নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে কর্মরত কর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের সহযোগিতাকে স্বাগত জানানো হবে।২৬ মে রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রীর সাথে তাঁর দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম সাক্ষাৎ করতে আসলে তিনি একথা বলেন।পর্যটনমন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পের কর্মীদের বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে। পর্যটন শিল্পে পারস্পরিক সহযোগিতা দুই দেশের জনগণের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। জনশক্তি রফতানিসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গত ১৫ বছরে দুই দেশের সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নেও আমাদের যৌথভাবে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা অসীম। পর্যটনের এই অফুরন্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প সম্পর্কিত ব্যবসায় অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। মালয়েশিয়ার পর্যটন শিল্পের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা রয়েছে। তারা চাইলে তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজারের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। সরকার পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগকারীদের সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে।সাক্ষাৎকালে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করার বিষয়টিও আমি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে দুই দেশের যৌথভাবে কাজ করতে পারাটা হবে আনন্দের। এছাড়াও মালয়েশিয়া ইতোমধ্যেই বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে বৃত্তি প্রদান করে থাকে, যার মধ্যে পর্যটন সম্পর্কিত বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পর্যটন সম্পর্কিত বিষয়ে বৃত্তি যেন আরও বৃদ্ধি করা হয়, সে বিষয়ে আমি চেষ্টা করবো।হাইকমিশনার আরও বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো শ্রমবাজার। আমরা আশা করব বাংলাদেশ থেকে যে সমস্ত কর্মী মালয়েশিয়া গমন করবেন, তারা যথাযথ ভিসা নিয়ে আইনানুগ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সেখানে যাবেন এবং আইনগতভাবে অবস্থান করবেন। কর্মীদের দক্ষতা এবং সুনাম যত বাড়বে, তত বেশি এই শ্রমবাজারের ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশ।
১ বছর আগে
নিজস্ব প্রতিবেদক: ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাইনোকুলার দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে সৈকতের নানা বিষয়। এছাড়া ছিল সিসি ক্যামেরা। এবার পুরো শহরটিকেও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে চায় বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ। এসব সিসি ক্যামেরায় যা ধরা পড়বে, তা দেখা যাবে শহরের মোড়ে মোড়ে রাখা বড় এলইডি মনিটরে। ফলে একদিকে শহরের অপরাধ কমে আসবে, অন্যদিকে নিরাপদে ঘুরতে পারবেন পর্যটকরা।শুধু তাই নয়, পর্যটকরা বিপদে পড়লে যাতে খুব সহজেই স্বজনদের ফোন করতে পারেন তার জন্য বিভিন্ন মোড়ে ইন্টারকম সার্ভিস এবং বসটন টেলিফোন রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে প্রথমবারের মতো দুটি পর্যটন কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে মনিটরিং করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই কাজে সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট। তবে ক্যামেরায় অপ্রীতিকর কিছু ধরা পড়েনি।