ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ির মসজিদটি মানুষের কাছে এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরাতন কারুকার্যময় এ মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিভৃত পল্লীতে এর অবস্থান হলেও মানুষের কাছে এর আকর্ষণ কমেনি। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মসজিদটি একনজর দেখার জন্য এখানে পর্যটকরা ভিড় করেন।ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে জামালপুর গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদটি স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। নয়নাভিরাম এই মসজিদটির আকর্ষণীয় দিক হলো এটি মুঘল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি। তিন গম্ভুজ বিশিষ্ট মসজিদটির চারপাশে সুদৃশ্য মিনার ও কারুকার্য খচিত। গম্ভুজসমূহ ভল্ট কায়দায় নির্মিত।স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, প্রথমে জমিদার আবদুল হালিম ও পরে হাজি নুনু মোহাম্মদ ১৮৬৭ সালে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। হাজি নুনু মোহাম্মদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর এই মসজিদ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পড়ে জমিদার এমদাদুর রহমান চৌধুরী, জমিদার করিম উদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী ও জমিদার বদিউদ্দীন আহম্মদ চৌধুরীর উপর।তিনটি গম্বুজ ও এর চারদিকে ৩০টি ছোট-ছোট মিনার রয়েছে এ মসজিদে। এর প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন হংসরাজ ও তার ছেলে রামহিত নামে দুই হিন্দু মিস্ত্রী। তারা দিল্লি, আগ্রা, এলাহাবাদে নির্মিত মুসলিম ঐতিহ্যের বিভিন্ন কারুকার্যের অনুকরণে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ৬ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি। এর বারান্দা ২টি। প্রথম বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১২ ফুট ৩ ইঞ্চি। দ্বিতীয় বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৯ ফুট ৫ ইঞ্চি। সামনে একটি খোলা আঙিনা রয়েছে। মসজিদটিতে স্থানীয় বাসিন্দারা এখনো নামাজ আদায় করেন। একসাথে ২০০ মুসল্লী এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদের খাদেম রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এটি অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এই মসজিদ ও মসজিদের সাথে যাদুঘর ও জমিদারদের পুরোনো সংগ্রহশালাটি দেখতে প্রতিদিনই হাজার-হাজার মানুষ ভিড় জমান এখানে। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে ও মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলে দীর্ঘ সময় মসজিদটির সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। মসজিদ কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে এই মসজিদকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হেরিটেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে শুনেছি।ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ির মসজিদটি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কালের স্বাক্ষী হয়ে দীর্ঘকাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে টুরিজম বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে এই ঐতিহাসিক মসজিদটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হেরিটেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কাজও চলমান রয়েছে। আশা করি, অনতি বিলম্বে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক এ মসজিদটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।তাছাড়া মসজিদ কমিটির মাধ্যম্যে মসজিদের উন্নয়ন ও এর ঐতিহ্য রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
১ বছর আগে
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের তিনশ’ বছরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মুছে দিয়ে ‘খোয়াসাগর দিঘি’র নাম পরিবর্তন করে ‘ডিসি পার্কের’ সাইনবোর্ড লাগিয়েছে প্রশাসন। এতে সমালোচনার মুখে পড়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন। জেলাবাসী ‘ডিসি পার্ক’ নামটি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না।১১ ফেব্রুয়ারি রোববার দুপুর থেকে লক্ষ্মীপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ডিসি পার্ক লেখা সাইনবোর্ডের ছবি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনামূলক মন্তব্য করছেন ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা।জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য বহনকারী এই খোয়াসাগর দিঘি তিনশ’ বছরের কালের সাক্ষী। জেলার সদর উপজেলার দালাল বাজার এলাকার রায়পুর-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের পাশেই প্রায় ২২ একর জুড়ে বিস্তৃত খোয়াসাগর দিঘিটি। এর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তাকালে খোয়া খোয়া দেখা যায়। তাই এ দিঘিকে খোয়াসাগর দিঘি বলা হয়। খোয়াসাগর দিঘি এই জেলার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান।ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৫৫ সালের দিকে দালাল বাজারের জমিদার ব্রজবল্লভ রায় দিঘিটি খনন করেন। পরবর্তীতে জমিদার রাজা গৌড় কিশোর রায় এর সংস্কার করেন। প্রাচীন এই দিঘিকে ঘিরে জড়িয়ে আছে নানা কল্পকাহিনী। দীর্ঘ সময় দিঘিটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়েছিল। কয়েক বছর আগে দিঘির সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেয় লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন। দিঘির উন্নয়নে করা হয় বিভিন্নরকম শোভাবর্ধনের কাজ। দিঘিটির তদারকি করা হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে। সৌন্দর্য বর্ধনের পর দিঘিটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। জেলা এবং জেলার বাইরে থেকেও দর্শনার্থীরা এখানে ঘুরতে আসেন।খোয়াসাগর দিঘি নামটি জেলাবাসীর জন্য ঐতিহ্য ও গর্বের নাম। তাই স্বাভাবিক কারণেই দিঘির নাম পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না জেলাবাসী। জেলাবাসীর মনে একটা প্রশ্ন, ঐতিহাসিক এই নামটি পরিবর্তন করে কেন ডিসি পার্ক নাম দিতে হবে? কেন ঐতিহাসিক খোয়াসাগর দিঘির নাম পরিবর্তনের এমন উদ্যেগ নিলেন প্রশাসন?একাধিক ফেইসবুক ব্যবহারকারী তাদের ব্যক্তিগত পোস্টে বলেন, এসব হঠকারী সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার চাই। ডিসির নামের কাজ কী এখানে।সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর জেলা কমিটির সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানের নামকরণ সমীচীন নয়। খোয়াসাগর দিঘির নামকরণ ঠিকই ছিল।অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক দালাল বাজার খোয়াসাগর দিঘি। এ ইতিহাস ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রেখে গড়ে উঠুক সকল নতুন স্থাপনা। নামকরণ থাকুক খোয়া সাগর দিঘির নামে। এটা আমাদের লক্ষ্মীপুরবাসীর দাবি’।লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম পাবেল বলেন, ‘জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে দালালবাজার খোয়াসাগর দিঘি। এটির নাম পরিবর্তন কোনভাবেই সমীচীন নয়। বরং অন্য কোনো স্থানে ডিসি পার্ক নামে আলাদা পর্যটন স্পট করা যেতে পারে। খোয়াসাগর দিঘির নাম পরিবর্তন করা হলে জেলাবাসীর মনে বিরূপ রেখাপাত হবে।’এ বিষয়ে জানতে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।তবে বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেহের নিগার বলেন, ‘বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে আমার জানা নেই। কে বা কারা ডিসি পার্কের বোর্ড ঝুলিয়েছে তাও জানি না। আজই জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলতে হবে’।দ্রুত ডিসি পার্কের সাইনবোর্ড সরিয়ে তিনশ’ বছর ধরে পরিচিত নাম ‘খোয়াসাগর দিঘি’ বহাল থাকবে প্রশাসনের কাছে এমনটাই প্রত্যাসা করেন এ জেলার বিশিষ্টজনেরা।
১ বছর আগে
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: প্রবাদে আছে শাড়িতে সুন্দর নারী, বিশেষত বাঙ্গালি নারী। তবে সে শাড়ি যদি হয় টঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, তাহলেত বাহারি সাজ আর রঙে-ঢঙ্গে অপরূপে ভরে ওঠে মহিয়ষী এ নারী। আর টাঙ্গাইলের এ শাড়ির রয়েছে প্রায় ৩০০ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, যা আমাদের শিল্প সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছে।কিন্তু সম্প্রতি টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী এই তাঁতি শাড়িকে ভারতের ঐতিহ্য হিসেবে দাবি কর জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে দেশেটির পক্ষ থেকে। তাই ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি পেতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে টাঙ্গাইল জেলার অধিবাসীরা।১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ভারতের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে করা একটি পোস্টে এ তথ্য জানায় ভারত সরকার। দ্রুত ভারতের ঘোষিত এই ‘জিআই’ বাতিল করে বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে ‘টাঙ্গাইল শাড়িকে ‘জিআই’ স্বীকৃতির দাবি করেছে জেলার ব্যবসায়ী, সুধীজন ও সারা দেশের সাধারণ মানুষ।ভারতের মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ওই স্টেটাসে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ‘টাঙ্গাইল শাড়ি, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বহুবছর আগে উদ্ভূত হয়েছে। এই শাড়ির তৈরির প্রক্রিতি মিহি গঠনের, বৈচিত্র্যময় রং এবং সূক্ষ্ম জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত। এটি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। টাঙ্গাইলের প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের এক অপার নিদর্শণ।’এরপর থেকে টাঙ্গাইলসহ সারাদেশে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সোচ্চার হয়ে জানাচ্ছে প্রতিবাদ। জেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।টাঙ্গাইলের সচেতন মহল ইতোমধ্যে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এ বিষয়ে জরুরি সভা করে মন্ত্রণালয়ে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাসও দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশি পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতির দাবিতে ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনকারীরা ‘টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য’, ‘নদী-চর খাল-বিল গজারির বন, টাঙ্গাইলের শাড়ি তার গরবের ধন’, ‘আমার ঐতিহ্য, আমার অহঙ্কার’, ‘টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ির জিআই স্বীকৃতি চাই’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।ওই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুঈদ হাসান তড়িৎ, আরিফুজ্জামান সোহেল, সমাজকর্মী নাজিউর রহমান আকাশ, মির্জা রিয়ান, আহসান খান মিলন, স্মরণ ইসলাম প্রমুখ।এ সময় বক্তারা বলেন, টাঙ্গাইলের শাড়ি বাংলাদেশের বিখ্যাত ও ঐতিহ্যের শাড়ি। ভারতীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল পেজে এই টাঙ্গাইল শাড়ি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত একটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস বলা হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করি।সরেজমিনে টাঙ্গাইল শাড়ির সঙ্গে জড়িতরা জানায়, প্রায় ২০০ বছর ধরে ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক-বাহক টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি। যা নিজস্ব ঐতিহ্য বহন করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এছাড়া ‘নদী-চর খাল-বিল গজারির বন, টাঙ্গাইল শাড়ি তার গরবের ধন’ এ স্লোগানের আলোকেই টাঙ্গাইলের মানুষের জীবনাচরণ চলমান। টাঙ্গাইল শাড়ি সদর উপজেলার বাজিতপুর, কৃষ্ণপুর, দেলদুয়ারের পাথরাইল, কালিহাতীর বল্লা, রামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয়। তবে দেলদুয়ারের পাথরাইল টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী হিসেবে খ্যাত।বল্লা এলাকার সুতা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোস্তফা আশরাফী ও সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান হাসান ভারতের কড়া সমালোচনা করে বলেন, প্রায় আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্য টাঙ্গাইল শাড়ি। এ শাড়ি টাঙ্গাইলেই অসাধারণ কারুকার্য ও সূক্ষ্ম নিপুনতায় অত্যন্ত দরদ দিয়ে তৈরি করা হয়। টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব শুধুমাত্র টাঙ্গাইলের তাঁতিদের। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার টাঙ্গাইল শাড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি দিয়ে ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব ছিনতাই করার দুঃসাহস দেখিয়েছে।টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী খ্যাত পাথরাইলের শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, টাঙ্গাইল শাড়ি বলতে টাঙ্গাইলকেই বোঝায়। টাঙ্গাইলের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া টাঙ্গাইল শাড়ির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ভিন্ন মান ও ভিন্ন দক্ষতায় টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি হয়। এই দক্ষতায় অন্য জায়গায় শাড়ি তৈরি হলেও সেটা টাঙ্গাইল শাড়ি না। অন্যরা টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজের দাবি করে জিআই ট্যাগ নেওয়া- এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। এর প্রতিবাদ জানিয়ে এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।টাঙ্গাইল সাধারণ গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক কবি মাহমুদ কামাল বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা টাঙ্গাইল। কয়েকশ’ বছর আগে থেকে টাঙ্গাইল শাড়ি পৃথিবী বিখ্যাত। এ শাড়ির অন্য দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। ওই দেশের জিআই স্বীকৃতি বাতিল করে বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানান তিনি।টাঙ্গাইল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ আর্টিজেন্স ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড এবং বল্লা এলাকা তন্তুবায় সমবায় সমিতির সভাপতি মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, প্রাচীণকাল থেকে টাঙ্গাইল শাড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাঁতিদের সুক্ষ্ম দক্ষতায় সুনিপুনভাবে তৈরি হচ্ছে। ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালে দেশভাগের পর টাঙ্গাইলের তাঁতিদের কেউ কেউ ভারতে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে। সেখানেই তারা আদি পেশা ‘তাঁত শিল্পের’ কাজ করছে।এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইল শাড়ি, মধুপুরের আনারস ও জামুর্কির সন্দেশ জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এটা যে এখানকার অর্জন, সেটার ৫০ বছরের সুদীর্ঘ ধারাবাহিকতা দিতে হয়। অথচ টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি আড়াইশ’ বছরের পুরাতন। টাঙ্গাইল শাড়ি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার রাখে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া ২০১৭ সালে টাঙ্গাইল শাড়ি সরকার কর্তৃক ব্র্যান্ডিং হয়েছে।তিনি আরও জানান, ভারত যে ঘটনাটা ঘটিয়েছে, তারা ডকুমেন্টেশনে উল্লেখ করেছে, পাথরাইলের বসাক পরিবারের আদি পুরুষরা সেখানে গিয়ে তাঁত শাড়ির পাড়ের ডিজাইন চেঞ্জ করে একটা ভিন্ন প্রকার উদ্ভাবন করেছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে স্টাডি করা শুরু হয়েছে। তিনি জেলা প্রষশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভা করেছেন। মন্ত্রণালয় টু মন্ত্রণালয় কথা বলে এ বিষয়ে কীভাবে আবেদন করা যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও আপিল করার সুযোগ থাকলে সে বিষয়েও কথা বলা হবে।
১ বছর আগে
তানভীর আহাম্মেদ, খানসামা প্রতিনিধি: দিনাজপুরের খানসামায় ঐতিহ্যবাহী আওকরা মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো এই মসজিদের দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হাতে থাকলে বাস্তব চিত্র হলো, সংস্কারের অভাবে নানা সমস্যায় জর্জরিত এ মসজিদটি।সরেজমিনে ৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার মসজিদটি ঘুরে দেখা যায়, জেলার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম খানসামা উপজেলার আওকরা মসজিদটি। এটি উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের হাসিমপুর-এলাকায় মির্জার মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত।কালের সাথী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় আড়াইশ বছরের ও বেশি বছর পূর্বের এ স্থাপনাটি ।এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, একসময় মসজিদের আশেপাশে মুসলিম জনবসতি ছিল। তাই মির্জা লাল বেগ নামের একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ বাংলা ১১৭২ সালে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য এটি নির্মাণ করেছিলেন। এখানে তারা নামাজ আদায় ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকতেন।তাদের ধারণা, ব্রিটিশদের শাসনের সময় অথবা অন্য কোন কারণে তারা মসজিদটির আশপাশ এলাকা ছেড়ে অন্য কোন জায়গায় চলে যায় । ফলে অযত্ন-অবহেলায় এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল পড়ে থাকে। নীলফামারী সৈয়দপুর এলাকার সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, কাহারল বাজারে গরু কিনতে গেলে লোকে মুখে তিনি শুনেছেন যে, আওকরা মসজিদের মানত করলে মনের নেক বাসনা পূরণ হয়। পরে তিনি মসজিদটি দেখার জন্য এসে দেখেন পরিত্যক্ত অবস্থায় ঝোপঝাড়ে ঢেকে পড়ে আছে।এলাকাবাসী সূত্রে আরও জানা যায়, জিন, ভূত, সাপ-পোকামাকড় থাকার কারণে কেউ যেতে না পারায় পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়। পরে তিনি ৩০ থেকে ৪০ জন মাদ্রাসা ছাত্রদের নিয়ে এসে পরিষ্কার করে মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালিয়ে স্থানীয়দের নামাজ আদায় করার কথা জানিয়ে তিনি। কিন্তু তিনদিন পর সে স্বপ্নে দেখেন তাকে মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতে বলা হচ্ছে এবং এতে তার কোন ক্ষতি হবে না বলেও স্বপ্নে জানানো হয়। পরে তিনি স্থানীয়ভাবে মসজিদ এলাকায় বসবাস শুরু করেন।লোকজন মসজিটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় চলাচলের সময় এটির মধ্যবর্তী অংশে দূর থেকে দাঁড়িয়ে কথা বললে এক সময় জোরে প্রতিধ্বনির সৃষ্টি হত। তাই শুনে তারা ভাবত মসজিদটি তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে। এ থেকে মসজিদটির নাম হয়ে যায় আওকরা মসজিদ অর্থাৎ কথা বলা মসজিদ।মজার ব্যাপার হলো, মীর্জা সাহেব মসজিদটি প্রতিষ্ঠার সময় কি নাম রেখেছেন তাও কেউ বলতে পারে না এখন। ওই এলাকার একাধিক প্রবীণ লোকজনের সাথে আলোচনা করেও মসজিদটিতে সর্বশেষ কত সালে নামাজ আদায় হয়েছে তা জানা যায়নি।তবে মীর্জা লাল বেগের ওই মসজিদকে ঘিরে র্মীজার মাঠে একটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে দুইটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। এখনও এটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শব্দ করে কথা বলে প্রতিধ্বনি শোনার আশায়।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঐতিহ্যবাহী আওকরা মসজিদটি প্রত্নতত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও কাগজ কলম আর সাইনবোর্ডে তা সীমাবদ্ধ ।
১ বছর আগে