স্টাফ রিপোর্টার, ফরিদপুর: ফরিদপুরের সোহরাওয়ার্দী সরোবর তথা টেপাখোলা লেকপাড়ে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে 'ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট' নামে ব্যয়বহুল এক বিলাসী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের জায়গায় প্রকলপ বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। আর এ রিসোর্ট তৈরি করতে কেটে ফেলা হবে সেখানকার দীর্ঘদিনের পুরনো ৩১টি গাছ।ইতোমধ্যে গাছগুলো কেটে ফেলার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে সেগুলোর গায়ে খোদাই করে চিহ্ন দিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ নিয়ে শহরবাসীর মাঝে উঠেছ নানা গুঞ্জন।বড় বাজেটের আয়েশী এ প্রকল্প শেষ পর্যন্ত সরকারের গলায় শ্বেতহস্তীর মতো আটকে পূর্ণাঙ্গ রূপ না পেলে লেকপাড়ের বর্তমানের নিসর্গ পরিবেশটুকুও হারাতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে।২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেক বৈঠকে ২১১ কোটি টাকা ব্যয়ে 'ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট' নামে এই প্রকল্পটি পাশ করা হয়। তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একান্ত প্রচেষ্টায় মূলত এ প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে যায়। নকশা অনুযায়ী এই টেপাখোলা রিসোর্টে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, টেপাখোলা রিসোর্ট স্কুল ব্লক, জিমনেসিয়াম, মসজিদ, রিসোর্ট সেন্টার, ভিকটোরি মিউজিয়াম, ভিকটোরি কমপ্লেক্স, ওয়ান্ডার হুইল, ফুড কোড, সিনিয়র সিটিজেন কর্নার, আর্ট এন্ড ক্রাফ্ট সেন্টার, চিল্ড্রেন ওয়াটার গেইম, চিল্ড্রেন সুইমিংপুল, টেপা ক্যাফে ও হল, অ্যাম্পিথিয়েটার, বোর্ট ল্যান্ডিং ক্যাফে ও বঙ্গবন্ধু ইনডেক্স ফিঙ্গার টাওয়ার তৈরির কথা। তবে পরে বঙ্গবন্ধু ইনডেক্স ফিঙ্গার টাওয়ারটি বাদ দিয়ে প্রকল্পের বরাদ্দ ১৮০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে আজাদ আগামী একমাসের মধ্যে এই রিসোর্টের কাজ উদ্বোধন করবেন বলে এলজিইডি ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহিদুজ্জামান খান জানিয়েছেন।ফরিদপুর জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, টেপাখোলা লেকটি ১৪ একর জমির উপর অবস্থিত। এ লেকসহ আশেপাশে সবমিলিয়ে ১৮ একর জমির উপর লেকের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০২৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন প্রকল্প পরিচালক। আর একাজে প্রথম পর্যায়ে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সেখানকার দীর্ঘদিনের পুরনো ৩১টি গাছ বিক্রির জন্য গত ২৮ মার্চ ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় নিলাম করা হয়েছে।সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, টেপাখোলা লেকের পূর্ব পাড়ে এবং দক্ষিণ পাড়ের সড়কের পাশে অবস্থিত গাছগুলোর বেশিরভাগই মেহগনি গাছ। এর পাশাপাশি, আম, কাঁঠাল, নারকেল গাছও রয়েছে। গাছগুলির বয়স আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ বছর। এরই মধ্যে সেগুলোর শক্ত বাকল কেটে লাল রঙ দিয়ে সংখ্যা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেকোন সময় সেগুলো কেটে ফেলার কাজ শুরু হবে। এছাড়া গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে লেকের পানি তুলে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।তবে এ গাছগুলি কাটার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাসিন্দাসহ শহরবাসীর মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নগরায়নের যুগে শহরবাসীর প্রাতভ্রমণ, বৈকালিক হাঁটা এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার একটি বড় স্থান এই লেকপাড়। বর্তমানে প্রচন্ড দাবদাহে প্রতিদিন বিকেলে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সেখানে ছুটে যান অনেকেই। শুধু এই গরমে নয়, সারাবছরই শহরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে সর্বস্তরের লোকজন ছুটে আসেন এই লেকপাড়ে অলস ও অবসর সময় কাটাতে।ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুর রহমান জানান, শৈশব থেকেই এই গাছগুলি দেখে আসছি। এখানকার লেকের স্বচ্ছতার সাথে গাছগুলোর ছায়াময় পরিবেশ এক দারুণ নিসর্গের অনুভূতি তৈরি করেছে। একারণে প্রাকৃতিকভাবেই এটি একটি সুন্দর বিনোদন স্পট হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। এখন এই গাছগুলো কেটে ফেললে এই পরিবেশটাই বদলে যাবে।আব্দুল আজিজ নামে এক যুবক জানান, এই গাছগুলোর ছায়ায় আমাদের শৈশব কেটেছে। প্রচন্ড গরমে শুধু আমরা নয়, শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একটু স্বস্তির আশায় ছুটে আসেন এখানে। এখন শুনছি এখানে বড় প্রকল্প হবে, বড় বড় ভবন হবে। এজন্য গাছগুলি কেটে ফেলা হবে। এ খবর শোনার পরে মনে স্বস্তি পাচ্ছি না।টেপাখোলা লেকপাড়ের বাসিন্দা এস এম মনিরুজ্জামান মনির নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক ও পরিবেশ কর্মী জানান, তীব্র গরমে শহরের মানুষ এসব গাছের তলায় একটু বিশ্রাম নিয়ে থাকে। আমার জানামতে, লেকের উন্নয়নে যে নকশা ও ব্যয় বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিলো তা সংকুচিত করা হয়েছে। আর যেহেতু মূল নকশা অনুযায়ী আর কাজটি হচ্ছে না তাই গাছগুলো রেখেই নতুন করে নকশা করা উচিত। আমরা চাই পরিবেশ রক্ষায় গাছগুলো রক্ষা করা হোক।সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর আহমেদ জানান, গাছগুলো আমাদের ফরিদপুর শহরের বহু স্মৃতিবিজড়িত। স্বাধীনতা যুদ্ধেরও আগে এগুলো লাগানো হয়েছে। এখন এসব গাছ কেটে ফেলে, পুনরায় কোনো গাছ লাগিয়ে এ অবস্থায় আনতে আবার আমাদের অর্ধশতাব্দীকাল অপেক্ষা করতে হবে। আর প্রধানমন্ত্রী যেখানে এসব ব্যয়বহুল প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরুৎসাহিত করছেন, সেখানে এই গাছগুলো কেটে ফেলার পরে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়েও আমরা শংকিত। তখন এর দায়ভার নেবে কে? যাই করা হোক না কেন এ গাছগুলি রক্ষা করে করতে হবে।একই এলাকার বাসিন্দা ইফফাত আরা (২৬) জানান, এই গাছগুলো ফরিদপুরের অক্সিজেনের ভান্ডার। এলাকার সকল স্তরের মানুষ এ গাছতলায় এসে বিশ্রাম নেন, প্রাণ জুড়ান। আমাদের সকলের উদ্যোগে গাছ কাটার এ পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।টেপাখোলা লেকের পূর্বপাশে অবস্থিত ফরিদাবাদ এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান (৩৯) জানান, উন্নয়ন হোক তা আমরাও চাই। কিন্তু এজন্য গাছ কাটতে হবে কেন। পূর্বদিকে গাছগুলি লেক পাশের রাস্তার পূর্বদিকে আছে এবং দক্ষিণ পাশের গাছগুলি রাস্তা উত্তরে লেকের পাড়ে আছে। এ লেকের সৌন্দর্য বাড়াতে গাছ কাটতে হবে কেন।ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম জানান, গাছগুলি রাস্তার পাশে এবং লেকের পাড়ে অবস্থিত। আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। তবে আমার মনে হয়েছে, গাছগুলি রক্ষা করে এ প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব। গাছগুলি কেটে ফেলার উদ্যোগের কোনো যুক্তিসংগত কারণ দেখছি না।ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজুল আলম মিলন জানান, কোনো যুক্তিতেই ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী এ গাছগুলি কেটে ফেলা আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না। গাছগুলি অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। বড় বড় এ গাছগুলি কেটে ফেললে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। এ উদ্যোগ আমরা নাগরিক সমাজ মেনে নিতে পারি না।ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বাকাহীদ হোসেন জানান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও বড় বড় ওই গাছগুলি রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এগুলি রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আমাদের জানানো হয়। তিনি বলেন, ওই ৩১টি গাছ কাটা হলেও পাশাপাশি এক হাজার ৭৬২টি গাছ রোপণ করা হবে। এটি সরকারি উদ্যোগে একটি দৃষ্টি নন্দন কাজ হবে। এ কাজের স্বার্থে আপাতত এ ক্ষতি আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।
