প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৪ ১২:০০ পিএম
কালীগঞ্জে জিনহুয়াং আম চাষে চমক দেখাচ্ছেন উদ্যোক্তা সুরত আলী
কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ড্রাগনের পর কৃষি উদ্যোক্তা সুরত আলী এবার আম চাষে চমক দেখাচ্ছেন। তার বাগানে জিনহুয়াং নামের একটি বিদেশি জাতের আম গাছে সিজেনে ও অফসিজনে আম ধরছে কয়েকবার। এবার সিজনের মুকুল রেখে দিলেও তিনি মূলত অফসিজনে আম উৎপাদন করতে চান। সাইজে বড় ও ভালো স্বাদের এই আম অফসিজনে কাঙ্খিত দামে বিক্রয় করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা সুরত আলী জানান, ৪ বছর আগে ভিয়েতনাম থেকে জিনহুয়াং আমের এ জাতটি সংগ্রহ করে দিয়েছেন তার ভাগ্নে ডক্টর রস্তম আলী। এরপর তিনি ওই গাছের সায়ন দিয়ে চারা তৈরি করে ৪ বিঘা জমিতে ৫০০টি চারা রোপণ করেন। গাছ থেকে গাছ ৮ ফিট ও লাইন থেকে লাইন ১২ ফিট দূরত্ব বজায় রেখে আমের চারা লাগানো হয়েছে।
তার লাগানো এই চারাগুলোর বয়স প্রায় ৩ বছর। দুই বছর বয়সেই গাছে আমের মুকুল আসে। প্রথমবার মুকুল ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। এবার সিজনের মুকুল রেখে দিয়েছেন। গ্রীষ্মকাল জুড়েই গাছে মুকুল আসতে থাকবে। ফলে সিজেনের আমতো পাবেনই, এছাড়া অফ সিজনেও কয়েকবার আম হারভেস্ট করতে পারবেন। এ জাতের আম বেশ বড় সাইজের ও সুস্বাদু বলে তিনি জানান। আম গাছের পরিচর্যা ও রোগবালাই দমন করা নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, আম গাছে তেমন কোনো রোগবালাই হয় না।
এছাড়া পোঁকা মাকড়ের আক্রমণও খুব একটা বেশি হয় না। তারপরও রোগবালাই ও পোঁকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে মাঝে মধ্যে ছত্রাক নাশক ও কীটনাশক স্প্রে করা হয়। এছাড়া গাছে মুকুল আসার আগে ও আমের গুটি মটর দানার মতো হলে কার্বান্ডাজিম ও সাইপারম্যাথিন গ্রুপের ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। ফুল-ফলের সময় নিয়মিত সেচ দেয়া হয়। এ আম চাষ করে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন কৃষক সুরত আলী।
তাঁর বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে এই রসাল সুমিষ্ট আম। বিদেশি আমের চাষাবাদে কৃষক পর্যায়ে আগ্রহ বাড়ছে। আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে বিদেশি আম চাষে সফলতা পেয়েছেন সুরত আলী। দেশিয় আমের তুলনায় এসব আম বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি দামে। কালীগঞ্জে এই প্রথম সুরত আলী বিদেশি আমের চাষাবাদ শুরু করেছে। আমের মধ্যে বিখ্যাত এ জাতের নামকরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটি এই আম চাষের উপযোগী।
প্রতিটি আমের ওজন এক কেজির কাছাকাছি। এটি বেশ সুস্বাদু এবং সুমিষ্ট। আমের রঙ ও আকারের কারণে এটি বেশ আকর্ষণীয়। এই আমগাছের বৈশিষ্ট হল বছরের প্রতিদিনই গাছ গুলোতে মুকুলের দেখা মেলে। বাজারে আমের সময়ে যে সমস্ত জাতের আম পাওয়া যায়, সে আম গুলোর স্বাদের দিক দিয়ে এর স্বাদ অনন্য। একটা নির্দিষ্ট সময়েই এ আম পাওয়া যায়। তবে এর ফলন খুব বেশি।
এর প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রতিদিনই মুকুল ফুটে আর একটি থোকায় অনেকগুলো আম আসে, আমের ভেতর আঁশ নেই, খেতে খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি। এর ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আমের আবরণ খুব পাতলা এবং আমের রং হলদে হলে খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠে। আমচাষী সুরত আলী এ জাতের আম চাষ করলে আশানুরূপ ফল পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি বলেন, আমাদের কৃষি উদ্যোক্তরা বিভিন্ন সোর্স থেকে আমের বিভিন্ন জাত সংগ্রহ করছেন। তবে বাংলাদেশে বারি উদ্ভাবিত আমের বিভিন্ন ভালো মানের জাত আছে।
এছাড়া কাটিমন, ল্যাংরা ও হিম সাগর আমও যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান। তবে রঙ, লেইট ভ্যারাটি ও বছরে কয়েকবার হারভেস্ট করা যায় এমন কিছু বিদেশি ভ্যারাইটির প্রতি আমাদের কৃষকরা ঝুঁকছেন। কারণ, আমের সুন্দর রঙ ও অসময়ে উৎপাদিত আমের বাজার দর ভালো পাওয়া যায়।
তবে আমাদের দেশে বারি উদ্ভাবিত লেইট ভ্যারাইটি বারি-৪ যথেষ্ট ভালো একটি ভ্যারাইটি। এছাড়া বছরে দুই তিন বার মুকুল আসা জাত বারি-১১ চাষে কৃষকরা
বেশ সফলতা পাচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন।
...
প্রকাশ : ১ বছর আগে
আপডেট : ৪ মাস আগে
কালীগঞ্জে জিনহুয়াং আম চাষে চমক দেখাচ্ছেন উদ্যোক্তা সুরত আলী