আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হামাস-ইসরাইল চলমান সংঘাতের মধ্যেই নয়াদিল্লি আসছেন উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন দুই প্রতিনিধি, আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষাসচিব লয়েড অস্টিন। আজ ১০ নভেম্বর শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ‘টু প্লাস টু’ কাঠামোয় বৈঠকে বসবেন তারা। চলতি পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই বৈঠককে গোটা অঞ্চলের জন্যই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে বলেছে, প্রতিরক্ষা থেকে নিরাপত্তায় সহযোগিতা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক আদানপ্রদানকে খতিয়ে দেখা হবে। গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। যৌথ বিবৃতিও প্রকাশিত হয়। দ্বিপাক্ষিক পথনির্দেশিকা মেনে আগামী দিনে কতটা এগোনো যাবে, তা নিয়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে আলোচনা করবেন ভারত এবং আমেরিকার কর্তারা।কথা হবে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়েও। আগামী জানুয়ারি মাসে ভারতে ‘কোয়াড’-এর শীর্ষ বৈঠকের কথা রয়েছে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ভারতের এই ‘কোয়াড’-এ যোগ দিতে বাইডেনের ফের নয়াদিল্লি আসার কথা রয়েছে। তাঁকে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি করার চেষ্টাও করছে সাউথ ব্লক। এ ব্যাপারে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে কথা বলবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।আলোচনা হবে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ নিয়েও। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন আসন্ন, সেখানে ভোট যাতে অবাধ এবং সুষ্ঠু হয় তা নিয়ে ওয়াশিংটন ‘অতিসক্রিয়তা’ দেখাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তা নিয়ে আসন্ন বৈঠকে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার কথা হতে পারে বলেই জানা গিয়েছে। সূত্র: আনন্দবাজার।
১০ নভেম্বর ২০২৩ ০২:২০ এএম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হামাস-ইসরাইল চলমান সংঘাতের মধ্যেই নয়াদিল্লি আসছেন উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন দুই প্রতিনিধি, আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষাসচিব লয়েড অস্টিন। আজ ১০ নভেম্বর শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ‘টু প্লাস টু’ কাঠামোয় বৈঠকে বসবেন তারা। চলতি পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই বৈঠককে গোটা অঞ্চলের জন্যই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে বলেছে, প্রতিরক্ষা থেকে নিরাপত্তায় সহযোগিতা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক আদানপ্রদানকে খতিয়ে দেখা হবে। গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। যৌথ বিবৃতিও প্রকাশিত হয়। দ্বিপাক্ষিক পথনির্দেশিকা মেনে আগামী দিনে কতটা এগোনো যাবে, তা নিয়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে আলোচনা করবেন ভারত এবং আমেরিকার কর্তারা।কথা হবে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়েও। আগামী জানুয়ারি মাসে ভারতে ‘কোয়াড’-এর শীর্ষ বৈঠকের কথা রয়েছে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ভারতের এই ‘কোয়াড’-এ যোগ দিতে বাইডেনের ফের নয়াদিল্লি আসার কথা রয়েছে। তাঁকে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি করার চেষ্টাও করছে সাউথ ব্লক। এ ব্যাপারে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে কথা বলবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।আলোচনা হবে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ নিয়েও। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন আসন্ন, সেখানে ভোট যাতে অবাধ এবং সুষ্ঠু হয় তা নিয়ে ওয়াশিংটন ‘অতিসক্রিয়তা’ দেখাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তা নিয়ে আসন্ন বৈঠকে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার কথা হতে পারে বলেই জানা গিয়েছে। সূত্র: আনন্দবাজার।
১০ নভেম্বর ২০২৩ ০২:২০ এএম
প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী: চলতি বছরের ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করে। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদানকারী ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রদানের বিধি-নিষেধ আরাপের পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। এই ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তার বিবৃতিতে উঠে এসেছে যে, ভিসা নীতির আওতায় সরকার সমর্থক, বিরোধীদল, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কয়েকদিন আগে ঘোষণা করা হয়েছে, সংবাদ মাধ্যমও এই নিষেধাজ্ঞা বা সাংশন এর আওতাভুক্ত। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস চ্যানেল-২৪’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিষয়টি পুর্নব্যক্ত করেন। যেটি অনেকাংশে আগুনে ঘি ঢালার শামিল। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সম্পাদক পরিষদ ও এডিটরস্ গিল্ড যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ ঘোষণাকে স্বাধীন মত প্রকাশের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে।আমেরিকার এই অযৌক্তিক, অহেতুক ও অনধিকার হস্তক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি উত্তপ্ত। বিরোধী দল এ বিষয়কে অস্ত্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই অপপ্রয়াস নিয়ে তাঁর সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরের সময় ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। দেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আওয়ামী লীগের ছিলো। আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ তা প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই অবস্থার পরও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার এটাই প্রশ্ন যে, হঠাৎ কথা নেই, বার্তা নেই, তারা আমাদের উপর ভিসা সাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে?’ জননেত্রীর এই সাহসী উচ্চারণ আমেরিকা ও নির্বাচন বিষয়ে তাঁর মনোভাব স্পষ্ট বলে মনে করি।একটি কথা প্রচলিত আছে, আমেরিকা যার বন্ধু তার কোনো শত্রুর প্রয়োজন নেই। অতীতের বাংলাদেশ ও ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে, এই সত্যের সারবত্তা স্পষ্ট হয়। কেননা বাংলাদেশের উন্মেষকাল থেকে আমেরিকার ভূমিকা ছিলো বৈরী। তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর ঘটনাও আমাদের মনে আছে। হতে পারে সাম্প্রতিক সাংশন ৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ। আমেরিকার অপচেষ্টা আমরা আরো স্মরণ করতে পারি ৭৪’র দুর্ভিক্ষের কারণও কিন্তু আমেরিকা। অর্থ দিয়ে কেনা গম বোঝাই জাহাজও তারা সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলো। এছাড়া ৭৫’র বঙ্গবন্ধু হতাকাণ্ড সিআইএ এর ভূমিকাও প্রমাণিত।বৈশ্বিক রাজনীতিতেও আমেরিকার ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড আমরা দেখেছি। ভিয়েতনামে তারা দশকের পর দশক যুদ্ধ করেছে। পোড়াামাটি নীতি প্রয়োগ করেছে। এছাড়া মার্কিনীদের অযাচিত হস্তক্ষেপের ফলে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়াসহ দেশগুলো এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশও হয়তো আমরিকার নতুন টার্গেট। কিন্তু আমেরিকার এই গাত্রদাহের কারণ কী? বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বের কাছে একটি রোল মডেল। উন্নয়নের যে মহাসড়কে বাংলাদেশ ক্রমশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা বিশ্বমোড়ল আমেরিকার অপছন্দ। পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ কোনো এক বিশেষ ব্লকে সীমাবদ্ধ নয়। ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’ বাংলাদেশ এই নীতিতে বিশ্ববাসী। সে কারণে চীনের সাথে সহযোগিতায় পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল বাস্তবায়ন করেছে। রাশিয়া থেকে ইতোমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়াম এসে পৌঁছেছে দেশে। শূন্য থেকে বাংলাদেশের পারমাণবিক জ্বালানিতে পদার্পণ। বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক উৎপাদনকারী এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৩য় রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দৈনিক ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের। ভারতের সঙ্গেও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার। জাপানও বাংলাদেশর উন্নয়ন সহযোগী কিন্তু আমেরিকা চায় বাংলাদেশ কেবল তার উপর অতি নির্ভরশীল থাকুক। আমেরিকা সবসময় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে তাবেদার বানিয়ে রাখতে চায়।এ প্রসঙ্গে আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য। আমেরিকা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সেন্ট-মার্টিন দ্বীপ চেয়েছিলো সামরিক ঘাঁটি করার জন্য। কিন্তু বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের ওই চাওয়া প্রত্যাখান করেছিলেন। আমেরিকা এখন আবার সেন্ট-মার্টিন দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি করতে চায়। কিন্তু জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা কোনো অবস্থাতেই এই প্রস্তাব মানতে রাজি নন। তিনি কখনো দেশের সার্বভৌমত্ব বিলীন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চান না। সামাজ্রবাদী আমেরিকার কূটকৌশলের ধরন এখন পাল্টে গেছে। নব্য সামাজ্যবাদীর ভূমিকায় অবতীর্ণ আমেরিকা এখন সেই আগ্রাসনের নতুন ফর্মুলা গ্রহণ করেছে। এই অপশক্তি হতে এসেছে নতুন অস্ত্র সাংশন বা ভিসা নিষেধাজ্ঞা।আমেরিকার কারণে বহু প্রকল্পচুক্তি থেকে সরকার থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়ে হয়েছে। এছাড়া প্রশ্ন হলো, নির্বাচনের আগে কেন এই ভিসা ইস্যু? সরকার বারংবার উচ্চারণ করেছে নির্বাচন হবে স্বচ্ছ-অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক। কিন্তু বিএনপিসহ কিছু সুবিধাবাদী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করতে দিবে না। তারা ঘোষণা করেছে এই নির্বাচন তারা প্রতিহত করবে। অথচ সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আর কোনো সুযোগ নেই। তাহলে আমেরিকা কি বিশেষ কোনো মহল বা তৃতীয় কোনো শক্তিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায়? কেননা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাচক্রকে প্রভাবিত করার জন্য বিএনপির তরফ থেকে হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট নিয়ে বিশেষ লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ় ও দূরদর্শী নেতৃত্বে, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার সকল পথ নিশ্চয়ই বন্ধ করে দেবে। বাংলাদেশে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর ক্ষমতার আসতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই আসতে হবে। সরকার প্রধান দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে ঘোষণা করেছেন, নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য সকল বৃহৎশক্তি ও উন্নয়ন পার্টনারদের পর্যবেক্ষক টিম পাঠাতে বলেন। অতীতেও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিলো, কিন্তু সুন্দর ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করা যায়নি। নিশ্চয়ই, আমেরিকার সাংশনও নির্বাচন ও গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।এদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। এতে ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্ত ও দু’লক্ষ মা- বোনের সম্ভ্রম হারানোর ক্ষতও আছে। এদেশের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রাণ হারিয়েছেন স্বয়ং জাতির পিতার পরিবার। জাতীয় নেতৃবৃন্দ। পথ হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। আবার সম্ভিত ফিরে পায় বেঁচে থাকা বঙ্গবন্ধুর জ্যৈষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ’কে। সরকার প্রধান হয়েছেন চার বার। এই ধারাবাহিকতা ১৫ বছর। শত বাধা আতিক্রম করে বাংলাদেশ এখন বিশ^ অর্থনীতিতে ৩১তম স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশ এখন এক অবিস্মরণীয় উন্নয়নের দেশ। কোভিড-অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেও মেগা প্রকল্পগুলো অব্যাহত আছে এবং দৃশ্যমানও হয়েছে অনেক। দীর্ঘ সরকার পরিচালনায় হয়তো কিছু ভুল বা ব্যর্থতা থাকতে পারে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় দু’একটি নির্বাচন হয়তো ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক হয়নি। এরকম উদাহারণ স্বয়ং আমেরিকায়ও দেখি। অনবরত গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সবক দেওয়া আমেরিকার গত নির্বাচনও কলঙ্কিত হয়েছে ক্যাপিটাল হিলের হামলায়।এতদসত্ত্বেও গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নির্বাচনের বিকল্প নেই। শত ভিসা নীতি ও সাংশন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে পারবে না। সাংশন চ্যালেঞ্জ কখনো ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে কঠিন হবে না। বৃহৎ স্বার্থের জন্য জনগণকে কিছু ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে হতে পারে, যেটি হবে সাময়িক। বাঙালি কখনো গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে বিসর্জন দিতে পারে না। বাঙালির পরম স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা শেখ হাসিনার হাতে স্মার্ট বাংলাদেশ হয়ে গড়ে উঠবেই।লেখক: প্রফেসর, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, সাবেক ডিন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
১০ অক্টোবর ২০২৩ ০৩:০৪ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে মানবাধিকারের ইস্যু তুলে বারবার সরকারকে কাঠগোড়ায় তোলার চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিছুই বলেনা আমেরিকা। ইসরায়েলের বিমান হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রাণ গেছে শিশু-নারীদের। মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে নিশ্চুপ ওয়াশিংটন।সমুদ্র উপকূলীয় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজাকে দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল অবরুদ্ধ করে রেখেছে। প্রায় বিচ্ছিন্ন এই ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে সশস্ত্র গ্রুপ হামাস। হামাসের রকেট হামলার জবাবে প্রায়ই ইসরায়েলি বাহিনী স্থল ও আকাশপথে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করা হামাস গ্রুপ শনিবার ভোর থেকে স্থল, জল ও আকাশপথে সমন্বিত হামলা করে ইসরায়েলে। এদিকে হামাসের হামলার পর গাজায় পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।ইসরায়েলে এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। হামাসের এ হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে প্রতিরক্ষা সমর্থনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সরকার ও জনগণের সঙ্গে আছি। এই হামলায় ইসরায়েলিদের প্রাণ হারানোর জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি।’ হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জাচি হানেগবির সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জেক সুলিভান।শনিবার বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোন কল করে বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সরকার ও জনগণকে সব ধরনের সমর্থন দিতে প্রস্তুত আছি।’ পরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস কখনই ন্যায়সংগত হতে পারেন না। ইসরায়েলের নিজেকে এবং তার জনগণকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।’ এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন কোনো পক্ষ সুবিধা নিতে চায় কি না সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।১৯৬৭ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যকার সম্পর্ক দ্রুতগতিতে ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হতে থাকে। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় মার্কিনীরা ইসরায়েলের পক্ষ নেয়। এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি রচনা করে। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও কূটনীতিকরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব কমাতে ইসরায়েল তাদের কার্যকরী এক অস্ত্র হতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র আরো ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। এই যুদ্ধে মার্কিনরা বেশ সফলতাও অর্জন করে এবং নিজেদের বিশ্বের একমাত্র সুপারপাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের এমন একটি মিত্র দরকার, যারা তাদের প্রতিরূপ হিসেবে কাজ করবে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক দূরত্বের একটি বিষয় ছিল। সেই সমস্যা নিরসনে শক্ত ঘাঁটি বিনির্মাণের জন্যই তারা বেছে নেয় ইসরায়েলকে। যুক্তরাষ্ট্র তখন ইসরায়েলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির জন্য তাদের হয়ে ফিলিস্তিনের সাথে দেনদরবার করার দায়িত্ব গ্রহণ করে।একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বাসের কারণেই এখনো ইসরায়েল যেকোনো শান্তি আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি হয়। বিগত তিন মার্কিন প্রেসিডেন্টই চেষ্টা করেছেন ফিলিস্তিনের সাথে ইসরায়েলের একটি সুরাহা করার। তবে এক্ষেত্রে তাদের সমর্থনের পাল্লা তেল আবিবের দিকেই বেশি থেকেছে। যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই ইসরায়েলের অনেক অপরাধ দেখেও না দেখার ভান করে থেকেছে, যা অব্যাহত রয়েছে বর্তমানেও। কিন্তু এর পেছনের রহস্য কী? শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করে, নাকি আরো কোনো কারণ রয়েছে?যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ককে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল কূটনৈতিক সম্পর্কও বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব সৃষ্টির জন্য ইসরায়েল যেমন প্রচুর অর্থ ব্যয় করে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। তবে এরপরও দুই দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, যেখান থেকে লাভবান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।১৯৮৫ সালে ইসরায়েলের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের হার অনেক বেড়েছে। ইসরায়েলে থাকা মার্কিন দূতাবাসের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে দুই দেশ প্রায় ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা করেছে, যা থেকে সিংহভাগ লাভবান হয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ইসরায়েল।যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইসরায়েল বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। দেশটির বিভিন্ন রাজ্য ইহুদিপ্রধান দেশটির সাথে বিভিন্ন ব্যবসা করে আসছে, যা থেকে সামগ্রিকভাবে মার্কিন অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে। বলা হয়ে থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে তার কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি দিয়েছে। এর প্রতিদান অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রও কম দিচ্ছে না!এছাড়াও আরো গভীরে গেলে দেখা যায় যে , আমেরিকার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে মূলতঃ কর্পোরেট হাউজগুলো। তারা প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বানাতে পারে, সরাতে পারে। এসব কর্পোরেট হাউজগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় এদের মালিক কিংবা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কম্পানিগুলোর মূল দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা চীফ এক্সজিকিউটিভ অফিসার, সিইও হলেন ইহুদি কমিউনিটির মানুষ।২০২০ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ৩.৮ বিলিয়ন (৩৮০ কোটি) ডলার সাহায্য দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার শাসনামলে ইসরায়েলকে দীর্ঘমেয়াদী যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার অধীনেই এই সাহায্য গেছে। প্রায় পুরোটাই ছিল সামরিক সাহায্য।২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা ইসরায়েলের সাথে এক চুক্তি সই করেন যার অধীনে ২০১৭-১৮ সাল থেকে তার পরবর্তী ১০ বছর ইসরায়েল ৩৮ বিলিয়ন ডলার বা ৩৮০০ কোটি ডলার সামরিক সাহায্য পাবে। তার আগে দশ বছরের তুলনায় ঐ সাহায্য বেড়েছে প্রায় ছয় শতাংশ। এ বাদেও, গত বছর ইসরায়েলে নতুন অভিবাসীদের পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ ডলার সাহায্য দিয়েছে। বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে ইহুদিরা ইসরায়েলে গিয়ে বসতি গড়তে চাইলে তাকে স্বাগত জানানোর নীতি বহুদিন ধরে সেদেশে রয়েছে।ইসরায়েলকে অত্যাধুনিক একটি সামরিক শক্তিধর দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে আমেরিকা বছরের পর বছর ধরে সাহায্য করছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র কেনার জন্য তহবিল যোগানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েল আমেরিকা থেকে ৫০টি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনেছে যা দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো যায়। প্রতিটি বিমানের দাম প্রায় ১০ কোটি ডলার। ইসরায়েল আমেরিকার কাছ থেকে ২৪০ কোটি ডলার ব্যয়ে আটটি কেসি-৪৬এ বোয়িং ‘পেগাসাস‘ বিমান কিনেছে। এই বিমান থেকে আকাশে এফ-৩৫ বিমানে জ্বালানি তেল ভরা যায়।২০২০ সালে ইসরায়েলকে আমেরিকা যে ৩৮০ কোটি ডলার দিয়েছে, তার মধ্যে ৫০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। এর মধ্যে রয়েছে ‘আয়রন ডোম‘ ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপত্তা যা দিয়ে ইসরায়েল রকেট হামলা প্রতিহত করে। ২০১১ সাল থেকে আমেরিকা ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ১৬০ কোটি ডলার দিয়েছে। এ ছাড়াও, গাজায় গোপন সুড়ঙ্গ শনাক্ত করাসহ বেশ কিছু সামরিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তৈরিতে আমেরিকা ইসরায়েলকে তহবিল ছাড়াও বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে। ইসরায়েলের সরকার সমরাস্ত্র কেনা এবং সামরিক প্রশিক্ষণে বহু টাকা খরচ করে যার অনেকটাই আসে আমেরিকার দেওয়া সাহায্য থেকে।যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পেছনে আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (আইপ্যাক)-এর অবদানকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আইপ্যাক কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কিন্তু এরপর তাদের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের উপর বড় প্রভাব রয়েছে। মার্কিন সরকারের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে থাকে। কিন্তু তারা এই কাজ করে কীভাবে?'কংগ্রেশনাল ক্লাব' নামে আইপ্যাকের বিশেষ একটি দল আছে। এই দলের প্রত্যেক সদস্য প্রতি নির্বাচনে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার ডলার চাঁদা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এই অর্থ ইসরায়েলপন্থী রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে ব্যয় করা হয়। পরবর্তীতের এদের মধ্যে যারা জয়লাভ করে, তাদের মাধ্যমে সিনেট এবং হাউজে প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের নীতির বাস্তবায়ন করে। তবে আইপ্যাক সামগ্রিকভাবে কত অর্থ ব্যয় করে, সেই সম্পর্কে জানা যায় না। তবে তাদের এমন কিছু সদস্য আছে, যারা এক মিলিয়ন থেকে শত মিলিয়ন পর্যন্ত অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে। আর এই সকল দাতাদের ধ্যান-ধারণা সবই ইসরায়েলকে ঘিরে। তারা যেকোনো মূল্যে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে টিকিয়ে রাখতে চান।