মোংলায় এক তরুণীর বিরুদ্ধে কুমারী সেজে একের পর এক বিয়ে করার অভিযোগ
বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের মোংলায় কুমারী সেজে প্রতারণার মাধ্যমে একের পর এক বিয়ে করা নেশায় পরিণত হয়েছে বীথি আক্তার (২১) নামে এক তরুণীর। এমন প্রতারণার অভিযোগ এনে বীথি আক্তার ও তার তৃতীয় স্বামীর বিরুদ্ধে খুলনার বিঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট (৩) এর আমলী আদালত তেরখাদার বিচারক মো. নাজমুল কবিরের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী মেহেদী আক্তার ফাহিম নামক এক যুবক।মামলার বাদী মেহেদী হাসান ফাহিম দাবি করেন, তিনি বীথি আক্তারের দ্বিতীয় স্বামী।মামলা সূত্রে জানা যায়, খুলনা নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অভিযুক্ত বীথি আক্তারের সাথে ভুক্তভোগী ফাহিমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বীথি তখন নিজেকে কুমারী দাবি করে। গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বীথি আক্তার পাঁচ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে বিয়ে বসেন ভুক্তভোগী ফাহিমের সাথে। এরপর দুইজনের সংসার শুরু হলে মাত্র কয়েক দিনের মাথায় অভিযুক্ত বীথি আক্তার প্রায় সময় মুঠোফোনে কথা বলতে থাকেন অন্য ছেলেদের সাথে এবং ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জারে অন্য ছেলেদের সাথে বিভিন্ন অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।এক পর্যায়ে মামলার বাদী ফাহিম জানতে পারেন, তাকে বিয়ে করার পূর্বে দুই সন্তানের জনক আশরাফ উদ্দিন মুন্না নামে এক যুবকের সাথে বীথি আক্তারের বিয়ে হয়েছিল। প্রাক্তন স্বামী মুন্না বীথি আক্তারের জীবনযাপন ও পরকীয়ার অভিযোগ তুলে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর মোংলা কাজী অফিসে তালাক দেন এবং পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাঁচ লক্ষ টাকা দেনমোহর পরিশোধ করেন।ভুক্তভোগী ফাহিম দাবি করেন, তার চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায়ই প্রাক্তন স্বামী মুন্নার ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা করত ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতো। বীথি একই সাথে অন্য ছেলেদের সাথেও প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যেত। এমন অনৈতিক কাজে বাধা দিলে বীথি ফাহিমকে না জানিয়ে তার বাসা থেকে নগদ ৮০ হাজার টাকা, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে মোংলায় তার পিতার ভাড়া বাড়িতে চলে যায়। ঐ বাসায়ও মুন্নার অবাধ যাতায়াত ছিল। বিথীর মা ও বোন বীথির সকল অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করে। এরপর গত ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট ফাহিমকে তালাকের নোটিশ পাঠান বীথি। পরের দিন ১৮ আগস্ট ওই তালাক কার্যকর হওয়ার আগেই অন্য এক যুবককে সাত লক্ষ টাকা দেনমোহরে রামপাল কাজী অফিসে তৃতীয় বিয়ে করেন। সেখানেও বীথি নিজেকে কুমারী দাবি করেন।মামলার বাদীর এডভোকেট সুব্রত কুমার কুন্ড জানান, মামলার বিবাদী বীথি আক্তার ধূর্ত, প্রতারক, লোভী চরিত্রহীন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। যেখানের মুসলিম আইনে তালাকের ৯০ দিন অতিক্রান্ত না হলে তালাক কার্যকর হয় না। সেখানে মামলার এক নম্বর বিবাদী তালাক নোটিশ দেওয়ার পরের দিন অন্য যুবককে বিয়ে করেন। সম্পূর্ণ বেআনী ও দণ্ডনীয় অপরাধ হওয়ায় পেনাল কোড ৪৯৪, ৪৯৭ ও ৪৯৮ ধারায় আমরা মামলা দায়ের করেছি।জানা যায়, বীথি আক্তার বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়ের দিগরাজ গ্রামের আনোয়ার শেখ ও রুপিয়া বেগম দম্পতির ছোট মেয়ে। বর্তমানে মোংলা পৌর শহরের বটতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সেখানে এক প্রতিবেশী জানান, বীথির পিতা একজন ইপিজেড শ্রমিক। পিতা গরিব হলেও অভিযুক্ত বীথি উচ্চাভিলাসী জীবন যাপন পছন্দ করেন। তাই নিজের সৌর্ন্দযকে কাজে লাগিয়ে নানা প্রতারণা করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে বাগেরহাট ও খুলনা আদালতে প্রতারণার একাধিক মামলা রয়েছে।এ বিষয়ে অভিযুক্ত বীথি আক্তারের তৃতীয় স্বামীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট তিনি বীথিকে বিয়ে করেন। বীথির পূর্বে দুইটি বিয়ে হয়েছে বা স্বামীকে তালাক দিয়েছে, এসব কিছু গোপন করা হয়েছে তার কাছে। বীথি তাকে জানিয়েছেন, খুলনায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, তাই খুলনায় বসবাস করেন। আমি সরল মনে তার কথায় বিশ্বাস করে তাকে বিয়ে করি। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই পরকীয়া শুরু করে এবং আমি সেটা হাতেনাতে ধরে ফেলি। এরপর সে আমার সংসার থেকে চলে যায়।প্রতারণার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বীথি আক্তারকে ফোন দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিলে বীথি খারাপ আচরণ করে বলেন, “যা মন চায় লিখেন।’