০৬ মে ২০২৪ ০৬:২৪ এএম
স্টাফ রিপোর্টার, ফরিদপুর: ফরিদপুরের সোহরাওয়ার্দী সরোবর তথা টেপাখোলা লেকপাড়ে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে 'ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট' নামে ব্যয়বহুল এক বিলাসী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের জায়গায় প্রকলপ বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। আর এ রিসোর্ট তৈরি করতে কেটে ফেলা হবে সেখানকার দীর্ঘদিনের পুরনো ৩১টি গাছ।ইতোমধ্যে গাছগুলো কেটে ফেলার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে সেগুলোর গায়ে খোদাই করে চিহ্ন দিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ নিয়ে শহরবাসীর মাঝে উঠেছ নানা গুঞ্জন।বড় বাজেটের আয়েশী এ প্রকল্প শেষ পর্যন্ত সরকারের গলায় শ্বেতহস্তীর মতো আটকে পূর্ণাঙ্গ রূপ না পেলে লেকপাড়ের বর্তমানের নিসর্গ পরিবেশটুকুও হারাতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে।২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেক বৈঠকে ২১১ কোটি টাকা ব্যয়ে 'ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট' নামে এই প্রকল্পটি পাশ করা হয়। তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একান্ত প্রচেষ্টায় মূলত এ প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে যায়। নকশা অনুযায়ী এই টেপাখোলা রিসোর্টে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, টেপাখোলা রিসোর্ট স্কুল ব্লক, জিমনেসিয়াম, মসজিদ, রিসোর্ট সেন্টার, ভিকটোরি মিউজিয়াম, ভিকটোরি কমপ্লেক্স, ওয়ান্ডার হুইল, ফুড কোড, সিনিয়র সিটিজেন কর্নার, আর্ট এন্ড ক্রাফ্ট সেন্টার, চিল্ড্রেন ওয়াটার গেইম, চিল্ড্রেন সুইমিংপুল, টেপা ক্যাফে ও হল, অ্যাম্পিথিয়েটার, বোর্ট ল্যান্ডিং ক্যাফে ও বঙ্গবন্ধু ইনডেক্স ফিঙ্গার টাওয়ার তৈরির কথা। তবে পরে বঙ্গবন্ধু ইনডেক্স ফিঙ্গার টাওয়ারটি বাদ দিয়ে প্রকল্পের বরাদ্দ ১৮০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে আজাদ আগামী একমাসের মধ্যে এই রিসোর্টের কাজ উদ্বোধন করবেন বলে এলজিইডি ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহিদুজ্জামান খান জানিয়েছেন।ফরিদপুর জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, টেপাখোলা লেকটি ১৪ একর জমির উপর অবস্থিত। এ লেকসহ আশেপাশে সবমিলিয়ে ১৮ একর জমির উপর লেকের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০২৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন প্রকল্প পরিচালক। আর একাজে প্রথম পর্যায়ে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সেখানকার দীর্ঘদিনের পুরনো ৩১টি গাছ বিক্রির জন্য গত ২৮ মার্চ ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় নিলাম করা হয়েছে।সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, টেপাখোলা লেকের পূর্ব পাড়ে এবং দক্ষিণ পাড়ের সড়কের পাশে অবস্থিত গাছগুলোর বেশিরভাগই মেহগনি গাছ। এর পাশাপাশি, আম, কাঁঠাল, নারকেল গাছও রয়েছে। গাছগুলির বয়স আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ বছর। এরই মধ্যে সেগুলোর শক্ত বাকল কেটে লাল রঙ দিয়ে সংখ্যা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেকোন সময় সেগুলো কেটে ফেলার কাজ শুরু হবে। এছাড়া গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে লেকের পানি তুলে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।