দেশজুড়ে বিনাপারিশ্রমিকে সাপ ধরে বেড়াচ্ছে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ
হুমায়ুন আহমেদ: শত ব্যস্ততার মধ্যেও বিষধর সাপের খবর পেলে ছুটে যান স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের সদস্যরা। বিনা পারিশ্রমিকে সাপ ধরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবমুক্ত করেন তারা।
২০২০ সাল থেকে দেশজুড়ে বাসাবাড়ি, খেতখামার থেকে শত শত বিষধর, নির্বিষ নানা ধরনের সাপ ধরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবমুক্ত করে আসছে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের ২৫ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা রাজু আহমেদ (২৪) শখ থেকেই এ কাজ শুরু করলেও পরে স্নেক রেসকিউর ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে গড়ে তুলেছেন এই সংগঠন। বন্য প্রাণীর প্রতি ভালো লাগা থেকেই তিনি চাকরির পাশাপাশি সাপ উদ্ধার করেন।
রাজু আহমেদ বলেন, ‘সাপের নাম শুনলেই মানুষ ভয় পায়। সাপ মারার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। একটু সচেতন হলে মানুষ সাপের কামড় থেকে বাঁচতে পারে। সাপ দেখলেই যদি তা মেরে ফেলা হয়, তাহলে পরিবেশের অনেক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’
স্নেক রেসকিউ টিমের আরেক সদস্য বলেন, ‘কৃষিজমির জন্য ইঁদুর ক্ষতিকর। কিন্তু সাপ ইঁদুর দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া দেশে যেসব সাপ পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে নির্বিষ সাপের সংখ্যাই বেশি। আর এই নির্বিষ সাপের কামড়ে চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ে না।’
স্নেক রেসকিউ টিম সম্পর্কে রাজু বলেন, ‘এটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ২০২০ সালে এই সংগঠন গড়ে তোলা হয়। স্নেক রেসকিউ টিম ২০টি জেলায় কাজ করছে। এখন অনলাইনে সদস্যদের বেসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে ২৫ জন স্নেক রেসকিউয়ার সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।’
পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া থানার চরপাড়া গ্রামে জন্ম রাজুর। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন।
মানুষের বাসাবাড়িতে সাপ ঢুকলে খবর দিলে তিনি ছুটে যান। ছোটবেলা থেকেই সাপ রেসকিউ করার চিন্তা মাথায় আসে। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না তখন। ডিসকভারি, জিওগ্রাফিক চ্যানেল দেখে এ বিষয়ে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করেন। এভাবেই তিনি নিজে নিজে সাপ ধরার কৌশল শিখে নেন। পরে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের তৎকালীন সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান রাব্বির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। দুই বছর আগে সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পুরোদমে সাপ রেসকিউ শুরু করেন।
এখন তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পাশাপাশি স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
সংশ্লিষ্ট
নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলে বস্তা পদ্ধতিতে রাস্তার পাশে অনাবাদি ও অকৃষি জমিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার সবজি। চাষ অনুপযোগী এসব জমিতে সবজি চাষ করে কৃষকরা বেশ সফল হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।১০ জুন সোমবার নড়াইল পৌরসভার ধোপাখোলা এলাকায় নড়াইল-ফুলতলা সড়কের পাশে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। মাটিভরা বস্তায় সবজি গাছ লাগানো হয়েছে। সারি সারি বস্তা শোভা পাচ্ছে রাস্তার পাশে। আর তার উপরে মাচায় ঝুলছে করোলা, লাউ, কুমড়া, উচ্ছে, চিচিঙ্গাসহ নানা প্রকার সবজি।