নাহিদ আক্তার, একজন ফ্রিল্যান্স প্রোগ্রামার, প্রযুক্তিবিষয়ক লেখক, ইন্সট্রাকশনাল ডিজাইনার ও সফল নারী উদ্যোক্তা। শুরুটা করেছিলেন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে। বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্ক-এর টপ-রেটেড প্লাস ও এক্সপার্ট-ভেটেড ফ্রিল্যান্সার। মাইক্রসফট (Microsoft), থ্রিএম (3M), ইনসাইট সফটওয়্যার (Insight Software), ডোসেবো (Docebo)’র মত ফরটুন-৫০০ (Fortune-500) তালিকাভুক্ত অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছেন। উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন ডিজিটাল এজেন্সি মিরাকি ইনোভেশনস লিমিটেড (Meraki Innovations Ltd.), এর মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন/ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টস সার্ভিস প্রদান করা হয়। তাঁর সফল হয়ে ওঠার নানা গল্প নিয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার। আলাপচারিতায় ছিলেন নুরুল ইসলাম।প্রশ্ন: কখন ও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু হলো?নাহিদ আক্তার: ৫ বছর সফলতার সঙ্গে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার পর দেখতে পাই, আমি যতটুকু কাজ করতে পারি তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ আসছে। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে,এবার পরবর্তী ধাপে যাওয়ার সময় হয়েছে। তবে ব্যবসায়িক কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় আমি প্রথমে একটু দ্বিধায় ছিলাম। বিশেষ করে, আমি জানতাম না, কোথা থেকে শুরু করবো। কীভাবে একটি কোম্পানি নিবন্ধন করতে হবে, কীভাবে লোক নিয়োগ করতে হবে এবং অন্যান্য সমস্ত আইনি দিক সম্পর্কেও ধারণা ছিল না। সৌভাগ্যবশত সেই সময় আমি উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুক ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণের জন্য সরকারের একটি উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে পারি। কোর্সটির অন্যান্য সদস্য ও প্রশিক্ষকদের সঙ্গে আমি যে নেটওয়ার্কটি তৈরি করেছি, তা আমাকে সমস্ত তথ্য এবং আত্মবিশ্বাস পেতে সাহায্য করেছে।প্রশ্ন: এ পথ চলার গল্পটা বলুন।নাহিদ আক্তার: প্রথমে আমি আমার ননদের সাথে জুটি বেঁধে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি শুরু করেছি। নতুন কিছু শুরু করার সময় অনেক বাধা আসে। এই ক্ষেত্রেও আমি কিছু প্রাথমিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। বিশেষ করে, কোম্পানি গঠনে আমাকে সাহায্য করার জন্য সঠিক এজেন্সি নির্বাচন করা, অফিস স্থাপনের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করা এবং ব্যবসা চালানোর সূক্ষ্ম বিষয় বোঝা। এমনকি ছোট ছোট অনেক বিষয়, যেমন কীভাবে বিভিন্ন কাজের মূল্য নির্ধারণ করতে হয়, কীভাবে ব্যবসায়িক চুক্তি প্রস্তুত করতে হয় এবং কীভাবে একটি কর্পোরেট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সেটআপ করতে হয়; সেগুলি শিখতে হয়েছে। সৌভাগ্যবশত আমার প্রফেশনাল নেটওয়ার্কে আমার অনেক বন্ধু, পরিবারের সদস্য আমাকে নির্দেশনা এবং পরামর্শ প্রদান করার জন্য ছিল। অন্য ফ্রিল্যান্সাররাও সহায়তা করেছিল, যারা ইতোমধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করছিলো। সম্ভাব্য প্রতিযোগী হিসাবে দেখার পরিবর্তে তারা আমাকে আন্তরিকভাবে সাহায্য করেছেন, যা দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। আশা করি, একদিন আমিও অন্য নতুন উদ্যোক্তাদের একইভাবে সহযোগিতা করতে পারবো।সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশটি ছিল, আমার কোম্পানির জন্য সঠিক লোকদের খুঁজে বের করা। কারণ, আপনার টিম হলো ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। সঠিক লোকদের খুঁজে বের করা হল, একটি সফল ব্যবসা গড়ে তোলার চাবিকাঠি। প্রতিনিয়ত আমি আমার ব্যবসা প্রসারিত করার চেষ্টা করছি, সে কারণে সঠিক জনবল খুঁজে বের করার চ্যালেঞ্জ আমাকে এখনও ফেস করতে হচ্ছে।প্রশ্ন: কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেখানে?নাহিদ আক্তার: আমরা আমাদের শুরুর দিনগুলিতে না জেনে একটি স্ক্যামার এজেন্সির কাজ নিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা এ জন্য আমাদের মনোবল হারাইনি। আমরা এটাকে একটা শিক্ষা হিসেবে নিয়েছি এবং কাজ চালিয়ে গিয়েছি। পরে আমি আমার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে খুব দ্রুতই আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্লায়েন্ট, আমাদের ওয়েবসাইট, আমার আগের ক্লায়েন্ট, সেইসাথে বন্ধু এবং পরিবারের কাছ থেকে রেফারেলের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট পেতে শুরু করেছিলাম। ধীরে ধীরে আমরা আরও বড় এবং ভালো কোম্পানির সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।একবার ব্যবসা চালু হয়ে গেলে, আপনি সেটাকে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে নিতে চাইবেন। আরও বেশি পরিষেবা দিতে চাইবেন এবং নিজের সক্ষমতা বাড়াতে চাইবেন। বড় অফিস, আরও কর্মচারী এবং একটি সম্পূর্ণ টিম সেটআপ প্রয়োজন হবে। এসবের জন্য বড় ফান্ডের প্রয়োজন হয়, সেটা ম্যানেজ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।