প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৪ ০২:০১ এএম
বীরগঞ্জে ছদ্মবেশে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান, নথি জব্দ
বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরে বীরগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে গ্রাহকের জমির দলিল রেজিস্ট্রেশনে ঘুষ দাবির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ছদ্মবেশে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
৩০ মে বৃহস্পতিবার সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে গ্রাহকের জমির দলিল রেজিস্ট্রেশনে ঘুষ দাবির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের বীরগঞ্জ উপজেলা কার্যালয় থেকে ৪ সদস্যর একটি টিম এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে টিম প্রথমে ছদ্মবেশে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এবং কোনো দলিলের দাতা ও গ্রহীতা হয়রানির শিকার হচ্ছে কিনা তা সরেজমিনে যাচাই করে।
৩০ মে বৃহস্পতিবার দুদকের দিনাজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, বীরগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার রিপন চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে দলিল রেজিস্ট্রিকালে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ পেয়েছে দুদক। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান পরিচালনার সময় সাব-রেজিস্ট্রার রিপন চন্দ্র মন্ডলের অফিসে দুদক কর্মকর্তারা প্রবেশ করতে চাইলে উত্তরে সাব রেজিস্টার বলেন, আমার কাছে চাবি নেই পরে দুদক কর্মকর্তারা তালা ভেঙ্গে সাব রেজিস্টার অফিস কক্ষে প্রবেশ করে। অফিসে প্রবেশ করার পর অভিযুক্ত সাব-রেজিস্ট্রার রিপন চন্দ্র মন্ডলকে দুদক টিম জিজ্ঞাসাবাদ করে, কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ সঠিকভাবে কোনটির উত্তর দিতে পারেননি। এছাড়াও সাব রেজিস্টারের কক্ষে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দুদক কর্মকর্তারা দেখতে চাইলে সেখানেও তিনি নানান রকম তালবাহানা করেন। বলেন বলে সিসি ক্যামেরার পাসওয়ার্ড আমার জানা নেই। তাৎক্ষণিকভাবে সাবরেজিস্টারের অফিস কক্ষে বিভিন্ন নথিপত্র দুদক কর্মকর্তারা তদন্তের স্বার্থে জব্দ করে এবং সেই সাথে সিসি ক্যামেরার ডিভাইসটিও জব্দ করে।
অভিযোগকারী মো. মিজানুর রহমান(২৬) বলেন, ‘আমি আমার ৩৭.৫ শতক জায়গা রেজিস্ট্রি করার জন্য যাই। তখন আমার কাছে সাব রেজিস্টার সাহেব ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে দুদকের হট লাইন ১০৬ নাম্বারে ২৯ মে বুধবার বিষয়টি অবগত করি। বিষয়টি অবগত করার পরপরই আমাকে ৩০ মে দুদক থেকে ছদ্মবেশে বীরগঞ্জ উপজেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এসে সহযোগিতা করে।’
এ বিষয়ে উপজেলার অভিযুক্ত সাব-রেজিস্টার রিপন চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘আজ দুদকের একটি টিম আমার অফিসে এসে দলিলের কিছু নথিপত্র নেন। এখানে সরকারি ফি এর উপর বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।‘ সাংবাদিকরা সাব রেজিস্টার রিপন চন্দ্র মন্ডলকে প্রশ্ন করেন যে আপনার অফিস রুমের তালা কেন ভাঙতে হলো আর আপনার অফিস রুমে সিসি ক্যামেরার পাসওয়ার্ড আপনার কি জানা নেই? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেনি।
দুর্নীতি দমন কমিশন দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, ‘আপাতত দৃষ্টিতে প্রাথমিকভাবে আমরা কিছুটা সত্যতা পেয়েছি। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করেছি। অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ যাচাই করে কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে টিম।’
দুর্নীতি দমন কমিশন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান পরিচালনার কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী জোরালোভাবে দুদকের সহকারী পরিচালকের কাছে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসার রিপন চন্দ্র মন্ডলকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের প্রাঙ্গণে মিছিল করা শুরু করেন। এক পর্যায়ে বীরগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
...
প্রকাশ : ১ বছর আগে
আপডেট : ৪ মাস আগে
বীরগঞ্জে ছদ্মবেশে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান, নথি জব্দ