ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি: লিচুর রাজধানী খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীর লিচু বাজারগুলো লাল টস টসে লিচুতে রঙিন হতে শুরু করেছে। আর এ লিচুতেই স্বপ্ন বুনছে উপজেলার লিচু চাষিরা। তীব্র তাপদাহে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় কৃষকরা হতাশায় ভুগছে। এতে মলিন হয়ে আছে তাদের চেহারা, তবুও দিন শেষে লিচুতেই স্বপ্ন বুনছেন তারা।২১ মে মঙ্গলবার ঈশ্বরদীর সবচেয়ে বড় বেচা-কেনার হাট জয়নগর শিমুলতলাসহ আওতাপাড়া, দাশুড়িয়া, সিলিমপুর লিচু বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই বেড়েছে ক্রেতা-বিক্রেতা, আড়তদার ও ফড়িয়া লিচু ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। তাছাড়া লোকাল ক্রেতাতো আছেই।পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঈশ্বরদীতে এসব ফল পৌঁছে দিচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। দেশি জাতের পাশাপাশি বোম্বাই জাতের বিভিন্ন কেটাগড়ির লিচু উঠতে শুরু করেছে বাজারে। প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা হাজারে।চরমিরকামারী গ্রামের লিচু চাষি ইমদাদুল সরদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার নিজস্ব কয়েকটি লিচু বাগান রয়েছে। তাছাড়া আরও ৩টি লিচু বাগান মুকুলসহ কিনেছি। লিচুর গুটি আসার পর থেকেই টানা একমাস ঈশ্বরদীতে তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল। তাপমাত্রা অধিক হওয়ায় লিচু পাকার এক সপ্তাহ আগে হলুদ ও লালচে রং ধরনের সময় লিচুর ওপরের আবরণ কালচে হয়ে ফেটে যেতে শুরু করে। এবার আকারও ছোট হয়েছে।নওদাপাড়া গ্রামের লিচু চাষি ও ব্যবসায়ী মেরিদুল ইসলাম বলেন, অনাবৃষ্টি এবং নিম্নমানের সার কীটনাশক প্রয়োগের কারণে লিচুর মান ঠিক পর্যায়ে আসেনি। এবার লিচু চাষিদের লোকসান গুণতে হবে।ছলিমপুর এলাকার লিচু চাষি মুনসুর আলী বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ বা সহযোগিতা আমি পাইনি। সারের ডিলাররা যে পরামর্শ দেয় সেই ভাবেই আমরা চাষ করি। নিম্নমানের সার ও কীটনাশক বাজারে থাকায় আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।পাবনা জেলার কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাবনায় এ বছর ৪ হাজার ৭৩১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদের বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৭ হাজার ৮০০ মেট্টিকটন। আর এ চলতি মৌসুমে লিচুতে ২০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে এমনটাই বলছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দীন।লিচু উৎপাদনে এ বছর পাবনায় বিগত ২০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। এরমধ্যে ঈশ্বরদীতেই তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচুর জাতের মধ্যে রয়েছে মোজাফ্ফর (দেশি), বোম্বাই ও চায়না।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ থেকে লিচুকে রক্ষা করতে চাষিদের সেচ ও কীটনাশক ব্যবহার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি আমরা। যারা নিয়মিত সেচ দিয়েছেন তাদের লিচুর ক্ষতি কিছুটা কম হয়েছে। অসাধু কীটনাশক ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি।
২২ মে ২০২৪ ০৮:৩৯ এএম
