প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪ ০২:৩৬ এএম
ভরতখালী জয় কালী মন্দিরে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী মনোবাসনা মেলা
সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হাট ভরতখালীর ঐতিহ্যবাহী তীর্থস্থান শ্রী শ্রী জয় কালী মন্দির চত্বরে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাসব্যাপী মনোবাসনা পূরণের মেলা। মেলায় হরেক রকমের পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানত পূরণের জন্য পাঠা বলি দিতে আসছেন ভক্তবৃন্দ।
অনেক আগের কথা, তৎকালীন ভরতখালী জয় কালী মন্দিরের সামনে যমুনা নদীর পানিতে একখানা কাঠ ভেসে আসে। জমিদার স্বপ্নে দেখেন এই কাঠ সংরক্ষণ করতে হবে। সেই সময় থেকে কাঠটি এই মন্দিরের মধ্যে অবস্থান করছে। প্রতি বছরের বৈশাখ মাসে শনি ও মঙ্গলবার হিন্দু ভক্তগণ পাঠাবলি দিয়ে থাকেন এবং বৈশাখ মাসজুড়ে মেলা বসে। ভরতখালী কালী মন্দিরের সামনে ১ বৈশাখ থেকে মাসব্যাপী মেলা চলে। সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস, এ সময় মন্দিরে পূজা অর্চনা ও বলি দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়।
প্রচলতি শ্রুতি কথা থেকে জানা যায়, ভরতখালী কাষ্ঠকালি মন্দির এ অঞ্চলের হিন্দু ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান। প্রায় তিনশত বছর পূর্বে এ মন্দির নির্মিত হয়েছিল। তৎকালীন জমিদার রমনী কান্ত রায় শ্রী শ্রী কাষ্ঠকালি দেবতার স্বপ্নাদেশ পান যে, ‘আমি তো ঘাটে এসেছি, তুই আমাকে পূজা দে।’ জমিদার এই পোড়া কাঠের টুকরোটিকে পূজা দিলে এখান থেকেই এটি কালী মূর্তিতে রূপান্তরিত হয়। তখন থেকে নিয়মিত পূজা অর্চনা হয়ে আসছে।
গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে এ মেলা বসে, পুণ্যার্থীদের পাশাপাশি মেলায় হাজারো দর্শনাথীদের ভিড় হয়। ভারতসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ মন্দিরে মানত নিয়ে আসেন মনোবাসনা পূরণের আশায়। মন্দিরে ধূপ, মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালিয়ে ও তেল দিয়ে তারা মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন। মন্দিরের চারপাশে অনেককেই পাঠা (ছাগল) নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মনোবাসনা পূরণের লক্ষ্যে প্রার্থনা শেষে মন্দিরের গুরুর (ঠাকুর) নির্দেশে ৫০ থেকে শতাধিক জোড়া পাঠা বলি দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও প্রার্থনা শেষে অনেকেই আবার বিভিন্ন খাবার ও মিষ্টি বিতরণ করছে। এ উপলক্ষে মন্দিরের পাশে পাকুর তলায় প্রায় ৭ একর এলাকা জুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ মনোবাসনা পূরণে ও ঘুরতে আসেন এখানে। মেলায় নাগর দোলা, বাহারি খাবার, বাঁশের তৈরি কুলা, ডালি, চালনা, মাটির তৈরি হাড়ি, থালা, বিভিন্ন মূর্তি, পুতুল, বাঘ, আম এবং নানা তৈজসপত্রের পসরা সাজিয়ে দোকানিরা বেচা কেনা করছেন।
এলাকাবাসী জানান, ভরতখালী কাষ্ঠকালি মন্দির উত্তরাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী মন্দির। এখানে গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলাসহ অন্যান্য জেলার মানুষ মন্দিরে পূজা দিতে ও মনোবাসনা পূরণে আসে।
জয় কালী সেবা সংসদ সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার সিনহা বলেন, এই মন্দিরে আমি দীর্ঘ ৪৮ বছর যাবত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আশা করি, এ বছর সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এই মেলা চলবে। এটা একটি পুরাতন ঐতিহ্যবাহী জাগ্রত মন্দির।
...
প্রকাশ : ১ বছর আগে
আপডেট : ৪ মাস আগে
ভরতখালী জয় কালী মন্দিরে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী মনোবাসনা মেলা