ভালুকা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা: ভালুকা পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও উন্মুক্ত স্থানে ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়াই পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছে স্থানীয় কসাই ও এক শ্রেণির মৌসুমী মাংস বিক্রেতা। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় গরু ছাগল জবাইয়ের পূর্বে ভেটেরিনারী পাবলিক হেলথ সার্ভিস প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে রোগমুক্ত পশু জবাই করার লক্ষ্যে প্রতিটি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ কসাইদের সংগ্রহ করার কথা থাকলেও তারা সেই নির্দেশ মানছে না।পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১১ এর ধারা ২৭ এর প্রদত্ত ক্ষমতা বলে জবাই করার পূর্বে পরিদর্শন’ অর্থ ভেটেরিনারিয়ান বা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা কতৃক জবাইয়ের পূর্বে গবাদিপশু বা পাখিজাতীয় প্রাণী জবাই উপযুক্ত কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে সনদ প্রদান করবেন।সরজমিনে গিয়ে ভালুকা পৌর এলাকার বেশ কয়েকটি মাংসের দোকান পরিদর্শনের সময় মাংস বিক্রয়ে বেশ অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। নিয়ম নীতির তোয়ক্কা না করে জবাই করা এসব রোগাক্রান্ত পশুর মাংস খেয়ে প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে এলাকার জনস্বাস্থ্য।থানার মোড়ে রাজিব নামে এক কসাই একটি বকনা গরু জবাই করার সময় তার কাছে গরুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার ডাক্তারি সনদ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। একই মোড়ে ফারুক ও সোহাগ মিয়া, ভালুকা মধ্য বাজারে সবুজ মিয়া, হাসপাতাল মোড়ে তারেক কসাই, কোর্ট ভবন এলাকার মনসুর ও কলেজ বাজারের শহীদ একই পদ্ধতি অবলম্বন করে মাংস বিক্রি করছে।কসাই সবুজ মিয়া জানান, বর্তমানে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এসব মাংস বিক্রেতাদের সবারই একই কথা, তারা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই দীর্ঘ দিন যাবৎ পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করে আসছেন। এতে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মতিউর রহমান জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারী হাসপাতালে জনবল সংকট ও ভেটেরিনারী সার্জন না থাকায় নিয়মিত গবাদিপশুর স্বাস্ব্য পরীক্ষা সম্ভব হয় না। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারী পাবলিক হেলথ সার্ভিসের আওতায় একজন ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর আছে যে পশুর স্বাস্থ্য বিষয়ে নিয়মিত কসাইদের পরামর্শ প্রদান করে থাকে।
১৯ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫৯ এএম
লাইফস্টাইল ডেস্ক: রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন এবং সকালে তাড়াতাড়ি ওঠুন আর সুস্থ থাকুন। যদি সুস্থ থাকতে হয় তাহলে অবশ্যই সকালে ঘুম থেকে ওঠতে হবে। এছাড়াও প্রবাদ আছে, যে শুয়ে থাকে, তার ভাগ্যও শুয়ে থাকে। তাই আলস্য কাটিয়ে ভোরে ঘুম থেকে ওঠলে হাতে প্রচুর সময় থাকে। শরীরচর্চাসহ কাজ করার জন্য সারা দিন প্রচুর সময় পাওয়া যায়।সুস্থ শরীর এবং সুস্থ মনমানসিকতার জন্য ভোরের বাতাস তুলনামূলক ভালো, তাই এ সময়ের ফুরফুরে ও বিশুদ্ধ আবহাওয়ায় দেহ ও মন সতেজ রাখে। দিনের শুরুতে শরীরচর্চা করলে সারা দিন শরীর সক্রিয় থাকে। এতে খাবারও খুব ভালো হজম হয়। ফলে শরীর সুস্থ থাকে।এছাড়াও সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার আরও কিছু উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:-* ভোরে ঘুম থেকে ওঠলে কাজ-কর্ম সকাল সকাল শুরু করা যায়। এতে অধিক কাজের সুযোগও মেলে ও হাতেও অনেক সময় পাওয়া যায়। * ভোরে ওঠার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুফল হচ্ছে ব্রেন হেমারেজ ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এতে করে সকল কাজ-কর্ম নিখুতভাবে করা যায়। * আজ সকালে কেউ ঘুম থেকে উঠলে দিন পেরিয়ে রাতে তার ফ্রেশ ঘুম হবে। আর রাতের ঘুমও তার অনেক ভালো হবে। অর্থাৎ রুটিন মেনে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া ও সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করলে সকল দিক থেকে অনেক উপকার হবে।* ফুসফুসসহ শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গের কর্মক্ষমতা ভালো হয়।* হার্টের সমস্যা দূরে থাকে।* অবসাদ ও উত্তেজনার অবসান করে শরীরের সতেজতা ফিরে আসে। * শরীরের স্থূলতা দূর হয় এবং একটি বেলেন্স শরীর গঠনের জন্য উপকারি হয়। * সুখের জীবন লাভ করা যায়।তাছাড়া, একজন মানুষের সকল দিকের কল্যাণ সাধনের জন্য তাই সকালে ওঠা খুবই উপকারি কাজ হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ধর্মীয় দিক থেকেও এর অনেক ভাল দিকের কথা বলা হয়েছে। যা একজনকে পরিপূর্ণতা দানে অনেক বেশি সাহাজ্য করে।
১৮ জানুয়ারী ২০২৪ ০৫:২০ এএম
লাইফস্টাইল ডেস্ক: ভারি খাবারের মধ্যে অন্যতম ও বেশ উপকারি খাবার হলো ছোলা। ছোলা ভাজা খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। এটি সুস্বাদু একটি নাস্তা হিসেবেও বেছে নেন অনেকে। বিশেষ করে স্কুলে টিফিনের সময়ে ছোলাভাজা কিনে খাওয়ার স্মৃতি আছে অনেকেরই। আবার বন্ধু কিংবা পারিবারিক আড্ডায় ছোলা ভাজা খাওয়া হয়। নিশ্চিত থাকুন যে ছোলা ভাজা খাওয়ার উপকারিতার কথা অনেকেই জানেন না। এমনকী আপনারও হয়তো অজানা।চলুন জেনে নেওয়া যাক ছোলা ভাজা খেলে কী উপকার হয়-শরীরের ফাইবার এবং প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ: ছোলা ভাজা শরীরে ফাইবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ এই দুই উপাদানের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। একশো গ্রাম ছোলা ভাজার মধ্যে প্রায় ১৮ থেকে ২০ গ্রাম এই দুই পুষ্টি উপাদান থাকে। এছাড়াও এটি শক্তির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং আপনাকে আরও সক্রিয় থাকতে কাজ করে।মোটা মানুষের ওজন কমাবে: ছোলা ভাজা ওজন কমাতে সহায়ক। কারণ এতে থাকে উচ্চ ফাইবার কন্টেন্ট যা আপনার পেট দীর্ঘ সময়ের জন্য ভরিয়ে রাখে। এতে কম ক্যালোরি থাকে তাই আপনাকে অতিরিক্ত ক্যালোরির বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না। সুতরাং ডুবো তেলে ভাজা খাবার খাওয়া বাদ দিন এবং এর পরিবর্তে এক মুঠো ছোলা ভাজা বেছে নিন।হাড়ের সমস্যার জন্য উপকারী: যুবক, বৃদ্ধ, পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্য ছোলা ভাজা উপকারি। এটি শুধুমাত্র ফাইবার এবং প্রোটিনের একটি বড় উৎস নয়, ক্যালসিয়ামেরও। এই কারণে এটি আপনার হাড় শক্তিশালী করার জন্য বেশ উপকারী হতে পারে।হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: সকলের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন, আপনি কি জানেন যে ছোলা ভাজা হার্ট ভালো রাখতেও কাজ করতে পারে? তামা এবং ফসফরাসের উপস্থিতি একে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে যোগ্য করে তোলে, যা হার্টের জন্য সহায়ক। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ) অনুসারে, ফসফরাসের মাত্রা এবং হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।ছোলা নিরাময় হতে পারে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য: ডায়াবেটিস রোগীরাও কোনোরকম চিন্তা ছাড়াই ছোলা ভাজা খেতে পারেন। এই খাবারের গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে, যা আরও উপকারী। কম-জিআই খাবার মানে হলো যে এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রায় হঠাৎ ওঠানামা করবে না।
১৬ জানুয়ারী ২০২৪ ০৭:১৬ এএম
ড. মো. তাজউদ্দিন সিকদার: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মপরিকল্পনাকে আমরা মূলত দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। এক, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা; দুই, সমসাময়িক কিংবা তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা। এই দুই অংশের সহযাত্রা একটি জাতির জনস্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জনস্বাস্থ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলি ছিল মূলত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে সেটিই স্বাভাবিক ছিল। বঙ্গবন্ধু, সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবার সমান প্রাপ্তি এবং বৈষম্য কমাতে স্বাস্থ্য সেবার জাতীয়করণ করেন, যার সুফল ৫০ বছর ধরে এদেশের মানুষ পেয়ে যাচ্ছে। তিনি সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন যা তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো তৈরি, টিকাদান কর্মসূচি, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনস্বাস্থ্য শিক্ষা, জনস্বাস্থ্যের লোকবল বৃদ্ধি এবং জরুরী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে একটি দৃষ্টান্তমূলক যাত্রা শুরু করেছিলেন। এ যাত্রার অংশ হিসেবে ১৯৭৪ সালে জনস্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) প্রতিষ্ঠা করেন।