শুধুমাত্র ট্রাম্পের শাসনামলেই আইপ্যাক অনেকগুলো সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা, ইরানের সাথে করা পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে আসা এবং ফিলিস্তিনকে দেওয়া সাহায্য বন্ধ করা।আইপ্যাক কতটা শক্তিশালীআইপ্যাক সর্বশেষ ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি বার্ষিক সম্মেলন করে, যেখানে প্রায় ২০ হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন এবং শীর্ষস্থানীয় মার্কিন রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত উপস্থিতিও ছিল সেখানে। এমনকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও উপস্থিত হয়েছিলেন, ছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও।এছাড়া ইসরাইলপন্থি গোষ্ঠীগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রার্থীদের লাখ লাখ ডলার অনুদান দিয়ে থাকে। ২০২০-এর নির্বাচনে ইসরাইলপন্থি গোষ্ঠীগুলোর অনুদান বাবদ খরচ হয়েছিল ৩০.৯৫ মিলিয়ন ডলার-যার ৬৩ শতাংশ পেয়েছিল ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা এবং ৩৬ শতাংশ গেছে রিপাবলিকান প্রার্থীদের হাতে।নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বরাবরের মতো এবারও নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে গিয়ে ইসরায়েলের পক্ষ নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ন্যাটো জোট। প্রায়ই শান্তি আলোচনার নাটক মঞ্চস্থ করলেও কখনোই সফলতা আসেনি কারন সর্বদা তারা ইসরায়েলের পক্ষে থেকেছে। তাদের অর্থ, অস্ত্র ও সর্বাত্মক সহায়তায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী জনগণ এর উপর দশকের পর দশক ধরে নিপীড়ন চালিয়ে আসছে দখলদার ইসরায়েল। এবারের সংঘাতেও তারা ইহুদিদের পক্ষ নিলো। মানবাধিকারের কথা বলে মুখে ফেনা তোলা দেশগুলোর আগ্রাসী মনোভাব, দ্বিচারিতা আর স্বার্থপরতার আরেকটি নজির হয়ে থাকবে এই সমর্থন।
০৮ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৪১ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে মানবাধিকারের ইস্যু তুলে বারবার সরকারকে কাঠগোড়ায় তোলার চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিছুই বলেনা আমেরিকা। ইসরায়েলের বিমান হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রাণ গেছে শিশু-নারীদের। মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে নিশ্চুপ ওয়াশিংটন।সমুদ্র উপকূলীয় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজাকে দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল অবরুদ্ধ করে রেখেছে। প্রায় বিচ্ছিন্ন এই ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে সশস্ত্র গ্রুপ হামাস। হামাসের রকেট হামলার জবাবে প্রায়ই ইসরায়েলি বাহিনী স্থল ও আকাশপথে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করা হামাস গ্রুপ শনিবার ভোর থেকে স্থল, জল ও আকাশপথে সমন্বিত হামলা করে ইসরায়েলে। এদিকে হামাসের হামলার পর গাজায় পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।ইসরায়েলে এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। হামাসের এ হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে প্রতিরক্ষা সমর্থনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সরকার ও জনগণের সঙ্গে আছি। এই হামলায় ইসরায়েলিদের প্রাণ হারানোর জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি।’ হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জাচি হানেগবির সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জেক সুলিভান।শনিবার বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোন কল করে বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সরকার ও জনগণকে সব ধরনের সমর্থন দিতে প্রস্তুত আছি।’ পরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস কখনই ন্যায়সংগত হতে পারেন না। ইসরায়েলের নিজেকে এবং তার জনগণকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।’ এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন কোনো পক্ষ সুবিধা নিতে চায় কি না সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।১৯৬৭ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যকার সম্পর্ক দ্রুতগতিতে ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হতে থাকে। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় মার্কিনীরা ইসরায়েলের পক্ষ নেয়। এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি রচনা করে। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও কূটনীতিকরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব কমাতে ইসরায়েল তাদের কার্যকরী এক অস্ত্র হতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র আরো ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। এই যুদ্ধে মার্কিনরা বেশ সফলতাও অর্জন করে এবং নিজেদের বিশ্বের একমাত্র সুপারপাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের এমন একটি মিত্র দরকার, যারা তাদের প্রতিরূপ হিসেবে কাজ করবে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক দূরত্বের একটি বিষয় ছিল। সেই সমস্যা নিরসনে শক্ত ঘাঁটি বিনির্মাণের জন্যই তারা বেছে নেয় ইসরায়েলকে। যুক্তরাষ্ট্র তখন ইসরায়েলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির জন্য তাদের হয়ে ফিলিস্তিনের সাথে দেনদরবার করার দায়িত্ব গ্রহণ করে।একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বাসের কারণেই এখনো ইসরায়েল যেকোনো শান্তি আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি হয়। বিগত তিন মার্কিন প্রেসিডেন্টই চেষ্টা করেছেন ফিলিস্তিনের সাথে ইসরায়েলের একটি সুরাহা করার। তবে এক্ষেত্রে তাদের সমর্থনের পাল্লা তেল আবিবের দিকেই বেশি থেকেছে। যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই ইসরায়েলের অনেক অপরাধ দেখেও না দেখার ভান করে থেকেছে, যা অব্যাহত রয়েছে বর্তমানেও। কিন্তু এর পেছনের রহস্য কী? শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করে, নাকি আরো কোনো কারণ রয়েছে?যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ককে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল কূটনৈতিক সম্পর্কও বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব সৃষ্টির জন্য ইসরায়েল যেমন প্রচুর অর্থ ব্যয় করে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। তবে এরপরও দুই দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, যেখান থেকে লাভবান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।১৯৮৫ সালে ইসরায়েলের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের হার অনেক বেড়েছে। ইসরায়েলে থাকা মার্কিন দূতাবাসের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে দুই দেশ প্রায় ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা করেছে, যা থেকে সিংহভাগ লাভবান হয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ইসরায়েল।যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইসরায়েল বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। দেশটির বিভিন্ন রাজ্য ইহুদিপ্রধান দেশটির সাথে বিভিন্ন ব্যবসা করে আসছে, যা থেকে সামগ্রিকভাবে মার্কিন অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে। বলা হয়ে থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে তার কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি দিয়েছে। এর প্রতিদান অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রও কম দিচ্ছে না!