কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষকদের হেনস্তা ও হুমকি-ধমকির অভিযোগে উপাচার্যপন্থী দুজন কর্মকর্তা ও সাতজন সাবেক শিক্ষার্থীর নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতি সভাপতি ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান।১৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় এ অভিযোগ করেন তারা।অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. দেলোয়ার হোসেন। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে চাকরির আবেদন করা ও ছাত্রলীগের পদপ্রার্থীরা হলেন মো. ইমরান হোসাইন, অনুপম দাস বাধন, রকিবুল হাসান রকি, আমিনুর রহমান, ইমাম হোসাইন মাসুম, রাকিব, জাহিদুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০-৩০ জন।অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বিকেল চারটার দিকে নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতাকর্মীরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গেলে জাকির হোসেন ও ইমরান হোসাইনের নেতৃত্বে কয়েকজনকে নিয়ে শিক্ষকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও হেনস্তার চেষ্টা করে। এ সময় তারা আমাদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ শুরু করে এবং প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে। একপর্যায়ে উপাচার্যের উপস্থিতিতে শিক্ষকদের ‘থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো’- বাক্য চয়ন করে হুমকি দেয়। তখন উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির কাছে নিরাপত্তা চাইলে আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন।আরও বলা হয়, উপাচার্য আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করেই নিজ বাসভবনে চলে যান। বর্তমানে আমিসহ আমাদের শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ভবিষ্যতে আমাদের যেকোনো সময় ক্ষতিসাধন করার আশঙ্কা করছি। বিষয়টি উপস্থিত শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করে শিক্ষকদের স্বাক্ষরসহ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলাম। একই সময় প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক থানায় উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত শিক্ষকদের স্বাক্ষরসহ সংযুক্তি দিয়ে এ অভিযোগ করেন।থানায় অভিযোগের বিষয়ে ড. তাহের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যদি আমরা নিরাপদ না থাকি, তাহলে আমরা অবশ্যই রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চাইবো। প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। উপাচার্যের কাছে আমরা নিরাপত্তা চেয়েও আমরা নিরাপত্তা পাইনি এবং প্রক্টরিয়াল বডিও আমাদের নিরাপত্তা দেয়নি। এখন আমাদের শিক্ষকেরা নিরাপত্তাহীনতায় আছে। এজন্য আমরা রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছি।’জিডির বিষয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবো।’এদিকে শিক্ষকদের নিরাপত্তার বিষয়টি জানতে উপাচার্য ও প্রক্টরের অফিসে না পেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৮:০২ এএম
ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্বেবিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বখতিয়ার হাসানকে প্রভাষক পদে পদনমন করা হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডে সদস্যদের সঙ্গে ‘অশোভন আচরণে’র অভিযোগে তার এই পদাবনতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২৬২তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।১৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট তীব্র ক্ষোভ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের অনুষ্ঠিত প্রভাষক পদে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সভা চলাকালে বিশেষজ্ঞ সদস্যসহ নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে ড. বখতিয়ার হাসান (বিভাগের তৎকালীন সভাপতি) অশোভন আচরণ করেন। এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ সদস্যের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অভিযোগের সত্যতা পায় এবং সেই মর্মে রিপোর্ট দেন।পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির রিপোর্টটি গত ১২ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত ২৬২তম সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হয়। সিন্ডিকেট সভা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি এমপ্লয়িস এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ডিসিপ্লিন রুলসের ৩ (গ) ধারায় সংশ্লিষ্ট ৯-এর-৪ ধারার উপধারা (ফ) অনুযায়ী সিন্ডিকেট তার বর্তমান পদ (সহযোগী অধ্যাপক) অবনমন করে প্রভাষক পদে প্রারম্ভিক বেতন (২২ হাজার থেকে ৫৩ হাজার ৬০ টাকা) নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়।