ডলার প্রতারক চক্রের মূলহোতা আটক
নিজস্ব প্রতিনিধি, গাইবান্ধা: গাইবান্ধায় ডলার প্রতারক চক্রের মূল হোতা শরিফুল ইসলামকে (৩৮) আটক করেছে সাদুল্লাপুর থানা পুলিশ। ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দিবাগত রাতে সাদুল্লাপুর উপজেলার নিজ গ্রাম জামালপুর থেকে তাকে আটক করা হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুরে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন।প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ থেকে দুই-তিন মাস আগে অজ্ঞাতনামা এক মহিলা নরসিংদীর বাসিন্দা নিজামুল হকের মুঠোফোনে ফোন করেন। দুই-এক দিন কথা বলার পর ওই মহিলা ভুক্তভোগী নিজামুলকে দাদা হিসেবে সম্পর্ক স্থাপন করে। ভুক্তভোগী নিজামুল ব্যবসায়ীক কাজে প্রায়ই রংপুর আসা-যাওয়া করতেন। সেই সূত্র ধরে প্রতারক মহিলা তাকে তার সাদুল্লাপুরের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার অনুরোধ করেন। অনুরোধের প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী নিজামুল সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট এলে সেখানে আগে থেকে অপেক্ষা করা প্রতারক চক্রের একজন মহিলার চাচাতো ভাই পরিচয়ে তাকে মহিলার কথিত একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। বাসায় খাওয়া-দাওয়া করেন নিজামুল। এরপর সেখানে থাকা একজনকে পিতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন ওই মহিলা। খাবার শেষে গল্পের একপর্যায়ে একটি কালো রঙের ব্যাগে করে আনুমানিক ১ হাজার পিছ আমেরিকান ডলার দেখায় নিজামুলকে। সে সময় মহিলার কথিত পিতা বলে যে, তারা গরিব মানুষ। এতগুলো ডলার কোথায়, কার কাছে বিক্রি করবো, ভেবে পাচ্ছিনা। এই ডলারগুলো নিয়ে তাদেরকে ৭ লক্ষ টাকা দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। ভুক্তভোগী নিজামুলের কাছে এত টাকা না থাকায় বাড়ি গিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে বলে ওইদিন নরসিংদী চলে যায়।এরপর প্রতারক ওই মহিলা ফোন করে তাকে আমেরিকান ডলারগুলো কিনে নেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ভুক্তভোগী নিজামুল তার মেয়ে জামাইসহ নরসিংদী থেকে সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের চতরা বাজারের পাকা রাস্তায় আসেন। সেখানে আগে থেকে অপেক্ষা করা প্রতারক মহিলার কথিত চাচাতো ভাই (ইজিবাইকচালক) দুপুর ২টার দিকে সাদুল্লাপুর উপজেলাধীন অজ্ঞাত একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে থাকা ওই প্রতারক মহিলা ও তার কথিত পিতা ভুক্তভোগী নিজামুল ও তার মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে পরিচয় শেষে কথা বলতে থাকেন। এরই মধ্যে অজ্ঞাত পরিচয়ের সাত-আটজন লোক এসে কালো রঙের একটি ব্যাগে রাখা ডলারের বান্ডিল দেখিয়ে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। ভুক্তভোগী নিজামুল ব্যাগে থাকা ডলারগুলো দেখতে চাইলে তারা ব্যাগটি তাদের কাছে থেকে কেড়ে নেয় এবং বলে এই বিষয়ে থানা পুলিশকে জানালে তাদেরকে হত্যা করা হবে।বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ভুক্তভোগী নিজামুল শুক্রবার ৯ ফেব্রুয়ারি বিকালে সাদুল্লাপুর থানায় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একটি প্রতারণা মামলা করেন। অভিযোগ পেয়ে রাতেই সাদুল্লাপুর থানা পুলিশ উপজেলার জামালপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে প্রতারক চক্রের মূলহোতা শরিফুল ইসলামকে আটক করে। এ সময় তার কাছে থেকে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া অর্থের মধ্যে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। সেইসাথে একটি মাঝারি আকারের কালো রঙের হাত ব্যাগের ভিতরে বিশেষ কায়দায় বান্ডিল আকারে রাখা কথিত আমেরিকান ডলারের ৫টি বান্ডিল, যার প্রতিটি বান্ডিলের উপরে একটি করে কথিত আমেরিকান ডলার সাদৃশ্য নোট গার্ডার দ্বারা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এছাড়া প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল, ১টি ইজিবাইক ও ১টি চার্জার ভ্যান জব্দ করা হয়।আসামির বিরুদ্ধে সাদুল্লাপুর থানায় একটি প্রতারণা মামলা হয়েছে। আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।প্রেস বিফ্রিং-এ উপস্থিত ছিলেন, গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইবনে মিজান (প্রশাসন ও অর্থ), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপাল (এ-সার্কেল), সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজমিরুজ্জামানসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ।