নাহিদ আক্তার: এখন যেহেতু আমার কোম্পানি থেকে অনেক ক্লায়েন্টকে সেবা দেওয়ার সুযোগ হচ্ছে; তাই আমি চাই, আমার কোম্পানি আরও বড় হোক। আমি আমার ক্লায়েন্টদের আরও বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা দিতে চাই। আমি আরও বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে ডেটা সায়েন্স এবং এআই-এর ক্ষেত্রে শাখা তৈরি করতে চাই।শিক্ষা খাতে আমার ভালো অভিজ্ঞতা আছে, তাই আমি এই সেক্টরে আরও বেশি কিছু করতে চাই। আমি কোডিং করতে এবং কেডিং শেখাতে ভালোবাসি। Scratch, Javascript, Python এবং AI-এর উপর আমার অনলাইন কোর্সগুলি অন্যান্য দেশের স্কুল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমি বাংলাদেশে এটি চালু করতে চাই এবং সারাদেশে স্কুলগুলির সাথে কাজ করতে চাই, যাতে আমাদের শিশুরাও একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের দক্ষ করে তোলার সুযোগ পায়।প্রশ্ন: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়ার আছে বলে মনে করেন?নাহিদ আক্তার: তরুণ প্রজন্মের নতুন নতুন ব্যবসায়িক ধারণাকে বাস্তবে পরিণত করতে উৎসাহিত করার জন্য রাষ্ট্রের সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি আরও তরুণ-তরুণীদের উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুলতে চাই, তাহলে আমাদের পাঠ্যক্রমে বিজনেস স্কিল (ব্যবসায়িক দক্ষতা) যোগ করতে হবে। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর হ্যাকাথন (Hackathon) ও এক্সিলারেটর (Accelerator) অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে, যা প্রশংসনীয়। তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সংক্ষিপ্ত কোর্সগুলিও শুরু হয়েছে। কিছু দীর্ঘমেয়াদী কোর্সসহ এই জাতীয় আরও প্রোগ্রাম শুরু করা দরকার। মেন্টরশিপের সুযোগ থাকা প্রয়োজন, যেখানে আরও অভিজ্ঞ ব্যবসার মালিকরা নতুন স্টার্টআপ মালিকদের গাইড করতে পারেন। এটি নতুনদের দৈনন্দিন ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করার একটি দুর্দান্ত উপায়ও হবে।প্রশ্ন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ।নাহিদ আক্তার: তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো- বুঝে শুনে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কীভাবে ব্যবসা শুরু করতে হবে, চালাতে হবে এবং বাড়াতে হবে; সে সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক জ্ঞান অর্জন না করে সরাসরি ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন না। এছাড়াও নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করা বন্ধ করবেন না। তাহলেই সফলতা আসবে।
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০২:০১ পিএম
রাজবাড়ীর মেয়ে আশফিরা সুলতানা, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা, প্রশিক্ষক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন থেকে ব্ল্যাকবেল্ট অর্জনের পাশাপাশি তিনি আন্তর্জাতিক গোল্ড মেডেলিস্ট। তিনি মার্শাল আর্ট বিডির কো-ফাউন্ডার ও জয়েন্ট সেক্রেটারি এবং জনপ্রিয় অনলাইন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান জিনকি ডটকমের একজন অন্যতম উদ্যোক্তা। সম্প্রতি তিনি এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাঁর সফল হয়ে ওঠার নানা গল্প নিয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার। আলাপচারিতায় ছিলেন নুরুল ইসলাম।প্রশ্ন: কখন ও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু হলো?আশফিরা সুলতানা: ছাত্রাবস্থায় কয়েকজন মিলে ঐতিহ্য নামে অনলাইনে একটি ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলাম। তাছাড়া ঢাকা বাজারের সাথে কাজ করেছি বেশ কিছুদিন। ব্র্যান্ড বাজারের ব্যাক এন্ডে কাজ করেছি কয়েক বছর। Balck IZ Ltd.-এ জব করেছি কয়েক বছর। তবে স্বাধীনভাবে কোনো কিছু করার ইচ্ছা ছিল ছোটবেলা থেকেই। এখন কারাতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান মার্শাল আর্ট বিডি বর্তমানে বাংলাদেশ কারাতে জগতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধানমন্ডি, লালমাটিয়া এবং শনির আখড়ায় মার্শাল আর্ট বিডির শাখা রয়েছে। এখানে সকল বয়সী নারী ও পুরুষ কারাতে শিখছেন। পাশাপাশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান জিনকি ডটকমের সাথেও সম্পৃক্ত আছি।প্রশ্ন: অনুপ্রেরণা কোথায় কীভাবে পেয়েছিলেন?আশফিরা সুলতানা: স্বাধীনচেতা একজন মানুষ হিসেবে সব সময় চেয়েছি নিজে কিছু করার, যার মাধ্যমে আরও দশজন উপকৃত হয়। আমার ছোটবেলায় যখন বিটিভিতে মার্শাল আর্টের অনুষ্ঠানগুলো সম্প্রচারিত হতো তখন থেকেই মার্শাল আর্টের প্রতি ভালোবাসা কাজ করে। মফস্বলে থাকার দরুন সেই সময় শেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। পরবর্তীতে আমার শ্রদ্ধেয় সেন্সেই নাজমুল শাহাদাতের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি এবং তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি।প্রশ্ন: এ পথ চলার গল্পটা বলুন।