ট্যুরিস্ট পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয় ট্যুরিস্ট পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ১২টি, পতেঙ্গা বিচে ১২টি ও কক্সবাজারে ২০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এসব ক্যামেরা ঢাকায় বসে কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়ন্ত্রণ করে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এছাড়া কক্সবাজারের প্রতিটি বিচকে ইন্টারকম সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছিল। পর্যটকরা তাদের সমস্যা সরাসরি ইন্টারকমের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট পুলিশকে অবগত করতে রাখা হয়েছিল এই সুবিধা। তার ফলও তারা পেয়েছেন। এই ইন্টারকম ব্যবহার করে হাজারো পর্যটক তাদের সন্তান নিখোঁজ, নিজেরা হারিয়ে যাওয়ার খবরটি ট্যুরিস্ট পুলিশকে দিতে পেরেছেন।পাশাপাশি লাগানো হয়েছিল কক্সবাজারের প্রতিটি বিচ এলাকায় সিকিউরিটি এলার্মিং বাটন। এবার পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়ামাত্র বাটনে টিপ দিয়ে তা ট্যুরিস্ট পুলিশের বক্সে আওয়াজ তৈরি করেছে। ফলে দ্রুত সময়ে সেই স্থানে পুলিশ পৌঁছে তাদের উদ্ধার করেছে।ট্যুরিস্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি বিচে দেওয়া হচ্ছে ফ্রি মোবাইল ফোন সিস্টেম। যেখান থেকে পর্যটকরা সরাসরি টুরিস্ট পুলিশ তথা সেন্টারে হোয়াটসঅ্যাপ এবং কল করতে পারবেন। এছাড়া সম্প্রতি টুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ঘোড়ার গাড়ি ও ময়ূরপঙ্খী বিচ বাইকের মাধ্যমে পর্যটকদের নিরাপত্তায় টহল ডিউটি করা হবে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, কক্সবাজারের ভেতরে তো অনেক ক্যামেরা আছে। যেগুলো সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান লাগিয়েছে। তবে এর বাইরেও সিসি ক্যামেরা লাগানোর কথা ভাবছে টুরিস্ট পুলিশ। এবার সি বিচে পর্যটকদের নিরাপত্তায় বেশ কাজ দিয়েছে ইন্টারকম ও বাটন টেলিফোন। সেটি কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানোর কথা চিন্তা করছে টুরিস্ট পুলিশ। বাটনে প্রেস করলেই পুলিশ চলে আসবে আসলে এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা ইতিহাস।তিনি আরও বলেন, আমরা চিন্তা করছি সামনের দিনগুলো পুলিশ কম লাগিয়ে কিভাবে পর্যটকদের সেবা দেওয়া যায়। আরও টেকনোলজি ব্যবহারের চিন্তাও চলছে। সৌদির মক্কায় কিন্তু বেশি পুলিশ থাকে না। আমরা সেই ওয়েস্টার্ন টেকনোলজির দিকে যাচ্ছি। পুলিশ পাশে থাকে কিন্তু ক্যামেরায় অপরাধ ধরামাত্র অপরাধী ধরা পড়ে যাবে। যেমন এবার আমরা কক্সবাজারে বাইনোকুলার অনেক হারানো শিশুকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া এবার কক্সবাজার সি বিচে ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল।ট্যুরিস্ট পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা মনে করছেন, কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা আরও বাড়াতে হবে। ইন্টারকম ও ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম আরও বাড়াবেন তারা। এরপর এগুলো তারা পর্যায়ক্রমে কক্সবাজার শহরের মধ্যে নিয়ে আসবেন। তারা বড় বড় হোটেলগুলোকেও নজরে আনবেন। যাতে পুরো শহরটাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা যায়। তারা মনে করেন তাহলেই আগামীতে স্মার্ট টুরিজম হবে। না হলে অসম্ভব। ট্যুরিস্ট পুলিশ বলছে, কক্সবাজার শহরকে কেন্দ্র করে অপরাধীরা সক্রিয়। সেখানে বিনোদনের নামে বিভিন্ন হোটেলে স্প্যা বসানো হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং শুরু হলে সেগুলো কমে আসবে। অপরাধও নির্মূল হবে বলে তারা মনে করছেন।