাবে : ২০২০ সালের মার্চ মাসে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে ১ হাজার ৮০ জনকে নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। আবেদকারীদের লিখিত পরীক্ষা ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ১১ মে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৭ হাজার ৬২১ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। ২০২৩ সালের ১৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত তাদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর পরে এসে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ও অতিরিক্ত সচিব এএইচএম লোকমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১ হাজার ৮০ পদে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা নিয়োগের প্রার্থী মনোনয়ন বাতিল করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১৩ ডিসেম্বর তারিখের পর্যবেক্ষণ ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন সংক্রান্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির ১১ জানুয়ারির সভার মতামত/সিদ্ধান্তের আলোকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো। প্রার্থীদের আবারও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এটি স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ছিল উল্লেখ করে ফৌজিয়া আক্তার বলেন, নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয় এটি সবার জানা। যারা ওই টাকার ভাগ পায় না, তারা বিভিন্ন অজুহাত তুলে নিয়োগ বাতিল করে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ইতিহাস ঘাটলে এটি স্পষ্ট হবে। বছরের পর বছর ধরে আদালতে মামলা চলে নিয়োগ নিয়ে। কোন কোন নিয়োগ বাতিল হয়ে যায় আবার কোন কোন নিয়োগের রায় চাকরিপ্রত্যাশীদের পক্ষে আসে।
আইনি প্রক্রিয়ায় বাধা কাটল : সাড়ে ৩ বছর অপেক্ষার পর নিয়োগের জন্য সবাই যখন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায় তখন পরীক্ষা বাতিলের এমন সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ হন পরীক্ষার্থীরা। প্রতিকার পেতে উচ্চ আদালতে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন তারা। রিটে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের নানা অনিয়মের বিষয় তুলে ধরা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে ৭ হাজার ৬২১ জনের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার পরও পরীক্ষা বাতিলের বিজ্ঞপ্তি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ২৯ জানুয়ারি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০টি পদের নিয়োগের পরীক্ষা বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের জারি করা নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এর ফলে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগের ফলাফল প্রকাশে বাধা কেটে যায়। হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ২০২০ সালের ১০ মার্চ প্রকাশিত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (প্রশিক্ষণার্থী) মনোনয়ন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এর আলোকে আবেদকারীদের লিখিত পরীক্ষা ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করা হয়। আর ২০২৩ সালের ১১ মে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ১৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর পরে এসে গত বছরের ১৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় পরীক্ষাটি বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সাড়ে ৩ বছর অপেক্ষার পর নিয়োগের জন্য সবাই যখন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায় তখন পরীক্ষা বাতিলের এমন সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ হন পরীক্ষার্থীরা। প্রতিকার পেতে উচ্চ আদালতে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন তারা। রিটে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের নানা অনিয়মের বিষয় তুলে ধরা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে ৭ হাজার ৬২১ জনের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার পরও পরীক্ষা বাতিলের বিজ্ঞপ্তি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এরপর নানা আইনি বাধা শেষে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদের ৭ হাজার ৬২১ জনের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে তিন মাসের মধ্যে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন। পরে আইনজীবী সিদ্দিক উল্লাহ মিয়া জানান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ১ হাজার ৮০টি পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে রিটকারীরাসহ সারা দেশ থেকে আবেদনকারীরা আবেদন করেন। পরবর্তী সময়ে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ওই পরীক্ষায় ৭ হাজার ৬২১ জন উত্তীর্ণ হন এবং উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভাইভা পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরও চূড়ান্ত ফল প্রকাশ না করে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে। পরে সেই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। হাইকোর্টেও আদেশের মধ্য দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের অনিশ্চয়তা দূর হলো।
আবারও মাঠে নামছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা : এফডব্লিউভি পদে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে উত্তীর্ণ ৭ হাজার ৬২১ জনের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে তিন মাসের মধ্যে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের আদালত গত বছরের ১৫ ডিসেম্বও যে নির্দেশ দিয়েছেন তা শেষ হবে আগামী ১৫ মার্চ। এই সময়ের মধ্যে চাকরিপ্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে হবে। প্রায় দুই মাস অপেক্ষার পরও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ফের গত ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি টানা তিন দিন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। পরে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
চাকরিপ্রার্থী সানজিদা লিজা ভোরের আকাশকে বলেন, মহাপরিচালক তাদের জানিয়েছিলেন উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল না করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আইন শাখায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় তিন দিনের মধ্যে অধিদপ্তরের চিঠির জবাব দেবে। কিন্তু এখনও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এ কারণে আজ রোববার থেকে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণার দাবিতে রাজধানীর কারওয়ান বাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী ভোরের আকাশকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি নিস্পত্তি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ভোরের আাকাশ/মি
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে এফডাব্লিউভি পদে
...
প্রকাশ : ৪ মাস আগে
আপডেট : ৪ মাস আগে
চাকরিপ্রার্থীরা আর কত অপেক্ষা করবেন