এ বিষয়ে ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, ‘আমার সঙ্গে এটা অন্যায় করা হয়েছে এবং আইন অনুযায়ী হয়নি। কেউ চোখ বন্ধ করে দেখলেও বুঝতে পারবে। বিষয়টি হাইকোর্টে মামলাধীন রয়েছে। একটি স্থগিতাদেশও আছে। তাছাড়া নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হয়ে আমার দ্বিমত পোষণ করার অধিকার রয়েছে। তারা অশোভন আচরণ বললেও তার ব্যাখা দিতে পারেনি।’এদিকে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট। সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে বিষয়টি জানা গেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেকোনো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য কিংবা মতভিন্নতা থাকতেই পারে। যে ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিটের একজন সম্মানিত সদস্যকে শান্তি দিয়েছে সেটি আইনের শাসনের পরিপন্থী এবং ব্যক্তি প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। অনতিবিলম্বে এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জোরালো দাবি জানাচ্ছি।ওই ঘটনায় আরোপিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সোমবার বিবৃতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ বিভাগের সভাপতিরা। এতে বলা হয়, ‘আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, গত ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বিভাগের সভাপতির সঙ্গে নিয়োগ বোর্ডের অন্য সদস্যদের মতপার্থক্যকে কেন্দ্র করে বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ বোর্ডে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে তাকে পদাবনমন করা হয়েছে। আমরা মনে করি যেকোনো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য কিংবা মতভিন্নতা থাকতেই পারে এবং অতীতে এ ধরনের ঘটনার অসংখ্য নজির এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে।’বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘নিয়োগ বোর্ডের প্রত্যেক সদস্যের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের আইনগত অধিকার থাকা সত্ত্বেও সেটিকে অসৌজন্যমূলক আচরণ হিসেবে আখ্যায়িত করলে ভবিষ্যতে বিভাগের সভাপতি হিসেবে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করা দুরুহ হয়ে পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের নজির স্থাপন ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। প্রকারান্তরে এটি ব্যক্তি প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে- মর্মে আমরা মনে করি। আমরা অনতিবিলম্বে ড. মো. বখতিরার হাসানের বিরুদ্ধে আরোপিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জোরালো দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কর্মকাণ্ডের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।’
১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০১:২৪ পিএম
জাবি প্রতিনিধি: সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনায় উত্তপ্ত ক্যাম্পাস। এ ঘটানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই ক্ষুব্ধ। এমন ঘটনা তৈরি হয়েছে পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর বিচার না হওয়ার কারণে। শিক্ষক জনির যৌন নিপীড়নের বিচার না হওয়াও এ ঘটনার পিছনে সাহস জুগিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার।উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, শিক্ষক জনিসহ বর্তমান ধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত ত্রুটিমুক্ত শাস্তির ব্যাবস্থা না নেয়া হলে বুঝবো আপনারা ইচ্ছা করেই এসব করিয়েছেন। ধরে নিবো এর জন্য আপনিই দায়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলামন ঘটনাগুলোর সুরাহ না হওয়া পর্যন্ত সিন্ডিকেট বসতে দেওয়া হবে না।৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে 'নিপীড়ন বিরোধি মঞ্চ' কর্তৃক আয়োজিত মানববন্ধন ও ভিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।দর্শন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, মোস্তাফিজরা মেধার সাক্ষর রেখে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আজ তারা ধর্ষক। এ দায় কি তাদের একার? প্রশাসনেরও আছে। তাদের মাধ্যমেই প্রশাসন টিকে থাকে। আজ আপনারা আনন্দোলনে দাঁড়িয়েছেন, এখানে যদি হেরে যান তাহলে এ হার কিছু মানুষের বা জাহাঙ্গীর নগরের নয়, এ হারে মানচিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। আশা করি এ আনন্দোলন ব্যর্থ হবে না। কারণ এর সাথে জড়িয়ে আছে মূল্যবোধ এবং মানবতাবোধ।ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, নিপীড়ক শিক্ষার্থী ও তাকে সহায়তাকারিদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধী ও অবৈধ এই শিক্ষার্থীর সদনপত্র ও ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজ ব্যয়ে বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা লড়ে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিষ্ক্রিয় ও নির্বিকার অ্যাখ্যা দিয়ে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, আমরা এমন একজন উপাচার্যকে পেয়েছি, যিনি নিষ্ক্রিয় ও নির্বিকার। ক্যাম্পাসে যত ঘটনা ঘটে, এর প্রেক্ষিতে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি বড়জোর একটা নির্দেশ পাঠান কিন্তু এর কিছুই বাস্তবে ঘটে না। আমরা অছাত্রদের বেড় করার কথা বলেছি, তিনি শুধু নির্দেশ দিয়ে নির্বিকার হয়ে বসে আছেন।মানববন্ধন ও ভিক্ষোভ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিমসহ আরও অনেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বক্তব্য রাখেন।