ধোপাখোলা এলাকার কৃষক সুষম বিশ্বাস জানান, এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন। ওই এলাকার আরেক কৃষক স্বপন বিশ্বাস বলেন, বস্তায় সবজি চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার পাশাপশি এভাবে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। এতে করে নড়াইলে দিন দিন বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রোকনুজ্জামান জানান, মাটির সাথে পরিমাণ মতো খৈল, রাসায়নিক ও জৈব সার মিশিয়ে বস্তায় ভরে ৩ ফুট উঁচু করা হয়। এর কয়েকদিন পর ওই বস্তায় লতা জাতীয় সবজি গাছের চারা বা বীজ বপন করা হয়। আর বস্তাগুলোর উপরে বাঁশ বা অন্য কিছু দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। ওই মাচার উপরে গাছ উঠিয়ে দেয়া হয়। এতে কম খরচে অধিক মুনাফা হয়।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, জলাবদ্ধ, অনাবাদি, চাষ অনুপযোগী পতিত জমিতে কম খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ায় কৃষকরা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষে। ইতোমধ্যে কেউ কেউ বাণিজ্যিকভাবে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করেছেন। এভাবে সবজি চাষে একদিকে যেমন ভালো ফলন হচ্ছে, অপরদিকে বাজারের চাহিদাও মিটছে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ বলেন, কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এক ইঞ্চি জমিও যেন ফাঁকা না থাকে, সে আদেশ প্রতিপালনে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষের মতো এ ধরনের উদ্যোগ ও কার্যক্রম সবসময় অব্যাহত থাকবে।
মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: প্রথমবারের মতো মাচা পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার কৃষক আব্দুর রব।তরমুজের মৌসুম না হলেও এই অ-সময়েও থোকায় থোকায় জুলে আছে মিষ্টি রসালো এই ফল। ভারে যেন ছিড়ে না পড়ে সেজন্য নেটের ব্যাগ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে ব্লাক বেবী জাতের গ্রীষ্মকালীন সুমিষ্ট এই ফল।এমন দৃশ্য চোখে পড়বে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড চরপাড়া গ্রামে। এই তরমুজ চাষে সার, বীজ, মাচা ও নেটসহ প্রতি বিঘা চাষ করতে খরচ হয় প্রায় পয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ফলনে লাভ পাওয়া যায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। কৃষক আব্দুর রব বাণিজ্যিকভাবে গ্রীষ্মকালীন এ তরমুজ আবাদ করে লাভ পেয়েছেন। তার সাফল্য দেখে এখন তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই, এর মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।কৃষক আব্দুর রব বলেন, ‘আমি প্রথম বারের মতো বিশ শতক যায়গায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ (ব্লাক বেবী) চাষ করেছি। এখানে আমার ব্যয় হয়েছে বিশ হাজার টাকা, যে পরিমাণে ফলন হয়েছে তাতে আশা করি, দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। আমার তরমুজ চাষ দেখে স্থানীয় কৃষকদের তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে এবং তারাও অনেক খুশি।’পৌর ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আইডিএফের মাধ্যমে ব্লাক বেবী জাতের তরমুজ চাষ করে যে সাফল্য পেয়েছেন কৃষক আব্দুর রব। মাটিরাঙ্গা কৃষি অফিসের মাধ্যমে অন্যান্য কৃষকদের প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে এই তরমুজ চাষ ব্যাপকভাবে করতে পারলে কৃষকরাও লাভবান হবে এবং গ্রীষ্মকালে আমরাও তরমুজের স্বাদ পেতে পারবো।’যুবক ইমাম হোসেন বলেন, ‘মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উদ্যোগে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্লাক বেবী জাতের এই তরমুজ চাষ পদ্ধতি শেখানো হয় এবং বীজ ও সার্বিক সহযোগিতা করে তাহলে বেকারত্বের হার অনেকাংশ কমে যাবে। এতে করে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান হবে অন্যদিকে অফ সিজনে স্থানীয়ভাবে তরমুজের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তাতে কৃষক ও দেশ লাভবান হবে।’