প্রকাশ : ০১ জানুয়ারী ২০২৪ ০৬:৪৯ এএম
আলুর পাইকারি দামে স্বস্তি, খুচরা দামে অস্বস্তি
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আগাম জাতের আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান খুচরা বাজারে আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় ৪০ থেকে ৪৫ দিনেই আলু তুলে বেশি দামে বিক্রি করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। সেজন্য জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আলুচাষিদের আগাম জাতের আলু পরিপক্ব হওয়ার আগেই তুলে বাজারে বিক্রির ধুম পড়েছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে আলুর দাম সহনীয় থাকলেও খুচরা বাজার এখনও লাগামহীন। ফলে কৃষকরা খুশি হলেও ভোক্তারা আছেন কষ্টে।
উপজেলা কৃষি অফিস ও চাষিরা জানান, এ উপজেলার চাষিরা সাধারণত গ্রানুলা ও পাকড়ি জাতের আলুর চাষ করে থাকেন। গ্রানুলা আলু জমিতে লাগানো থেকে পরিপক্বতা আসতে সময় লাগে ৬৫-৭০ দিন। আর পাকড়ি জাতের আলুর পরিপক্বতা আসতে সময় লাগে ৮০-৯০ দিন। কিন্তু এ বছর আলুর দাম ভালো থাকায় কৃষকরা ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই ক্ষেত থেকে গ্রানুলা ও ৫০-৫৫ দিনের মধ্যেই পাকড়ি জাতের আলু তুলে বিক্রি করছেন। আগাম তোলায় বর্তমানে এক বিঘা জমিতে গ্রানুলা ৫০-৫৫ মণ ও পাকড়ি ৪০-৪৫ মণ পাওয়া যাচ্ছে। অথচ এই আলু পরিপক্ব করে ক্ষেত থেকে তুললে দ্বিগুণ ফলন পাওয়া যেতো।
সরেজমিনে কালাই উপজেলার ইমামপুর ও বেগুনগ্রামে দেখা গেছে, চাষিরা নারী শ্রমিক নিয়ে মাঠ থেকে আগাম জাতের আলু তুলছেন। সাদা সেভেন, ১২-১৩, ক্যারেজ, গ্রানোলা, রোমানা, লাল পাকরি ও স্ট্রিক জাতের আলু তোলা হচ্ছে। জমি থেকেই পাইকাররা কিনে নিচ্ছেন। এতে কৃষকের খরচ কম হচ্ছে। সাদা সেভেন ও ক্যারেজ আলুর মণ ১৯০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা এবং লাল পাকরি ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
৩৮ শতাংশ জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করেছিলেন কালাইয়ের ডিংড়াপাড়া গ্রামের আবদুল লতিফ। তিনি রোপণের ৫১ দিনে ফসল ঘরে তুলেছেন। ফলন হয়েছে ৫৫ মণ। উৎপাদন খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। ১ হাজার ৮৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন ১ লাখ ১ হাজার ৭৫০ টাকায়। লাভ হয়েছে
৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা।
তিনি জানান, ১০-১৫ দিন পর অবশিষ্ট আলু তুলবেন। এতে যে লাভ হবে, তাতে কয়েক বছরের লোকসান পুষিয়ে যাবে।
২০ শতাংশ জমি থেকে ৩০ মণ আলু তুলেছেন বেগুনগ্রামের কৃষক খোকন মিয়া। তিনি নিজের পরিবার নিয়ে আলু রোপণ করার জন্য তার ৪-৫ হাজার টাকা কম খরচ হয়েছে। ১৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে প্রায় ৩৯ হাজার টাকা লাভ হয়েছে তার।
কিন্তু আলুর দাম নিয়ে কষ্টে আছেন ক্রেতারা। পুনট কাঁচাবাজারের শিকটা গ্রামের আবদুল কাফি বলেন, কখনও ৮০ টাকা কেজি আলু কিনতে হয়নি। মৌসুম শেষে আলুর দাম বাড়তে পারে। কিন্তু শুরুতে এমন হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ক্রেতারা।
পৌর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মাসুদ রানার দাবি, পাইকারি দাম বেশি হওয়ায় এর প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েছে। জাতভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে।
আগাম জাতের আলু ঢাকাসহ বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করার বিষয়ে ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, কাঁচামালের দাম আমদানির ওপর দাম ওঠা-নামা করে। এখন যে দামে আলু কেনা-বেচা হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক। পাইকারিতেই ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা কেজি। গত বছর এ সময় আলু ১৪ থেকে ১৬ টাকা কেজি কেনা-বেচা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, এবার আলু চাষের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। কোনো রোগবালাই তেমন ছিল না। ফলন হয়েছে ভালো। তাই দামটাও বেশি। সব মিলে আলুচাষিদের মনে আনন্দ। তবে খুচরা বাজারে আলুর দাম নিয়ে যে অস্বস্তি, তা হয়ত বেশি দিন থাকবে না।
...
প্রকাশ : ১ বছর আগে
আপডেট : ৪ মাস আগে
আলুর পাইকারি দামে স্বস্তি, খুচরা দামে অস্বস্তি