প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪ ০৬:০৭ এএম
জেলেদের কষ্টের টাকা যায় দাদন ব্যবসায়ীদের পকেটে
মতলব উত্তর (চাঁদপুর) প্রতিনিধি: চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার প্রধান ২টি নদী পদ্মা ও মেঘনার তীরবর্তী গ্রামগুলোর জেলেরা হতদরিদ্র। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে দাদন ব্যবসায়ীদের লাল খাতায় নাম লিখিয়ে তাদের চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। এর ফরে জেলেদের কষ্টের আয়ের টাকার সবটাই দাদন ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের বাবুর বাজার, কলাকান্দা ইউনিয়নের দশানী বাজার, ফরাজীকান্দী ইউনিয়নের আমিরাবাদ বাজার, এখলাসপুর লঞ্চঘাট, মোহনপুর বেড়ীবাঁধ, জহিরাবাদ মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত।
ষাটনলের বাবুর বাজার, আমিরাবাদ বাজার, কালির বাজার, কালিপুর বাজার, নন্দলাল পুর বাজার, ফরাজীকান্দীর মুক্তিরপল্লী ও দশানী বাজারে রয়েছে শতাধিক মাছের গদি। গদি মালিকরা সাধারণ জেলেদের দাদন দিয়ে থাকেন।
জেলে আনার, কামাল, হজলাসহ আরও কয়েকজন জানান, জেলেরা যে পরিমাণ টাকা দাদন নেন, প্রতিদিন সেই টাকার ১৫ শতাংশ দাদন ব্যবসায়ীদের দিতে হয়। পাশাপাশি জেলেদের নিজ নিজ দাদন ব্যবসায়ীর গদিতে (আড়তে) এনে মৌখিক নিলামে মাছ বিক্রি করতে হয়। আর নিলামে ওঠার আগেই জেলেদের মজুত মাছের এক- দশমাংশ গদিদার সরিয়ে রাখেন। সরিয়ে ফেলা মাছ পরে আবার নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়। আর সবটাই লিখে রাখা হয় লাল খাতায়। একবার এক গদি থেকে দাদন নিয়ে কোনো জেলে পরিশোধ করতে পারে না নিজ আয়ে। এক গদির দেনা মিটাতে হাত পাততে হয় আরেক গদিতে।
বোরচর গ্রামের আবুল মাঝি বলেন, গদি মালিকরা প্রথমে মাছ, এরপর নগদ টাকা কেটে নেন। এভাবে মাছ বিক্রির অর্ধেক টাকা তাদের পকেটে চলে যায়। এই কারণে দিনরাত পরিশ্রম করেও আমাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে।
বাবুর বাজারের গদি মালিক ফুলচাঁন জানান, জেলেরা গদি থেকে দাদন নিয়ে নদীতে মাছ ধরেন। জেলেদের মাছ ধরা জালের পুনঃবুনন করতে অনেক টাকার দরকার হয়। জেলেরা এত টাকা জোগার করে জালের পুনঃবুনন করতে পারে না বলেই তারা দাদন নিতে বাধ্য হয়।
আমিরাবাদ বাজারের গদি মালিক রকমান জানান, জেলেরা আমাদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে মাছ ধরেন। আমরা কাউকে জোর করে দাদনের টাকা দিই না। জেলেরা গরিব। নিজেদের প্রয়োজনে আমাদের কাছে এসে তারা টাকা নেন। সারাদেশের মতো একই নিয়মে আমরা জেলেদের কাছ থেকে মাছ ও টাকা আদায় করি।
এই বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, একাধিকবার চেষ্টা করেও জেলেদের দাদন ব্যবসা থেকে দূরে রাখতে পারছি না। সরকারিভাবে জেলেদের জন্য সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করা হলে হয়তো দাদন ব্যবসা বন্ধ হবে।
...
প্রকাশ : ১ বছর আগে
আপডেট : ৪ মাস আগে
জেলেদের কষ্টের টাকা যায় দাদন ব্যবসায়ীদের পকেটে