৬ ডিসেম্বর আখাউড়া মুক্ত দিবস
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: ৬ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আখাউড়া মুক্ত হয়।এ উপলক্ষে ৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক পৌর মুক্তমঞ্চে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়, এ সময় এক মিনিট বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়।প্রদীপ প্রজ্বলন ও ব্লাক আউট অনুষ্ঠানে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাকজিল খলিফা কাজল।অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ জামশেদ শাহ,মো.বাহার মিয়া মালদার,আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বাবুল, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল মমিন বাবুল,মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান স্বাধীন, নির্বাহী সভাপতি আবুল বাশার, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আরিফুর রহমান সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক খাদেম দ্বীমান,যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক যুবরাজ শাহ্ রাসেল, পৌর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড সভাপতি শরিফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখ।১৯৭১ সালে ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে আখাউড়া উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।এর অংশ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধ পরিচালনার জন্য দেশ প্রেমিক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, যুবক, শ্রমিকনেতা কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণের উপস্থিতিতে আখাউড়ায় গঠন করা হয় সর্ব দলীয় সংগ্রাম পরিষদ।ওই পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী ওয়াহেদুর রহমান লিলু মিয়া, সেসময় এস ফোর্সের অধিনায়ক লে. কর্নেল সফিউল্লার তত্ত্বাবধানে এ যুদ্ধ চলতে থাকে পরবর্তীতে ৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর আখাউড়ার উত্তরে সীমান্তবর্তী আজমপুর, রাজাপুর, সিঙ্গারবিল, মিরাশানি এলাকায় আধুনিক অস্ত্রে সস্ত্রে পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি বাহিনীর যুদ্ধ হয়, টানা ৩ দিন চলে এ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে অন্তত ৩৫ পাক সেনা নিহত হয়,বন্দি করা হয় ৫ জনকে, মুক্তি বাহিনীর নায়েক সুবেদার আশরাফ আলী খান এ সময় শহীদ হন, আহত হন অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা।মুক্তিযোদ্ধাদের মারমুখি আক্রমণে পাক বাহিনী পিছু হটতে শরু করে। ৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনীরা আজমপুর অবস্থান নিলে সেখানেও অবিরাম যুদ্ধ হয়,ওই যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর ১১ জন নিহত হয়,মুক্তিবাহিনীর ২ সিপাহী ও ১ নায়েক সুবেদার শহীদ হন। ৪ এবং ৫ ডিসেম্বর যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর প্রায় ১৭০ জন সৈন্য নিহত হয়,তখন গোটা আখাউড়া এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে,অবিরাম যুদ্ধের পর ৬ ডিসেম্বর আখাউড়া পুরোপুরি হানাদার মুক্ত হয়।তাছাড়া আখাউড়া থানার খণ্ড যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো খরমপুর, দেবগ্রাম, তারাগন, নারায়ণপুর,নয়াদিল, দরুইন, টানমান্দাইল, গঙ্গাসাগর, কর্নেল বাজার, মনিয়ন্দসহ বিভিন্ন স্থান রয়েছে। আখাউড়ার মাটিতে রয়েছে অসংখ্য গণ কবর। বীর শেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়ার মাটিতেই শহিদ হন। তাছাড়া বীর উত্তম শহিদ সাফিলের জম্ম আখাউড়ার মাটিতেই।এদিকে ৬ ডিসেম্বর দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ৫ ও ৬ ডিসেম্বর দুইদিন ব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।