আশফিরা সুলতানা: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য কোনো কিছুই আসলে সহজ নয়। প্রফেশন হিসেবে কারাতে আরও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। তবে যেহেতু কারাতে আমার প্যাশন, এটাকে প্রফেশন হিসেবে নিয়েছি এবং উপভোগ করছি। তরুণদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আশফিরা সুলতানাপ্রশ্ন: কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেখানে?আশফিরা সুলতানা: পরিবারের অধিকাংশ সদস্য চাকরিজীবী হওয়ায় সবার আশা ছিল, আমিও তাদের মতো চাকরিটাকে পেশা হিসেবে নিই। কিন্তু পরিবারের ও চারপাশের বিভিন্ন জনের মতামতের বাইরে গিয়ে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করছি। তাছাড়া অনেকেই নানা কটু কথা বলা, বাধা দেয়া, বিভিন্নভাবে ডিমোটিভেট করেছে। এছাড়াও জনবল ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাও প্রতিকূলে ছিল।প্রশ্ন: স্বপ্ন বা ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।আশফিরা সুলতানা: বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে সবারই উচিত সেলফ ডিফেন্সের জন্য কারাতে শেখা, বিশেষ করে মেয়েদের। ইচ্ছা আছে অদূর ভবিষ্যতে প্রতিটা জেলায় সকল মানুষের কাছে কারাতেকে পৌঁছে দেয়ার। এজন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।প্রশ্ন: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়ার আছে বলে মনে করেন?আশফিরা সুলতানা: নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, বিশেষ করে নারীদের জন্য। তাছাড়া ব্যাংকগুলো স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। তরুণ উদ্যোক্তারা যাতে এ সুবিধাগুলো সহজে গ্রহণ করতে পারে, সেই পথটা আর সহজ করা দরকার।প্রশ্ন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ।আশফিরা সুলতানা: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বলব, think a bigger picture. বড় স্বপ্ন দেখো, ডেডিকেশন দাও, অল্পতেই হাল ছাড়া যাবে না। সামনে একটি দরজা বন্ধ হয়ে গেলে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কান্না না করে অন্য দরজা বা জানালা খুঁজে নাও। চেষ্টা করো যতক্ষণ না সফলতা আসে।
৩০ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:৫৪ এএম
অজন্তা রেজওয়ানা মির্জা, একজন কনটেন্ট রাইটার, প্রশিক্ষক ও সফল উদ্যোক্তা। ১০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্ক ও দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে শতভাগ সফলতার সাথে কাজ করছেন। নিজে কাজ করার পাশাপাশি ‘কনটেন্ট রাইটিং উইথ অজন্তা’র মাধ্যমে অন্যদেরকেও প্রশিক্ষণ দিয়ে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে তৈরি করছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন (বেসিস) থেকে ফিমেল ক্যাটাগরিতে আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তাঁর সফল হয়ে ওঠার নানা গল্প নিয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার। আলাপচারিতায় ছিলেন নুরুল ইসলাম।প্রশ্ন: কখন ও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু হলো?রেজওয়ানা মির্জা: আন্তর্জাতিক ও দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার পর খেয়াল করলাম যে, আমাদের দেশেও ভালো কনটেন্ট রাইটারদের জন্য সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই আমাকে নক দিয়ে রাইটার খোঁজ করে, কিন্তু খুঁজে পায় না। অন্যদিকে দেশে প্রচুর পরিমাণে ভালো রাইটার আছে, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। তারা চাইলেই দিনের ২/৩ ঘণ্টা সময় বের করে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে পার্টটাইম কাজ খুঁজতে পারে। সেটা তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রেও অনেক উপকার হবে। এই চিন্তা থেকেই আসলে কনটেন্ট রাইটিং উইথ অজন্তা (Content Writing with Azanta) শুরু করা।প্রশ্ন: অনুপ্রেরণা কোথায় কীভাবে পেয়েছিলেন?রেজওয়ানা মির্জা: ২০১৫ সালে বেসিসের অ্যাওয়ার্ডটা পাওয়ার পর থেকেই আমাদের নিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ বা প্রচার শুরু হয়। তখন থেকেই আসলে বাংলাদেশে ‘ফ্রিল্যান্সিং’ শব্দটা জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে। প্রচুর পরিমাণে মানুষ, বিশেষ করে মেয়েরা আমাকে ফেসবুকে ও ফোনে নক দিতে শুরু করেন। তাদের অনেকেই বিভিন্ন কারণে চাকরি করতে পারছেন না, অথবা বাসায় ছোট বাচ্চা বা সংসারের কারণে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে। তারা অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং এবং কনটেন্ট রাইটিংয়ে আগ্রহী ছিলেন। এমনকি আমার স্কুল কলেজের অনেক ফ্রেন্ডও আমাকে নক দিয়ে জিজ্ঞেস করতো যে, তারা বাসায় বসে কিছু কাজ করতে পারবে কি না। তারা সবাই আমার অনুপ্রেরণা। এইসব নারীদের জন্য কিছু করার কথা আমি অনেক দিন ধরেই চিন্তা করছিলাম।প্রশ্ন: এ পথ চলার গল্পটা বলুন।রেজওয়ানা মির্জা: অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিলাম বছরে অন্তত ১০ জন নারীকে যেন আমি কনটেন্ট রাইটিং শিখিয়ে পার্টটাইম বা ফুল্টাইম কাজ জোগাড় করে দিতে পারি। কিন্তু ব্যাপারটার আনুষ্ঠানিক রূপ পায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে। তখন আমি প্রথমবারের মতো কনটেন্ট রাইটিং উইথ অজন্তা’র ব্যানারে আমার ট্রেইনিং সেন্টারটা শুরু করি। শুধু মেয়েরা না, আমার অনলাইন ট্রেইনিংয়ে ছেলেরাও ভর্তি হয়। প্রথম যখন শুরু করি তখন মাত্র ৩ জন ভর্তি হয়েছিলো। সে সময় আমি জুম ক্লাসে টানা কথা বলে গিয়েছি। আস্তে আস্তে ৭ জন, ১০ জন করে এখন প্রতি ব্যাচে ৬০ থেকে ৭০ জন করে ভর্তি হয়।