কক্সবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার পুরো জেলায় ক্যামেরা বসিয়ে বড় বড় এলইডি স্ক্রিনে মনিটরিং করা হয়েছে। এ ছাড়া সাদা পোশাকের গোয়েন্দা টিমের সদস্যরা কাজ করেছেন। টুরিস্ট পুলিশের ২০০ শতাধিক ফোর্স কাজ করেছেন। পুরো এলাকা একটা নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছিলেন তারা। পর্যটকদের নিরাপত্তায় এবার প্রথম সি বিচের বিভিন্ন জায়গায় বাটন সিস্টেম টেলিফোন ও ইন্টারকম রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া লাখ লাখ পর্যটক যাতে সি বিচে তাদের মোবাইল চার্জিং করতে পারে সেজন্য ছিল চার্জিং পয়েন্ট। পাশাপাশি কারও মোবাইল ফোন হারালে যেন ফোন ব্যবহার করে স্বজনদের কল করতে পারেন সেজন দুটি মোবাইল ফোন রাখা হয়েছিল। জায়গায় জায়গায় তথ্যকেন্দ্র খুলেছিল কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, এবার তারা যেসব ইন্টারকম ও টেলিফোন বসিয়েছিলেন তাতে হাজার হাজার মানুষের কল এসেছে। ইন্টারকমে চাপ দিলেই পুলিশ সেই জায়গায় গিয়েহাজির হয়েছে। এবার তারা চুরি বা ছিনতাইয়ের মতো কোনো ঘটনাই ঘটতে দেননি। কোনো তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনকে সি-বিচে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
১ বছর আগে
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদুল ফিতর উদযাপনে টানা ছয় দিনের লম্বা ছুটিতে যাচ্ছে দেশ। টানা ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসুরা সমুদ্র সৈকতে ছুটে যান। এবার ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেল-মোটেলে আগাম বুকিং শুরু হয়ে গেছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকবে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এছাড়া সমুদ্র সৈকতের স্মার্ট নিরাপত্তা জোরদার করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিচে পর্যটকরা যেন সরাসরি পুলিশের সেবা পেতে পারে, সেজন্য ইন্টারকম লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি ইমারজেন্সি প্রেস বাটন লাগানো হয়েছে। বাটনে চাপ দেওয়ার সাথে সাথে বেল বেজে উঠবে এবং আওয়াজ শুনার সাথে সাথে টুরিস্ট পুলিশ টিম হাজির হবে। এবার ঈদে কক্সবাজারে আসা পর্যটকরা এমন নিরাপত্তা সেবা উপভোগ করতে পারবেন। চুরি, ছিনতাই , হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্রসহ একাধিক বিষয়ে সেবা নিশ্চিত করা যাবে পুলিশের এই ব্যতিক্রম উদ্যোগ। ট্যুরিস্ট পুলিশের এমন উদ্যেগকে স্বাগত জানিয়েছে ভ্রমন প্রেমী নেটিজেনরা। বিগত সময়ে এমন উদ্যেগগুলো না থাকায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হরেক রকম চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটিয়েছে। যার মধ্যে ছিল পর্যটকের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র চুরি, ছিনতাই নারীদের হয়রানিসহ একাধিক ঘটনা। এবিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ (কক্সবাজার রিজিয়ন) বলেন, সমুদ্র সৈকতের সকল ধরনের নিরাপত্তা জোরদার করতে সবসময় বদ্ধপরিকর। সৈকতে কেউ নাশকতা করলে ইমার্জেন্সি কল সেন্টার থেকে সরাসরি সেবা উপভোগ করতে পারবে। নির্দিষ্ট স্থানে দেওয়া বাটনে ক্লিক করলেই মুহূর্তের মধ্যেই পাওয়া যাবে পর্যটন সেবা। ধাপে ধাপে পর্যটকদের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পুরো সমুদ্র সৈকতকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেলে সাজানো হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। ট্যুরিস্ট পুলিশ সবসময় পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাগ্রে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।