গবি প্রতিনিধি: অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স র্যাংকিং-২০২৪ এ বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় স্থান পেয়েছেন সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ২৪ জন। শিক্ষকদের পাশাপাশি ২ জন শিক্ষার্থীও এ তালিকায় আছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানের এই সূচকটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশিত হয়। বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় এ বছর সর্বমোট স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের ২০৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার ৩৩ জন গবেষক।গবেষকদের তালিকায় গবির স্থান পাওয়া শিক্ষকরা হলেন, ফার্মেসী বিভাগ থেকে এ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোখলেছুর রহমান সরকার, ড. পিযুষ কুমার পাল, মো. সেলিম হোসেন, মো. গোলাম মোস্তফা ও অনন্ত কুমার দাস। রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিলয় কুমার দে ও শামীম মাহবুব (সাবেক)।বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ থেকে মো. এখলাস উদ্দিন দিপু, মো. ইউসুফ আলী। কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তানিয়া আক্তার, শায়লা রহমান, শরীফ আহমেদ, শাহরিয়ার হাসান, আতিকুর রহমান, সামিরা আক্তার টুম্পা (শিক্ষার্থী) ও মো. আকিফুল ইসলাম ফাহিম (শিক্ষার্থী)।ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ থেকে ডা. মো. রুকনুজ্জামান। ফলিত গণিত বিভাগের বি এম জুয়েল রানা (সাবেক), সেলিনা আক্তার, মো. হাফিজুর রহমান (সাবেক)। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এস এম ফাহাদ ও ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এস মৃদুল কান্তি সাহা।এছাড়া মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শাহ্ সুলতান মাশরাফি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাল্টিডিসিপ্লিনারি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা সহকারী সোহেল হোসেন এতে স্থান পেয়েছেন।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এ সাফল্যে আমরা আনন্দিত। তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। আশা করি, এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে গবেষণার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।উল্লেখ্য, এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স গবেষকদের গুগল স্কলারের রিসার্চ প্রোফাইলের বিগত ৫ বছরের এইচ-ইনডেক্স, আই-১০ ইনডেক্স স্কোর এবং সাইটেশনের ওপর ভিত্তি করে তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী-গবেষক-অধ্যাপকদের কাজ এবং তাদের শেষ ৬ বছরের কাজের তথ্য বিশ্লেষণের পর তা এইচ-ইনডেক্স, আইটেন-ইনডেক্স স্কোর এবং সাইটেশনের ওপর ভিত্তি করে এ তালিকা প্রকাশিত হয়।এতে নিজ নিজ গবেষণার বিষয় অনুযায়ী গবেষকদের বিশ্ববিদ্যালয়, নিজ দেশ, মহাদেশীয় অঞ্চল ও বিশ্বে নিজেদের অবস্থান জানা যায়। ১২টি ক্যাটাগরিতে (কৃষি ও বনায়ন, কলা, নকশা ও স্থাপত্য, ব্যবসায় ও ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ইতিহাস দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব, আইন, চিকিৎসা, প্রকৃতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান) এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০২:১৮ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (বিআইইউ) আয়োজিত প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার ঢাকার মতিঝিলের বিসিআইসি অডিটোরিয়ামে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 'ইসলামিক কালচার এন্ড হেরিটেজ, বিজনেস, লিগ্যাল পারস্পেক্টিভ এন্ড ইম্পোরটেন্স অব ইংলিশ এজ এ লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা' শীর্ষক দিনব্যাপী সম্মেলনে দু’টি টেকনিক্যাল সেশনে ৯ জন গবেষক তাদের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। এতে দেশ-বিদেশের ৫ শতাধিক গবেষক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আমিনুল হক ভূইয়া। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, গবেষণা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে যত বেশী গবেষণা কর্ম সম্পাদন হবে, দেশ ও জাতি তত উন্নত হবে। প্রকৃত গবেষণাই আদর্শ জাতি গঠনে ভূমিকা পালন করে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালিয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক উন্নয়নের জন্য বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কর্তৃক প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান অবশ্য করণীয়, আর তা হলেই ছাত্র-ছাত্রীরা সমৃদ্ধ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষক, কর্মকতা-কর্মচারীরা তাদের যথাযথ আর্থিক সুবিধা প্রাপ্ত হবেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তিনি বিআইইউ পরিবারের সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। সম্মেলনের আহবায়ক ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর সুলতান আহমদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার বদরুল হায়দার চৌধুরী। প্রথম টেকনিক্যাল সেশনে স্ট্যামফোর্ড ইউনির্ভাসিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম ইউসুফ আলী এবং দ্বিতীয় টেকনিক্যাল সেশনে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ভারপ্রাপ্ত) উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুস সবুর খান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সিজিইডি’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও প্রক্টর প্রফেসর ড.মোঃ মিজানুর রহমান ও ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর শের মোহাম্মদের পৃথক সভাপতিত্বে প্রথম টেকনিক্যাল সেশনে ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মফিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সী ভাষা এবং সাহিত্য বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ও মনিরুল হক, মালয়েশিয়ার এরটিকা একাডেমীর নির্বাহী পরিচালক ড. মাহমুদ আহমেদ এ আব্দেল মজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী মোহাম্মদ কাওসার এবং দ্বিতীয় টেকনিক্যাল সেশনে বিআইইউ’র ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাব্বির হোসাইন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আবদুছ সবুর মাতুব্বর ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু সাঈদ খান গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেশন দুটি পরিচালনা করেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নুসরাত সুলতানা ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম। সম্মেলনের সদস্য সচিব, বিআইইউর প্রক্টর ও সেন্টার ফর জেনারেল এডুকেশনের ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর প্রফেসর ড. মোঃ মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৪:২৭ পিএম
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: করোনা মহামারীকালে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি ডাক্তারগণ বৈজ্ঞানিক গবেষণাকর্মও সম্পন্ন করেছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।২৫ ডিসেম্বর সোমবার সকালে মানিকগঞ্জের গড়পাড়ায় মন্ত্রীর নিজ বাড়িতে কোভিড-১৯ বিষয়ক ১০০টির অধিক গবেষণাপত্র সংবলিত ‘100 plus COVID-19 Researches’ শীর্ষক সংকলনের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের গবেষণাকর্মে আরও বেশি সময় দেওয়ার আহ্বান জানান।মন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে গবেষণার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রমেও আমাদেরকে সফল হতে হবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ গবেষকগণ এসব গবেষণাকর্ম করেন যেগুলো ল্যানসেট, প্লজ ওয়ানসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।এ সময় উপস্থিত ছিলেন গবেষণা সংকলনটির সম্পাদক এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ, কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. জাকির হোসেনসহ অন্যান্য গবেষগণ।
২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৩১ এএম
ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী: চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে এসে গবেষণা নিয়ে আমাদের ভাবতে হচ্ছে। কারণ গবেষণার মাধ্যমেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গবেষণার সাথে অর্থনীতির যোগসূত্র তৈরি করে গবেষকদের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এখন গবেষকদের দায়িত্ব গবেষণাকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়া। দেশের উন্নয়নের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করা। গবেষণায় এখন অনেক বেশি বরাদ্দ বেড়েছে, গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, গবেষণার সংস্কৃতি এখন তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে, তবে সারা পৃথিবীর আধুনিকতম গবেষণায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে গবেষণার চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে গবেষকদের আরও বেশি করে ভাবতে