মেহেরপুর প্রতিনিধি: মেহেরপুরের বাজারে উঠতে শুরু করেছে মধু মাসের রসালো ফল লিচু। তীব্র দাবদাহে লিচু ঝরে যাচ্ছে, তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে পরিপক্ব হওয়ার আগেই লিচু বিক্রি করে দিচ্ছেন বাগান মালিকরা। ফলে লিচুর আসল স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তারা। অপরিপক্ব লিচু না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকগণ। আর কৃষি বিভাগ বলছে, লিচুর গুণগতমান ঠিক রাখার জন্য আরো কয়েকদিন পর লিচু সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ৮০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। শুরুতে ৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। এ সব বাগানে, আঁটি লিচু, মোজাফ্ফর বোম্বাই, চিলি বোম্বাই, আতা বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু উৎপাদন হয়ে থাকে।লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় লিচুর আবাদ বাড়ছে। এখানকার লিচু রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।চলতি মৌসুমে একটু দেরি করেই গাছে মুকুল এসেছিল তাও অনেক কম। উপরন্তু প্রচণ্ড তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে গাছ থেকে ঝরে গেছে অনেক লিচু। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।কৃষকরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণেই পরিপক্ব হওয়ার আগেই গাছ থেকে লিচু পেড়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ, গাছ থেকে লিচু ঝরে পড়ছে। গাছে লিচু ফেটে যাচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত দাম না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তবে লিচুর আবাদে চাষিরা লোকসান গুনলেও লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পরিপক্ব হবার আগেই লিচু বাজারে আসায় লিচুর স্বাদও কমছে বলে জানান ভোক্তারা।বাজারে লিচু কিনতে আসা আজমাইন হোসেন জানান, বাজারে নতুন ফল এসেছে। তাই বাড়ির ছেলে মেয়েদের জন্য কিনেছেন। যদিও একটু স্বাদ কম। আরো কিছুদিন গাছে থাকলে লিচু পুষ্ট হতো স্বাদও পাওয়া যেতো।লিচু চাষি আব্দুল আলিম জানান, তার বাগানে শতাধিক লিচু গাছ থাকলেও ফল এসেছে অর্ধেক গাছে। আবার গত বছরের তুলনায় সেই গাছ গুলোতে লিচু দাঁড়িয়েছে কম। আর রোদের তাপে গাছ থেকে লিচু একাই ঝরে পড়ছে। গাছের গোড়ায় পানি দিয়েও তেমন একটা ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যেগুলো গাছে আছে, তা আবার আকারে ছোট। যার কারণে এবারে বাগানে যা লিচু পাওয়া যাবে তা তিন ভাগের এক ভাগ।ক্রেতা আমেনা খাতুন জানান, বাজারে প্রকারভেদে লিচুর দাম এবার একটু চড়া। প্রতি ১০০ লিচুর দাম হাঁকা হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত, প্রতি পিস হিসেবে যার দাম আসছে দুই টাকা পঞ্চাশ পয়সা থেকে তিন টাকা পর্যন্ত। এ বছর লিচুর দাম একটু বেশি হলেও মৌসুমি ফল হিসেবে ক্রেতারা এ লিচু কিনছেন বেশি দামে। এক পণ (৮০টি) লিচু কিনলাম ২৪০ টাকায়। আরও বেশি নেয়ার ইচ্ছে ছিল তবে টক ও তুলনামূলক আঠির আকার বড়, রয়েছে পোকার আক্রমণও, তাই বেশি কেনা হয়নি।মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার জানান, হাইপোগ্লাইসিন এ সাধারণত কাঁচা বা আধা পাকা অর্থাৎ পাকা নয়, এমন লিচুতে পাওয়া যায়। এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড, যা মারাত্মক বমি বমি ভাব সৃষ্টি করে। অন্যদিকে মিথাইলিন-সাইক্লো-প্রোপাইল-গ্নাইসিন উপাদানটি গ্রহণের ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত কমে যায়। এর কারণে বমি, অচেতন এবং দুর্বল হয়ে পড়ে রোগী। কাঁচা বা আধা পাকা লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সচেতনতাও বাড়াতে হবে।মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, লিচুর গুণগত মান ধরে রাখার জন্য আরও কয়েকদিন পর লিচু বাজারজাত করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। শিলাবৃষ্টি এবং ঝড় ছাড়া বর্তমানে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তা লিচুর জন্য উপযোগী। অপরিপক্ব লিচু খেলে ভোক্তারা লিচুর পুষ্টিমান পাবে না। লিচুর স্বাদ থেকেও বঞ্চিত হবে। এমনকি লিচুর যে ওজন হওয়ার কথা তাও হবে না।