ইন্ট্রিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ) এর কৃষিবিদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘সুমিষ্ট এই তরমুজ চাষে কৃষকদের আর্থিক ও সার্বিক সহযোগিতা করছে ইন্ট্রিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ)। ভবিষ্যতে কৃষকরা এই জাতের তরমুজ চাষ করতে আগ্রহী থাকলে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।’মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ আলী জানান, ‘মাটিরাঙ্গা উপজেলায় এই প্রথম ব্লাক বেবী জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে দেখেছি যে এই জাতের ফলন খুব ভালো হয় এবং কৃষক লাভবান হবেন। আমাদের পক্ষ থেকে এই তরমুজ চাষকে আরও বৃদ্ধি করতে কৃষকদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানসহ সাপোর্ট দেওয়া হবে এবং কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হুমায়ুন আহমেদ: তালের শাঁসের বেশিরভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এই ফল খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়। এছাড়াও রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। এজন্য ভ্যাপসা গরমে ময়মনসিংহে তালের শাঁসের চাহিদা বেড়েছে। যে যেখানে তালের শাঁস পাচ্ছেন, খেয়ে তৃপ্তি মেটাচ্ছেন।সরেজমিনে নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়, থানাঘাট, চরপাড়া, নতুন বাজার, কাচিঝুলি মোড়সহ বিভিন্ন অলিগলিতে মাটিতে বসে কিংবা ভ্যানগাড়িতে করে তালের শাঁস বিক্রি করতে দেখা যায়। গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই ফল কিনে খাচ্ছেন। কম দামে কিনতে পেরে ক্রেতারা যেমন খুশি, জমজমাট ব্যবসা হওয়ায় খুশি বিক্রেতারাও।পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে শত শত তালের শাঁস নিয়ে বসে ছিলেন জালাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গাছ থেকে তাল সংগ্রহ করি। এরপর সড়কের পাশে বসে বিক্রি করি। ভ্যাপসা গরমের কারণে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। একেকটি তাল ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, ‘সবার কাছে তালের শাঁস প্রিয়। আবার মৌসুমি ফল বলে শখের বশেও অনেকে এটি কিনে খায়।’চরপাড়া এলাকায় তালের শাঁস বিক্রেতা জব্বার মিয়া বলেন, ‘১২ বছর ধরে গরম এলেই এই ফল বিক্রি করি। গরম যতো বাড়ে তালের শাঁসের চাহিদাও বাড়ে। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা লাভ করতে পারি। এতে পরিবারের জন্য খরচ করেও ভালো টাকা আয় হয়।’তালের শাঁসের ক্রেতা খায়রুল আলম নামের এক যুবক বলেন, ‘তালের শাঁসে কোনও ধরনের ভেজাল নেই। তাই মাঝে মধ্যেই কিনে খাই। এছাড়া এটি খেতেও সুস্বাদু।’বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন আসমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘তালের শাঁস আমার খুবই পছন্দের। কোনো দোকানে এই ফল পাওয়া যায় না। তাই মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন সড়কের পাশে কিংবা অলিগলিতে বিক্রি করা তালের শাঁস কিনে বাড়িতে নিয়ে যাই। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল ভাগবাটোয়ারা করে খাই।’পুষ্টিবিদদের মতে, এই ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এর বেশিরভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এটা খেলে দ্রুত শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ তাল ক্যানসার প্রতিরোধ করে। স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে, ভিটামিন বি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। তালের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোধক। এটি ডায়েটের জন্যও বেশ কার্যকর। শুষ্ক ত্বক ও চুল পড়া বন্ধ করে। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগ নিরাময়েও এই ফলের ভূমিকা রয়েছে।এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু বলেন, ‘নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তালের শাঁস প্রচণ্ড দাবদাহে প্রশান্তি এনে দেয়। তাই ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাছে ফলের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তালের সরবরাহও কমে যাচ্ছে। ফল বাড়াতে, বজ্রপাতে ক্ষতি এড়ানোসহ নানা উপকারী এই গাছ প্রচুর পরিমাণে লাগানো প্রয়োজন।’
