প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৪ ১০:৩৪ এএম
সংকটকালে এ বাজেট বাস্তবসম্মত ও গণমুখী: ওবায়দুল কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক: অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সংকটকালে এ বাজেট বাস্তবসম্মত ও গণমুখী বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ৮ জুন শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গত ৬ জুন মহান জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ শীর্ষক ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন। এই বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মানের অঙ্গীকার। এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংকট দূর এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে করোনা অতিমারি এবং বিশ্বে চলমান যুদ্ধ পূর্ববর্তী উচ্চ গতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে ফিরিয়ে নেয়া। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সংকটকালে এ বাজেট বাস্তবসম্মত ও গণমুখী। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ – উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এ বাজেটকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি। ভারসাম্যমূলক একটি বাজেট উপহার দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ সংকটকালেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত দেড় দশকে বাংলাদেশ একটি দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মর্যাদা লাভ করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতি। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশের জনসাধারণের জীবনমান দিন দিন উন্নততর হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন শুধু ডাল-ভাতে নয়, পুষ্টি উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে সব কয়টি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সূচকে। এ সময়ে মোট দেশজ উৎপাদন গড়ে ৬.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সারা দুনিয়ায় উচ্চতম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে অন্যতম করেছে। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল আমাদের সরকার সবার মধ্যে পৌঁছে দিয়েছে যার ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দারিদ্র হ্রাস পেয়েছে। ২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশের ৪০ শতাংশের বেশি মানুষকে দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে গিয়েছিল। জনগণের ধারাবাহিক সমর্থন নিয়ে আমাদের সরকার মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে সে দারিদ্র্য ১৮.৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। অতি দারিদ্র এখন মাত্র ৫.৬ শতাংশ।
সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকার এ বাজেট বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। বিগত বছরগুলোতে প্রতি বছরেই আমাদের বাজেটের আকার ১২/১৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ব্যাঘাত না ঘটিয়ে, কিছুটা কৃচ্ছ্রতাসাধন করে বিগত অর্থ বছরের তুলনায় এ বছরের বাজেট মাত্র ৪.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি, সুদের হার বৃদ্ধি, পরিবহণ খরচ বৃদ্ধি এবং টাকার মান কমে যাওয়ার এ চতুর্মুখী চাপ আমাদের অর্থনীতিতে সৃষ্টি করে ডলার সংকট এবং মূল্যস্ফীতি। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো মূল্যস্ফীতি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেও এখনো তাদের কাঙ্ক্ষিত ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়নি। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখনো ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং দেশের বাজারে সরবরাহ শৃঙ্খলে ত্রুটি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া আমাদের বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণ। একই সময়ে দেশে গড় মজুরী বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ শতাংশের বেশি হারে। মূল্যস্ফীতি এবং মজুরী বৃদ্ধির মধ্যে ২ শতাংশের একটা ফারাক রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করেছে। এতে আমদানি কমেছে বছরে ১৫ শতাংশের বেশি হারে যার ফলে সংকট কালেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩ মাসের বেশি আমদানির জন্য ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। তা সত্ত্বেও টাকার মান ধরে রাখতে রিজার্ভ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে ফলে রিজার্ভ অনেক কমে গিয়েছে। দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে নতুন সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। এবারের বাজেটেও তার পূর্ণ প্রতিফলন রয়েছে।
দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চাহিদা কমিয়ে এবং পণ্য ও সেবার সরবরাহ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো যায়। এবারের বাজেট এই দুই পথের মিলন ঘটিয়েছে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কিছু দিন পূর্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মূদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। যার মাধ্যমে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে এবং নতুন পদ্ধতিতে পুনঃনির্ধারন করা হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার। এতে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়েছে। নতুন করে ডলার সংকট হবার সম্ভাবনা আর দেখা যাচ্ছে না। রিজার্ভ এখন থেকে বাড়তে শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবারের বাজেটে রাজস্বনীতি নির্ধারন করা হয়েছে যাতে কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচী চলমান রাখা হয়েছে, কর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমদানি বিকল্প উৎপাদন উৎসাহিত করা হয়েছে এবং কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকি চলমান রেখে তার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বাজেটের এ সকল উদ্যোগ একদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে অন্যদিকে রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ বাজেটের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী অর্থ বছরে মূল্যস্ফীতির গড় ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য পূরণ হবে বলে আশা করি।
তিনি আরও জানান, অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার করা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে কর হারের পূনর্বিন্যাসের মাধ্যমে শিল্প উৎপাদনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে বিপুল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আশাবাদ ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি তখনও আমরা ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির একটা অর্থনীতি পেয়েছিলাম। শেখ হাসিনার সরকার পরিচালনার দক্ষতার গুণে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে আমরা সে মূল্যস্ফীতি দমন করে জাতিকে স্থিতিশীল অর্থনীতি উপহার দিয়েছিলাম। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন অংশের সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এবারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও আমরা সক্ষম হব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এই বাজেটে মানুষের মৌলিক অধিকার, কৃষি, দেশীয় শিল্প ও সামাজিক নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যা দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করবে। করোনা অতিমারি থেকে শুরু করে চলমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট ডলার সংকট এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও প্রতি বছরই বাংলাদেশ অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে ভারসাম্যমূলক বাজেটের কারণে মুদ্রাস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে এনে আগামী অর্থবছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.৭৫ শতাংশের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।
...
প্রকাশ : ১ বছর আগে
আপডেট : ৪ মাস আগে
সংকটকালে এ বাজেট বাস্তবসম্মত ও গণমুখী: ওবায়দুল কাদের