০৬ মে ২০২৪ ০৯:৩২ এএম
দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টি, প্রচণ্ড রোদের ফলে সৃষ্ট দাবদাহ এবং রোগ-বালাইয়ের কারণে মৌসুমি ফল লিচুর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার উৎপাদনও কম হয়েছে কম। ফলে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মৌসুমি এই ফল। দাম শুনেই লিচু না কিনে ফিরে যাচ্ছেন অনেক ক্রেতা।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাজার থেকে শুরু করে হাট-বাজার, ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে এমনকি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঝুড়িতে করে বিক্রি করা হচ্ছে লিচু। কয়েকদিনের তুলনায় বাজারগুলোতে মৌসুমি ফল লিচুর আমদানি বেড়েছে। কিন্তু বাজারে প্রচুর পরিমাণে লিচুর সরবরাহ থাকলেও দাম এখনও অনেকটাই চড়া। অনেকেই শুধু দাম শুনে লিচু না কিনে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।এবারে লিচু দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। বিক্রিও আশানুরূপ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। একদিন বিক্রি বাড়লে, আরেকদিন খুবই কম বিক্রি হয়। এভাবেই চলছে লিচুর বাজার।লিচু ক্রেতারা জানান, লিচু এখন সৌখিন ফলে পরিণত হয়েছে। ১০০টি লিচু ৩২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এতো দাম দিয়ে এই লিচু একবারের জায়গায় দুইবার আর কেনা হয় না।বীরগঞ্জ পৌরশহরের তাজ মহল সিনেমা হলের সামনে এবং বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লিচুর দোকানে বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক। সেখানে ১০০টি লিচু (প্রকার ভেদে) ২৫০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একটু বড় সাইজের লিচু ৪০০ টাকা করে এবং অন্যান্যগুলো ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা হাশেম আলীও সুরুজ আলী জানান, স্থানভেদে বিক্রি লিচু কম-বেশি হয়ে থাকে।লিচু বিক্রেতা মো.লিয়ন শেখ বলেন, সপ্তাহের তিন-চার দিন ভালো বিক্রি হয়। তখন দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার লিচু বিক্রি হয়। আবার অন্যান্য দিন ৪-৫ হাজার বিক্রি করতেই কষ্ট হয়ে যায়। এ বছর লিচুর দাম একটু বেশি। তারপরে আবার গতবারের তুলনায় এ বছর বিক্রির পরিমাণ কম। শুধু দরদাম করেই অনেকে চলে যাচ্ছেন। মাদ্রাজি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়, হারিয়া লিচু ৪০০ থেকে ৪৫০, বেদানা লিচু ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে উঠেছে চায়না ৩ লিচুও, যা একশো বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০৫০ টাকা পর্যন্ত।কাহারোল উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের বাগান মালিক মো.সাদেকুল হক মিলন জানান, অনাবৃষ্টি আর চলমান দাবদাহের প্রবাহে অতিরিক্ত গরম ও পশ্চিমা উষ্ণ বাতাসে ঝলসে যাচ্ছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলার গাছের পাকা লিচু। লিচুর গায়ে পোড়া দাগ পড়ছে এবং ফেটে যাচ্ছে। অনাবৃষ্টির কারণে এবছর লিচুর আকার বা সাইজ ছোট হয়েছে। এ অবস্থায় গাছে লিচু রাখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বাজারেও কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাচ্ছেন না বাগানি ও ব্যবসায়ীরা। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন অনেক লিজ নেয়া বাগানি।
১০ জুন ২০২৩ ০৮:১০ এএম