নওগাঁ প্রতিনিধি: স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদের উদ্যোগে ৭ জুন শুক্রবার বিকেলে নওগাঁ সদর উপজেলার লখাইজানি গ্রামের মাঠে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পাতা খেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তান্ত্রিক-সন্যাসীদের তন্ত্র-মন্ত্রের এ খেলা দেখতে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সী হাজারো নারী-পুরুষ।তান্ত্রিক-সন্যাসীদের এ বিশেষ খেলায় মাঠের মাঝে পুঁতে রাখা হয় এক আস্ত কলা গাছ। গাছের গোড়ায় মাটির ঘটিতে রাখা হয় আমের পাতা ও পানি। আর পাশেই আরেকটি বাটিতে থাকে মন্ত্র পড়া দুধ-কলা। কলার গাছ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে খেলোয়াড়দের জন্য চক্রাকারে দড়ি বেঁধে তৈরি করা হয় খেলার মাঠ। যেখানে খেলোয়াড় ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। ঘটির পানিতে ভিজিয়ে খেলোয়াড়রা মাটিতে হাত রেখে শুরু করেন মন্ত্র পড়া। তাদের মন্ত্রের প্রভাবে নির্ধারিত পাতা তথা সন্যাসীরা নানা ভঙ্গিমায় নাচ ও শারীরিক কসরত করে দর্শকদের আনন্দ দেন। এভাবেই এক সময় শেষ হয় এই ‘পাতা খেলা’।শুক্রবারের খেলায় ওঝা বা তান্ত্রিক এবং পাতা বা সন্যাসী মিলিয়ে ২০ জন অংশ নেন। বাদ্যের তালে তালে সন্যাসীরা শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন। মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে সন্যাসীরা কেউ লাফিয়ে কলা গাছে উঠার চেষ্টা করেন। আবার কেউ বা সাপের মতো ফনা তুলে কলা গাছে আঘাত করেন। কেউ চক্রাকারের ভেতর থেকে মন্ত্রের টানে বেরিয়ে যান। আবারও তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। এভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় মুগ্ধ হয়ে সন্যাসীরা কলাগাছটি ভেঙে ফেলেন। পরে সন্যাসীদের মন্ত্রের মাধ্যমে সুস্থ করেন তান্ত্রিকরা। এর মাধ্যমেই শেষ হয় পাতা খেলা।খেলা দেখতে আসা গৃহবধূ আফরোজ বেগম বলেন, এ খেলা দেখে অন্য রকম এক অনুভূতি পাওয়া যায়। মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে পাতা বা সন্ন্যাসী যাদের বলে তাদের নাচ দেখা হয়। আবার কেউ কলা গাছে উঠার চেষ্টা করে পিছলে পড়ে যায়। আবার ওঝারা ঝাঁড় ফু করে।খেলোয়াড় আব্দুল আজিজ বলেন, মাঠের মাঝে কলা গাছ পুঁতে রাখা হয়। গাছের গোড়ায় ঘটিতে পানি ও বাটিতে দুধ কলা রাখা হয়। খেলায় যারা অংশ নেবে (পাতা/সন্ন্যাসী) তাদের মন্ত্র পড়ে মুগ্ধ করা হয়। এরপর তারা ঢোল বা বাদ্যের তালে তালে শারীরিক কসরত ও নাচ করে। আবার ওঝারা মন্ত্র পড়ে পাতাদের আকৃষ্ট করে কলা গাছের এলাকা থেকে দূরে নিয়ে যায়। আবারও পাতা ছুটে চলে আসে গাছের কাছে। এক সময় পাতারা কলা গাছে উঠে ভেঙে ফেলে। এরপর খেলা শেষ হয়। এভাবেই এই সম্পন্ন হয়। আমরা বছরের পর বছর এসব খেলা করে আসছি এলাকাবাসীকে আনন্দ দেয়ার জন্য।খেলার আয়োজক ও সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী বলেন, শত বছরের ঐতিহ্য পাতা খেলা। সুস্থ ধারার বিনোদন হিসেবে এলাকাবাসীকে আনন্দ দিতে এমন খেলার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া অন্য যেসব খেলা রয়েছে সেগুলো আগামীতে এভাবে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
দেশজুড়ে বিনাপারিশ্রমিকে সাপ ধরে বেড়াচ্ছে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ
সংশ্লিষ্ট
নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলে বস্তা পদ্ধতিতে রাস্তার পাশে অনাবাদি ও অকৃষি জমিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার সবজি। চাষ অনুপযোগী এসব জমিতে সবজি চাষ করে কৃষকরা বেশ সফল হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।১০ জুন সোমবার নড়াইল পৌরসভার ধোপাখোলা এলাকায় নড়াইল-ফুলতলা সড়কের পাশে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। মাটিভরা বস্তায় সবজি গাছ লাগানো হয়েছে। সারি সারি বস্তা শোভা পাচ্ছে রাস্তার পাশে। আর তার উপরে মাচায় ঝুলছে করোলা, লাউ, কুমড়া, উচ্ছে, চিচিঙ্গাসহ নানা প্রকার সবজি।ধোপাখোলা এলাকার কৃষক সুষম বিশ্বাস জানান, এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন। ওই এলাকার আরেক কৃষক স্বপন বিশ্বাস বলেন, বস্তায় সবজি চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার পাশাপশি এভাবে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। এতে করে নড়াইলে দিন দিন বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রোকনুজ্জামান জানান, মাটির সাথে পরিমাণ মতো খৈল, রাসায়নিক ও জৈব সার মিশিয়ে বস্তায় ভরে ৩ ফুট উঁচু করা হয়। এর কয়েকদিন পর ওই বস্তায় লতা জাতীয় সবজি গাছের চারা বা বীজ বপন করা হয়। আর বস্তাগুলোর উপরে বাঁশ বা অন্য কিছু দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। ওই মাচার উপরে গাছ উঠিয়ে দেয়া হয়। এতে কম খরচে অধিক মুনাফা হয়।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ মো. জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, জলাবদ্ধ, অনাবাদি, চাষ অনুপযোগী পতিত জমিতে কম খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ায় কৃষকরা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষে। ইতোমধ্যে কেউ কেউ বাণিজ্যিকভাবে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করেছেন। এভাবে সবজি চাষে একদিকে যেমন ভালো ফলন হচ্ছে, অপরদিকে বাজারের চাহিদাও মিটছে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ বলেন, কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এক ইঞ্চি জমিও যেন ফাঁকা না থাকে, সে আদেশ প্রতিপালনে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষের মতো এ ধরনের উদ্যোগ ও কার্যক্রম সবসময় অব্যাহত থাকবে।
মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: প্রথমবারের মতো মাচা পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার কৃষক আব্দুর রব।তরমুজের মৌসুম না হলেও এই অ-সময়েও থোকায় থোকায় জুলে আছে মিষ্টি রসালো এই ফল। ভারে যেন ছিড়ে না পড়ে সেজন্য নেটের ব্যাগ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে ব্লাক বেবী জাতের গ্রীষ্মকালীন সুমিষ্ট এই ফল।এমন দৃশ্য চোখে পড়বে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড চরপাড়া গ্রামে। এই তরমুজ চাষে সার, বীজ, মাচা ও নেটসহ প্রতি বিঘা চাষ করতে খরচ হয় প্রায় পয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ফলনে লাভ পাওয়া যায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। কৃষক আব্দুর রব বাণিজ্যিকভাবে গ্রীষ্মকালীন এ তরমুজ আবাদ করে লাভ পেয়েছেন। তার সাফল্য দেখে এখন তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই, এর মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।কৃষক আব্দুর রব বলেন, ‘আমি প্রথম বারের মতো বিশ শতক যায়গায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ (ব্লাক বেবী) চাষ করেছি। এখানে আমার ব্যয় হয়েছে বিশ হাজার টাকা, যে পরিমাণে ফলন হয়েছে তাতে আশা করি, দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। আমার তরমুজ চাষ দেখে স্থানীয় কৃষকদের তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে এবং তারাও অনেক খুশি।’পৌর ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আইডিএফের মাধ্যমে ব্লাক বেবী জাতের তরমুজ চাষ করে যে সাফল্য পেয়েছেন কৃষক আব্দুর রব। মাটিরাঙ্গা কৃষি অফিসের মাধ্যমে অন্যান্য কৃষকদের প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে এই তরমুজ চাষ ব্যাপকভাবে করতে পারলে কৃষকরাও লাভবান হবে এবং গ্রীষ্মকালে আমরাও তরমুজের স্বাদ পেতে পারবো।’