এছাড়াও আরো গভীরে গেলে দেখা যায় যে , আমেরিকার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে মূলতঃ কর্পোরেট হাউজগুলো। তারা প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বানাতে পারে, সরাতে পারে। এসব কর্পোরেট হাউজগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় এদের মালিক কিংবা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কম্পানিগুলোর মূল দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা চীফ এক্সজিকিউটিভ অফিসার, সিইও হলেন ইহুদি কমিউনিটির মানুষ।২০২০ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ৩.৮ বিলিয়ন (৩৮০ কোটি) ডলার সাহায্য দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার শাসনামলে ইসরায়েলকে দীর্ঘমেয়াদী যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার অধীনেই এই সাহায্য গেছে। প্রায় পুরোটাই ছিল সামরিক সাহায্য।২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা ইসরায়েলের সাথে এক চুক্তি সই করেন যার অধীনে ২০১৭-১৮ সাল থেকে তার পরবর্তী ১০ বছর ইসরায়েল ৩৮ বিলিয়ন ডলার বা ৩৮০০ কোটি ডলার সামরিক সাহায্য পাবে। তার আগে দশ বছরের তুলনায় ঐ সাহায্য বেড়েছে প্রায় ছয় শতাংশ। এ বাদেও, গত বছর ইসরায়েলে নতুন অভিবাসীদের পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ ডলার সাহায্য দিয়েছে। বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে ইহুদিরা ইসরায়েলে গিয়ে বসতি গড়তে চাইলে তাকে স্বাগত জানানোর নীতি বহুদিন ধরে সেদেশে রয়েছে।ইসরায়েলকে অত্যাধুনিক একটি সামরিক শক্তিধর দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে আমেরিকা বছরের পর বছর ধরে সাহায্য করছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র কেনার জন্য তহবিল যোগানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েল আমেরিকা থেকে ৫০টি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনেছে যা দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো যায়। প্রতিটি বিমানের দাম প্রায় ১০ কোটি ডলার। ইসরায়েল আমেরিকার কাছ থেকে ২৪০ কোটি ডলার ব্যয়ে আটটি কেসি-৪৬এ বোয়িং ‘পেগাসাস‘ বিমান কিনেছে। এই বিমান থেকে আকাশে এফ-৩৫ বিমানে জ্বালানি তেল ভরা যায়।২০২০ সালে ইসরায়েলকে আমেরিকা যে ৩৮০ কোটি ডলার দিয়েছে, তার মধ্যে ৫০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। এর মধ্যে রয়েছে ‘আয়রন ডোম‘ ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপত্তা যা দিয়ে ইসরায়েল রকেট হামলা প্রতিহত করে। ২০১১ সাল থেকে আমেরিকা ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ১৬০ কোটি ডলার দিয়েছে। এ ছাড়াও, গাজায় গোপন সুড়ঙ্গ শনাক্ত করাসহ বেশ কিছু সামরিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তৈরিতে আমেরিকা ইসরায়েলকে তহবিল ছাড়াও বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে। ইসরায়েলের সরকার সমরাস্ত্র কেনা এবং সামরিক প্রশিক্ষণে বহু টাকা খরচ করে যার অনেকটাই আসে আমেরিকার দেওয়া সাহায্য থেকে।যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পেছনে আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (আইপ্যাক)-এর অবদানকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আইপ্যাক কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কিন্তু এরপর তাদের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের উপর বড় প্রভাব রয়েছে। মার্কিন সরকারের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে থাকে। কিন্তু তারা এই কাজ করে কীভাবে?'কংগ্রেশনাল ক্লাব' নামে আইপ্যাকের বিশেষ একটি দল আছে। এই দলের প্রত্যেক সদস্য প্রতি নির্বাচনে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার ডলার চাঁদা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এই অর্থ ইসরায়েলপন্থী রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে ব্যয় করা হয়। পরবর্তীতের এদের মধ্যে যারা জয়লাভ করে, তাদের মাধ্যমে সিনেট এবং হাউজে প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের নীতির বাস্তবায়ন করে। তবে আইপ্যাক সামগ্রিকভাবে কত অর্থ ব্যয় করে, সেই সম্পর্কে জানা যায় না। তবে তাদের এমন কিছু সদস্য আছে, যারা এক মিলিয়ন থেকে শত মিলিয়ন পর্যন্ত অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে। আর এই সকল দাতাদের ধ্যান-ধারণা সবই ইসরায়েলকে ঘিরে। তারা যেকোনো মূল্যে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে টিকিয়ে রাখতে চান।শুধুমাত্র ট্রাম্পের শাসনামলেই আইপ্যাক অনেকগুলো সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা, ইরানের সাথে করা পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে আসা এবং ফিলিস্তিনকে দেওয়া সাহায্য বন্ধ করা।আইপ্যাক কতটা শক্তিশালীআইপ্যাক সর্বশেষ ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি বার্ষিক সম্মেলন করে, যেখানে প্রায় ২০ হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন এবং শীর্ষস্থানীয় মার্কিন রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত উপস্থিতিও ছিল সেখানে। এমনকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও উপস্থিত হয়েছিলেন, ছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও।এছাড়া ইসরাইলপন্থি গোষ্ঠীগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রার্থীদের লাখ লাখ ডলার অনুদান দিয়ে থাকে। ২০২০-এর নির্বাচনে ইসরাইলপন্থি গোষ্ঠীগুলোর অনুদান বাবদ খরচ হয়েছিল ৩০.৯৫ মিলিয়ন ডলার-যার ৬৩ শতাংশ পেয়েছিল ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা এবং ৩৬ শতাংশ গেছে রিপাবলিকান প্রার্থীদের হাতে।নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বরাবরের মতো এবারও নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে গিয়ে ইসরায়েলের পক্ষ নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ন্যাটো জোট। প্রায়ই শান্তি আলোচনার নাটক মঞ্চস্থ করলেও কখনোই সফলতা আসেনি কারন সর্বদা তারা ইসরায়েলের পক্ষে থেকেছে। তাদের অর্থ, অস্ত্র ও সর্বাত্মক সহায়তায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী জনগণ এর উপর দশকের পর দশক ধরে নিপীড়ন চালিয়ে আসছে দখলদার ইসরায়েল। এবারের সংঘাতেও তারা ইহুদিদের পক্ষ নিলো। মানবাধিকারের কথা বলে মুখে ফেনা তোলা দেশগুলোর আগ্রাসী মনোভাব, দ্বিচারিতা আর স্বার্থপরতার আরেকটি নজির হয়ে থাকবে এই সমর্থন।
০৮ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৪১ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে মানবাধিকারের ইস্যু তুলে বারবার সরকারকে কাঠগোড়ায় তোলার চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিছুই বলেনা আমেরিকা। ইসরায়েলের বিমান হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রাণ গেছে শিশু-নারীদের। মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে নিশ্চুপ ওয়াশিংটন।সমুদ্র উপকূলীয় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজাকে দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল অবরুদ্ধ করে রেখেছে। প্রায় বিচ্ছিন্ন এই ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে সশস্ত্র গ্রুপ হামাস। হামাসের রকেট হামলার জবাবে প্রায়ই ইসরায়েলি বাহিনী স্থল ও আকাশপথে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করা হামাস গ্রুপ শনিবার ভোর থেকে স্থল, জল ও আকাশপথে সমন্বিত হামলা করে ইসরায়েলে। এদিকে হামাসের হামলার পর গাজায় পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।