পিতার আদর্শে উদ্ভূত শেখ হাসিনা বিগত ১৫ বছরে জনস্বাস্থ্য খাতে জাতির পিতার ছায়াকে অনুসরণ করেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যক্রম তাৎপর্যগতভাবে একই সাথে সুদূরপ্রসারী এবং সমসাময়িক। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আদলে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণা প্রবর্তন করেন যা ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী একটি স্বীকৃত সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার অংশ। কমিউনিটি ক্লিনিক একটি জনমুখী স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এবং সারাদেশে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করাই এর লক্ষ্য। এটি জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এই যুগান্তকারী এবং সুদূরপ্রসারী ধারণার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এবার আসা যাক সমসাময়িক কিংবা তাৎক্ষণিক জনস্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ করতে এবং দেশে এর প্রভাব প্রশমিত করতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং অবদান রেখেছেন। কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বজুড়ে রোল মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির অসামান্য সাফল্যের জন্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে গ্যাভি ভ্যাকসিন হিরো অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছেন। সুতরাং, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহের দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক, শিশু টিকাদানের সর্বজনীন কভারেজ এবং কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা ও টিকাদানে সাম্প্রতিক সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হয়েছে। আর এই স্বীকৃতির রূপকার শেখ হাসিনা।সামগ্রিক স্যানিটেশন, হাইজিন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিশু ও মাতৃমৃত্যু, এইডস ও ম্যালেরিয়া সহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ অর্জনে শতভাগ সফলতা অর্জন করায়, প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস (এমডিজি) এর লক্ষ্য অর্জন করে। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ এখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ২০৩০ সালের ভিতর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) এর লক্ষ্য অর্জনে।নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে ২০ এর কম, শিশু মৃত্যুর হার ২১.৫/১০০০ জীবিত জন্মে এবং ৫ বছরের কম বয়সী মৃত্যুর হার ২২-এ নেমে এসেছে। মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ১৭০/১০,০০০-এর কমে নেমে এসেছে। মহিলাদের আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪.১ বছর এবং পুরুষদের জন্য ৭০.৮ বছর।২০১৩ সালে, বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রায় ক্ষুধা অর্ধেকে কমানোর জন্য জাতিসংঘের এফএও পুরস্কার পেয়েছে যা দেশের মানুষের পুষ্টির যোগানের স্বয়ংসম্পূর্ণতার বহিঃপ্রকাশ। সরকার খাদ্য নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা আইন ২০১৩ প্রণয়ন করেছে এবং বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছে।২০১৯ সালে বাংলাদেশ ৮৩..৯ শতাংশ বৈধ পূর্ণ টিকা কভারেজ অর্জন করেছে, যা ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভ্যাকসিন হিরো অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করেছে।