যুবক ইমাম হোসেন বলেন, ‘মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উদ্যোগে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্লাক বেবী জাতের এই তরমুজ চাষ পদ্ধতি শেখানো হয় এবং বীজ ও সার্বিক সহযোগিতা করে তাহলে বেকারত্বের হার অনেকাংশ কমে যাবে। এতে করে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান হবে অন্যদিকে অফ সিজনে স্থানীয়ভাবে তরমুজের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তাতে কৃষক ও দেশ লাভবান হবে।’ইন্ট্রিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ) এর কৃষিবিদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘সুমিষ্ট এই তরমুজ চাষে কৃষকদের আর্থিক ও সার্বিক সহযোগিতা করছে ইন্ট্রিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ)। ভবিষ্যতে কৃষকরা এই জাতের তরমুজ চাষ করতে আগ্রহী থাকলে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।’মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ আলী জানান, ‘মাটিরাঙ্গা উপজেলায় এই প্রথম ব্লাক বেবী জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে দেখেছি যে এই জাতের ফলন খুব ভালো হয় এবং কৃষক লাভবান হবেন। আমাদের পক্ষ থেকে এই তরমুজ চাষকে আরও বৃদ্ধি করতে কৃষকদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানসহ সাপোর্ট দেওয়া হবে এবং কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হুমায়ুন আহমেদ: তালের শাঁসের বেশিরভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এই ফল খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়। এছাড়াও রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। এজন্য ভ্যাপসা গরমে ময়মনসিংহে তালের শাঁসের চাহিদা বেড়েছে। যে যেখানে তালের শাঁস পাচ্ছেন, খেয়ে তৃপ্তি মেটাচ্ছেন।সরেজমিনে নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়, থানাঘাট, চরপাড়া, নতুন বাজার, কাচিঝুলি মোড়সহ বিভিন্ন অলিগলিতে মাটিতে বসে কিংবা ভ্যানগাড়িতে করে তালের শাঁস বিক্রি করতে দেখা যায়। গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই ফল কিনে খাচ্ছেন। কম দামে কিনতে পেরে ক্রেতারা যেমন খুশি, জমজমাট ব্যবসা হওয়ায় খুশি বিক্রেতারাও।পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে শত শত তালের শাঁস নিয়ে বসে ছিলেন জালাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গাছ থেকে তাল সংগ্রহ করি। এরপর সড়কের পাশে বসে বিক্রি করি। ভ্যাপসা গরমের কারণে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। একেকটি তাল ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, ‘সবার কাছে তালের শাঁস প্রিয়। আবার মৌসুমি ফল বলে শখের বশেও অনেকে এটি কিনে খায়।’চরপাড়া এলাকায় তালের শাঁস বিক্রেতা জব্বার মিয়া বলেন, ‘১২ বছর ধরে গরম এলেই এই ফল বিক্রি করি। গরম যতো বাড়ে তালের শাঁসের চাহিদাও বাড়ে। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা লাভ করতে পারি। এতে পরিবারের জন্য খরচ করেও ভালো টাকা আয় হয়।’তালের শাঁসের ক্রেতা খায়রুল আলম নামের এক যুবক বলেন, ‘তালের শাঁসে কোনও ধরনের ভেজাল নেই। তাই মাঝে মধ্যেই কিনে খাই। এছাড়া এটি খেতেও সুস্বাদু।’বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন আসমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘তালের শাঁস আমার খুবই পছন্দের। কোনো দোকানে এই ফল পাওয়া যায় না। তাই মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন সড়কের পাশে কিংবা অলিগলিতে বিক্রি করা তালের শাঁস কিনে বাড়িতে নিয়ে যাই। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল ভাগবাটোয়ারা করে খাই।’পুষ্টিবিদদের মতে, এই ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এর বেশিরভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এটা খেলে দ্রুত শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ তাল ক্যানসার প্রতিরোধ করে। স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে, ভিটামিন বি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। তালের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোধক। এটি ডায়েটের জন্যও বেশ কার্যকর। শুষ্ক ত্বক ও চুল পড়া বন্ধ করে। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগ নিরাময়েও এই ফলের ভূমিকা রয়েছে।এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু বলেন, ‘নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তালের শাঁস প্রচণ্ড দাবদাহে প্রশান্তি এনে দেয়। তাই ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাছে ফলের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তালের সরবরাহও কমে যাচ্ছে। ফল বাড়াতে, বজ্রপাতে ক্ষতি এড়ানোসহ নানা উপকারী এই গাছ প্রচুর পরিমাণে লাগানো প্রয়োজন।’
নওগাঁ প্রতিনিধি: স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদের উদ্যোগে ৭ জুন শুক্রবার বিকেলে নওগাঁ সদর উপজেলার লখাইজানি গ্রামের মাঠে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পাতা খেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তান্ত্রিক-সন্যাসীদের তন্ত্র-মন্ত্রের এ খেলা দেখতে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সী হাজারো নারী-পুরুষ।তান্ত্রিক-সন্যাসীদের এ বিশেষ খেলায় মাঠের মাঝে পুঁতে রাখা হয় এক আস্ত কলা গাছ। গাছের গোড়ায় মাটির ঘটিতে রাখা হয় আমের পাতা ও পানি। আর পাশেই আরেকটি বাটিতে থাকে মন্ত্র পড়া দুধ-কলা। কলার গাছ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে খেলোয়াড়দের জন্য চক্রাকারে দড়ি বেঁধে তৈরি করা হয় খেলার মাঠ। যেখানে খেলোয়াড় ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। ঘটির পানিতে ভিজিয়ে খেলোয়াড়রা মাটিতে হাত রেখে শুরু করেন মন্ত্র পড়া। তাদের মন্ত্রের প্রভাবে নির্ধারিত পাতা তথা সন্যাসীরা নানা ভঙ্গিমায় নাচ ও শারীরিক কসরত করে দর্শকদের আনন্দ দেন। এভাবেই এক সময় শেষ হয় এই ‘পাতা খেলা’।শুক্রবারের খেলায় ওঝা বা তান্ত্রিক এবং পাতা বা সন্যাসী মিলিয়ে ২০ জন অংশ নেন। বাদ্যের তালে তালে সন্যাসীরা শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন। মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে সন্যাসীরা কেউ লাফিয়ে কলা গাছে উঠার চেষ্টা করেন। আবার কেউ বা সাপের মতো ফনা তুলে কলা গাছে আঘাত করেন। কেউ চক্রাকারের ভেতর থেকে মন্ত্রের টানে বেরিয়ে যান। আবারও তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। এভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় মুগ্ধ হয়ে সন্যাসীরা কলাগাছটি ভেঙে ফেলেন। পরে সন্যাসীদের মন্ত্রের মাধ্যমে সুস্থ করেন তান্ত্রিকরা। এর মাধ্যমেই শেষ হয় পাতা খেলা।খেলা দেখতে আসা গৃহবধূ আফরোজ বেগম বলেন, এ খেলা দেখে অন্য রকম এক অনুভূতি পাওয়া যায়। মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে পাতা বা সন্ন্যাসী যাদের বলে তাদের নাচ দেখা হয়। আবার কেউ কলা গাছে উঠার চেষ্টা করে পিছলে পড়ে যায়। আবার ওঝারা ঝাঁড় ফু করে।খেলোয়াড় আব্দুল আজিজ বলেন, মাঠের মাঝে কলা গাছ পুঁতে রাখা হয়। গাছের গোড়ায় ঘটিতে পানি ও বাটিতে দুধ কলা রাখা হয়। খেলায় যারা অংশ নেবে (পাতা/সন্ন্যাসী) তাদের মন্ত্র পড়ে মুগ্ধ করা হয়। এরপর তারা ঢোল বা বাদ্যের তালে তালে শারীরিক কসরত ও নাচ করে। আবার ওঝারা মন্ত্র পড়ে পাতাদের আকৃষ্ট করে কলা গাছের এলাকা থেকে দূরে নিয়ে যায়। আবারও পাতা ছুটে চলে আসে গাছের কাছে। এক সময় পাতারা কলা গাছে উঠে ভেঙে ফেলে। এরপর খেলা শেষ হয়। এভাবেই এই সম্পন্ন হয়। আমরা বছরের পর বছর এসব খেলা করে আসছি এলাকাবাসীকে আনন্দ দেয়ার জন্য।খেলার আয়োজক ও সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী বলেন, শত বছরের ঐতিহ্য পাতা খেলা। সুস্থ ধারার বিনোদন হিসেবে এলাকাবাসীকে আনন্দ দিতে এমন খেলার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া অন্য যেসব খেলা রয়েছে সেগুলো আগামীতে এভাবে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন