মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের শিবালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার জন্য ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি আধুনিক বিদ্যালয়।২০ মার্চ বুধবার বিকেলে শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর তেওতা এলাকায় ‘মুন্সী আব্দুল আজিজ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিদ্যালয়টির উদ্বোধন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান জানু।এ সময় তিনি বলেন, সরকার সবার জন্য শিক্ষা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর শিক্ষার জন্যও করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি নিশ্চিতকরণ ও পাঠদান করা হচ্ছে, দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন উপকরণ।প্রদান করা উপকরণের মধ্যে রয়েছে- হুইল চেয়ার, চশমা, ক্র্যাচ, হেয়ারিং ডিভাইস। এতে শুধু একটি বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষাই পাচ্ছে না, বরং সামাজিক বৈষম্য হ্রাস পাচ্ছে, পরিবর্তন হচ্ছে তাদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, দূর হচ্ছে তাদের প্রতিবন্ধকতাও। তাদেরকে সঠিক শিক্ষা, যথাযথভাবে গড়ে তুলতে পারলে তারাও স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারবে।রেজাউর রহমান খান জানু আরও বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা সমাজে অবহেলিত হয়। তারা সাধরণত শিক্ষার তেমন সুযোগ পান না। বর্তমান সরকার এসব শিশুদের জন্য চাকুরিতে বিশেষ কোটা রেখেছেন। এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা যদি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয় তাহলে তাঁরা সমাজের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে না। তাঁরাও দেশের কর্মক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে।এ উপজেলায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার জন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষিত হয়ে বিশেষ শিশুরা সমাজের বোঝা নয়, তা প্রমাণ করবে বলে তিনি মনে প্রানে বিশ্বাস করেন।এ সময় স্থানীয়রা বলেন, শিক্ষার উন্নয়নে উপজেলা পরিচালনা ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান জানু। বিশেষ করে এই শিশুদের জন্যে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ হচ্ছে তারঁ যুগান্তকারী পদক্ষেপ।উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউ ডি এফ মো. মশিউর রহমান, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।এছাড়া উপজেলার দশচিড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ, ইন্তাজগঞ্জ বাজার ও ছোট শাকরাইল ইছামতি নদীতে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য ঘাটলা নির্মাণ এবং সাঁকরাইল বাজারে ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান জানু।
২২ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩৯ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী এমপি বলেছেন, আমি সারা জীবন আপনাদের পাশে থেকে সেবা করে যাব। আমি নির্বাচনের আগে যে অঙ্গীকার করেছি তা বাস্তবায়ন করব। ঢাকা-১৮ আসনের উন্নয়ন করাই আমার লক্ষ্য। আমি আমার লক্ষে অবিচল থাকবো।২১ জানুয়ারি রবিবার বিকেলে রাজধানীর দক্ষিণখান ঈদগাহ মাঠ প্রাঙ্গণে দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।খসরু চৌধুরী এমপি আরও বলেন, আমি দক্ষিণখানের বাসিন্দা হিসেবে এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। সমস্যাগুলো আমি দেখেছি, যেই সমস্যাগুলো এই এলাকায় আছে এবং এগুলোর সমাধান হবে। আপনারা আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন উন্নয়নের মাধ্যমে আমি এর প্রতিদান দিবো।এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মফিজ উদ্দিন বেপারী, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক এস এম মাহবুবুল আলম, কার্যকরি সদস্য ফয়েজ আহমেদ, দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান মিঠু, উত্তরখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মিলনসহ ঢাকা-১৮ আসনের আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী।অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা-১৮ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরীকে সংবর্ধনা প্রদান করে দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগ। এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪৭, ৪৮, ৪৯ এবং ৫০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়।
২১ জানুয়ারী ২০২৪ ০২:০৯ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী এমপি বলেছেন, আমি সারা জীবন আপনাদের পাশে থেকে সেবা করে যাব। আমি নির্বাচনের আগে যে অঙ্গীকার করেছি তা বাস্তবায়ন করব। ঢাকা-১৮ আসনের উন্নয়ন করাই আমার লক্ষ্য। আমি আমার লক্ষে অবিচল থাকবো।২১ জানুয়ারি রবিবার বিকেলে রাজধানীর দক্ষিণখান ঈদগাহ মাঠ প্রাঙ্গণে দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।খসরু চৌধুরী এমপি আরও বলেন, আমি দক্ষিণখানের বাসিন্দা হিসেবে এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। সমস্যাগুলো আমি দেখেছি, যেই সমস্যাগুলো এই এলাকায় আছে এবং এগুলোর সমাধান হবে। আপনারা আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন উন্নয়নের মাধ্যমে আমি এর প্রতিদান দিবো।এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মফিজ উদ্দিন বেপারী, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক এস এম মাহবুবুল আলম, কার্যকরি সদস্য ফয়েজ আহমেদ, দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান মিঠু, উত্তরখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মিলনসহ ঢাকা-১৮ আসনের আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী।অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা-১৮ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরীকে সংবর্ধনা প্রদান করে দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগ। এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪৭, ৪৮, ৪৯ এবং ৫০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়।
২১ জানুয়ারী ২০২৪ ০২:০৯ পিএম
অধ্যাপক মো. মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার: একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হলো তথ্যপ্রযুক্তি। নব্বইয়ের দশক থেকেই বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বিগত একযুগে উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশও প্রযুক্তি খাতে বিস্তর সাফল্য অর্জন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যাপক উন্নয়নের বদৌলতে বাংলাদেশের মানুষের জীবন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে উঠে এসেছি মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। বাংলাদেশ সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রসার ও উন্নয়নে সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে। সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত "ডিজিটাল বাংলাদেশ" রূপকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি সেবায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা, নাগরিকদের জীবনকে উন্নত করা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা, সর্বোপরি দেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করা। কানেক্টিভিটি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন, জাতীয় আইসিটি নীতি, হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রজেক্ট এবং ওয়ান স্টপ সার্ভিস অ্যাক্টের মতো বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে এই প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই দিনে টেলিকমিউনিকেশন, ডিজিটাল সেবা, মোবাইল ব্যাংকিং, আউটসোর্সিংসহ প্রভৃতি খাতের প্রসারে উদ্যোক্তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশের সামগ্রিক আয়। দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি প্রথমত, বাংলাদেশে সব থেকে বেশি উন্নতি সাধন হয়েছে টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তির অভিযোজনে বর্তমান সরকার সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়সহ হাওর ও দুর্গম অঞ্চলে উচ্চগতির ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন, নতুন আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ও টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবলের সাথে সংযোগ স্থাপন, দেশের নিজস্ব সাটেলইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১' উৎক্ষেপণ এবং ফাইভ-জি প্রযুক্তির সেবা প্রবর্তনের ফলে দেশের প্রায় শতভাগ জনগোষ্ঠীর ও প্রান্তিক এলাকায় ইন্টারনেটসহ ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দেশে গত প্রায় ১৫ বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে দেড়শ গুণেরও বেশি। ২০০৮ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৮ লাখ, এখন সেটি ১৩ কোটির থেকে বেশি। মোবাইল ফোনের গ্রাহকও বেড়েছে সাড়ে চার গুণ। ২০০৮ সালে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ছিল চার কোটির কম, সেখানে চলতি বছরের আগস্ট মাসে এই সংখ্যা ১৮ কোটি ৮৬ লাখ পৌঁছেছে। সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন থাকার ফলে খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগ করা করা সম্ভব হচ্ছে। ২০০৯ সালে দেশে আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ এর ব্যবহার ছিল মাত্র ৭.৫ Gbps, সেখান থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৪০০ Gbps করা হয়েছে। ইন্টারনেট সহজলভ্য করার জন্য ২০০৫ সালের ৭৫ হাজার টাকা দামের ব্যান্ডউইথ এর মূল্য কমিয়ে প্রতি Mbps-এ ক্ষেত্র বিশেষে সর্বনিম্ন মাত্র ৩০০ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদানে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সারাদেশে তারভিত্তিক ইন্টারনেটের একই রেট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) মোবাইল ফোন সেবা চালু হওয়ার প্রায় সাড়ে চার বছর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি চালু হয় চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) মোবাইল ফোন সেবা এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে দেশের ৬টি সাইটে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক ফাইভ-জি সেবা চালু করা হয়েছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের কারণে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সেবা। ব্যবসাসহ যেকোনো উদ্দেশ্যে বহির্বিশ্বেও দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন এখন আর কোনো সমস্যা নয়। ঠিক টেলিকমিউনিকেশনের হাত ধরেই আসে একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। আজ থেকে বেশকিছু বছর আগে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা পাঠানো ছিল কঠিনতম কাজগুলোর একটি। তারও আগে কোথাও টাকা পাঠাতে মানি অর্ডার করতে হতো। আর্থিক লেনদেনের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর না থেকে জনগণ এখন ডিজিটাল পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদ এর মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) এর মাধ্যমে মানুষের জীবন সহজতর হয়েছে এবং পরনির্ভরশীলতা কমেছে। পৃথিবীতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ এখন এক নম্বরে। বাংলাদেশে হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতি মাসে লেনদেন এক লাখ কোটি টাকার ও বেশি পরিমাণ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিকাশ, রকেট, নগদ এর মাধ্যমেই এখন গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিলসহ সকল প্রকার বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের আশীর্বাদ হিসেবে সরকারি ডিজিটাল সেবার কথায় উঠে আসে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং জনসেবা প্রদানের উন্নতির জন্য সরকার বিভিন্ন ই-গভর্ন্যান্স পরিষেবা চালু করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে চালু করা হয়েছে ডিজিটাল সেবা সিস্টেম। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, চারিত্রিক সনদপত্র, জমির পর্চা, ভূমিহীন সনদপত্র, ওয়ারিশান সনদপত্র, অবিবাহিত সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র, অসচ্ছল প্রত্যয়নপত্র, নাগরিক সনদপত্র, উত্তরাধিকার সনদপত্র, অনলাইনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কৃষি তথ্য, স্বাস্থ্য পরামর্শ ইত্যাদি সেবা কোনো ঝামেলাহীনভাবে প্রদান করা হয়। দেশের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো থেকে এখন প্রতি মাসে ৪৫ লাখ মানুষ ৬০ ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারছে। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সেবাসমূহ যেমন—মোবাইল ব্যাংকিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল, চাকরির তথ্য, কম্পোজ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজি শিক্ষা, ভিসা আবেদন ও ট্র্যাকিং, ভিডিওতে কনফারেন্স, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং, ফটোকপি, লেমিনেটিং পাওয়া যাচ্ছে খুব সহজেই। দেশে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার ৬০২টি ডিজিটাল সেন্টার, ৮ হাজার ২০০ ডিজিটাল ডাকঘরের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য ৬০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরির আবেদন, পড়াশোনা, পাসপোর্ট আবেদন, বিমানের টিকিট, রেলওয়ে টিকিটিং, ই–টেন্ডারিং, টিন সনদ, আয়কর রিটার্ন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাচ্ছে অনলাইনে, অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার প্রায় ৮৬ হাজার ডিজিটাল ক্লাসরুম বা ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেছে। বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড ও আধুনিক ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে, যা এক সময় ধারণারও বাইরে ছিল। করোনা মহামারি থেকে দেশের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে টিকা কার্যক্রম, টিকার তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং সনদ প্রদানের লক্ষ্যে ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে, যা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং দেশের জনগণ এর সুবিধা পাচ্ছে। শুধু বিভাগীয় বা জেলা শহরে নয়, উপজেলা সদর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে এমনকি দুর্গম অঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে গেছে। হেল্পলাইনের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে জরুরি সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সেবা পাচ্ছে জনগণ। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি সেবা ও তথ্যকে প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩৩৩ শর্টকোড ব্যবহার করে কল সেন্টার–ভিত্তিক জাতীয় সেবা চালু করা হয়েছে। বেকারত্ব হ্রাসতথ্যপ্রযুক্তি খাতে মানবসম্পদ উন্নয়নের আওতায় ১৫ বছরে আইটি ফ্রিল্যান্সিং-এ সাড়ে ৬ লাখ, সফটওয়্যার শিল্পে আইটি ফ্রিল্যান্সার, সফটওয়্যার শিল্পে ৩ লাখ, হার্ডওয়্যার শিল্পে ৫০ হাজার, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাতে ৭০ হাজার, ই-কমার্সে ৩ লাখ এবং রাইড শেয়ারিং, ফিনটেক, এডুটেক, ইন্টারনেট সার্ভিস ইত্যাদি খাতে প্রায় ২০ লাখের বেশি তরুণ তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ তরুণ তরুণী এখন নিজের কর্মসংস্থান নিজেই সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে, অথবা বিদেশি কোম্পানিতে কাজ করছে। সাম্প্রতিক গ্লোবাল লোকেশন সার্ভিস ইনডেক্স অনুসারে, দেশের আইটি আউটসোর্সিং র্যাঙ্কিং ২১-এ দাঁড়িয়েছে এবং হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আইটি ফ্রিল্যান্সার সরবরাহক। নিজের বাগানের ফল, নিজের পুকুরের মাছসহ সবকিছু এখন অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে দেশে বিদেশে সবজায়গায় মানুষ বিক্রি করতে পারছে। বৃদ্ধি পেয়েছে আত্মবিশ্বাস, বৃদ্ধি পেয়েছে কোম্পানির দরজায় কড়া না নেড়ে ঘরে বসে কিছু করা। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ-এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমানে সর্বমোট ১০৯টি (সরকারি-৯২টি ও বেসরকারি-১৭টি) স্থানে হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১১টি হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার-এ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পূর্ণোদ্যমে চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কসমূহে ২৩০টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি পার্কে ২৮,০০০ জনের অধিক প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আইটি ইন্ডাস্ট্রির জনবলের চাহিদা বিবেচনা করে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ৩৫,৩১৫ জনকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আরও ৪৫,০০০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ চলমান রয়েছে। রাজধানীর বাইরে এখন নির্মিত ২৮টি হাই-টেক পার্কে আগামী দু-এক বছরের মধ্যে তিন লাখের বেশি কর্মসংস্থান এর সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের এতসংখ্যক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে দেশে উদ্যোক্তার সংখ্যা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে একটি টেকসই স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে সরকারি মালিকানায় প্রথম ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি হিসেবে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে এখন প্রায় ২৫০০ টি সক্রিয় স্টার্টআপ রয়েছে যারা ১৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের আইটি সেক্টরে আরও ৫ হাজার স্টার্টআপে উন্নীত করা হবে, যার মাধ্যমে ৩০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সফলতার অগ্রগতিইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) খাতে বাংলাদেশে উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ছে। ২০০৬ সালে এ খাতে রপ্তানি ছিল ২১ মিলিয়ন ডলার যা ২০২৩ সালের জুলাইতে এসে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমানে সফটওয়্যার খাতের ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপস, গেমস, অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম, ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রি-প্রেস, ডিজিটাল ডিজাইন, সাপোর্ট সেবা, কাস্টমাইজড অ্যাপ্লিকেশন রপ্তানি বেড়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সহজলভ্যতা ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়ায় ফলে এই খাতে রপ্তানি আয় দ্রুত বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সাম্প্রতিক তথ্য থেকে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরে সফটওয়্যার, পরামর্শ এবং সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ সহ আইটি এবং তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবা (আইটিইএস)-এর রপ্তানি থেকে $৫৯২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর তথ্য থেকে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১.৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করেছে বাংলাদেশ, যা স্থানীয় বাজারের উপার্জনে ১.৫ বিলিয়ন ডলার এর সমান বাজারের শেয়ার ধারণ করে। ২০২৫ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার এবং ২০৩১ সাল নাগাদ এই খাত থেকে ২ হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। দেশের তথ্য সুরক্ষায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে জাতীয় ডাটা সেন্টার। বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ ডাটা সেন্টার এখন বাংলাদেশে। ক্লাউড কম্পিউটিং ও জি-ক্লাউড প্রযুক্তি থাকা ডাটা সেন্টারগুলোর মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্থাপনা এটি। যার ডাউন টাইম শূন্যের কোঠায়। ডাটা সেন্টারে ৫৫ হাজার ওয়েবসাইট এবং ১১ কোটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হোস্ট করা আছে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, নির্বাচন কমিশন, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, এটুআই (এক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য-উপাত্ত রেজিস্ট্রেশন ও এনবিআর সিস্টেম, ই-নথি, সুরক্ষাসহ সবকিছু ওখানে হোস্ট করা রয়েছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোরও আস্থা অর্জন করেছে এই ডাটা সেন্টার। পাশাপাশি নিশ্চিত হয়েছে তথ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণে এখন আর বিদেশের ডাটা সেন্টারের দ্বারস্থ হতে হবে না। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আপটাইম ইন্সটিটিউট থেকে টায়ার সার্টিফিকেশন অব অপারেশনাল সাসটেইনেবিলিটির সনদ পেয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। ডাটা সেন্টার কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে নিজ দেশে নিজেদের তথ্য সংরক্ষণের কারণে বছরে ৩৫৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে এটি বেড়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়ের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান সরকারের বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তিখাতে অন্যতম সাফল্য ছিল ২০১৮ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ। বাংলাদেশের জন্য এটি একটা বড় অর্জন কারণ এর হাত ধরেই বাংলাদেশ মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে প্রবেশ করেছে। আজ বাংলাদেশ ৫৭তম স্যাটেলাইট ক্লাবের সদস্য। বিনিয়োগকারীদের দ্রুত ও সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে অতি সহজে, অল্প সময়ে ও কম খরচে সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে মোট ১৪৮টি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৩টি সেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে। দেশের উন্নয়নে তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধিশীল হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এখন পর্যন্ত, আইসিটি খাত বাংলাদেশের জিডিপিতে ১.২৮ শতাংশ অবদান রেখেছে। আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশের উন্নয়ন—সরকারি নীতি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং দক্ষ জনশক্তির সমন্বয়কে প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশ আইসিটি সেক্টরে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রেখেছে। ডিজিটাল উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের চলমান ধারা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও সাফল্যমণ্ডিত করবে। আমাদের আগামীর পথচলা হবে ২০৩০ সালের মধ্যে 'টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)' অর্জন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ এবং সর্বোপরি 'ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০' বাস্তবায়ন। লেখক: প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি।
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৩:০৩ পিএম
অধ্যাপক মো. মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার: একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হলো তথ্যপ্রযুক্তি। নব্বইয়ের দশক থেকেই বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বিগত একযুগে উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশও প্রযুক্তি খাতে বিস্তর সাফল্য অর্জন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যাপক উন্নয়নের বদৌলতে বাংলাদেশের মানুষের জীবন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে উঠে এসেছি মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। বাংলাদেশ সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রসার ও উন্নয়নে সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে। সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত "ডিজিটাল বাংলাদেশ" রূপকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি সেবায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা, নাগরিকদের জীবনকে উন্নত করা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা, সর্বোপরি দেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করা। কানেক্টিভিটি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন, জাতীয় আইসিটি নীতি, হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রজেক্ট এবং ওয়ান স্টপ সার্ভিস অ্যাক্টের মতো বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে এই প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই দিনে টেলিকমিউনিকেশন, ডিজিটাল সেবা, মোবাইল ব্যাংকিং, আউটসোর্সিংসহ প্রভৃতি খাতের প্রসারে উদ্যোক্তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশের সামগ্রিক আয়। দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি প্রথমত, বাংলাদেশে সব থেকে বেশি উন্নতি সাধন হয়েছে টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তির অভিযোজনে বর্তমান সরকার সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়সহ হাওর ও দুর্গম অঞ্চলে উচ্চগতির ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন, নতুন আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ও টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবলের সাথে সংযোগ স্থাপন, দেশের নিজস্ব সাটেলইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১' উৎক্ষেপণ এবং ফাইভ-জি প্রযুক্তির সেবা প্রবর্তনের ফলে দেশের প্রায় শতভাগ জনগোষ্ঠীর ও প্রান্তিক এলাকায় ইন্টারনেটসহ ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দেশে গত প্রায় ১৫ বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে দেড়শ গুণেরও বেশি। ২০০৮ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৮ লাখ, এখন সেটি ১৩ কোটির থেকে বেশি। মোবাইল ফোনের গ্রাহকও বেড়েছে সাড়ে চার গুণ। ২০০৮ সালে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ছিল চার কোটির কম, সেখানে চলতি বছরের আগস্ট মাসে এই সংখ্যা ১৮ কোটি ৮৬ লাখ পৌঁছেছে। সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন থাকার ফলে খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগ করা করা সম্ভব হচ্ছে। ২০০৯ সালে দেশে আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ এর ব্যবহার ছিল মাত্র ৭.