তবে এ গাছগুলি কাটার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাসিন্দাসহ শহরবাসীর মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নগরায়নের যুগে শহরবাসীর প্রাতভ্রমণ, বৈকালিক হাঁটা এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার একটি বড় স্থান এই লেকপাড়। বর্তমানে প্রচন্ড দাবদাহে প্রতিদিন বিকেলে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সেখানে ছুটে যান অনেকেই। শুধু এই গরমে নয়, সারাবছরই শহরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে সর্বস্তরের লোকজন ছুটে আসেন এই লেকপাড়ে অলস ও অবসর সময় কাটাতে।ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুর রহমান জানান, শৈশব থেকেই এই গাছগুলি দেখে আসছি। এখানকার লেকের স্বচ্ছতার সাথে গাছগুলোর ছায়াময় পরিবেশ এক দারুণ নিসর্গের অনুভূতি তৈরি করেছে। একারণে প্রাকৃতিকভাবেই এটি একটি সুন্দর বিনোদন স্পট হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। এখন এই গাছগুলো কেটে ফেললে এই পরিবেশটাই বদলে যাবে।আব্দুল আজিজ নামে এক যুবক জানান, এই গাছগুলোর ছায়ায় আমাদের শৈশব কেটেছে। প্রচন্ড গরমে শুধু আমরা নয়, শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একটু স্বস্তির আশায় ছুটে আসেন এখানে। এখন শুনছি এখানে বড় প্রকল্প হবে, বড় বড় ভবন হবে। এজন্য গাছগুলি কেটে ফেলা হবে। এ খবর শোনার পরে মনে স্বস্তি পাচ্ছি না।টেপাখোলা লেকপাড়ের বাসিন্দা এস এম মনিরুজ্জামান মনির নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক ও পরিবেশ কর্মী জানান, তীব্র গরমে শহরের মানুষ এসব গাছের তলায় একটু বিশ্রাম নিয়ে থাকে। আমার জানামতে, লেকের উন্নয়নে যে নকশা ও ব্যয় বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিলো তা সংকুচিত করা হয়েছে। আর যেহেতু মূল নকশা অনুযায়ী আর কাজটি হচ্ছে না তাই গাছগুলো রেখেই নতুন করে নকশা করা উচিত। আমরা চাই পরিবেশ রক্ষায় গাছগুলো রক্ষা করা হোক।সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর আহমেদ জানান, গাছগুলো আমাদের ফরিদপুর শহরের বহু স্মৃতিবিজড়িত। স্বাধীনতা যুদ্ধেরও আগে এগুলো লাগানো হয়েছে। এখন এসব গাছ কেটে ফেলে, পুনরায় কোনো গাছ লাগিয়ে এ অবস্থায় আনতে আবার আমাদের অর্ধশতাব্দীকাল অপেক্ষা করতে হবে। আর প্রধানমন্ত্রী যেখানে এসব ব্যয়বহুল প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরুৎসাহিত করছেন, সেখানে এই গাছগুলো কেটে ফেলার পরে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়েও আমরা শংকিত। তখন এর দায়ভার নেবে কে? যাই করা হোক না কেন এ গাছগুলি রক্ষা করে করতে হবে।একই এলাকার বাসিন্দা ইফফাত আরা (২৬) জানান, এই গাছগুলো ফরিদপুরের অক্সিজেনের ভান্ডার। এলাকার সকল স্তরের মানুষ এ গাছতলায় এসে বিশ্রাম নেন, প্রাণ জুড়ান। আমাদের সকলের উদ্যোগে গাছ কাটার এ পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।টেপাখোলা লেকের পূর্বপাশে অবস্থিত ফরিদাবাদ এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান (৩৯) জানান, উন্নয়ন হোক তা আমরাও চাই। কিন্তু এজন্য গাছ কাটতে হবে কেন। পূর্বদিকে গাছগুলি লেক পাশের রাস্তার পূর্বদিকে আছে এবং দক্ষিণ পাশের গাছগুলি রাস্তা উত্তরে লেকের পাড়ে আছে। এ লেকের সৌন্দর্য বাড়াতে গাছ কাটতে হবে কেন।ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম জানান, গাছগুলি রাস্তার পাশে এবং লেকের পাড়ে অবস্থিত। আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। তবে আমার মনে হয়েছে, গাছগুলি রক্ষা করে এ প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব। গাছগুলি কেটে ফেলার উদ্যোগের কোনো যুক্তিসংগত কারণ দেখছি না।ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজুল আলম মিলন জানান, কোনো যুক্তিতেই ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী এ গাছগুলি কেটে ফেলা আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না। গাছগুলি অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। বড় বড় এ গাছগুলি কেটে ফেললে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। এ উদ্যোগ আমরা নাগরিক সমাজ মেনে নিতে পারি না।ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বাকাহীদ হোসেন জানান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও বড় বড় ওই গাছগুলি রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এগুলি রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আমাদের জানানো হয়। তিনি বলেন, ওই ৩১টি গাছ কাটা হলেও পাশাপাশি এক হাজার ৭৬২টি গাছ রোপণ করা হবে। এটি সরকারি উদ্যোগে একটি দৃষ্টি নন্দন কাজ হবে। এ কাজের স্বার্থে আপাতত এ ক্ষতি আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।
০৬ মে ২০২৪ ০৬:২৪ এএম
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: তিন মাস আগেও সড়কের ধারে গাছগুলো ছিল নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে। এই গাছের ছায়াতলে বিশ্রাম নিত পথচারী খেটে খাওয়া মানুষ। আরামে চলাচল করত পথচারীরা। এখন সেখানে ধূধূ মরুভূমি ও তীব্র তাপদাহ।সামান্য টাকার জন্য সরকার যেন আর গাছ না কাটে এমন আকুতি জানিয়ে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সাঁওতা গ্রামের মোস্তাক শাহরিয়ার। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্র।আলিমুজ্জামান রাজিব নামের আরেক ছাত্র বলেন, যেহেতু গাছগুলো আমাদের ছায়া দিচ্ছে। সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করছে। সেহেতু গাছগুলো না কাটায় ভালো। তার ভাষ্য, গাছপালা কমে যাওয়ার কারণেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে না, তীব্র তাপদাহ চলছে। তিনি গাছ না কাটার দাবি জানান।বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়া থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত পাউবোর জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। সড়কে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর পূর্বে কয়েক হাজার ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করেছিল উপজেলা বনবিভাগ। দরপত্রের মাধ্যমে ২০২৩ সালে যদুবয়রা থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। চলতি বছরেও ওই সড়কের লাহিনীপাড়া থেকে বাঁধবাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটা হয়েছে।আরো জানা যায়, সম্প্রতি বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত আরো তিন কিলোমিটার সড়কের কয়েক হাজার গাছ কাটার জন্য গাছের গায়ে নাম্বারিং করে দরপত্র সম্পন্ন করেছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য গাছগুলো না কেটে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও পথচারীরা।সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জিকে খালের লাহিনীপাড়া এলাকায় সড়কের ধারে সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর নেই। কাটা গাছগুলোর গোঁড়া ও কিছু অংশবিশেষ পড়ে আছে। চাঁপড়া বোর্ড অফিস এলাকার খালের পাকা ও কাঁচা সড়কের দুইপাশে মেহগনি, বাবলা, কড়ইসহ নানান জাতের কয়েক হাজার বড় বড় গাছ রয়েছে। সেগুলোর গাঁয়ে নাম্বারিং করা।এসময় ভ্যানচালক আব্দুল হাকিম জানান, তিনি নিয়মিত ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি প্রায়ই সড়কে বসে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেন। গাছগুলো কাটা হলে আর বসা হবে না তার। তার ভাষ্য, গাছের কারণে মানুষ স্বস্তিতে সড়কে চলাচল করতে পারে। অনেকেই বিশ্রাম নেন।নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন সরকারি কর্মকর্তা দুঃখ প্রকাশ করে জানান, গাছগুলো যেহেতু সড়ক নির্মাণ ও চলাচলে সমস্যা করছে না। সেহেতু শুধু টাকার জন্য কেনো কাটা হবে? নির্বিচারে গাছ কাটার কারণেই প্রকৃতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তিনি গাছ রক্ষার দাবি জানান।