ইন্টারকম সংযুক্ত ডিজিটাল নিরাপত্তার আওতায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ইমার্জেন্সি সিকিউরিটি বক্স উদ্বোধন করেন কক্সবাজার রিজিয়ন টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। শুধু তাই নয়, সাদা পোশাকধারী নারী পুরুষ মিলে একাধিক ট্যুরিস্ট পুলিশের গোয়েন্দা টিমের টহল জোরদার করা হবে। পাশাপাশি দিনের বেলায় ড্রোন ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
১ বছর আগে
বিপ্লব তালুকদার, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির সামাজিক উন্নয়ন মূলক প্রতিষ্ঠান অরুণালোক থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ দিকে খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে রওনা করি। উদ্দেশ্য কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রা। সকাল হতে না হতেই কক্সবাজার শহরে এসে পৌঁছালাম। এই ট্যুরে দায়িত্ব ছিলেন সুমন আর্চায্য,পরিমল দেবনাথ, সোমেন সরকার ও বিমল দেবনাথসহ আরও অনেকেই। আর আমাদের এই যাত্রা পথে সঙ্গী হয়েছিলেন ৭০ থেকে ৮০জন।এইবার যেতে হবে জাহাজঘাটে। যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন টমটম গাড়ি। পরিমল তার সঙ্গীদের নিয়ে শীতের সকালে টমটম গাড়ি সংগ্রহ করলেন। সবাইকে নিয়ে রওনা দেওয়া হলো। প্রায় ১ ঘন্টা সময় নিয়ে এসে দেখি জাহাজঘাটে মানুষের দীর্ঘ লাইন। জাহাজঘাটে এসে যে যারযার মতো করে নাস্তা করে নিলেন। উদ্দেশ্য কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রা। ঘড়ির কাটায় সকাল ৯ টায় ছেড়ে দেয় লঞ্চ। এরপর শুরু হয় কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজে সমুদ্র ভ্রমণের আনন্দময় যাত্রা।আমরা ইনানী থেকে লঞ্চে চড়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌঁছলাম। এটি আমার দ্বিতীয় ভ্রমণ, আবার অনেকেই প্রথম লঞ্চ ভ্রমণ। উত্তেজনা বেশ ছিল। সিট ভাড়া করলেও বসে থাকেনি কেউ। দেখেছে কেবল দু’পাশের নীল জল, নাফ নদী আর নদীর ওপারে মিয়ানমারের আরাকান।সেদিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো, দ্বীপে হাঁটাহাঁটি আর সূর্যাস্ত দর্শন। ছেঁড়া দ্বীপ যদিও সেন্ট মার্টিন দ্বীপেরই একটি অংশ। নৌকায় করে যেতে সময় লাগে ঘণ্টা দুয়েক। মাত্র ৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই দ্বীপে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানায় জমি কেনা, এমনকি কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ আইনত নিষিদ্ধ। গাঢ় নীলের মাঝখানে প্রবাল, কাঁকড়া আর কেয়াবনে জড়ানো ছেঁড়া দ্বীপ আমাদের ধরে রাখল গোধূলি অবধি।দ্বিতীয় দিন দুপুর পর্যন্ত সময়টা কেবল সেন্ট মার্টিনকে নানান আঙ্গিকে দেখার পালা। প্রায় ৫০০০ বছর আগে টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল জায়গাটি। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়। এরপর প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া জেগে উঠে। এর ১০০ বছর উত্তর পাড়া এবং পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে বাকি অংশ জেগে উঠে।এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২৫০ বছর আগে আরব বণিকদের নজরে আসে এ দ্বীপটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে বাণিজ্যের সময় আরব বণিকরা এ দ্বীপটিতে বিশ্রাম নিতো। তখন তারা এ দ্বীপের নামকরণ করেছিল 'জাজিরা'। পরবর্তীতে যেটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত হয়। বর্তমানে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রায় দেড় লাখ নারকেল গাছ আছে। এখানকার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এ অঞ্চলের অধিবাসী নয়।