রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপিত হয়েছে চীনা নববর্ষ এবং বসন্ত উৎসব। এতে দেশটির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।২৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার বিকেল ৫টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চীনা সংস্কৃতিতে পালিত সবচেয়ে বড় এ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে।উদ্বোধনী বক্তব্যে ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজেজ'র পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা চাই চীন ও বাংলাদেশের মাঝে সম্পর্ক আরও মজবুত হোক। সেই সাথে চীনের সাথে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হোক। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই চায়না থেকে আসা শিক্ষকদের সহায়তা নিয়ে চীনা ভাষা আয়ত্ত্ব করুক। আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আমি প্রত্যাশা রাখি।নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের চাইনিজ ডিরেক্টর মা জিয়াওয়ান বলেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অনেক সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে ছয় মাস পর আমার পুরনো বন্ধু ও শিক্ষার্থীদের দেখতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। জুলাই থেকে চীনা ভাষা শিক্ষা শুরু হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি চীনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল শুভ নববর্ষ। এখন ২৫ ফেব্রুয়ারি চীনা উৎসব শেষ, এজন্য আমরা এখানে আজ কর্মসূচি পালন করি।বাংলাদেশে পিপলস রিপাবলিক অব চায়না দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর ইয়ু লিওয়েন বলেছেন, আমি এখানে এসে এবং চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে আজকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে খুবই সম্মানিত এবং আনন্দিত। আসলে এই প্রথম আমি এখানে এসেছি এবং এই প্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসেছি । এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় যা আমি জানি, এটি একটি সুন্দর ক্যাম্পাস পরিবেশ। এছাড়া এখন একটি সুন্দর সূর্য এইমাত্র অস্ত যাচ্ছে, ক্যাম্পাসটি খুব ভালো, এখানে এসে আমি খুব খুশি। এই ঘটনাটিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজে ও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। শিক্ষার্থীদেরকে চীনা নববর্ষ এবং চীনা সংস্কৃতিক সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের চীনের ঐতিহ্যবাহী ডাম্পলিং তৈরি এবং স্বাদ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবারের আয়োজনে।অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির চায়না ভাষার শিক্ষক শরিফুল হাসান। এ সময় চায়না থেকে শিক্ষকবৃন্দসহ রাবির প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৬:৪৭ এএম
নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে মসৃণ করতে চীনের কাছে আরও সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনকে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম উন্নয়ন ও কৌশলগত অংশীদার আখ্যায়িত করে বেইজিংয়ের কাছে আরও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস-মিনিস্টার সান হাইয়ান সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে সরকারপ্রধান এ সহযোগিতা চান।এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে মসৃণ করতে অতীতের চেয়ে চীন আরও বেশি সহযোগিতা করতে পারে।’বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচরাইটার এম. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।সান হাইয়ান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে তার দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের অভিনন্দন জানান।তিনি বলেন, দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের সংগ্রাম এবং বাংলাদেশি জনগণের প্রতি ভালোবাসা ও মমতার কারণে শি জিংপিং প্রধানমন্ত্রীর পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন।সান হাইয়ান আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে শি নিশ্চিত ছিলেন, কারণ দেশ ও জনগণের প্রতি তাঁর দেশপ্রেম এবং তিনি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।’চীনের ভাইস মিনিস্টার চীন সরকার ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান।এছাড়া সান হাইয়ান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র কন্যা সায়মা ওয়াজেদকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাম্বাসেডর অ্যাট-লার্জ এম. জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব এম. তোফাজ্জেল হোসেন।
২৫ জানুয়ারী ২০২৪ ০২:৫৬ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারত, চীন এবং রাশিয়া নির্বাচনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলে নানাবিধ চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে। সেই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিসহ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো করে কেউ হস্তক্ষেপ করছে না। বেশিরভাগ বন্ধদেশ অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনা করে সংকট সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন। এই বিভাজন স্নায়ুযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় বলেও মন্তব্য তাদের।স্নায়ুযুদ্ধ হলো রাজনৈতিক ও সামরিক টানাপোড়েনের বিরোধী ভূ-রাজনৈতিক ক্ষমতার ব্লকের মধ্যে ঠাণ্ডাযুদ্ধ-পরবর্তী যুগের বর্ণনা দিতে ব্যবহৃত শব্দ, যার একটি ব্লক সাধারণত রাশিয়া বা চীন এবং অন্যটি নেতৃত্বাধীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর। একে দ্বিতীয় ঠাণ্ডা যুদ্ধ বা নতুন স্নায়ুযুদ্ধও বলা হয়। স্নায়ুযুদ্ধ এমন একটি কৌশল যেখানে বিবাদমান পক্ষগুলো ভয়াবহ স্নায়বিক উত্তেজনার মধ্যে থাকবে একে অন্যের উপর চাপ বৃদ্ধি করতে থাকবে, কিন্তু সরাসরি যুদ্ধের ঝুঁকি নেবে না। এক্ষেত্রে কোন দেশ সরাসরি যুদ্ধের ঝুঁকি না নিলেও এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে রাখবে যা যুদ্ধ পরবর্তী কিংবা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দেবে। সরাসরি যুদ্ধের ঝুঁকি না থাকলেও এক্ষেত্রে এমন একটি যুদ্ধের আবহ তৈরি হবে যা এক অর্থে যুদ্ধ নয়, শান্তিও নয়।বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বারবার সেই স্নায়ুযুদ্ধ পরিস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। বিদেশিদের সহযোগিতা ছাড়াই বাংলাদেশ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো প্রভাব খাটাচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সম্প্রতি সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন। এবং ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইংরেজিতে লিখিত আকারে জাখারোভার বক্তব্য প্রকাশ করা হয়।