উপজেলা বনবিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আর্থ সামাজিক ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৪ সাল থেকে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বনবিভাগ। তারা প্রথমে স্থানীয়দের নিয়ে এলাকা ভিত্তিক সমিতি গঠন করে। পরে বিভিন্ন সড়কের ধারে জ্বালানি কাঠের গাছের চারা রোপণ করেন। গাছ দেখাশোনা করে সমিতির সদস্যরা। গাছের বয়স যখন ১০ বছর পূর্ণ হয়। তখন গাছ কাটা ও বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে বনবিভাগ। গাছ বিক্রির ৫৫ ভাগ টাকা পায় সমিতির সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ পায় ৫ ভাগ। আর বনবিভাগ ও সড়ক সংশ্লিষ্ট বিভাগ পায় ২০ ভাগ করে টাকা।জনগণের সাথে গাছ রক্ষার দাবির সাথে একমত পোষণ করেছেন চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক মঞ্জু। তিনি বলেন, সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, ছায়া ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে গাছগুলো থাকা দরকার। তিনি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে কিছু গাছ ঝড়ে ভেঙে পড়লে মানুষের ঘর-বাড়ি ও দোকানপাটের ক্ষতি হবে, সেগুলো কাটার কথাও জানান তিনি।পরিবেশবাদী ও গবেষণা গবেষক গৌতম কুমার রায় বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী দেশে ২৫ ভাগ বনভূমি বা গাছপালা থাকা দরকার। কিন্তু সেই তুলনায় গাছ আছে মাত্র ৯ ভাগের কম। তবুও প্রতিদিনই গাছ উজার হচ্ছে। যে মুহূর্তে প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে, পানির মহাসংকট চলছে, প্রচণ্ড গরমে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠে গেছে, পাখিকুল আশ্রয় পাচ্ছে না। সেই মুহূর্তে গাছগুলো কাটার ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক ঘটনা।তাঁর ভাষ্য, আমরা উন্মাদ মৃত্যের জাতি। যে উন্মাদ মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা শুধু ধ্বংসকেই আনন্দের সাথে গ্রহণ করি, সৃষ্টিকে নয়।উপজেলা বনবিভাগ কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, ১০ বছর পূর্ণ হলেই সমিতির নিয়ম অনুসারে গাছ কেটে পুনরায় নতুন চারা রোপণ করা হয়। ইতোমধ্যে ওই সড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকার গাছ কাটা হয়েছে। অন্যান্য গাছগুলো দরপত্রের মাধ্যমে কাটা হবে। তাঁর ভাষ্য, গাছ রক্ষার কোনো সুযোগ নাই।যেহেতু তাপদাহ চলছে, সেহেতু এই মুহূর্তে গাছগুলো থাকা ভালো বলে মনে করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি জানান, বনবিভাগের সঙ্গে আলাপ করে বিধিমতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৬ পিএম
মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: গাছ লাগিয়ে যত্ন করি, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি - এই স্লোগানকে সামনে রেখে দেশব্যাপী যখন বৃক্ষ রোপণ অভিযান চলছে, ঠিক সেই সময় কোনো অনুমতি ছাড়াই খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে বৃক্ষ নিধন অভিযান।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল কমপ্লেক্সে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো কাটছেন শ্রমিকরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খায়রুল আলমের নির্দেশে কাটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনের চারপাশে থাকা দেবদারু গাছগুলো এক যুগেরও বেশি পুরনো। হাসপাতাল ভবনের পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে গাছগুলো ছিল।গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. খায়রুল আলম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকবল সংকট ও অন্যান্য বিষয়ে কথা বললেও গাছ কাটার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান, মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাছ কাটার বিষয়ে আমি অবগত নই। গাছ কাটতে হলে ইউএনও মহোদয়ের মাধ্যমে ডিএফও বরাবর আবেদন করলে ইউএনও’র মাধ্যমে ফরেস্ট অফিসে এলে সরকারি মূল্য নির্ধারণ করে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়।এ ব্যাপারে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডেজী চক্রবর্তীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।
০২ আগস্ট ২০২৩ ০৬:৩৫ এএম