আমি ১০ দিনের একটা সেশন নেই প্রতি মাসে। এই ১০টা ক্লাসে কনটেন্ট রাইটিংয়ের পুরো ধারণা দিয়ে দেয়া হয়। শুধু এখানেই শেষ না, প্রতিটা স্টুডেন্টকে আমি পার্সোনালি গাইড করি, তাদের লেখা দেখে আমার মতামত জানাই। তাদের প্রমোট করি এবং ক্লায়েন্টদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। শুধুমাত্র একবার ভর্তি হয়ে প্রতিটি স্টুডেন্ট আমার কাছ থেকে পার্মানেন্ট সাপোর্ট পায়।প্রশ্ন: কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেখানে?রেজওয়ানা মির্জা: প্রথমত, কনটেন্ট রাইটিং কী এটা অনেকেই বুঝতো না। ‘ফ্রিল্যান্সিং’ শব্দটা আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয়, কিন্তু আয় করতে গেলে যে কোনো একটা কাজ শিখে আসতে হবে, সেটা অনেকেই জানতো না। হাজার হাজার মানুষ প্রশ্ন করতো, কনটেন্ট রাইটিং মানে কী এবং তাদের সেটা বোঝাতে হতো।আমার কোর্সে আমি সবাইকে ভর্তি করি না। যারা শর্টকাটে আয় করতে চায় বা কিছু না শিখেই আয় করতে চায়, তাদের জন্য আমার কোর্স না। আমি শুধুমাত্র তাদেরকেই শিখাই যারা আসলেই লেখালেখি করতে ভালবাসে, আর এই কাজে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চায়।তাছাড়া, আমি যখন এই কোর্সটা শুরু করি, তখনই এআই (AI) বা চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) চলে আসে। তাই অনেকেই মনে করে যে, এখন থেকে আর কনটেন্ট রাইটিংয়ের জন্য মানুষের দরকার পড়বে না। কিন্তু এটা ঠিক না। এআই বা চ্যাটজিপিটি কখনোই একজন ভালো কনটেন্ট রাইটারের জায়গা নিতে পারবে না। এটা মানুষকে বোঝাতে আমার অনেক সময় লেগেছে।প্রশ্ন: স্বপ্ন বা ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।রেজওয়ানা মির্জা: আমার সামনের পরিকল্পনা হচ্ছে, আমি বাংলাদেশকে অন্তত ৫০০ খুব উন্নত মানের কনটেন্ট রাইটার উপহার দিবো। আমাদের দেশে প্রচুর মানুষ খুবই ভালো লেখে, কিন্তু তারা কনটেন্ট রাইটিংয়ের নিয়মগুলো জানে না। তারা জানে না কীভাবে কাজ পেতে হয়, কোথায়, কীভাবে খুঁজতে হয়। তাদেরকে ঠিক গাইডলাইন দেয়াই আমার পরিকল্পনা।অন্যদিকে, আমাদের ই-কমার্স, ব্লগিং আর লোকাল কোম্পানিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কনটেন্ট রাইটার লাগে, আর তাদের খুঁজে আনতে হয় বাইরে থেকে। অথচ, দেশের ভেতর লেখকরা কাজ পাচ্ছে না। যেহেতু আমি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কনটেন্ট রাইটিং ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে জড়িত, আমি বহু মানুষের সঙ্গে পরিচিত। তারা প্রায়ই কনটেন্ট রাইটার খুঁজেন এবং তাদের জন্যে কনটেন্ট রাইটার তৈরি করে দেয়াই আমার প্ল্যান।প্রশ্ন: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়ার আছে বলে মনে করেন?রেজওয়ানা মির্জা: রাষ্ট্র প্রতিটা পদক্ষেপেই আমাদের সাথে আছে। যখন ফ্রিল্যান্সিং করতাম, ইন্টারনেট সুবিধা, বাইরে থেকে টাকা আনার সুবিধা, সব পেয়েছি। এখনও আমি আলহামদুলিল্লাহ খুব সুন্দর করে আমার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া, রাষ্ট্র চায়, আমাদের নারীরা ঘরে বসে না থেকে স্বাবলম্বী হোক, ছেলেরাও বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাক। তাই, আমি মনে করি, রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুযোগ ও অনুপ্রেরণা দুটি আমি পাচ্ছি।প্রশ্ন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ। রেজওয়ানা মির্জা: আমাদের তরুণরা অনেক দক্ষ এবং কর্মঠ। কিন্তু তারা হয়তো সঠিক গাইডলাইনটা পাচ্ছে না বা জানে না, কোথা থেকে সেটা পাবে। আমি হয়তো তাদের অন্যকিছুতে সাহায্য করতে না পারলেও যারা যারা কনটেন্ট রাইটিং শিখতে চায় এবং এই দক্ষতায় ক্যারিয়ার তৈরি করতে চায়, তাদের জন্য আমি আমার ১০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি আছি।
২৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৩১ এএম
অজন্তা রেজওয়ানা মির্জা, একজন কনটেন্ট রাইটার, প্রশিক্ষক ও সফল উদ্যোক্তা। ১০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্ক ও দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে শতভাগ সফলতার সাথে কাজ করছেন। নিজে কাজ করার পাশাপাশি ‘কনটেন্ট রাইটিং উইথ অজন্তা’র মাধ্যমে অন্যদেরকেও প্রশিক্ষণ দিয়ে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে তৈরি করছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন (বেসিস) থেকে ফিমেল ক্যাটাগরিতে আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তাঁর সফল হয়ে ওঠার নানা গল্প নিয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার। আলাপচারিতায় ছিলেন নুরুল ইসলাম।প্রশ্ন: কখন ও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু হলো?