প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৩৩ এএম
জুনে উদ্বোধন: ঢাকা থেকে বেনাপোল রেল যাত্রা মাত্র ৩ ঘণ্টায়
যশোর (দক্ষিণ) প্রতিনিধি: পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর রেললাইন স্থাপন কাজ আগামী জুনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। এতে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে, যার অপেক্ষায় দিন গুনছে এ অঞ্চলের কোটি মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরুতে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রাথমিকভাবে৩টি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রেল বিভাগ। প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত করতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের।
এই রেললাইন চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১ কোটি মানুষ সরাসরি উপকার পাবেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। সুবিধা পাবেন এ অঞ্চলের কৃষিজীবীরাও।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর রেললাইন প্রকল্পের যশোর অংশের কাজ এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। বিভিন্ন স্থানে স্টেশন নির্মাণ, রেললাইন স্থাপন ও সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। খুলনা ও বেনাপোল থেকে ঢাকাগামী ট্রেনও এ রুট ব্যবহার করবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সঙ্গে রেল যোগাযোগ ঘটবে এ লাইন ব্যবহার করে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের উপশাখা হিসেবেও কাজ করবে এ রুট। এখন খুলনা, যশোর, বঙ্গবন্ধু সেতু (যমুনা সেতু) হয়ে ঢাকায় যেতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। এই রুট চালু হলে খুলনা, যশোর ও বেনাপোল থেকে ৩ঘণ্টায় রাজধানীতে পৌঁছানো যাবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের আওতায় ৪১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে রেললাইন স্থাপনসহ ১৪টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ৬৬টি বড় সেতু, ২৪৪টি ছোট সেতু এবং ৩০টি রেল ক্রসিং গেটও তৈরি হচ্ছে। এই রেল সংযোগ যশোরের রূপদিয়া থেকে জামদিয়া, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী, মহেশপুর, মুকসুদপুর, নগরকান্দা, ভাঙ্গা, পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাবে ট্রেন।
পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার শারাফত হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, প্রকল্পের যশোর সেকশনের কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন হবে, তিনি আশা প্রকাশ করেন। এতে যশোর-খুলনার মানুষ ঢাকায় গিয়ে কাজ সেরে একদিনেই ফিরে আসতে পারবেন।
এদিকে গত জুলাই মাসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ‘আগামী ২০২৪ সালের জুন মাসে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত পুরো পথে ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারবে। এর আগে আগামী সেপ্টেম্বরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।’
প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় মেইন লাইন বসানো হচ্ছে ১৬৯ কিলোমিটার, লুপ ও সাইডিং লাইন আছে ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার এবং ডাবল লাইন ৩ কিলোমিটারসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। ২৩ দশমিক ৩৭৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ১ দশমিক ৯৮ র্যাম্প, ৫৯টি মেজর ব্রিজ, ২৭২টি মাইনর ব্রিজ (কালভার্ট আন্ডারপাস), ২৯টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় ১০০টি আধুনিক ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ বা কোচ কেনা হয়েছে। এগুলো নির্মিত হয়েছে চীনে। একদিকে রেলপথ নির্মাণকাজ এগিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে চীন থেকেও চলে এসেছে কোচ।
কোচ কেনার প্রকল্প পরিচালক ফকির মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ছয় ধাপে চীন থেকে কোচগুলো বাংলাদেশে আনা হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ১৩ জুন শেষ ধাপের কোচের চালান চলে এসেছে। ফলে আমাদের হাতে এখন ১০০ কোচ রয়েছে, যা দিয়ে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালানো যাবে।’
নির্মাণাধীন ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশন ঘুরে দেখা গেছে ঢাকা-ভাঙ্গা রেল চলাচল এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে এ রুটে ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে। ভাঙ্গায় রেল জংশন নির্মাণকাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা রেলস্টেশনে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত টেস্টরান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
জানা গেছে বেনাপোল সীমান্ত পথে ভারতগামী যাত্রীর সংখ্যা বছরে প্রায় ১৮ লাখ। ঢাকা-বেনাপোল রেলপথ চালু হলে সাতক্ষীরা ও খুলনার মৎস্য ব্যবসায়ীদের ভাগ্যের চাকাও খুলে যাবে। বাড়বে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ও রপ্তানি। ফেডারেশন অব কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টের সভাপতি শামছুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। এই সেতু হয়ে রেল যোগাযোগ শুরু হলে শুধু দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল নয় গোটা দেশের মানুষের জন্য মহা আশীর্বাদ বয়ে আনবে।
...
প্রকাশ : ১ বছর আগে
আপডেট : ৪ মাস আগে
জুনে উদ্বোধন: ঢাকা থেকে বেনাপোল রেল যাত্রা মাত্র ৩ ঘণ্টায়