০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২:২২ পিএম
সৈকত ইসলাম, জাবি প্রতিনিধি: সম্প্রতি টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে প্রথমবারের মতো স্থান করাসহ নানা অর্জন নিয়ে ৫৩ বছর পার করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। এ অজর্নের সাথে অসঙ্গতি ও অপূর্ণতার জায়গাও কম নয়।আজকের দিনে এসেও কোনো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রে কেবল তদন্ত কমিটি গঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে। এতে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে অন্যদিকে উৎসাহিত হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি।এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৮ সালে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা ও আইনের দাবি প্রথম উত্থাপিত হলেও খোদ জাহাঙ্গীরনগরেই কোনো কোনো ঘটনা মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও আশার মুখ দেখে না।প্রতিষ্ঠার পর ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রথম আলোচনায় আসে ১৯৯২ সালে। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন জাবি ছাত্র জসিম উদ্দিন মানিক ধর্ষণের সেঞ্চুরী করে গর্বের সাথে তা উদযাপন করে। এরপর যৌন হয়রানির ঘটনা এই ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক ঘটনায় পরিণত হয়। ফলে দেখা যায়, ২০০৫ সালে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক তানভীর আহমেদ সিদ্দিক, ২০০৬ সালে বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. গোলাম মোস্তফা, ২০০৮ সালে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের তৎকালীন সভাপতি ছানোয়ার হোসেন সানি যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ২০১০ সালের মার্চে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এক ছাত্র কর্তৃক একই বিভাগের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। একই বছর অভিযোগ উঠে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি আব্দুল্লাহ হেল কাফির বিরুদ্ধে। ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসকল ঘটনায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে।১৯৯৮ সালে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা ও আইনের দাবি প্রথম জাহাঙ্গীরনগর থেকেই উত্থাপিত হয়। এর একটি খসড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ফলে নীতিমালা ও আইনের দাবিতে চলতে থাকে আন্দোলন। এরপর বিভিন্ন সময় নারী নির্যাতনের ঘটনায় একই দাবি বারবার সামনে আসতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি এই খসড়াটি নিয়ে আরো সমৃদ্ধ করে ‘যৌন নিপীড়নবিরোধী আইন-২০১০’ নামে আইন পরিষদে জমা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১০ মার্চ তারিখে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই গঠিত হয় যৌননিপীড়ন বিরোধী সেল ‘অভিযোগ কমিটি’। বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. খুরশীদা বেগমকে এ সেলের প্রধান করে গঠিত হয় ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি।২০১১ সালে ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রেও সন্তোষজনক বিচার পাননি বলে অভিযোগ করেন অভিযোগকারীরা।তবে ২০১৯ সলের ১৯ সেপ্টেম্বর সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সানওয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে একই বিভাগের ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। তদন্ত সাপেক্ষে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।যৌন নিপীড়নে সর্বশেষ অমীমাংসিত ঘটনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ, যার নিষ্পত্তিতে সময় বার বার পেছানো নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হতে থাকে। এক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাস্তি দিতে নানাভাবে বিলম্ব করছে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাইয়ে গঠিত কমিটির নানা টালবাহানার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠিত হলেও অভিযুক্তকে অব্যাহতি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও শিক্ষক জনির ক্ষেত্রে কয়েকমাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও তার প্রয়োগ দেখা যায়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন এবং এর প্রয়োগ নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে বিচারাধীন ও চলমান ঘটনা নিয়ে বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক জেবউননেসা জানান, আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অনেকগুলো অভিযোগ এসেছে এবং সেগুলোর নিষ্পত্তিও হয়েছে। তবে বর্তমানে আলোচিত জনি স্যারের ইস্যু সম্পর্কে কোনো অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশান আমার কাছে পাঠায়নি। আর এজন্য এবিষয়ে জেছে কিছু করার নেই আমার।ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. পারভীন জলি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা নিপীড়নের বিরুদ্ধে সবসময় জোরালো অবস্থান জারি রেখেছে। ১৯৯৮ সালের ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের অনুপ্রেরণা আজও আমাদের শক্তি যোগায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে যে যৌননিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রস্তুত হয়েছিল, পরে তা সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রণীত হয়েছে। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। তবে আমাদের আরও অনেক প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। যেমন আমরা র্যাগিং মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে পারিনি, মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প সর্বজন ও সর্বপ্রাণ বান্ধব করতে পারিনি, অনেক বিভাগের ক্লাসরুমের সংকট মেটেনি। এসকল প্রত্যাশা পূরণ হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ আরও উন্নত হবে, এ বিশ্ববিদ্যালয় নানা ক্ষেত্রে দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবে।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান বলেন, সাম্প্রতিক এই ইস্যু নিয়ে আমাদের কাজ চলমান। প্রশাসনিক নানা কাজের কারণেই মূলত একটু দেরি হয়েছে। তবে এই অভিযোগের আলোকে গঠন করা স্ট্রাকচার্ড কমিটি অতি শীঘ্রই তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
১৫ জানুয়ারী ২০২৪ ০৬:৪৪ এএম
ববি প্রতিনিধি: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) শীতকালীন অবকাশ শুরু হয়েছে ২৪ ডিসেম্বর রোববার থেকে। তার আগের দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার থেকেই এক প্রকার ফাঁকা হতে শুরু করে ক্যাম্পাস। কিন্তু এই বন্ধেও সেখানকার বিভিন্ন হলের রিডিং রুমে কমেনি পড়ুয়াদের আনাগোনা। মূলত চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগে থাকে ভোর থেকে গভীর রাত অব্দি। তবে ছুটির মধ্যেও নানা প্রয়োজনে যারা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে তাদের পাশে থাকার কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।২৫ ডিসেম্বর সোমবার ও ২৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা এবং বঙ্গবন্ধু হলের রিডিং রুমে গিয়ে দেখা মেলে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনেকেই হলে অবস্থান করছেন। তাদের অনেকে স্নাতক শেষ করে এখন বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। অনেকের রয়েছে ছুটি শেষে সেমিস্টার পরীক্ষা। কেউ কেউ টিউশনির জন্য থেকে গেছেন ক্যাম্পাসে। তবে রিডিং রুমের বেশিরভাগ আসন চাকরিপ্রার্থীদের দখলে।এরকমই একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আলামিন মৃধা বলেন, তিন বছর পার হয়ে গেছে স্নাতক শেষ করেছি। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিলেও এখনো কাঙ্ক্ষিত ফল পাইনি। বেকারত্বের এই সময়ে এসে কেমন যেন মনে হয়, জীবন না থাকলেও চলে কিন্তু চাকরি না থাকলে যেন চলেই না। বাড়িতে গেলে আত্মীয়-স্বজনের প্রশ্নে বিব্রত হই। তাই ছুটিতেও হলেই থেকে গেছি।অন্যদিকে বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির খান বলেন, আগামী ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল। খুব বেশি সময় নেই বিধায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। পড়াশোনার চাপেই মূলত এই দীর্ঘ বন্ধেও বাড়িতে যেতে পারছি না।তবে খানিকটা ক্ষোভের সুরে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু মোল্লা বলেন, হল খোলা থাকলেও হলের ডাইনিংগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। টিউশনি বা পড়ালেখা সংক্রান্ত নানা প্রয়োজনে আমরা যারা হলে আছি তাদের অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যায় করে ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে খাবার যোগাড় করতে হচ্ছে। ডাইনিং পরিচালকেরা তো সারাবছর ব্যবসাই করে। এই সময়ে অল্প পরিসরে ডাইনিং চালু রেখে মানবিকতার পরিচয় দিতে পারতেন তারা।এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, আমাদের ছুটি থাকলেও ভিসি স্যারের নির্দেশনায় প্রতিদিনই আমি ক্যাম্পাসে যাচ্ছি। হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করছি এবং তাদের যেকোনো প্রয়োজনে প্রক্টর অফিসে যোগাযোগের কথা বলেছি৷ ডাইনিং চালুর ব্যাপারটি আমি হল কর্তৃপক্ষ এবং ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে অবহিত করবো।
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৩:২৫ এএম