ইসরায়েলে এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। হামাসের এ হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে প্রতিরক্ষা সমর্থনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সরকার ও জনগণের সঙ্গে আছি। এই হামলায় ইসরায়েলিদের প্রাণ হারানোর জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি।’ হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জাচি হানেগবির সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জেক সুলিভান।শনিবার বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোন কল করে বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সরকার ও জনগণকে সব ধরনের সমর্থন দিতে প্রস্তুত আছি।’ পরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস কখনই ন্যায়সংগত হতে পারেন না। ইসরায়েলের নিজেকে এবং তার জনগণকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।’ এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন কোনো পক্ষ সুবিধা নিতে চায় কি না সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।১৯৬৭ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যকার সম্পর্ক দ্রুতগতিতে ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হতে থাকে। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় মার্কিনীরা ইসরায়েলের পক্ষ নেয়। এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি রচনা করে। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও কূটনীতিকরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব কমাতে ইসরায়েল তাদের কার্যকরী এক অস্ত্র হতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র আরো ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। এই যুদ্ধে মার্কিনরা বেশ সফলতাও অর্জন করে এবং নিজেদের বিশ্বের একমাত্র সুপারপাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের এমন একটি মিত্র দরকার, যারা তাদের প্রতিরূপ হিসেবে কাজ করবে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক দূরত্বের একটি বিষয় ছিল। সেই সমস্যা নিরসনে শক্ত ঘাঁটি বিনির্মাণের জন্যই তারা বেছে নেয় ইসরায়েলকে। যুক্তরাষ্ট্র তখন ইসরায়েলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির জন্য তাদের হয়ে ফিলিস্তিনের সাথে দেনদরবার করার দায়িত্ব গ্রহণ করে।একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বাসের কারণেই এখনো ইসরায়েল যেকোনো শান্তি আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি হয়। বিগত তিন মার্কিন প্রেসিডেন্টই চেষ্টা করেছেন ফিলিস্তিনের সাথে ইসরায়েলের একটি সুরাহা করার। তবে এক্ষেত্রে তাদের সমর্থনের পাল্লা তেল আবিবের দিকেই বেশি থেকেছে। যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই ইসরায়েলের অনেক অপরাধ দেখেও না দেখার ভান করে থেকেছে, যা অব্যাহত রয়েছে বর্তমানেও। কিন্তু এর পেছনের রহস্য কী? শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করে, নাকি আরো কোনো কারণ রয়েছে?যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ককে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল কূটনৈতিক সম্পর্কও বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব সৃষ্টির জন্য ইসরায়েল যেমন প্রচুর অর্থ ব্যয় করে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। তবে এরপরও দুই দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, যেখান থেকে লাভবান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।১৯৮৫ সালে ইসরায়েলের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের হার অনেক বেড়েছে। ইসরায়েলে থাকা মার্কিন দূতাবাসের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে দুই দেশ প্রায় ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা করেছে, যা থেকে সিংহভাগ লাভবান হয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ইসরায়েল।যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইসরায়েল বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। দেশটির বিভিন্ন রাজ্য ইহুদিপ্রধান দেশটির সাথে বিভিন্ন ব্যবসা করে আসছে, যা থেকে সামগ্রিকভাবে মার্কিন অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে। বলা হয়ে থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে তার কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি দিয়েছে। এর প্রতিদান অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রও কম দিচ্ছে না!এছাড়াও আরো গভীরে গেলে দেখা যায় যে , আমেরিকার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে মূলতঃ কর্পোরেট হাউজগুলো। তারা প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বানাতে পারে, সরাতে পারে। এসব কর্পোরেট হাউজগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় এদের মালিক কিংবা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কম্পানিগুলোর মূল দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা চীফ এক্সজিকিউটিভ অফিসার, সিইও হলেন ইহুদি কমিউনিটির মানুষ।২০২০ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ৩.৮ বিলিয়ন (৩৮০ কোটি) ডলার সাহায্য দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার শাসনামলে ইসরায়েলকে দীর্ঘমেয়াদী যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার অধীনেই এই সাহায্য গেছে। প্রায় পুরোটাই ছিল সামরিক সাহায্য।২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা ইসরায়েলের সাথে এক চুক্তি সই করেন যার অধীনে ২০১৭-১৮ সাল থেকে তার পরবর্তী ১০ বছর ইসরায়েল ৩৮ বিলিয়ন ডলার বা ৩৮০০ কোটি ডলার সামরিক সাহায্য পাবে। তার আগে দশ বছরের তুলনায় ঐ সাহায্য বেড়েছে প্রায় ছয় শতাংশ। এ বাদেও, গত বছর ইসরায়েলে নতুন অভিবাসীদের পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ ডলার সাহায্য দিয়েছে। বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে ইহুদিরা ইসরায়েলে গিয়ে বসতি গড়তে চাইলে তাকে স্বাগত জানানোর নীতি বহুদিন ধরে সেদেশে রয়েছে।ইসরায়েলকে অত্যাধুনিক একটি সামরিক শক্তিধর দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে আমেরিকা বছরের পর বছর ধরে সাহায্য করছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র কেনার জন্য তহবিল যোগানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েল আমেরিকা থেকে ৫০টি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনেছে যা দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো যায়। প্রতিটি বিমানের দাম প্রায় ১০ কোটি ডলার। ইসরায়েল আমেরিকার কাছ থেকে ২৪০ কোটি ডলার ব্যয়ে আটটি কেসি-৪৬এ বোয়িং ‘পেগাসাস‘ বিমান কিনেছে। এই বিমান থেকে আকাশে এফ-৩৫ বিমানে জ্বালানি তেল ভরা যায়।২০২০ সালে ইসরায়েলকে আমেরিকা যে ৩৮০ কোটি ডলার দিয়েছে, তার মধ্যে ৫০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। এর মধ্যে রয়েছে ‘আয়রন ডোম‘ ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপত্তা যা দিয়ে ইসরায়েল রকেট হামলা প্রতিহত করে। ২০১১ সাল থেকে আমেরিকা ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ১৬০ কোটি ডলার দিয়েছে। এ ছাড়াও, গাজায় গোপন সুড়ঙ্গ শনাক্ত করাসহ বেশ কিছু সামরিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তৈরিতে আমেরিকা ইসরায়েলকে তহবিল ছাড়াও বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে। ইসরায়েলের সরকার সমরাস্ত্র কেনা এবং সামরিক প্রশিক্ষণে বহু টাকা খরচ করে যার অনেকটাই আসে আমেরিকার দেওয়া সাহায্য থেকে।যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পেছনে আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (আইপ্যাক)-এর অবদানকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আইপ্যাক কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কিন্তু এরপর তাদের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের উপর বড় প্রভাব রয়েছে। মার্কিন সরকারের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে থাকে। কিন্তু তারা এই কাজ করে কীভাবে?'