হবে। পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এমন অগ্রসরমান মানসিকতায় দরকার, তা না হলে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে হবে । বিশেষ করে, গবেষণার চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে, যেখানে গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ থাকে, সেখানে গবেষণার সম্ভাবনা তৈরি হয়। গবেষকদের কাজ হলো সেই সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জগুলোকে খুঁজে বের করে এনে এগুলোকে শিল্পে রূপান্তরিত করা। প্রধানমন্ত্রী গবেষকদের নতুন নতুন গবেষণায় সম্পৃক্ত হতে বলেছেন। এর কারণ হলো গবেষণার মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমানো ও রপ্তানি বাড়ানো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, "দেশের উন্নয়নে দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও আনুগত্য আবশ্যক। দেশের উন্নয়ন করতে হলে নিষ্ঠাবান হতে হবে। দেশপ্রেম থাকতে হবে। দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে সততা নিয়ে কাজ করলেই উন্নয়ন হতে পারে।" এই দেশপ্রেম, সততা ও দেশের প্রতি আনুগত্য, গবেষকদের গবেষণার ক্ষেত্রে প্রেরণার উৎস হতে পারে। এই বিষয়গুলো যখন গবেষকদের ভিতরে কাজ করবে, তখন গবেষণার মাধ্যমে দেশের জন্য নিজেদের সবটুকু মেধা ও সৃজনশীলতা উজাড় করে দেবার মানসিকতা গড়ে উঠবে। যে গবেষণা লক্ষ্যবিহীন, সে গবেষণা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অর্থহীন। গবেষণার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সব সময় যে পুরোপুরি অর্জিত হবে তা নয়, তবে যতটুকু অর্জিত হয় ততটুকুই বিজ্ঞানের ধারণাকে এগিয়ে নেয়। গবেষণার লক্ষ্য অর্জন যদি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়, সেটা কেন ব্যর্থ হলো গবেষকরা তখন তা অনুসন্ধান করতে থাকেন। সে অর্থে গবেষণা কখনো ব্যর্থ হয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শনও সেটাই, থেমে গেলে চলবে না, ভেঙে পড়া যাবে না, ঘাত-প্রতিঘাত থাকবেই, বাধা-বিপত্তি থাকবেই, সেখান থেকে মাথা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়াতে হবে । নিজেদের সৃজনশীল শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রমাণ করতে হবে, আমরা কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই, বরং আমরা সবাইকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারি। আধুনিক গবেষণার চ্যালেঞ্জগুলো দৃষ্টান্ত হিসেবে আনা যেতে পারে, আমাদের গবেষকরা এগুলোতে সফল হলে নতুন নতুন শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে। সারা পৃথিবীতে এখন লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি নিয়ে গবেষণা চলছে। এই ব্যাটারিগুলো মোবাইল ফোন, ইলেকট্রিক কার, ল্যাপটপ, মেডিক্যাল ডিভাইসসহ সব ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে। গবেষকদের কাজ হচ্ছে এর কার্যক্ষমতা আরো কিভাবে বাড়ানো যায়। গবেষকরা তাঁদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে এই ব্যাটারির অ্যানোড ম্যাটেরিয়াল হিসেবে গ্রাফাইটের পরিবর্তে যদি সিলিকন ব্যবহার করা যেত, তবে এর এনার্জি স্টোরেজ করার ক্ষমতা ১০ গুণ বাড়ানো সম্ভব হতো। কিন্তু সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। তার মানে গবেষকরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। এতে ভয় পেয়ে পিছিয়ে পড়া গবেষকদের কাজ নয়, বরং এই চ্যালেঞ্জকে জয় করে কিভাবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির সক্ষমতা বাড়ানো যায় সেটিই গবেষকদের মূল লক্ষ্য। ব্যাটারির এই গবেষণা বহুমাত্রিক। এটাকে বহুমাত্রিক এ কারণে বলা হচ্ছে, এখানে অ্যানোড ম্যাটেরিয়াল ছাড়াও ক্যাথোড, সেপারেটর ও ইলেকট্রলাইট থাকে। এই উপাদানগুলোর সব ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। গবেষকদের কাজ হলো এই ক্ষেত্রগুলোতে নিজেদের যুক্ত করে ব্যাটারির সর্বোত্তম গুণাগুণ নিশ্চিত করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গবেষণার গতি-প্রকৃতি ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়। গবেষকদের কল্পনাশক্তি যখন চিন্তাশক্তিতে রূপ নেয় তখন চিন্তার বহুমাত্রিকতা গবেষণার মধ্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির গবেষণায় অবদান রাখার জন্য ২০১৯ সালে তিনজন বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পান। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে মানুষ লিথিয়ামের বিকল্প উৎস খোঁজ করছে। গবেষণার আসল মজাটা এখানেই, যেখানে মানুষ বিকল্প পথ খোঁজার মতো সাহস দেখাতে পারে। পেছনে কারণ তো থাকেই, সে কারণটাই মানুষকে অচেনা পথটা চেনায় গবেষণার মাধ্যমে। গবেষকরা এখন ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, গ্রাফেনের মতো ম্যাটেরিয়ালগুলো লিথিয়াম আয়নের বিকল্প হিসেবে ভাবছেন, যদিও এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হলো, গবেষকরা যখন সিলিকন ব্যাটারিতে ব্যবহারের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পথ খুঁজছেন, তখন সেমিকন্ডাক্টর ম্যাটেরিয়াল হিসেবে সিলিকনের পরিবর্তে গ্রাফেন ব্যবহারের গবেষণা চলছে। এখানেও অনেক চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তার পরও গবেষণা থেমে নেই। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ক্যামেরা, ওয়াশিং মেশিন, রেফ্রিজারেটর, এলইডি বাল্বসহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অনেক উপাদানে সেমিকন্ডাক্টরের ভূমিকা রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, সিলিকনের পরিবর্তে কার্যকরভাবে গ্রাফেন সেমিকন্ডাক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হলে ইলেকট্রনিকস শিল্পের বিভিন্ন ব্যবহারযোগ্য উপাদানের কার্যক্ষমতা প্রায় ২৫০ গুণ বাড়ানো সম্ভব। ভাবা যায়, গবেষণা মানুষের জীবনে কতটা গতি আনতে পারে? তবে এটাও মনে রাখতে হবে, গবেষণালব্ধ একেকটি বিস্ময়কর আবিষ্কার গবেষকদের ত্যাগের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। গ্রাফেনের মতো বোরোফেনও একটি অতি সমৃদ্ধ ২ডি ম্যাটেরিয়াল। গ্রাফইটকে ভেঙে ভেঙে গ্রাফেন তৈরি করা হয়। একইভাবে বোরনকে ভেঙে ভেঙে বোরফেন তৈরি করা হয়। এই ম্যাটেরিয়ালগুলো এনার্জি স্টোরেজ, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন স্টোরেজ টেকনোলজিতে ব্যবহৃত হচ্ছে বোরোফেন ও গ্রাফেন হাইড্রোজেন স্টোরেজ বা সঞ্চয় করতে পারে, যদিও এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাইড্রোজেন স্টোরেজ সংক্রান্ত গবেষণাগুলো ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে, যা ফুয়েল সেলসহ এনার্জি উৎপাদনের বহুমাত্রিক প্রযুক্তির অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে। এই ম্যাটেরিয়ালগুলোর সঙ্গে অন্যান্য ম্যাটেরিয়ালের কম্বিনেশন ঘটিয়ে প্রযুক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে। আবার একটি ম্যাটেরিয়ালের বহুমাত্রিক ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে সেগুলো থেকে সর্বোত্তম ফলাফল পেতে গবেষকরা তাঁদের গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন। ন্যানোটেকনোলজি কনসেপ্টকে উপজীব্য করে ন্যানোপার্টিকল নামের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদান গবেষণার গতিপথকে খুব দ্রুত বদলে দিয়েছে। ন্যানোপার্টিকলগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন—রাসায়নিক, ম্যাটেরিয়াল, জ্বালানি ফার্মাসিউটিক্যালস এবং জৈব প্রযুক্তি। এছাড়া ভবিষ্যতে প্রত্যাশিত আরো প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ক্ষেত্রে এগুলোর ব্যবহারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ন্যানোটেকনোলজির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে গবেষকদের নতুন নতুন ধারণা যুক্ত হচ্ছে গবেষণায়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ইন্টিগ্রেটেড গবেষণার সুযোগ তৈরি করেছে। এখন কোনো একটা স্পেসিফিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে হবে এমনটি নয়, বরং গবেষকরা ভেতরে ভেতরে এক রিসার্চ থেকে আরেক রিসার্চে ডুবে গিয়ে মৌলিক ও ফলিত গবেষণার স্তরকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সব কিছুই সম্ভব হয়েছে অসম্ভব চ্যালেঞ্জ ও ক্রিটিক্যাল অবস্থাগুলোকে জয় করার মাধ্যমে। গবেষণার এই প্রবণতা উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। যেমন- ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে যাঁরা পড়ছেন তাঁদের কারিকুলামে বায়োলজি, জিওলজি ও মলিক্যুলার ডিনামিক্সের মতো বিষয়গুলো যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা ও প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আবার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো বিষয়টি বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের সব শাখায়ই সম্পৃক্ত করার যৌক্তিকতা বাড়ছে। সময়ের প্রয়োজনেই এমনটা ঘটছে। কারণ উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশের মাধ্যমে গবেষণার বহুমাত্রিকতার ধারণা শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। উদ্ভাবনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষা দর্শনেও। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সাথে শিক্ষারও পরিবর্তনগুলো বিবেচনায় রেখে শিক্ষাকে গবেষণামুখী করাও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাদর্শনের উদ্দেশ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়েছে। শিক্ষার মান আরও উন্নত করে আমরা বিশ্বমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। এটি আমাদের লক্ষ্য এবং এটি অর্জনে আমাদের কাজ করতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে নিরন্তর পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যোগ্য করে তোলার জন্য তাঁরা সব ধরনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। শিক্ষাব্যবস্থাকে বহুমাত্রিক করতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। আমাদের শিশুরা মেধাবী হওয়ায় বৈশ্বিক শিক্ষার একই গতি বজায় রাখতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আগে দেশে ও বিদেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তাঁরা তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে চান। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগ দিতে হবে, দেশপ্রেমিক হতে হবে এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, "আমি আমার শেষনিঃশ্বাস পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ চালিয়ে যাব।" এগুলো নিয়ে আমাদের গবেষণকদের ভাবতে হবে, তরুণ প্রজন্মকেও গবেষণায় সম্পৃক্ত করে প্রবীণের অভিজ্ঞতা ও নবীনদের নতুন চিন্তা করা যে সক্ষমতা রয়েছে তার সম্মিলন ঘটিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করতে হবে। গবেষণা এখন বহুমাত্রিক ও আধুনিক শিল্প ধারণাও বহুমাত্রিক। গবেষণালব্ধ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রেও জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সামষ্টিক ধারণা শিল্পায়নে ও কর্মক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। তবে সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তবে ফলিত গবেষণা যতটা বাড়ছে, মৌলিক গবেষণা ততটাই কমছে। মনে হতে পারে, প্রায় সব মৌলিক ধারণার জন্ম এরই মধ্যে তো ঘটে গেছে, তাই এমনটা হতে পারে। সেটা হয়তো আংশিক সত্য, পুরোটা নয়। গবেষণায় ফলিত চিন্তার চেয়ে মৌলিক চিন্তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তবেই হয়তো বিজ্ঞানের মাধ্যমে অদেখা পৃথিবীর অনেক রহস্য উন্মোচিত হবে। বদলে যাবে মানুষ, চিন্তারও ঘটবে বিপ্লব। তবে প্রযুক্তির যন্ত্রনির্ভর জীবনে মানবিক ধারণারও প্রত্যক্ষ ও ফলপ্রসূ প্রভাব থাকতে হবে। গবেষকরা তাঁদের গবেষণাকে এগিয়ে নেবেন মানবিক ও জীবনমুখী চিন্তার সমন্বয়ে। তখন গবেষকদের হাত ধরে পৃথিবীটাই বদলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গবেষণা প্রসঙ্গে বলেছেন, "১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেখলাম গবেষণার জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো যেটুকু পেত, তা দিয়ে চলত। কিন্তু গবেষণার জন্য আলাদাভাবে যে একটা সুযোগ সৃষ্টি করা হতো, তা কিন্তু হতো না। আমরা প্রথম শুরু করলাম আলাদাভাবে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে গবেষণাকে গুরুত্ব দিতে, যার ফসল আজকে বাংলাদেশ পাচ্ছে। আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে যে এগিয়ে যাচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ যে গড়ে তুলেছি, তার সবই গবেষণার ফসল। গবেষণাকে তাই সব সময় গুরুত্ব দিতে হবে।" দেশে প্রচলিত শিল্পকারখানাগুলোর উৎপাদিত পণ্যের সাথে সাথে গবেষণালব্ধ নতুন পণ্যের শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে। এগুলোর মাধ্যমে যেমন রপ্তানি আয় বাড়বে, তেমনই কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সমাজেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, যেটি আধুনিক, উদার ও সৃজনশীল মানুষদের জন্ম দিবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে আজ গবেষণা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর গবেষণা দর্শন ও অনুপ্রেরণা গবেষকদের চিন্তাধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। গবেষণার মাধ্যমে নতুন শিল্পভাবনা তৈরি, তার বাস্তবায়ন, শিল্পায়ন ও এগুলোর সাথে অর্থনীতির যোগসূত্র তিনি গড়ে দিয়েছেন। গবেষণা নির্ভর আজকের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। দেশকে ভালোবাসতে হলে দেশের ভালোটা সবাইকে ভাবতে হবে। সেটাতে কখনো ভুল করা যাবে না। লেখক: শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট ও লেখক, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর।
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০২:৪৪ পিএম