নিয়োগে অনিয়ম, প্রশ্নবিদ্ধ পবিপ্রবি প্রশাসন

নিয়োগে অনিয়ম, প্রশ্নবিদ্ধ পবিপ্রবি প্রশাসন

...

প্রকাশ : ১ বছর আগে

আপডেট : ৪ মাস আগে

নিয়োগে অনিয়ম, প্রশ্নবিদ্ধ পবিপ্রবি প্রশাসন

নিয়োগে অনিয়ম, প্রশ্নবিদ্ধ পবিপ্রবি প্রশাসন

পবিপ্রবি প্রতিনিধি: স্বজনপ্রীতি ও নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগে প্রশ্নবিদ্ধ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।গত ১৬ নভেম্বর ২০২২ এ প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ মোট ৩৯ জনের নিয়োগের কথা থাকলেও গত ২ ডিসেম্বর ২০২৩ এর রিজেন্ট বোর্ডে সর্বমোট ৫৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সেকশন অফিসার পদে ৩ জনের পরিবর্তে ৬ জন, ল্যাব এটেন্ডেন্ট পদে ৬ জনের পবিবর্তে ৯ জন এবং অফিস সহায়ক পদে ৫ জনের পরিবর্তে ১১ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম তথা জনবল কাঠামোর বাইরে গিয়ে অনুমোদনহীন পদে নিয়োগ দেওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে সর্বমোট ৩০ জন সেকশন অফিসার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে সেখানে ৪৪ জন কর্মরত আছেন। তারপরেও অতিরিক্ত ৬ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আইকিউএসি বিভাগের হিসাবরক্ষক পদের অনুমোদন না থাকলেও ১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।একইসাথে এ নিয়োগে স্বজনপ্রীতির ছাপ দেখা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ছেলেসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দেওয়ায় এ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিতর্ক এড়াতে পারেনি নিয়োগ বোর্ড। বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি এন্ড মার্কেটিং বিভাগের ইউজিসি ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কোনে অনুমোদন না থাকলেও সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে অনুমোদনহীন এই পদের জন্য গত ২৬ মে ২০২২ এ প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ১ জন নিয়োগের কথা বলে সেখানে ২ জন নিয়োগ দেওয়া হয়। তাছাড়া শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনুষদীয় ডিন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মতামত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ থাকলেও এ নিয়োগের ক্ষেত্রে উক্ত বিভাগ সংশ্লিষ্ট কারো মতামত নেওয়া হয়নি বলে জানা যায়। একইভাবে কৃষিতত্ত্ব বিভাগে ১ জনের পরিবর্তে ২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।এছাড়াও বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের মতামত উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ল্যাব এটেন্ডেন্টসহ অন্যান্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মিয়া জানান,  ‘বিভাগীয় প্রধানের রিকুইজিশন ছাড়া এমনকি তাদের মতামত না নিয়েই কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া নীতি বহির্ভূত।’ এছাড়াও বিভাগীয় প্রধানদের অবমূল্যায়ন করে এই ধরনের অদক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়ায় বিভাগীয় কার্যক্রম ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি ইউজিসি ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনুমোদনের বাইরে নিয়োগ দিয়ে তাদের বেতন দেওয়ার যথেষ্ট অর্থের যোগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নেই। যথেষ্ট অর্থের যোগান না পেয়ে শিক্ষকদের পেনশন খাত তথা প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে খরচের আশংকা করেন তিনি। এতে শিক্ষকরা অবসরে গেলে সঠিক সময়ে পেনশন ভাতা না পাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসুকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘বার বার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া এবং নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন বিষয়। সে কারণে ফাঁকা আসনে জনবল বাড়িয়ে নিয়োগ দিয়েছি।’ ফাঁকা আসন থাকলেই বিজ্ঞপ্তি ছাড়া নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ দিতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।তিনি আরও বলেন, ‘কিছু বিভাগে শিক্ষক সংকট থাকায় ইউজিসির অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও সেসব পদে নিয়োগ দিতে হয়েছে। আর যে সকল পদে ইউজিসির আর্থিক অনুমোদন নেই, সে সকল পদে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে অর্থ খরচ করা হবে না।’কিন্তু ইউজিসির অনুমোদন না মিললে কীভাবে অর্থ খরচ করা হবে এই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি তিনি। এছাড়াও নিয়োগ পরীক্ষার আগে প্রার্থী চূড়ান্তের গুঞ্জনে যাদের নাম শোনা গিয়েছে তারাই নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টিকে সম্পূর্ণ কাকতালীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ বলেন, ‘এসব অনিয়ম নিয়ে আমরা উপাচার্যের সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো ঠিকই অনিয়মগুলো করেছেন। শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কথা বলেন। কিন্তু শিক্ষকদের মতামতকে অগ্রাহ্য করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। আমরা শীঘ্রই সাধারণ সভা করে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সিদ্বান্ত গ্রহণ করবো।’বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘এভাবে অনুমোদনহীন এবং নিয়ম বহির্ভূত পদে নিয়োগ দেওয়া অন্যায়, ইউজিসি অবশ্যই এই অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।’
  • শেয়ার করুন-

সংশ্লিষ্ট

সাংবাদিকদের সঙ্গে বশেমুরবিপ্রবিপির উপাচার্যের মতবিনিময়

সাংবাদিকদের সঙ্গে বশেমুরবিপ্রবিপির উপাচার্যের মতবিনিময়

বাকৃবির আবাসিক এলাকায় ২ লক্ষ টাকার জিনিসপত্র চুরি

বাকৃবির আবাসিক এলাকায় ২ লক্ষ টাকার জিনিসপত্র চুরি

জবি ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে ঈদ আপ্যায়ন

জবি ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে ঈদ আপ্যায়ন

প্রশাসনকে না জানিয়ে প্রেস ক্লাব খুললেন বাকৃবির শিক্ষক, নিজে হলেন সভাপতি

প্রশাসনকে না জানিয়ে প্রেস ক্লাব খুললেন বাকৃবির শিক্ষক, নিজে হলেন সভাপতি

ছুটিতে বন্ধ পবিপ্রবির আবাসিক হল, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

ছুটিতে বন্ধ পবিপ্রবির আবাসিক হল, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

পবিপ্রবিতে নিয়োগে অনিয়ম খতিয়ে দেখছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি

পবিপ্রবিতে নিয়োগে অনিয়ম খতিয়ে দেখছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি

নিয়োগ বাতিল চেয়ে এবার পবিপ্রবি'র ভিসি-রেজিস্ট্রারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিয়োগ বাতিল চেয়ে এবার পবিপ্রবি'র ভিসি-রেজিস্ট্রারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

পবিপ্রবিতে কর্মচারী ইউনিয়নের প্রথম কমিটি গঠন

পবিপ্রবিতে কর্মচারী ইউনিয়নের প্রথম কমিটি গঠন

পবিপ্রবিতে কর্মকর্তার হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত, শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও

পবিপ্রবিতে কর্মকর্তার হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত, শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও

মন্তব্য করুন