৫ Gbps, সেখান থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৪০০ Gbps করা হয়েছে। ইন্টারনেট সহজলভ্য করার জন্য ২০০৫ সালের ৭৫ হাজার টাকা দামের ব্যান্ডউইথ এর মূল্য কমিয়ে প্রতি Mbps-এ ক্ষেত্র বিশেষে সর্বনিম্ন মাত্র ৩০০ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদানে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সারাদেশে তারভিত্তিক ইন্টারনেটের একই রেট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) মোবাইল ফোন সেবা চালু হওয়ার প্রায় সাড়ে চার বছর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি চালু হয় চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) মোবাইল ফোন সেবা এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে দেশের ৬টি সাইটে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক ফাইভ-জি সেবা চালু করা হয়েছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের কারণে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সেবা। ব্যবসাসহ যেকোনো উদ্দেশ্যে বহির্বিশ্বেও দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন এখন আর কোনো সমস্যা নয়। ঠিক টেলিকমিউনিকেশনের হাত ধরেই আসে একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। আজ থেকে বেশকিছু বছর আগে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা পাঠানো ছিল কঠিনতম কাজগুলোর একটি। তারও আগে কোথাও টাকা পাঠাতে মানি অর্ডার করতে হতো। আর্থিক লেনদেনের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর না থেকে জনগণ এখন ডিজিটাল পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদ এর মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) এর মাধ্যমে মানুষের জীবন সহজতর হয়েছে এবং পরনির্ভরশীলতা কমেছে। পৃথিবীতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ এখন এক নম্বরে। বাংলাদেশে হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতি মাসে লেনদেন এক লাখ কোটি টাকার ও বেশি পরিমাণ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিকাশ, রকেট, নগদ এর মাধ্যমেই এখন গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিলসহ সকল প্রকার বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের আশীর্বাদ হিসেবে সরকারি ডিজিটাল সেবার কথায় উঠে আসে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং জনসেবা প্রদানের উন্নতির জন্য সরকার বিভিন্ন ই-গভর্ন্যান্স পরিষেবা চালু করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে চালু করা হয়েছে ডিজিটাল সেবা সিস্টেম। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, চারিত্রিক সনদপত্র, জমির পর্চা, ভূমিহীন সনদপত্র, ওয়ারিশান সনদপত্র, অবিবাহিত সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র, অসচ্ছল প্রত্যয়নপত্র, নাগরিক সনদপত্র, উত্তরাধিকার সনদপত্র, অনলাইনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কৃষি তথ্য, স্বাস্থ্য পরামর্শ ইত্যাদি সেবা কোনো ঝামেলাহীনভাবে প্রদান করা হয়। দেশের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো থেকে এখন প্রতি মাসে ৪৫ লাখ মানুষ ৬০ ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারছে। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সেবাসমূহ যেমন—মোবাইল ব্যাংকিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল, চাকরির তথ্য, কম্পোজ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজি শিক্ষা, ভিসা আবেদন ও ট্র্যাকিং, ভিডিওতে কনফারেন্স, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং, ফটোকপি, লেমিনেটিং পাওয়া যাচ্ছে খুব সহজেই। দেশে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার ৬০২টি ডিজিটাল সেন্টার, ৮ হাজার ২০০ ডিজিটাল ডাকঘরের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য ৬০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরির আবেদন, পড়াশোনা, পাসপোর্ট আবেদন, বিমানের টিকিট, রেলওয়ে টিকিটিং, ই–টেন্ডারিং, টিন সনদ, আয়কর রিটার্ন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাচ্ছে অনলাইনে, অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার প্রায় ৮৬ হাজার ডিজিটাল ক্লাসরুম বা ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেছে। বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড ও আধুনিক ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে, যা এক সময় ধারণারও বাইরে ছিল। করোনা মহামারি থেকে দেশের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে টিকা কার্যক্রম, টিকার তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং সনদ প্রদানের লক্ষ্যে ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে, যা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং দেশের জনগণ এর সুবিধা পাচ্ছে। শুধু বিভাগীয় বা জেলা শহরে নয়, উপজেলা সদর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে এমনকি দুর্গম অঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে গেছে। হেল্পলাইনের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে জরুরি সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সেবা পাচ্ছে জনগণ। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি সেবা ও তথ্যকে প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩৩৩ শর্টকোড ব্যবহার করে কল সেন্টার–ভিত্তিক জাতীয় সেবা চালু করা হয়েছে। বেকারত্ব হ্রাসতথ্যপ্রযুক্তি খাতে মানবসম্পদ উন্নয়নের আওতায় ১৫ বছরে আইটি ফ্রিল্যান্সিং-এ সাড়ে ৬ লাখ, সফটওয়্যার শিল্পে আইটি ফ্রিল্যান্সার, সফটওয়্যার শিল্পে ৩ লাখ, হার্ডওয়্যার শিল্পে ৫০ হাজার, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাতে ৭০ হাজার, ই-কমার্সে ৩ লাখ এবং রাইড শেয়ারিং, ফিনটেক, এডুটেক, ইন্টারনেট সার্ভিস ইত্যাদি খাতে প্রায় ২০ লাখের বেশি তরুণ তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ তরুণ তরুণী এখন নিজের কর্মসংস্থান নিজেই সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে, অথবা বিদেশি কোম্পানিতে কাজ করছে। সাম্প্রতিক গ্লোবাল লোকেশন সার্ভিস ইনডেক্স অনুসারে, দেশের আইটি আউটসোর্সিং র্যাঙ্কিং ২১-এ দাঁড়িয়েছে এবং হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আইটি ফ্রিল্যান্সার সরবরাহক। নিজের বাগানের ফল, নিজের পুকুরের মাছসহ সবকিছু এখন অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে দেশে বিদেশে সবজায়গায় মানুষ বিক্রি করতে পারছে। বৃদ্ধি পেয়েছে আত্মবিশ্বাস, বৃদ্ধি পেয়েছে কোম্পানির দরজায় কড়া না নেড়ে ঘরে বসে কিছু করা। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ-এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমানে সর্বমোট ১০৯টি (সরকারি-৯২টি ও বেসরকারি-১৭টি) স্থানে হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১১টি হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার-এ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পূর্ণোদ্যমে চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কসমূহে ২৩০টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি পার্কে ২৮,০০০ জনের অধিক প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আইটি ইন্ডাস্ট্রির জনবলের চাহিদা বিবেচনা করে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ৩৫,৩১৫ জনকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আরও ৪৫,০০০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ চলমান রয়েছে। রাজধানীর বাইরে এখন নির্মিত ২৮টি হাই-টেক পার্কে আগামী দু-এক বছরের মধ্যে তিন লাখের বেশি কর্মসংস্থান এর সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের এতসংখ্যক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে দেশে উদ্যোক্তার সংখ্যা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে একটি টেকসই স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে সরকারি মালিকানায় প্রথম ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি হিসেবে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে এখন প্রায় ২৫০০ টি সক্রিয় স্টার্টআপ রয়েছে যারা ১৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের আইটি সেক্টরে আরও ৫ হাজার স্টার্টআপে উন্নীত করা হবে, যার মাধ্যমে ৩০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সফলতার অগ্রগতিইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) খাতে বাংলাদেশে উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ছে। ২০০৬ সালে এ খাতে রপ্তানি ছিল ২১ মিলিয়ন ডলার যা ২০২৩ সালের জুলাইতে এসে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমানে সফটওয়্যার খাতের ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপস, গেমস, অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম, ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রি-প্রেস, ডিজিটাল ডিজাইন, সাপোর্ট সেবা, কাস্টমাইজড অ্যাপ্লিকেশন রপ্তানি বেড়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সহজলভ্যতা ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়ায় ফলে এই খাতে রপ্তানি আয় দ্রুত বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সাম্প্রতিক তথ্য থেকে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরে সফটওয়্যার, পরামর্শ এবং সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ সহ আইটি এবং তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবা (আইটিইএস)-এর রপ্তানি থেকে $৫৯২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর তথ্য থেকে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১.৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করেছে বাংলাদেশ, যা স্থানীয় বাজারের উপার্জনে ১.৫ বিলিয়ন ডলার এর সমান বাজারের শেয়ার ধারণ করে। ২০২৫ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার এবং ২০৩১ সাল নাগাদ এই খাত থেকে ২ হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। দেশের তথ্য সুরক্ষায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে জাতীয় ডাটা সেন্টার। বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ ডাটা সেন্টার এখন বাংলাদেশে। ক্লাউড কম্পিউটিং ও জি-ক্লাউড প্রযুক্তি থাকা ডাটা সেন্টারগুলোর মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্থাপনা এটি। যার ডাউন টাইম শূন্যের কোঠায়। ডাটা সেন্টারে ৫৫ হাজার ওয়েবসাইট এবং ১১ কোটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হোস্ট করা আছে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, নির্বাচন কমিশন, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, এটুআই (এক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য-উপাত্ত রেজিস্ট্রেশন ও এনবিআর সিস্টেম, ই-নথি, সুরক্ষাসহ সবকিছু ওখানে হোস্ট করা রয়েছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোরও আস্থা অর্জন করেছে এই ডাটা সেন্টার। পাশাপাশি নিশ্চিত হয়েছে তথ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণে এখন আর বিদেশের ডাটা সেন্টারের দ্বারস্থ হতে হবে না। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আপটাইম ইন্সটিটিউট থেকে টায়ার সার্টিফিকেশন অব অপারেশনাল সাসটেইনেবিলিটির সনদ পেয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। ডাটা সেন্টার কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে নিজ দেশে নিজেদের তথ্য সংরক্ষণের কারণে বছরে ৩৫৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে এটি বেড়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়ের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান সরকারের বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তিখাতে অন্যতম সাফল্য ছিল ২০১৮ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ। বাংলাদেশের জন্য এটি একটা বড় অর্জন কারণ এর হাত ধরেই বাংলাদেশ মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে প্রবেশ করেছে। আজ বাংলাদেশ ৫৭তম স্যাটেলাইট ক্লাবের সদস্য। বিনিয়োগকারীদের দ্রুত ও সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে অতি সহজে, অল্প সময়ে ও কম খরচে সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে মোট ১৪৮টি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৩টি সেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে। দেশের উন্নয়নে তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধিশীল হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এখন পর্যন্ত, আইসিটি খাত বাংলাদেশের জিডিপিতে ১.২৮ শতাংশ অবদান রেখেছে। আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশের উন্নয়ন—সরকারি নীতি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং দক্ষ জনশক্তির সমন্বয়কে প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশ আইসিটি সেক্টরে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রেখেছে। ডিজিটাল উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের চলমান ধারা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও সাফল্যমণ্ডিত করবে। আমাদের আগামীর পথচলা হবে ২০৩০ সালের মধ্যে 'টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)' অর্জন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ এবং সর্বোপরি 'ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০' বাস্তবায়ন। লেখক: প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি।
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৩:০৩ পিএম
অধ্যাপক মো. মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার: একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হলো তথ্যপ্রযুক্তি। নব্বইয়ের দশক থেকেই বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বিগত একযুগে উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশও প্রযুক্তি খাতে বিস্তর সাফল্য অর্জন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যাপক উন্নয়নের বদৌলতে বাংলাদেশের মানুষের জীবন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে উঠে এসেছি মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। বাংলাদেশ সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রসার ও উন্নয়নে সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে। সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত "ডিজিটাল বাংলাদেশ" রূপকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি সেবায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা, নাগরিকদের জীবনকে উন্নত করা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা, সর্বোপরি দেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করা। কানেক্টিভিটি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন, জাতীয় আইসিটি নীতি, হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রজেক্ট এবং ওয়ান স্টপ সার্ভিস অ্যাক্টের মতো বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে এই প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই দিনে টেলিকমিউনিকেশন, ডিজিটাল সেবা, মোবাইল ব্যাংকিং, আউটসোর্সিংসহ প্রভৃতি খাতের প্রসারে উদ্যোক্তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশের সামগ্রিক আয়। দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি প্রথমত, বাংলাদেশে সব থেকে বেশি উন্নতি সাধন হয়েছে টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তির অভিযোজনে বর্তমান সরকার সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়সহ হাওর ও দুর্গম অঞ্চলে উচ্চগতির ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন, নতুন আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ও টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবলের সাথে সংযোগ স্থাপন, দেশের নিজস্ব সাটেলইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১' উৎক্ষেপণ এবং ফাইভ-জি প্রযুক্তির সেবা প্রবর্তনের ফলে দেশের প্রায় শতভাগ জনগোষ্ঠীর ও প্রান্তিক এলাকায় ইন্টারনেটসহ ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দেশে গত প্রায় ১৫ বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে দেড়শ গুণেরও বেশি। ২০০৮ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৮ লাখ, এখন সেটি ১৩ কোটির থেকে বেশি। মোবাইল ফোনের গ্রাহকও বেড়েছে সাড়ে চার গুণ। ২০০৮ সালে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ছিল চার কোটির কম, সেখানে চলতি বছরের আগস্ট মাসে এই সংখ্যা ১৮ কোটি ৮৬ লাখ পৌঁছেছে। সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন থাকার ফলে খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগ করা করা সম্ভব হচ্ছে। ২০০৯ সালে দেশে আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ এর ব্যবহার ছিল মাত্র ৭.