রেজওয়ানা মির্জা: আন্তর্জাতিক ও দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার পর খেয়াল করলাম যে, আমাদের দেশেও ভালো কনটেন্ট রাইটারদের জন্য সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই আমাকে নক দিয়ে রাইটার খোঁজ করে, কিন্তু খুঁজে পায় না। অন্যদিকে দেশে প্রচুর পরিমাণে ভালো রাইটার আছে, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। তারা চাইলেই দিনের ২/৩ ঘণ্টা সময় বের করে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে পার্টটাইম কাজ খুঁজতে পারে। সেটা তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রেও অনেক উপকার হবে। এই চিন্তা থেকেই আসলে কনটেন্ট রাইটিং উইথ অজন্তা (Content Writing with Azanta) শুরু করা।প্রশ্ন: অনুপ্রেরণা কোথায় কীভাবে পেয়েছিলেন?রেজওয়ানা মির্জা: ২০১৫ সালে বেসিসের অ্যাওয়ার্ডটা পাওয়ার পর থেকেই আমাদের নিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ বা প্রচার শুরু হয়। তখন থেকেই আসলে বাংলাদেশে ‘ফ্রিল্যান্সিং’ শব্দটা জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে। প্রচুর পরিমাণে মানুষ, বিশেষ করে মেয়েরা আমাকে ফেসবুকে ও ফোনে নক দিতে শুরু করেন। তাদের অনেকেই বিভিন্ন কারণে চাকরি করতে পারছেন না, অথবা বাসায় ছোট বাচ্চা বা সংসারের কারণে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে। তারা অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং এবং কনটেন্ট রাইটিংয়ে আগ্রহী ছিলেন। এমনকি আমার স্কুল কলেজের অনেক ফ্রেন্ডও আমাকে নক দিয়ে জিজ্ঞেস করতো যে, তারা বাসায় বসে কিছু কাজ করতে পারবে কি না। তারা সবাই আমার অনুপ্রেরণা। এইসব নারীদের জন্য কিছু করার কথা আমি অনেক দিন ধরেই চিন্তা করছিলাম।প্রশ্ন: এ পথ চলার গল্পটা বলুন।রেজওয়ানা মির্জা: অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিলাম বছরে অন্তত ১০ জন নারীকে যেন আমি কনটেন্ট রাইটিং শিখিয়ে পার্টটাইম বা ফুল্টাইম কাজ জোগাড় করে দিতে পারি। কিন্তু ব্যাপারটার আনুষ্ঠানিক রূপ পায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে। তখন আমি প্রথমবারের মতো কনটেন্ট রাইটিং উইথ অজন্তা’র ব্যানারে আমার ট্রেইনিং সেন্টারটা শুরু করি। শুধু মেয়েরা না, আমার অনলাইন ট্রেইনিংয়ে ছেলেরাও ভর্তি হয়। প্রথম যখন শুরু করি তখন মাত্র ৩ জন ভর্তি হয়েছিলো। সে সময় আমি জুম ক্লাসে টানা কথা বলে গিয়েছি। আস্তে আস্তে ৭ জন, ১০ জন করে এখন প্রতি ব্যাচে ৬০ থেকে ৭০ জন করে ভর্তি হয়।আমি ১০ দিনের একটা সেশন নেই প্রতি মাসে। এই ১০টা ক্লাসে কনটেন্ট রাইটিংয়ের পুরো ধারণা দিয়ে দেয়া হয়। শুধু এখানেই শেষ না, প্রতিটা স্টুডেন্টকে আমি পার্সোনালি গাইড করি, তাদের লেখা দেখে আমার মতামত জানাই। তাদের প্রমোট করি এবং ক্লায়েন্টদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। শুধুমাত্র একবার ভর্তি হয়ে প্রতিটি স্টুডেন্ট আমার কাছ থেকে পার্মানেন্ট সাপোর্ট পায়।প্রশ্ন: কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেখানে?রেজওয়ানা মির্জা: প্রথমত, কনটেন্ট রাইটিং কী এটা অনেকেই বুঝতো না। ‘ফ্রিল্যান্সিং’ শব্দটা আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয়, কিন্তু আয় করতে গেলে যে কোনো একটা কাজ শিখে আসতে হবে, সেটা অনেকেই জানতো না। হাজার হাজার মানুষ প্রশ্ন করতো, কনটেন্ট রাইটিং মানে কী এবং তাদের সেটা বোঝাতে হতো।আমার কোর্সে আমি সবাইকে ভর্তি করি না। যারা শর্টকাটে আয় করতে চায় বা কিছু না শিখেই আয় করতে চায়, তাদের জন্য আমার কোর্স না। আমি শুধুমাত্র তাদেরকেই শিখাই যারা আসলেই লেখালেখি করতে ভালবাসে, আর এই কাজে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চায়।তাছাড়া, আমি যখন এই কোর্সটা শুরু করি, তখনই এআই (AI) বা চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) চলে আসে। তাই অনেকেই মনে করে যে, এখন থেকে আর কনটেন্ট রাইটিংয়ের জন্য মানুষের দরকার পড়বে না। কিন্তু এটা ঠিক না। এআই বা চ্যাটজিপিটি কখনোই একজন ভালো কনটেন্ট রাইটারের জায়গা নিতে পারবে না। এটা মানুষকে বোঝাতে আমার অনেক সময় লেগেছে।প্রশ্ন: স্বপ্ন বা ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।রেজওয়ানা মির্জা: আমার সামনের পরিকল্পনা হচ্ছে, আমি বাংলাদেশকে অন্তত ৫০০ খুব উন্নত মানের কনটেন্ট রাইটার উপহার দিবো। আমাদের দেশে প্রচুর মানুষ খুবই ভালো লেখে, কিন্তু তারা কনটেন্ট রাইটিংয়ের নিয়মগুলো জানে না। তারা জানে না কীভাবে কাজ পেতে হয়, কোথায়, কীভাবে খুঁজতে হয়। তাদেরকে ঠিক গাইডলাইন দেয়াই আমার পরিকল্পনা।অন্যদিকে, আমাদের ই-কমার্স, ব্লগিং আর লোকাল কোম্পানিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কনটেন্ট রাইটার লাগে, আর তাদের খুঁজে আনতে হয় বাইরে থেকে। অথচ, দেশের ভেতর লেখকরা কাজ পাচ্ছে না। যেহেতু আমি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কনটেন্ট রাইটিং ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাথে জড়িত, আমি বহু মানুষের সঙ্গে পরিচিত। তারা প্রায়ই কনটেন্ট রাইটার খুঁজেন এবং তাদের জন্যে কনটেন্ট রাইটার তৈরি করে দেয়াই আমার প্ল্যান।প্রশ্ন: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়ার আছে বলে মনে করেন?রেজওয়ানা মির্জা: রাষ্ট্র প্রতিটা পদক্ষেপেই আমাদের সাথে আছে। যখন ফ্রিল্যান্সিং করতাম, ইন্টারনেট সুবিধা, বাইরে থেকে টাকা আনার সুবিধা, সব পেয়েছি। এখনও আমি আলহামদুলিল্লাহ খুব সুন্দর করে আমার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া, রাষ্ট্র চায়, আমাদের নারীরা ঘরে বসে না থেকে স্বাবলম্বী হোক, ছেলেরাও বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাক। তাই, আমি মনে করি, রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুযোগ ও অনুপ্রেরণা দুটি আমি পাচ্ছি।প্রশ্ন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ। রেজওয়ানা মির্জা: আমাদের তরুণরা অনেক দক্ষ এবং কর্মঠ। কিন্তু তারা হয়তো সঠিক গাইডলাইনটা পাচ্ছে না বা জানে না, কোথা থেকে সেটা পাবে। আমি হয়তো তাদের অন্যকিছুতে সাহায্য করতে না পারলেও যারা যারা কনটেন্ট রাইটিং শিখতে চায় এবং এই দক্ষতায় ক্যারিয়ার তৈরি করতে চায়, তাদের জন্য আমি আমার ১০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি আছি।
২৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৩১ এএম
টিংকার জান্নাত মীম, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা, প্রশিক্ষক ও ইনফ্লুয়েনশিয়াল স্পিকার। তিনি পক বিজনেস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। আরও বেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নানাভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন তিনি। পাশাপাশি গত ৯ বছর যাবৎ নারী উন্নয়ন ও সাইবার ক্রাইমের শিকার নারীদের বিভিন্ন আইনী সহায়তা পেতে সাহায্য করছেন মীম। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে বেশ কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর সফল হয়ে ওঠার নানা গল্প নিয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার। আলাপচারিতায় ছিলেন নুরুল ইসলাম।প্রশ্ন: কখন ও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু হলো?টিংকার জান্নাত মীম: ২০১৪ সালে সোশ্যাল মিডিয়াতে ‘পপ অফ কালার’ নামক প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পথ চলা শুরু হয়। আমার চিন্তা ছিল, মেয়েদের ভেতরে যেসব দক্ষতা আছে কোনভাবে সেটাকে যদি একটু বের করে আনা যায় বা যত্ন করা যায়, তাহলে নারীদের দিয়ে আরও ভালো কিছু করা সম্ভব। তাই, আমি সবসময় নারীদের নিয়ে এবং নারীদের জন্য ভালো কিছু করতে চাইতাম। ঠিক কীভাবে করলে ভালোভাবে করতে পারবো, সেটা বুঝের ওঠার পরই কাজে লেগে যাই। প্রশ্ন: অনুপ্রেরণা কোথায় কীভাবে পেয়েছিলেন?টিংকার জান্নাত মীম: ছোটবেলা থেকে প্রচুর বই পড়তাম। আমার আব্বাও বই পড়তেন। উনার বইগুলো দিয়ে আমার বই পড়ার প্রতি আগ্রহ শুরু হয়। শুরুর দিকে ইন্ডিয়ান লেখকদের বই পড়েছি। ওখান থেকে আমার আসলে নারীদের জন্য কিছু করার চিন্তাটা মাথায় আসে। নারীদের নিয়ে যখন কোনো ফিচার দেখতাম বা পড়া হতো। সেগুলো থেকেও অনুপ্রেরণা পেতাম। ভাবতাম, তাদের মতো আমাকেও ভালো কিছু করতে হবে। আর সেই সাথে তাড়না অনুভব করতাম, আশেপাশে খারাপ অবস্থায় থাকা নারীদের জন্য কিছু একটা করার। প্রশ্ন: এ পথ চলার গল্পটা বলুন।টিংকার জান্নাত মীম: আমার পথ চলাটা একটু অদ্ভুত। কারণ, আমি যখন আসলে ২০১৪ সাল থেকে কাজ শুরু করি। তখন ওভাবে করে আমার এই ইনফ্লুয়েন্সিং, সোশ্যাল মিডিয়া, ব্র্যান্ড প্রমোটিং বা নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে ওভাবে কেউ কাজ করতো না। তাই আমি যাদের নিয়ে, যে সকল ব্র্যান্ডকে পাশে নিয়ে আমার এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি, সেগুলো তাদের বোঝানো একটু কষ্ট সাধ্য ছিলো। তাছাড়া, আমি তখন উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছি মাত্র। তাই, আমার আইডিয়া কতটুকুই বা কাজে লাগবে, এটা অন্যদের কাছে একটা বড় দ্বিধার বিষয় ছিলো। কিন্তু ব্র্যান্ডগুলো আমার উপর বিশ্বাস রেখেছে। ফলে প্রথম দিকে ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ড ভিটের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এরপর পর্যায়ক্রমে ইউনিলিভার, আড়ং, স্কয়ার, সেনোরা, এসিআই, প্রাণ, বিকাশ, গ্রামীণ ডানোন, হরলিক্স আরএফএল, ফার্ম ফ্রেশ, গোল্ডেন রোজ, মারিকো,ইনসেপ্টার ফার্মাসিটিউক্যাল, অডি, ফ্রেশ, এপেক্স, কুমারিকা, হিমালয়া, রাঁধুনি, ফ্রেশ, ব্র্যাক ব্যাংকসহ আরও অনেকের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে যাচ্ছি। এরপরে আমাকে আসলে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। নারীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করাটাই আমার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো। তাদেরকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় অনেক ঘাটতি আমার চোখে পড়ে। সেই ঘাটতি পূরণে ছয়টি কনসার্নের যাত্রা শুরু হয়। আর পুরো বিষয়টাকে একত্রে পরিচালনা করছে আমাদের মূল প্রতিষ্ঠান পক বিজনেস গ্রুপ। এই ছয়টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- পপ অফ কালার, পপ অফ ফ্লেভার, পপ অফ হোপ, পপ অফ সিক্রেটস, পক’স ক্রিয়েটিভ হাইভ ও টিজে এম। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা গ্রহণ করছেন টিংকার জান্নাত মীমপ্রশ্ন: কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেখানে?টিংকার জান্নাত মীম: প্রতিবন্ধকতা ছিলো একটাই, সেটা ছিলো আমার পরিবারের সবাই অনেক পড়াশোনা করা। একটা পর একটা ডিগ্রি নেয়ার প্রতি খুব বেশি তারা সচেতন ছিলো। সরকারি চাকরি, দুইটা বিষয়ে মাস্টার্স করেছে তারা। একবার বিসিএসএ টেকার পরও আবার বিসিএস দিয়ে ক্যাডার চেঞ্জ করছে, এরকম দেখে আসছি। আর যারা অনেক বেশি পড়ুয়া হয়, সোশ্যাল মিডিয়াতে একটু তাদের পদচারণা কম হয়। আমার বাসায় যেহেতু সবাই খুব পড়ুয়া, খুব সাকসেসফুল ক্যারিয়ার তাদের। সে কারণে তাদের পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়াতে আমার কাজটা মেনে নেয়া খুব কঠিন ছিলো। তারা মনে করতেন, এটা সময় অপচয় বা অপ্রয়োজনীয় কোনো একটা কাজ। তারা চিন্তা করতেন, এর মাধ্যমে আমি কোনো বিপথে জড়িয়ে যাই কিনা। সময়ের সাথে সাথে কাজের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতাগুলো উতরে যেতে সক্ষম হয়েছি।প্রশ্ন: স্বপ্ন বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।টিংকার জান্নাত মীম: আমাদের পপ অফ কালারে ঢাকার কমার্শিয়াল এরিয়াতে যে প্রথম অফিস হয়েছে, সেটির ১০ বছরে আমরা পা দেবে সামনের ডিসেম্বরের ৮ তারিখ। আমাদের অফিসটি এরকম একটি জায়গা যেখানে নারীরা যেকোনো সমস্যা নিয়েই আসুক না কেন, তার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হবে। শুধু বিভাগগুলোতে না আমরা জেলা, উপজেলা, মফস্বল গ্রাম; প্রত্যেক এলাকাতেই আমাদের উদ্যোগকে ছড়িয়ে দিতে চাই। মাথায় ঢুকিয়ে দিতে চাই, আসলে পপ অফ কালার এমন একটি জায়গা, যেখানে নারীরা তাদের সমস্যার সমস্ত সমাধান পেয়ে যাবেন।প্রশ্ন: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়ার আছে বলে মনে করেন?টিংকার জান্নাত মীম: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে সাপোর্ট দেয়ার দরকার আছে। অনেকে অনেক ধরনের সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়। এ ব্যাপারে সহজে এবং দ্রুত সাপোর্ট দেয়ার ব্যবস্থা থাকা দরকার। দেশের বাইরের ক্লায়েন্টদের সাথে যারা ফ্রিল্যান্সিং এ কাজ করেন, তারা যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তাদের টাকাটা দ্রুততম সময়ে নিয়ে আসতে পারেন; সেটার ব্যবস্থা করা দরকার। তাছাড়া, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন বিষয়ের প্রশিক্ষণগুলোকে আরও সহজলভ্য করা প্রয়োজন।প্রশ্ন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ।টিংকার জান্নাত মীম: আমার নিজের অভিজ্ঞিতার আলোকে আমি যে পরামর্শটা দিতে পারি সেটা হলো, অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ চাইতে হবে এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। দৃঢ় মনোবলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং অবশ্যই নিজের কাজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। তাহলেই সফলতা আসবে, ইনশা আল্লাহ।
১২ নভেম্বর ২০২৩ ০২:০৪ পিএম
হোসনেআরা নূরী নওরীন, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়িদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) মেম্বার অ্যাফেয়ার্স স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান। পাশাপাশি তিনি ‘নওরীন’স মিরর’ ও ‘জামদানি এক্সপ্রেস’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তাঁর সফল হয়ে ওঠার নানা গল্প নিয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার। কথোপকথনে ছিলেন নুরুল ইসলাম।প্রশ্ন: কখন ও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু?হোসনেআরা নূরী নওরীন: ২০১৯ সালে অনলাইন বিজনেস ‘নওরীন’স মিরর’ দিয়ে আমার পথ চলা শুরু হয়। বাংলাদেশের নারী উন্নয়নে, সমাজে নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং ঘরে বসে একজন নারী যাতে কাজ করতে পারে, এসব বিষয় চিন্তা-ভাবনা করে আমি শুরু করি অনলাইন বিজনেস নওরীন’স মিরর। কিন্তু এর পর পরই দেখা দেয় বৈশ্বিক মহামারি করোনা। আমি তখন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাথে কাজ করছিলাম। তাদের মানবসেবা নামে বিভিন্ন প্রকল্পের সাথে আমি কাজ করেছি। আমি মূলত কাজ করেছি দেশীয় পণ্য জামদানি নিয়ে। দেশীয় পণ্যকে গুণগত মানের দিক থেকে কীভাবে আরও ডেভেলপ করা যায় এবং মানুষের মাঝে সেটা পৌঁছে দেয়া যায়; সেটা নিয়ে কাজ করছি। বিশেষ করে, দেশীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।প্রশ্ন: অনুপ্রেরণা কোথায় কীভাবে পেয়েছিলেন?হোসনেআরা নূরী নওরীন: আমি যখন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম, তখন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করেছি। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। পাশাপাশি আমার পরিবারের পক্ষ থেকেও অনুপ্রেরণা ছিলো।প্রশ্ন: এ পথ চলার গল্পটা বলুন।হোসনেআরা নূরী নওরীন: পথ চলার গল্পটা খুব সহজ ছিলো না। একজন উদ্যোক্তা হওয়া কিন্তু খুব কঠিন একটা কাজ। আমরা শুধু চাইলেই একজন উদ্যোক্তা হতে পারি না। বিশেষ করে, নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও কঠিন। চলার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা এসেছে। সেগুলো মোকাবেলা করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি।‘নওরীন’স মিরর’-এর পণ্য নিয়ে হোসনেআরা নূরী নওরীনপ্রশ্ন: কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেখানে?হোসনেআরা নূরী নওরীন: অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এসেছিলো। প্রথম দিকে আমি কীভাবে ব্যবসাটা শুরু করবো, কীভাবে মার্কেটটা ধরবো, কীভাবে কাস্টমারের কাছে যাবো, কোন কোন কাস্টমার আমাদের পণ্য নেবে এবং তাদের কার কি ডিমান্ড; এ ধরনের অনেক বিষয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিলো। যেহেতু আমি একদম অথেন্টিক ওয়েতে বিজনেস শুরু করেছিলাম, আমার ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে, ফেইসবুক পেইজ, ওয়েবসাইটসহ ধারাবাহিকভাবে সব কিছু করেছি; ফলে ধীরে ধীরে সেই প্রতিবন্ধকতা ওভারকাম করতে পেরেছি। আর বিজনেস শুরু করার আগে, আমি আমার প্রয়োজনীয় স্কিলগুলো ডেভেলপ করি এবং বিজনেসের সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে ভালোভাবে এনালাইসিস করেছিলাম। বিজনেসটা আমি কোন ওয়েতে শুরু করবো, কোথায় কোন গ্যাপ আছে, সেগুলো এনালাইসিস করে তারপর শুরু করেছিলাম। হুট করে সিন্ধান্ত নেইনি। এরপরও যখন যে প্রতিবন্ধকতা এসেছে, তখন সেটা মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি অন্য যারা বিজনেস করছে, তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। বিভিন্ন ট্রেনিং নিয়েছি।প্রশ্ন: স্বপ্ন বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।হোসনেআরা নূরী নওরীন: আমরা কিছুদিন আগে দুবাইতে একটা রোড শো করে এসেছি। জিটেক্সের একটা প্রোগ্রামে আমরা অংশগ্রহণ করেছি। দুবাইতে রোড শো করার উদ্দেশ্যই ছিলো ক্রস বর্ডারের মাধ্যমে দেশের বাইরে কীভাবে আমরা দেশীয় পণ্যগুলোকে সহজে পৌঁছে দিতে পারি। সেই লক্ষ্যে আমরা দুবাই বিভিন্ন সেমিনার করেছি। ‘নওরীন’স মিরর’-কে একটি ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। ‘জামদানি এক্সপ্রেস’র মাধ্যমে জামদানি শাড়ি নিয়ে কাজ করছি। আমার ইচ্ছে, দেশীয় এই পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি করতে চাই। ‘নওরীন’স মিরর’ ও ‘জামদানি এক্সপ্রেস’ দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরের মানুষও যাতে এক নামে চিনে, সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।প্রশ্ন: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়ার আছে বলে মনে করেন?হোসনেআরা নূরী নওরীন: সরকার আমাদের অনেকভাবে সহযোগিতা করছে। যেমন- ট্রেড লাইসেন্স, ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিটি (ডিবিআইডি) নিবন্ধন ইত্যাদি। নিবন্ধিত নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে গ্রান্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সরকার চাচ্ছে, নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হোক। এতে বেকারত্ব কমবে। এক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করতে আগ্রহী।‘জামদানি এক্সপ্রেস’র এক প্রদর্শনীতে সহকর্মীদের সাথে উদ্যোক্তাপ্রশ্ন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে?হোসনেআরা নূরী নওরীন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, আপনারা যে কাজটাই করবেন, একদম বুঝে শুনে দেখে তারপর শুরু করুন। হুট করে কাউকে দেখে কোনো কাজ শুরু করবেন না। একজনের পেইজ দেখে আপনি আপনার মতো করে পেইজ সাজাবেন না। যেহেতু আমাদের ৫ হাজারের উপর ফেইসবুক উদ্যোক্তা আছে এবং তারা ২ হাজারের বেশি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন। তাই একজন আরেকজনেরটা দেখে কখনই এ ধরনের ব্যবসা শুরু করবেন না। আপনি একদম নিজের মতো করে ক্রিয়েটিভ ও ইনোভেটিভ আইডিয়া নিয়ে যদি বিজনেসটা শুরু করতে পারেন, তাহলে আপনি সাসটেইন করতে পারবেন। এত ব্যবসায়ীর মধ্য কেন আপনার কাছ থেকে কাস্টমার পণ্য কিনবে, সেটা আপনাকে চিন্তা করতে হবে। গতানুগতিক গতিতে চললে আপনি কখনই বিজনেসটা রান করতে পারবেন না এবং ডেভেলপ করতে পারবেন না। এখন প্রতিটা ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা হচ্ছে।আমরা ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আপনারা এসব প্রশিক্ষণে যুক্ত হতে পারেন। প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার যে স্কিলগুলো কম আছে, সেগুলো ডেভেলপ করে আপনি এগিয়ে যেতে পারেন। আপনি যদি মার্কেটিং ভালো বোঝেন, কিন্তু ফাইনেন্সটা ভালো না বোঝেন, তাহলে আপনি বিজনেসটা ভালোভাবে করতে পারবেন না। সুতরাং মাকেটিংটা ভালোভাবে বুঝতে হবে, ফাইনেন্সটাও ভালোভাবে বুঝতে হবে। আমরা আপনাদের ভ্যাট, ট্যাক্স থেকে শুরু করে কীভাবে আপনার পণ্যের মার্কেটিং করবেন; এসব বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ই-ক্যাবের ২৩ হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে। নতুনরাও এর সাথে যুক্ত হতে পারেন।আরেকটা বিষয়, যেকোনো ব্যবসা শুরু করেই আপনি সাফল্য পাবেন, বিষয়টা সেরকম নয়। একটা কাজ শুরু করে আপনাকে অনেক সাধনা ও পরিশ্রম করতে হবে। সেই সাধনা ও পরিশ্রম যদি আপনি করতে পারেন, তাহলে সাফল্য পাবেন। পাশাপাশি সফলতা আসতে দেরি হলে নিজেকে ছোট বা ব্যর্থ মনে করা যাবে না, লেগে থাকতে হবে। লেগে থাকলে অবশ্যই সফলতা আসবে।নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে ফেইসবুক, ওয়েবসাইট, ট্রেড লাইসেন্সসহ লিগ্যাল ওয়েতে বিজনেস শুরু করে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে সাধনা ও পরিশ্রম করলে সফলতা আসবে, ইনশা আল্লাহ।
০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৪ এএম