কংগ্রেশনাল ক্লাব' নামে আইপ্যাকের বিশেষ একটি দল আছে। এই দলের প্রত্যেক সদস্য প্রতি নির্বাচনে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার ডলার চাঁদা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এই অর্থ ইসরায়েলপন্থী রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে ব্যয় করা হয়। পরবর্তীতের এদের মধ্যে যারা জয়লাভ করে, তাদের মাধ্যমে সিনেট এবং হাউজে প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের নীতির বাস্তবায়ন করে। তবে আইপ্যাক সামগ্রিকভাবে কত অর্থ ব্যয় করে, সেই সম্পর্কে জানা যায় না। তবে তাদের এমন কিছু সদস্য আছে, যারা এক মিলিয়ন থেকে শত মিলিয়ন পর্যন্ত অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে। আর এই সকল দাতাদের ধ্যান-ধারণা সবই ইসরায়েলকে ঘিরে। তারা যেকোনো মূল্যে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে টিকিয়ে রাখতে চান।শুধুমাত্র ট্রাম্পের শাসনামলেই আইপ্যাক অনেকগুলো সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা, ইরানের সাথে করা পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে আসা এবং ফিলিস্তিনকে দেওয়া সাহায্য বন্ধ করা।আইপ্যাক কতটা শক্তিশালীআইপ্যাক সর্বশেষ ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি বার্ষিক সম্মেলন করে, যেখানে প্রায় ২০ হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন এবং শীর্ষস্থানীয় মার্কিন রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত উপস্থিতিও ছিল সেখানে। এমনকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও উপস্থিত হয়েছিলেন, ছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও।এছাড়া ইসরাইলপন্থি গোষ্ঠীগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রার্থীদের লাখ লাখ ডলার অনুদান দিয়ে থাকে। ২০২০-এর নির্বাচনে ইসরাইলপন্থি গোষ্ঠীগুলোর অনুদান বাবদ খরচ হয়েছিল ৩০.৯৫ মিলিয়ন ডলার-যার ৬৩ শতাংশ পেয়েছিল ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা এবং ৩৬ শতাংশ গেছে রিপাবলিকান প্রার্থীদের হাতে।নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বরাবরের মতো এবারও নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে গিয়ে ইসরায়েলের পক্ষ নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ন্যাটো জোট। প্রায়ই শান্তি আলোচনার নাটক মঞ্চস্থ করলেও কখনোই সফলতা আসেনি কারন সর্বদা তারা ইসরায়েলের পক্ষে থেকেছে। তাদের অর্থ, অস্ত্র ও সর্বাত্মক সহায়তায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী জনগণ এর উপর দশকের পর দশক ধরে নিপীড়ন চালিয়ে আসছে দখলদার ইসরায়েল। এবারের সংঘাতেও তারা ইহুদিদের পক্ষ নিলো। মানবাধিকারের কথা বলে মুখে ফেনা তোলা দেশগুলোর আগ্রাসী মনোভাব, দ্বিচারিতা আর স্বার্থপরতার আরেকটি নজির হয়ে থাকবে এই সমর্থন।
০৮ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৪১ পিএম
বিপুল মাহমুদ: মুসলিম বিশ্বের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক জলজ্যান্ত দানব। ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ থেকে শুরু রাশিয়ার রাজত্ব রুখতে তালেবান সৃষ্টি এবং সর্বশেষ তালেবানি সন্ত্রাস দমনের নামে আফগানিস্তানে হামলা চালানোর ঘটনা মুসলিম বিশ্ব ভুলে যায়নি। যদিও শেষ পর্যন্ত তালেবানদের হাতেই ক্ষমতা ছেড়ে আফগানিস্তান থেকে পালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।শুধু ইরাক কিংবা তালেবান নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া, ইয়েমেন, বাহারাইন, আফ্রিকার লিবিয়া, মিশর, তিউনেশিয়ায় আরব বসন্তের নামে সরকার বিরোধী যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তাতে প্রত্যক্ষ মদদ ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। তিউনিশিয়া, মিশর, লিবিয়ায় সরকারের পতন ঘটানো গেলেও বাকি দেশগুলোতে সরকার পতনে যুক্তরাষ্ট্র সফল হয়নি। তাই বলে তারা পিছুও হটে যায়নি। বরং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা গোষ্ঠিগুলো আর আল কায়েদা, আইএসকে অস্ত্র সরবরাহ করে পুরো আরব বিশ্বে চরম অস্থিরতা তৈরি করে রাখে। যা আজও বিদ্যমান আছে সিরিয়াতে।এসব ঘটনা থেকে এটা পরিস্কার যে, মুসলিম বিশ্বের প্রতি একটা চরম বিদ্বেষ ছড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোতে অস্থিরতা জিইয়ে রেখে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছিল।২০০১ সালে যখন নাইন-ইলেভেন ঘটল অর্থাৎ নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারসহ অন্তত চারটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল, তখনি এই হামলার জন্য মুসলিম বিশ্বকে দায়ি করে ‘‘মুসলিম ব্যান’’ এর ব্যানারে বেশিরভাগ মুসলিম দেশকে সন্ত্রাসী বা টেরোরিস্ট দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে। অর্থাৎ ৯/১১-এ টুইন টাওয়ার হামলা বিশ্বব্যাপী বিভেদের এক স্পষ্ট সীমারেখা টেনে দেয়। সেই সীমারেখার একদিকে মুসলিম অধ্যুষিত দেশসমূহ আর অন্যদিকে পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্র।এসব ঘটনা পরিস্কার বুঝিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই মুসলিম বিদ্বষী এক রাষ্ট্র। তাদের কাছে সবার আগে নিজের স্বার্থ। তাদের স্বার্থে আঘাত লাগলেই বেঁকে বসে যুক্তরাষ্ট্র।আমরা যদি পিছনের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো, শুধুমাত্র ৯/১১ ঘটনার ফলশ্রুতিতে টেরোরিস্ট হিসাবে পরিচিত করেছে বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিম দেশকে, আর এটা প্রতিষ্ঠিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র “মুসলিম ব্যান” এর মাধ্যমে। তবে তারও অনেক আগে থেকেই মুসলিম বিশ্বকে বাঁকা চোখে দেখে যুক্তরাষ্ট্র।এবার আসা যাক, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের স্বার্থ কিভাবে মুসলিম বিশ্বকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটছে, যার মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তকমা দিচ্ছে তার বেশ কিছু উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে।আফগানিস্থানে রাশিয়ার আগ্রাসন রুখার নামে তালেবানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রশিক্ষণ নিয়েই এই আফগান তালেবানরা পরবর্তীতে আল কায়দা হিসেবে পৃথিবী জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ৯/১১ এর মতো ঘটনা ঘটায়। তার পরই বেঁকে বসে যুক্তরাষ্ট্র। চড়াও হও নিজেদের সৃষ্টি তালেবানি আল কায়দার বিরুদ্ধে। আল কায়দার নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার নামে পুরো আফগানিস্থানকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের এই হামলা থেকে মুক্তি পায়নি পাকিস্থানও। আল কায়েদা ধ্বংসের নামে প্রায় ২১ বছরের সেই যুদ্ধে আফগানিস্তানকে ছারখার করে দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলায় প্রাণ হারায় এক লাখ ৭৪ হাজার বেসামরিক মুসলিম নাগরিক। সন্ত্রাস দমনের নামে কার্যত আমেরিকা বেসামিরিক লোকদের হত্যা করে।২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধ আফগানিস্তানে শুরু করেছিল ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট সেই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়ে আফগান ছাড়ে তালেবানদের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের প্রয়োজনে আফগানিস্তানে তালেবান বা আল কায়েদা’র সৃষ্টি করেছিল যে যুক্তরাষ্ট্র; তারাই আবার সন্ত্রাস দমনের নামে মুসলিম বিশ্বের উপর হামলাও করেছে। হত্যা করেছে নারী,পুরুষ, শিশু সবাইকে। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে ক্রাইমের শিকারে পরিণত করেছে। অর্থাৎ রাশিয়াকে শায়েস্তা করার নামে মূলত আফগানিস্তানকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে এই অঞ্চলকেই তারা শেষ করে দিয়েছে।