৫ Gbps, সেখান থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৪০০ Gbps করা হয়েছে। ইন্টারনেট সহজলভ্য করার জন্য ২০০৫ সালের ৭৫ হাজার টাকা দামের ব্যান্ডউইথ এর মূল্য কমিয়ে প্রতি Mbps-এ ক্ষেত্র বিশেষে সর্বনিম্ন মাত্র ৩০০ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদানে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সারাদেশে তারভিত্তিক ইন্টারনেটের একই রেট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) মোবাইল ফোন সেবা চালু হওয়ার প্রায় সাড়ে চার বছর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি চালু হয় চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) মোবাইল ফোন সেবা এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে দেশের ৬টি সাইটে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক ফাইভ-জি সেবা চালু করা হয়েছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের কারণে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সেবা। ব্যবসাসহ যেকোনো উদ্দেশ্যে বহির্বিশ্বেও দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন এখন আর কোনো সমস্যা নয়। ঠিক টেলিকমিউনিকেশনের হাত ধরেই আসে একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। আজ থেকে বেশকিছু বছর আগে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা পাঠানো ছিল কঠিনতম কাজগুলোর একটি। তারও আগে কোথাও টাকা পাঠাতে মানি অর্ডার করতে হতো। আর্থিক লেনদেনের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর না থেকে জনগণ এখন ডিজিটাল পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদ এর মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) এর মাধ্যমে মানুষের জীবন সহজতর হয়েছে এবং পরনির্ভরশীলতা কমেছে। পৃথিবীতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ এখন এক নম্বরে। বাংলাদেশে হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতি মাসে লেনদেন এক লাখ কোটি টাকার ও বেশি পরিমাণ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিকাশ, রকেট, নগদ এর মাধ্যমেই এখন গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিলসহ সকল প্রকার বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের আশীর্বাদ হিসেবে সরকারি ডিজিটাল সেবার কথায় উঠে আসে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং জনসেবা প্রদানের উন্নতির জন্য সরকার বিভিন্ন ই-গভর্ন্যান্স পরিষেবা চালু করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে চালু করা হয়েছে ডিজিটাল সেবা সিস্টেম। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, চারিত্রিক সনদপত্র, জমির পর্চা, ভূমিহীন সনদপত্র, ওয়ারিশান সনদপত্র, অবিবাহিত সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র, অসচ্ছল প্রত্যয়নপত্র, নাগরিক সনদপত্র, উত্তরাধিকার সনদপত্র, অনলাইনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কৃষি তথ্য, স্বাস্থ্য পরামর্শ ইত্যাদি সেবা কোনো ঝামেলাহীনভাবে প্রদান করা হয়। দেশের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো থেকে এখন প্রতি মাসে ৪৫ লাখ মানুষ ৬০ ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারছে। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সেবাসমূহ যেমন—মোবাইল ব্যাংকিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল, চাকরির তথ্য, কম্পোজ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজি শিক্ষা, ভিসা আবেদন ও ট্র্যাকিং, ভিডিওতে কনফারেন্স, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং, ফটোকপি, লেমিনেটিং পাওয়া যাচ্ছে খুব সহজেই। দেশে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার ৬০২টি ডিজিটাল সেন্টার, ৮ হাজার ২০০ ডিজিটাল ডাকঘরের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য ৬০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরির আবেদন, পড়াশোনা, পাসপোর্ট আবেদন, বিমানের টিকিট, রেলওয়ে টিকিটিং, ই–টেন্ডারিং, টিন সনদ, আয়কর রিটার্ন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাচ্ছে অনলাইনে, অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার প্রায় ৮৬ হাজার ডিজিটাল ক্লাসরুম বা ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেছে। বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড ও আধুনিক ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে, যা এক সময় ধারণারও বাইরে ছিল। করোনা মহামারি থেকে দেশের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে টিকা কার্যক্রম, টিকার তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং সনদ প্রদানের লক্ষ্যে ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে, যা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং দেশের জনগণ এর সুবিধা পাচ্ছে। শুধু বিভাগীয় বা জেলা শহরে নয়, উপজেলা সদর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে এমনকি দুর্গম অঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে গেছে। হেল্পলাইনের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে জরুরি সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সেবা পাচ্ছে জনগণ। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি সেবা ও তথ্যকে প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩৩৩ শর্টকোড ব্যবহার করে কল সেন্টার–ভিত্তিক জাতীয় সেবা চালু করা হয়েছে। বেকারত্ব হ্রাসতথ্যপ্রযুক্তি খাতে মানবসম্পদ উন্নয়নের আওতায় ১৫ বছরে আইটি ফ্রিল্যান্সিং-এ সাড়ে ৬ লাখ, সফটওয়্যার শিল্পে আইটি ফ্রিল্যান্সার, সফটওয়্যার শিল্পে ৩ লাখ, হার্ডওয়্যার শিল্পে ৫০ হাজার, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাতে ৭০ হাজার, ই-কমার্সে ৩ লাখ এবং রাইড শেয়ারিং, ফিনটেক, এডুটেক, ইন্টারনেট সার্ভিস ইত্যাদি খাতে প্রায় ২০ লাখের বেশি তরুণ তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ তরুণ তরুণী এখন নিজের কর্মসংস্থান নিজেই সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে, অথবা বিদেশি কোম্পানিতে কাজ করছে। সাম্প্রতিক গ্লোবাল লোকেশন সার্ভিস ইনডেক্স অনুসারে, দেশের আইটি আউটসোর্সিং র্যাঙ্কিং ২১-এ দাঁড়িয়েছে এবং হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আইটি ফ্রিল্যান্সার সরবরাহক। নিজের বাগানের ফল, নিজের পুকুরের মাছসহ সবকিছু এখন অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে দেশে বিদেশে সবজায়গায় মানুষ বিক্রি করতে পারছে। বৃদ্ধি পেয়েছে আত্মবিশ্বাস, বৃদ্ধি পেয়েছে কোম্পানির দরজায় কড়া না নেড়ে ঘরে বসে কিছু করা। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ-এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমানে সর্বমোট ১০৯টি (সরকারি-৯২টি ও বেসরকারি-১৭টি) স্থানে হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১১টি হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার-এ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পূর্ণোদ্যমে চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কসমূহে ২৩০টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি পার্কে ২৮,০০০ জনের অধিক প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আইটি ইন্ডাস্ট্রির জনবলের চাহিদা বিবেচনা করে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ৩৫,৩১৫ জনকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আরও ৪৫,০০০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ চলমান রয়েছে। রাজধানীর বাইরে এখন নির্মিত ২৮টি হাই-টেক পার্কে আগামী দু-এক বছরের মধ্যে তিন লাখের বেশি কর্মসংস্থান এর সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের এতসংখ্যক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে দেশে উদ্যোক্তার সংখ্যা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে একটি টেকসই স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে সরকারি মালিকানায় প্রথম ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি হিসেবে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে এখন প্রায় ২৫০০ টি সক্রিয় স্টার্টআপ রয়েছে যারা ১৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের আইটি সেক্টরে আরও ৫ হাজার স্টার্টআপে উন্নীত করা হবে, যার মাধ্যমে ৩০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সফলতার অগ্রগতিইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) খাতে বাংলাদেশে উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ছে। ২০০৬ সালে এ খাতে রপ্তানি ছিল ২১ মিলিয়ন ডলার যা ২০২৩ সালের জুলাইতে এসে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমানে সফটওয়্যার খাতের ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপস, গেমস, অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম, ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রি-প্রেস, ডিজিটাল ডিজাইন, সাপোর্ট সেবা, কাস্টমাইজড অ্যাপ্লিকেশন রপ্তানি বেড়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সহজলভ্যতা ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়ায় ফলে এই খাতে রপ্তানি আয় দ্রুত বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সাম্প্রতিক তথ্য থেকে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরে সফটওয়্যার, পরামর্শ এবং সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ সহ আইটি এবং তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবা (আইটিইএস)-এর রপ্তানি থেকে $৫৯২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর তথ্য থেকে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১.৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করেছে বাংলাদেশ, যা স্থানীয় বাজারের উপার্জনে ১.৫ বিলিয়ন ডলার এর সমান বাজারের শেয়ার ধারণ করে। ২০২৫ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার এবং ২০৩১ সাল নাগাদ এই খাত থেকে ২ হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। দেশের তথ্য সুরক্ষায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে জাতীয় ডাটা সেন্টার। বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ ডাটা সেন্টার এখন বাংলাদেশে। ক্লাউড কম্পিউটিং ও জি-ক্লাউড প্রযুক্তি থাকা ডাটা সেন্টারগুলোর মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্থাপনা এটি। যার ডাউন টাইম শূন্যের কোঠায়। ডাটা সেন্টারে ৫৫ হাজার ওয়েবসাইট এবং ১১ কোটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হোস্ট করা আছে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, নির্বাচন কমিশন, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, এটুআই (এক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য-উপাত্ত রেজিস্ট্রেশন ও এনবিআর সিস্টেম, ই-নথি, সুরক্ষাসহ সবকিছু ওখানে হোস্ট করা রয়েছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোরও আস্থা অর্জন করেছে এই ডাটা সেন্টার। পাশাপাশি নিশ্চিত হয়েছে তথ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণে এখন আর বিদেশের ডাটা সেন্টারের দ্বারস্থ হতে হবে না। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আপটাইম ইন্সটিটিউট থেকে টায়ার সার্টিফিকেশন অব অপারেশনাল সাসটেইনেবিলিটির সনদ পেয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। ডাটা সেন্টার কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে নিজ দেশে নিজেদের তথ্য সংরক্ষণের কারণে বছরে ৩৫৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে এটি বেড়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়ের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান সরকারের বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তিখাতে অন্যতম সাফল্য ছিল ২০১৮ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ। বাংলাদেশের জন্য এটি একটা বড় অর্জন কারণ এর হাত ধরেই বাংলাদেশ মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে প্রবেশ করেছে। আজ বাংলাদেশ ৫৭তম স্যাটেলাইট ক্লাবের সদস্য। বিনিয়োগকারীদের দ্রুত ও সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে অতি সহজে, অল্প সময়ে ও কম খরচে সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে মোট ১৪৮টি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৩টি সেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে। দেশের উন্নয়নে তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধিশীল হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এখন পর্যন্ত, আইসিটি খাত বাংলাদেশের জিডিপিতে ১.২৮ শতাংশ অবদান রেখেছে। আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশের উন্নয়ন—সরকারি নীতি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং দক্ষ জনশক্তির সমন্বয়কে প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশ আইসিটি সেক্টরে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রেখেছে। ডিজিটাল উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের চলমান ধারা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও সাফল্যমণ্ডিত করবে। আমাদের আগামীর পথচলা হবে ২০৩০ সালের মধ্যে 'টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)' অর্জন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ এবং সর্বোপরি 'ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০' বাস্তবায়ন। লেখক: প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি।
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৩:০৩ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক: 'জনগণের উন্নয়ন অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের এ অগ্রযাত্রাকে সুসংহত করেছে। এটি অব্যাহত রাখতে সকলে এগিয়ে আসতে হবে।' ১৭ নভেম্বর শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে ‘উন্নয়ন ও গণতন্ত্র' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সরকার মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের পাশাপাশি বৈশ্বিক সহযোগিতা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই সভার আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত গবেষণাভিত্তিক সংগঠন 'এডুকেশন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি)'। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, 'রাজনৈতিক মতের প্রতি পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধই গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র। সামরিক শাসন ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে পুর্নবাসনের মত রাজনৈতিক ঘটনা এই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে নষ্ট করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করতে চাওয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রের উপর আঘাতের ঘটনা আমরা অতীতে দেখেছি। এই সকল সংকটই সকল দ্বন্দ্বের উৎপত্তি ঘটিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ কথা অনস্বীকার্য যে, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন দুটি একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী একটি সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই সময়ে এসে নতুন করে সংলাপ নিয়ে যে আলোচনা চলছে তার প্রস্তাব তিনি আগেই দিয়ে ছিলেন।’ সভায় সভাপতিত্বে ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ও এডুকেশন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি)-এর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন। আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্র ভাবনার উল্লেখ করে আলোচনায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান বলেন, 'আব্রাহাম লিংকন এমন বলেছেন- কোন রাষ্ট্রে সব জনগণ উন্নয়নের সুফল ভোগ করে স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস করলে, সেই রাষ্ট্রে গণতন্ত্র বিরাজমান বলে বিবেচনা করা যায়। প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণের কল্যাণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা কারও অজানা নয়। তার অর্থনৈতিক সাফল্যমণ্ডিত পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর রিপোর্টেও এসেছে।' বাংলাদেশের সরকার মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের পাশাপাশি বৈশ্বিক সহযোগিতা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘কর্মসংস্থান, যোগাযোগে উন্নতি এবং আত্মনির্ভরতা অর্জনের সুফল বাংলাদেশের মানুষ ভোগ করছে। গণতান্ত্রিক চর্চা সুষ্ঠু থাকলে মানুষ এসব সুফল ভোগ করে।' ইআরডিএফবি-এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সভার আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও ইআরডিএফবি'র সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল কবীর, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার প্রমুখ।