শেষ দিন। খুব ভোরে সবাই ওঠে পড়ল। খালি পায়ে বালিতে কেউ হাঁটছে দল বেঁধে । কেউ নেমেছে ভাড়া করা সাইকেল নিয়ে। কোথাও আমাদের নামতে হয়েছিল বালি দেখে, কোথাও থামতে হয়েছিল পাথর দেখে। ছবি তুলতে পুরো দ্বীপ চক্কর দেয়ার লোভ সামলাতে হয়েছে অনিচ্ছায় আর সময়ের অভাবে।আরেক দফা স্নান আর যৌথ ছবি তোলার হুল্লোড় বয়ে গেল দুপুর অবধি। এখনি ফিরতে হবে। এই বার্তায় লাঞ্চের পর কেউ মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বসে থাকলো হোটেল লাউঞ্জে, কেউ ঝটপট সেরে নিল কেনাকাটা। কর্ণফুলী করে যখন ফিরছি কক্সবাজার, শ্রান্তিতে সবার চোখ তখন ঘুমে ঢুলু ঢুলু। তবু শেষ দেখা থেকে বঞ্চিত হবে ভেবে কেউ বসে রইল না। জলের পাশে দাঁড়িয়ে দেখল কেবল সবাই জলের নাচন।শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছালাম কক্সবাজার। লঞ্চ থেকে নেমে টমটম গাড়িতে উঠে পরলাম হোটেলের উদ্দেশে রওনা করি। হোটেল আগে থেকেই থাকার জন্য রুম বুকিং দিয়ে রাখা হয়েছিল। গাড়ি থেকে নেমে আমরা শহরের পাশে হোটেল গ্যালাক্সিতে সবাই উঠে একটু বিশ্রাম নিলাম ।কক্সবাজার ট্যুর ঘিরে সবার মধ্যে ছিল উদ্দীপনা। ৩ দিনব্যাপী এ ভ্রমণযাত্রায় গন্তব্য ছিল সুগন্ধা সৈকত, লাবণী পয়েন্ট, ফিশ ওয়ার্ল্ড, ইনানী সৈকত, পাটুয়ারটেক ও হিমছড়ি। ঘোরাঘুরি, ছবি তোলা, খাওয়াদাওয়া, আড্ডা ও গানের মধ্য দিয়ে রঙিন সময়গুলো অতিবাহিত হয় আমাদের । রোদের মধ্যে সমুদ্রের নীল জলরাশি ঘিরে প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে সকলে।হোটেলে প্রবেশের পর আমরা বিশ্রাম নিয়ে হোটেলের পাশের রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা করি। এরপর আবার হোটেলে ফিরে গিয়ে সৈকতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ি। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের গিয়ে সবাই উচ্ছ্বাস-আনন্দ নিয়ে সমুদ্রের নীল জলরাশির ঢেউয়ের সঙ্গে নিজেদের সোনালী সময়কে ছবিবন্দী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সমুদ্রের জলরাশি আমাদের মনকে সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তোলে। দুপুরে আমরা হোটেলে ফিরে যাই এবং ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খাই। এরপর বিকেলে রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডে যাই।ফিশ ওয়ার্ল্ডে সামুদ্রিক মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীদের বৈচিত্র্য যেন আমাদের সমুদ্রযাত্রাকে ভিন্নতা দেয়। ফিশ ওয়ার্ল্ড থেকে বেরিয়ে আমরা কক্সবাজারের জনপ্রিয় বার্মিজ মার্কেটে যাই। মার্কেট থেকে ঘোরাঘুরি, খাওয়াদাওয়া ও কেনাকাটা করি। এর পরে শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যে সুগন্ধা পয়েন্টের কাছেই একটি রেস্তোরাঁতে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে যাই। আমাদের এ আনন্দভ্রমণের সঙ্গী ছিল অরুণালোকের সদস্য বিমল, সুমন, প্রভাত, পরিমল, সোমেন, উৎপল,রুপ কুমার ,সুমন, সজল ,সবুজসহ নাম না জানা আরও অসংখ্য সদস্য। উল্লেখ্য, ট্যুর শুরু হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি। আর ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে খাগড়াছড়িতে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হয় ট্যুর। স্মৃতিময় দিনগুলোর ঘটে ইতি।
১ বছর আগে