এদিকে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলকে সমর্থন করে না, তারা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। কী বলেছিলেন মারিয়া? রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘বিদেশি শুভাকাঙ্খীদের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই বাংলাদেশ নিজেদের আইন মোতাবেক স্বাধীনভাবে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ নির্বাচন করতে সক্ষম, এ নিয়ে আমাদের দিক থেকে কোনো সন্দেহ নেই।’ স্বচ্ছতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।এদিকে এই মাসের শুরুর দিকে বন্ধুত্বপূর্ণ সফরে বাংলাদেশে আসে রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের তিনটি জাহাজ। ৫০ বছর পরে ঠিক এই সময়ে বন্ধু রাশিয়ার এই উদ্যোগ নিয়েও মার্কিন ব্লকের বিশ্লেষকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা গেছে। বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে ভেড়া রুশ নৌবহরের ওই জাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিন বিধ্বংসী দুটি যুদ্ধজাহাজ। সেগুলোর নাম ‘অ্যাডমিরাল ত্রিবুতস’ ও ‘অ্যাডমিরাল প্যানতেলেইয়েভ’। অপর জাহাজটি জ্বালানিবাহী ট্যাংকার। সেটির নাম ‘পেচেনগা’।আবার যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বাইরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা লাভ করেছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি, কোয়াড নিরাপত্তা সংলাপ এবং ভারত ও চীনের মধ্যে চলমান উত্তেজনাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক পুনর্গঠনের পটভূমিতেই চীনের অনেকটা কাছে চলে এসেছে বাংলাদেশ।মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ মনে করেন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো এতোটা ভেঙে পড়েনি যে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ লাগবে। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সকলের প্রত্যাশা। সেটার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্বে চলা পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো সব দলকে সমান সুযোগ দেওয়ার কথা বলে অথিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে এবং ভয়ভীতি দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে, সেই প্রক্রিয়াটি পক্ষপাতদুষ্ট। সেকারণেই পরাশক্তির মধ্যে বিভক্তি সুস্পষ্ট হয়েছে। একপক্ষ মনে করছে এটা আভ্যন্তরীণ বিষয়, জনগন সিদ্ধান্ত নিবে। আরেকপক্ষ চাপ প্রয়োগ করে দাবি নিশ্চিত করতে চাইছে। যারা কিনা বাইরের দেশের শক্তি বাংলাদেশের জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে দেখতে চায়, চাপ প্রয়োগকারী হিসেবে দেখতে চায় না। পুরো পরিস্থিতিতে এই চাওয়া না-চাওয়া বেশ স্নায়ুযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
২৬ নভেম্বর ২০২৩ ১০:২৫ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক: গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতির প্রিয় কৌশল হলো ‘নিষেধাজ্ঞা দেওয়া’। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৯ হাজার ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং কিছু খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ওই বছরই বাইডেন প্রশাসন বিশ্বব্যাপী আরও ৭৬৫টি নতুন নিষেধাজ্ঞা দেয়। বিভিন্ন সময়ে কোনো না কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যে দেশগুলো পড়েছে, বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক ইনডেক্সে দেখা যায়, বৈশ্বিক উৎপাদনে তাদের অবদান প্রায় এক–পঞ্চমাংশ। এই উৎপাদনের ৮০ ভাগের দাবিদার আবার চীন।সাধারণত দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলো নিজেদের বড়ো ধরনের ক্ষতি ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মস্কোর ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা এই সূত্র মানছে না। দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত সস্তা জ্বালানি দিয়ে ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিকল্প হিসেবে এখন তারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করেছে, যার মূল্য পাইপলাইন গ্যাসের তুলনায় অনেক বেশি।ফলে ইউরোপের আর্থিক বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে এবং নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনায় নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো নতুন করে ভাববে। যুক্তরাষ্ট্র যে সকল দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করছে, ধীরে ধীরে সে সব দেশ চীন বলয়ে আসতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত দেশগুলোকে চীন বাণিজ্যিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা দিয়ে নিজেদের কাছে টেনে নিচ্ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রীক বলয়ের প্রভাব যেমন কমছে, পাশাপাশি চিনা বলয় শক্তিশালী হচ্ছে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কেন বারবার এই ভিসানীতির ভয় দেখায়। এর মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে বিভিন্ন দেশ আলাদা বলয় শক্তিশালী করছে। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ৪০টি দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশগুলোও রয়েছে।এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, ২০১৫ সালে ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) গঠন করা হয়, যার উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানের বাইরে গিয়ে উন্নয়ন অর্থায়নের উপর বিকল্পভাবে নিয়ন্ত্রণ আনা। জোটটি ‘ব্রিকস পে’ তৈরিতে কাজ করছে, যার মাধ্যমে নিজস্ব মুদ্রা ডলারে রূপান্তর না করেই ব্রিকসের মধ্যে অর্থ লেনদেন করা যাবে। লেনদেনে ব্রিকস ডলারের বিকল্প হিসেবে নিজস্ব মুদ্রাব্যবস্থা চালু করলে একদিনেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ধস নামিয়ে দেবে।সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ জানান, ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নামে পরিচিত। এ অঞ্চলটি বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৬০ ভাগের অংশীদার। বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দুই তৃতীয়াংশ অবদান এই অঞ্চলের। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে; রয়েছে জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের মতো ডজনখানেক দেশ। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর পাশাপাশি রয়েছে অনেক উঠতি অর্থনৈতিক পরাশক্তির দেশ। একের পর এক নিষাধাজ্ঞার কবলে পরে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের অনেক দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে; ফলে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে দিন দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে যাচ্ছে।
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৩৭ এএম