মধুপুরে সরিষার ফুলে ফুলে চোখ জুড়ানো হলুদ দিগন্ত
মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে দেড় মাস আগে থেকেই। নতুন ধান কাটার পরেই চাষ দিয়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বুনেছেন কৃষকরা। সরিষা ওঠার পর বুরো লাগাবেন। এভাবে বছরে একই জমিতে অধিক ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বছরে কেউ কেউ তিন চার বার ফসল ফলান। আমন বুরো ধান চাষের মধ্যবর্তী সময়টা অলস পড়ে থাকে। এ সময়টাকে কাজে লাগাতে অল্প খরচে বাড়তি ফসল সরিষা চাষে এগিয়ে আসছে কৃষকরা। কয়েক বছর ধরে মধুপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চলছে একই জমিতে কয়েক বার ফসল চাষ।মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ২ হাজার ৫৪৯ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে, যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বিভিন্ন জাতের মধ্যে বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-১৮, বিনা-৪, বিনা-৯, বিনা-১১ ও স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। এ বছর ৩ হাজার কৃষক প্রণোদনার আওতায় এসেছে।ধনবাড়ি উপজেলায় গত বছর ৭৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। এ বছর ১ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে, যা আগের তুলনায় বেশি। প্রদর্শনী ও অন্যান্য বীজ সহায়তার আওতায় ১ হাজারসহ মোট ৪ হাজার কৃষককে সরিষার বীজ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে।মধুপুরের লাল মাটিতে আনারস কলার বাগানেও সরিসা চাষ করা হচ্ছে। তৈল জাতীয় ফসলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা এবার সরিষা চাষে এগিয়ে আসছে।ধান, ভুট্টা, আলু, গমসহ সব ধরনের ফসল চাষে এ উপজেলা এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ধান চাষের পর সরিষার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বছর গত বছরের চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে। মুশুদ্দি গ্রামের কৃষক আনছার আলী জানান, তাদের গ্রামে আলু, মরিচ, ভুট্টা, গম, শিম, কপি, লাউসহ প্রচুর পরিমাণে সরিষা চাষ হয়ে থাকে। তিনি গত বছর ফসলের নিবিড়তা প্রকল্পের আওতায় সরিষা চাষে সেরা কৃষকের সম্মাননা পেয়েছেন।মধুপুর উপজেলার কয়েকজন সরিষা চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবহাওয়া ভালো থাকলে ১ বিঘা জমিতে প্রায় ৫ থেকে ৭ মণ করে সরিষার ফলন হয় এবং সরিষা চাষে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। ফলে খরচের তুলনায় লাভ বেশি থাকায় সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা।মুশুদ্দি ঝুপনা কামার পাড়া গ্রামের সরিষা চাষি জলিল মিয়া ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বছর এ এলাকায় অনেক কৃষক সরিষা চাষ করেছে। তুলনামূলক খরচও কম। তাছাড়া সরিষা চাষে সেচ ও সার কম লাগে। অন্যদিকে ধান তোলার পর আগাম সরিষা চাষ করে আবার ধান চাষ করা যায়।শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের এলাকায় ১ বিঘা থেকে শুরু করে ৭ বিঘা পর্যন্ত সরিষা চাষ করেছেন। তার মতে এবার আবহাওয়া ভালো থাকলে তারা আশানুরূপ ফলন পাবেন এমনটাই জানালেন এই চাষী।মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, এ বছর ২ হাজার ৫৪৯ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে, যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বিভিন্ন জাতের মধ্যে বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-১৮, বিনা-৪, বিনা-৯, বিনা-১১ ও স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। এ বছর ৩ হাজার কৃষক প্রণোদনার আওতায় এসেছে।