১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৫৯ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক: 'জনগণের উন্নয়ন অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের এ অগ্রযাত্রাকে সুসংহত করেছে। এটি অব্যাহত রাখতে সকলে এগিয়ে আসতে হবে।' ১৭ নভেম্বর শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে ‘উন্নয়ন ও গণতন্ত্র' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সরকার মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের পাশাপাশি বৈশ্বিক সহযোগিতা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই সভার আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত গবেষণাভিত্তিক সংগঠন 'এডুকেশন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি)'। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, 'রাজনৈতিক মতের প্রতি পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধই গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র। সামরিক শাসন ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে পুর্নবাসনের মত রাজনৈতিক ঘটনা এই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে নষ্ট করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করতে চাওয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রের উপর আঘাতের ঘটনা আমরা অতীতে দেখেছি। এই সকল সংকটই সকল দ্বন্দ্বের উৎপত্তি ঘটিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ কথা অনস্বীকার্য যে, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন দুটি একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী একটি সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই সময়ে এসে নতুন করে সংলাপ নিয়ে যে আলোচনা চলছে তার প্রস্তাব তিনি আগেই দিয়ে ছিলেন।’ সভায় সভাপতিত্বে ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ও এডুকেশন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি)-এর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন। আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্র ভাবনার উল্লেখ করে আলোচনায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান বলেন, 'আব্রাহাম লিংকন এমন বলেছেন- কোন রাষ্ট্রে সব জনগণ উন্নয়নের সুফল ভোগ করে স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস করলে, সেই রাষ্ট্রে গণতন্ত্র বিরাজমান বলে বিবেচনা করা যায়। প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণের কল্যাণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা কারও অজানা নয়। তার অর্থনৈতিক সাফল্যমণ্ডিত পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর রিপোর্টেও এসেছে।' বাংলাদেশের সরকার মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের পাশাপাশি বৈশ্বিক সহযোগিতা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘কর্মসংস্থান, যোগাযোগে উন্নতি এবং আত্মনির্ভরতা অর্জনের সুফল বাংলাদেশের মানুষ ভোগ করছে। গণতান্ত্রিক চর্চা সুষ্ঠু থাকলে মানুষ এসব সুফল ভোগ করে।' ইআরডিএফবি-এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সভার আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও ইআরডিএফবি'র সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল কবীর, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার প্রমুখ।
১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৫৯ এএম
ইটনা (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।১৫ নভেম্বর বুধবার দুপুরে অষ্টগ্রাম উপজেলার খয়েরপুর-আব্দুল্লাপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়।এ সময় উপস্থিত ছিলেন অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. দিলশাদ জাহান, অষ্টগ্রাম থানা অফিসার ইনচার্জ মুর্শেদ জামান প্রমুখ।মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন এমপি তৌফিক। এ সময় তিনি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৩:২৪ এএম
নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম বলেছেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিদেশিদের কাছে ভালো লাগে না। তাই তারা সরকারকে পিছনে ফেলে রাখতে চায়। এইজন্য তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।১১ নভেম্বর শনিবার বিকালে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা স্কুল মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন এবং নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, বেঙ্গল গ্রুপ পরিচালক বিলকিস নাহার, জেসমিন আক্তার, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কৃতি খোলোয়াড় কাউসার হামিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুমিনুল হক বাকের, সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাবর বাবু, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আবদুল হাই, বজরা ইউপি চেয়ারম্যান মীরন অর রশিদসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
১২ নভেম্বর ২০২৩ ০৩:৩০ এএম
ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেছেন, গত ২ বার আমি নৌকা চাই নাই, এবার নৌকা চাইবো, আপনাদের ভালবাসা যদি থাকে তাহলে বিশ্বাস করি নেত্রী আমাকেই নৌকা দেবেন। আর নৌকা পেলে আশা করি দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েই জিতবো।১০ নভেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চরচান্দ্রা খেয়াঘাট-নয়াকান্দা (অর্জুনপট্টি) আড়িয়ালা খাঁ শাখা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন শেষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।নিক্সন চৌধুরী বলেন, এই গ্রামের এই রাস্তা কাঁচা ছিল, আমি এসে ইটের রাস্তা করেছি। আরও খুশির খবর হলো, আপনাদের এই রাস্তা পাকা হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়ে গেছে। এর পর এই ব্রিজের কাজ শেষ হলে আপনাদের আর কেউ চরের মানুষ বলতে পারবে না। মাত্র ২ মিনিটেই আপনারা মূল সড়কে চলে আসতে পারবেন।তিনি বলেন, আপনারা এই রাস্তা চাওয়ার পরে কাজী জাফরউল্ল্যাহ বলেছিলেন, এই রাস্তা দিয়ে মানুষ চলে না, গরু-ছাগল চলে, গরু-ছাগলের জন্য রাস্তা করা লাগবে নাকি। সেই কাজী সাহেব এখন আবার এসে আপনাদের কাছে ভোট চায়, সুযোগ চায় কোন মুখে।নিক্সন চৌধুরী এসময় উপস্থিত নারীদের উদ্দেশে বলেন, কোনো ডাকাতকে ভয় পাবেন না। ব্রিজ হয়ে গেলে আমার বাড়ি যেতে আপনাদের সময় লাগবে ২ মিনিট। আপনাদের সকল নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার। এই এলাকায় মসজিদ আছে, মন্দির আছে। এই সবের দায়িত্বও আমার। এইটা আমার এলাকা। এখানে কোনো ডাকাত, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীর স্থান হবে না।নিক্সন চৌধুরী শুক্রবার সন্ধ্যায় চান্দ্রা ইউনিয়নের নয়াকান্দা (অর্জুনপট্টি) গ্রামে আড়িয়াল খা শাখা নদীর উপর ৬১ কোটি ৪৯ লক্ষ ২৭ হাজার, ৪৪৭ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে নির্মিতব্য ৩১৫ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। পরে সেখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।আলোচনা সভায় চান্দ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদাৎ হোসেন, ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিবসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়েনের চেয়ারম্যান, জেলা ও উপজেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
১১ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:২৭ এএম