কক্সবাজারে র্যাব-সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, অবশেষে গ্রেফতার মুন্না
কক্সবাজার প্রতিনিধি: অবশেষে মাদক ব্যবসাসহ বহু অপকর্মের মূল হুতা মনছুর আলম মুন্নাকে আটক করেছে র্যাব। কক্সবাজার এলাকায় কখনো র্যাবের সোর্স আবার কখনো পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতো কথিত সাংবাদিক এই চাঁদাবাজ মুন্না।৩ এপ্রিল বুধবার র্যাবের মিথ্যা সোর্স পরিচয়ে ক্রসফায়ার থেকে বাঁচানোর কথা বলে একলাখ টাকা চাঁদা আদায় ও আরও ১লাখ টাকা নেওয়া জন্য হুমকির অভিযোগে তাকে আটক করে র্যাব-১৫।মুন্না র্যাবের মিথ্যা সোর্স পরিচয়ে ওই ব্যবসায়ীকে কথিত ক্রসফায়ার ও মাদক মামলাসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার নিকট থেকে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করে। এরপর আরও ১ লক্ষ টাকা চাঁদার দাবিতে ক্রমাগত ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় চাঁদাবাজ মনছুর আলম মুন্না (৩০) কে কক্সবাজার পৌরসভার লালদিঘীর পাড় সোনালী ব্যাংকের পাশের গলি থেকে গ্রেফতার করা হয়।র্যাব জানায়, কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের পশ্চিম লারপাড়া এলাকার নুরুল ইসলাম ২ এপ্রিল র্যাব-১৫ এর নিকট অভিযোগ দায়ের করেন, জমি-জমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ তার চাচাতো ভাই সেলিমের সঙ্গে বিরোধের জেরে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় অভিযোগ ও কক্সবাজার কোর্টে মামলা হয়।এ বিষয়টি সম্পর্কে মনছুর আলম মুন্না অবগত ছিলেন। এই সুযোগে তার সাথে কক্সবাজার র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সু-সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়ে চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে জমি-জমা সংক্রান্তে দায়েরকৃত মামলায় র্যাবকে দিয়ে গ্রেফতারসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন।অভিযোগকারী নুরুল ইসলাম একপর্যায়ে এক লক্ষ টাকা দিতে সম্মত হয় এবং গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর নগদ ৪০ হাজার টাকা ও গত ৩১ জানুয়ারি ৬০ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৬ মার্চ পুনরায় এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এমতাবস্থায়, বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে সে জানতে পারে পূর্বে প্রদত্ত এক লক্ষ টাকা মনছুর আলম মুন্না কোন র্যাব সদস্য কিংবা অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রদান করেনি। বরং সে সাংবাদিকসহ র্যাব এবং বিভিন্ন সংস্থার সোর্স পরিচয় দিয়ে চাঁদা আদায় করেছে।এ অভিযোগের ভিত্তিতে ৩ এপ্রিল বিকাল ৪টার সময় র্যাব-১৫, সিপিএসসি ক্যাম্পের আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিতিত্তে কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর পাড় সোনালী ব্যাংকের পাশের গলি থেকে মনছুর আলম মুন্নাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার মুন্না কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া দক্ষিণ বড়বিল গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে। সে কক্সবাজার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ব ঘোনার পাড়া সেলিম ড্রাইভারের বাড়িতে ভাড়া থেকে সাংবাদিক, র্যাব এবং বিভিন্ন সংস্থার সোর্স পরিচয় দিয়ে চাঁদা আদায় ও মাদক ব্যবসা করে আসছিল।র্যাব-১৫ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনছুর আলম মুন্না স্বীকার করেছে, তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ নিজেকে সাংবাদিক, র্যাব এবং বিভিন্ন সংস্থার সোর্স পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। এ সকল পরিচয় দিয়ে তিনি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। তিনি ভিকটিমদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতেন ও হুমকি দিতেন। তার চাহিদা মোতাবেক চাঁদা প্রদানে বাধ্য করতেন।কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জানিয়েছেন, র্যাবের নিকট গ্রেফতার হওয়া মনছুর আলম মুন্নাকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হলে, আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারক মনছুর আলম মুন্না ইতোপূর্বেও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে র্যাব ও পুলিশের হাতে আটক হয়ে একাধিক বার জেল খেটেছে। মুন্নার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ইতোপূর্বে মামলা রয়েছে।স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই প্রতারক ও চাঁদাবাজ জেলখানায় সুযোগ সুবিধা ভোগ করার জন্য তদবির শুরু করেছে। সে যাতে কোন সুবিধা না পায় সেদিকে নজর দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।