শুধু আফগান নয়, শুরুতেই বলেছিলাম, মুসলিম বিশ্বকে নানান কৌশলে ধ্বংস করতে সব সময় তৎপর যুক্তরাষ্ট্র। সেটা তালেবান বা আল কায়েদা হোক আর স্বৈরাশাসক উৎখাতের নামে হোক। যেমন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আসাদ বিরোধী সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স, এসডিএফ-এর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। নানা ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করছে। নিয়মিত অস্ত্র সরবরাহ করে সিরিয়াকে অস্থির করে তুলেছিল। শুধু যে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছে তা কিন্তু নয়, মার্কিন সৈন্যও পাঠিয়েছিল বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করার জন্য। তারা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সক্রিয় ছিল। এখনও সিরিয়ায় ১৫০০ মার্কিন সৈন্য তৎপর রয়েছে। সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। আরও এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি গৃহহীন হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তথ্য অনুযায়ি, তাদের এসব সাহায্যের মধ্যে রয়েছে বোমা বর্ষণ করা, স্থানীয় বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা এবং অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা। সিরিয়ায় আসাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে না পারলেও লিবিয়াতে তারা গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সফল হয়। এ জন্য তারা গাদ্দাফিকে লিবিয়ার মানুষের কাছে ভিলেন বানিয়েছিল। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে একটা গোষ্ঠিকে লেলিয়ে দিয়েছিল। বিরোধীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। অথচ এই গাদ্দাফি ছিলেন লিবিয়ার মানুষের ত্রাতা। অথচ তাকে ভিলেন বানিয়ে হত্যা করে আমেরিকা। গাদ্দাফিকে হত্যার পর থেকেই লিবিয়াতে যে বিশৃঙ্খলা শুরু হযেছে তা আজও থামেনি। গাদ্দাফির মৃত্যুর পর যারা দেশটির ক্ষমতায় এসেছে তাদের চেয়ে তিনি অনেক ভালো ছিলেন।গাদ্দাফিকে হঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ ছিল ইতালি। ইতোমধ্যে ইতালি নিজেদের ভুল স্বীকারও করেছে। ইয়েমেনেও লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক হত্যার শিকার হচ্ছেন শুধুমাত্র আমেরিকার কারণে।ইরাকের কুয়েত আক্রমণের পর থেকেই আমেরিকা বেজায় নাখোশ ছিল। ওই সময়েই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ কুয়েতকে রক্ষার নামে ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সৌদিআরবে মার্কিন ঘাঁটি তৈরি করা হয়। সেই যুদ্ধে ইরাক পরাজিত হয়। ইরাকের বিরুদ্ধে বিশ্বের অন্তত ৩৪টি দেশ নিয়ে মার্কিনীদের যুদ্ধের মূল কারণ ছিল মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ করে কুয়েতের তেল সম্পদ। আমেরিকার দুশ্চিন্তার কারণ ছিল যে, কুয়েতের তেল নিয়ে ইরাক বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করবে।যাক সেই যুদ্ধে ইরাককে পরাজিত করার পর থেকেই দেশটি আমেরিকার চক্ষুশূল। ৯/১১ এর পর ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি এবং তার একজন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিক গোপনে ওয়াশিংটন সফরের জন্য একটি আমন্ত্রণ পান। সেখানেই সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে বারজানি বলেছেন, “আমরা একমত হই বা না-হই, আমরা এতে অংশ নেই কি না-নেই, সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।”সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর দায়িত্ব গ্রহণের জন্যে সম্ভাব্য একটি সরকারকে প্রস্তুত রাখতে ২০০২সালের ডিসেম্বর মাসে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ইরাকে একটি কেন্দ্রীয় ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের ব্যাপারে সবাই সম্মত হয়।তার পরের ইতিহাস তো সবার জানা। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ইরাকে হামলার পেছনে দেশটির হাতে “গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে” এরকম একটি অজুহাত দাঁড় করায় এবং ২০০৩ সালের ১৯শে মার্চ ইরাকে সামরিক অভিযান শুরু করে। রাজধানী বাগদাদে তীব্র বিমান হামলার মধ্য দিয়ে এই আক্রমণ শুরু হয়। সেই আগ্রাসনে নির্বিচারে ২ লাখ ইরাকি মুসলমানকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর জানায়, ইরাকে নাকি কোন মরণাস্ত্রই নেই!আমেরিকার সেই আক্রমণের পর মুসলিম রাষ্ট্র ইরাক আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। শুরু হয় জাতিগত দাঙ্গা। ইসলামী স্টেট প্রতিষ্ঠা করতে আমেরিকার মদদেই সক্রিয় হয় আইএস। এভাবেই ইরাকের মত একটি সমৃদ্ধ ইসলামী রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষ মদদে মুসলিম রাষ্ট্র ধ্বংসের আরও বহু উদাহরণ তুলে ধরা যাবে। ইরানকে ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্র নানান কৌশল অবলম্বন করছে। নিষেধাজ্ঞার পর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশটিকে কপোকাত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু ইরানের শক্ত মনোভাবের কারণে পেরে উঠছে না।সব কিছুর নেপথ্যে মধ্যপ্রাচ্যের তেল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তেলের জন্য সমৃদ্ধি। বহু বছর ধরে এই জ্বালানি তেলের উপর নজর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। এজন্য তারা সব সময় চেয়েছে মধ্যেপ্রাচ্যে মার্কিনবান্ধব সরকার প্রতিষ্ঠা করতে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সব সময় তাদের তেলের সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে মুসলিম দেশ ইরাক-ইরান যুদ্ধ, সৌদি-ইয়েমেন যুদ্ধ, জর্দান এর ধ্বংসাবস্থা তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রয়োজনে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক বিভেদকে তুঙ্গে তুলে দেয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বশ্যতা স্বীকার করার কারণে সৌদিআরব, ওমান বা আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি।এই তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করা কিংবা ৯/১১ পরবর্তী সময়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে সন্ত্রাসের আখড়ায় পরিণত হওয়ার তকমা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস দমনের নামে কার্যত মুসলিম দেশগুলোতে আক্রমণ করে। তাদেরই সৃষ্ট এবং তাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে গড়ে উঠা তালেবান, আল কায়দা, আইএস নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠিকে আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত করে মুসলিম দেশগুলোতে জাতিগত দাঙ্গা লাগিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।পরবর্তিতে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরগুলোর কর্মকান্ড আর তাদের দমনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে যেমন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে, তেমনি একইভাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলোর কাছেও অত্যাধুনিক সব অস্ত্র বিক্রি করেছে বছরের পর বছর। আর সন্ত্রাস দমনের নামে মাসের পর মাস বছরের পর বছর বিভিন্ন মুসলিম দেশের কোটি মানুষকে হত্যা, নিঃস্ব করা আর অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়াই ছিল আমেরিকার মূল উদ্দেশ্য।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা হোক, কি রাখাইনে গণহত্যা, অথবা কুর্দি গণহত্যা, আর্মেনিয়ার গণহত্যা কোথাও যুক্তরাষ্ট্রের সহয়তা দেখা যায় নি। বরং মুসলিম বিশ্বে গত ৫০ বছরে যেসব হত্যাকান্ড ঘটেছে তার বেশিরভাগ নেতৃত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কাজেই একথা বলাই যায়, মুসলিম বিশ্বের এক আতংকের নাম যুক্তরাষ্ট্র।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৫৪ এএম