২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্বারা বাংলাদেশ পোলিও-মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। অবহেলিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে এবং ম্যালেরিয়া রোগ কমাতেও বাংলাদেশ সফল হয়েছে। অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বহুক্ষেত্রীয় কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য, অটিজম, এবং প্রতিবন্ধী কল্যাণে বিগত বছরেরগুলোতে বিশেষ নজর দিয়েছে। প্রতিবন্ধী অধিকার আইন এবং নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটি প্রোটেকশন ট্রাস্ট আইনের মতো আইন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ একজন ডব্লিউএইচও (WHO) গুডউইল অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজমের জন্য আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন। টেলিমেডিসিন এবং ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ কল সেন্টার দেশব্যাপী স্বাস্থ্য সেবা এবং তথ্য প্রদান করে চলেছে। ২০১১ সালে, প্রধানমন্ত্রী আইসিটি ব্যবহার করে স্বাস্থ্য খাতে অগ্রসর হওয়ার জন্য 'ডিজিটাল হেলথ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট' গ্লোবাল হেলথ অ্যান্ড চিলড্রেনস অ্যাওয়ার্ড পান।গত দেড় দশকে স্বাস্থ্য খাতে অগ্রগতি হয়েছে সরকারের প্রতিশ্রুতি, নীতি, কৌশল, আইন প্রণয়ন এবং তাদের কার্যকর ও সময়োপযোগী বাস্তবায়ন, প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত ও কার্যকরী সাংগঠনিক নেটওয়ার্কের কারণে। এবং অ-প্রযুক্তিগত স্বাস্থ্য জনশক্তি, সরকারী, বেসরকারী সংস্থাগুলির সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং উন্নয়ন অংশীদারদের সহায়তা; এবং পরিবার পরিকল্পনা, ইমিউনাইজেশন, ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি, যক্ষ্মা, ভিটামিন-এ সহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে সামগ্রিকভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য। এ অগ্রগতি গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- স্বাস্থ্য বীমা, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনে সহনশীলতা অর্জন এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিশেষায়িত ভৌত কাঠামো নির্মাণ। যার পেছনে নিরলস কাজ করে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনস্বাস্থ্য সহ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত আজ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই উচ্চতা ধারণ করেন বলেই তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, ‘আমি অসুস্থ হলে এই দেশেই চিকিৎসা করো, বিদেশে যাওয়ার দরকার নাই’।লেখক: অধ্যাপক, পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০২:০০ পিএম
ড. মো. তাজউদ্দিন সিকদার: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মপরিকল্পনাকে আমরা মূলত দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। এক, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা; দুই, সমসাময়িক কিংবা তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা। এই দুই অংশের সহযাত্রা একটি জাতির জনস্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জনস্বাস্থ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলি ছিল মূলত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে সেটিই স্বাভাবিক ছিল। বঙ্গবন্ধু, সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবার সমান প্রাপ্তি এবং বৈষম্য কমাতে স্বাস্থ্য সেবার জাতীয়করণ করেন, যার সুফল ৫০ বছর ধরে এদেশের মানুষ পেয়ে যাচ্ছে। তিনি সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন যা তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো তৈরি, টিকাদান কর্মসূচি, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনস্বাস্থ্য শিক্ষা, জনস্বাস্থ্যের লোকবল বৃদ্ধি এবং জরুরী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে একটি দৃষ্টান্তমূলক যাত্রা শুরু করেছিলেন। এ যাত্রার অংশ হিসেবে ১৯৭৪ সালে জনস্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) প্রতিষ্ঠা করেন।পিতার আদর্শে উদ্ভূত শেখ হাসিনা বিগত ১৫ বছরে জনস্বাস্থ্য খাতে জাতির পিতার ছায়াকে অনুসরণ করেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যক্রম তাৎপর্যগতভাবে একই সাথে সুদূরপ্রসারী এবং সমসাময়িক। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আদলে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণা প্রবর্তন করেন যা ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী একটি স্বীকৃত সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার অংশ। কমিউনিটি ক্লিনিক একটি জনমুখী স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এবং সারাদেশে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করাই এর লক্ষ্য। এটি জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এই যুগান্তকারী এবং সুদূরপ্রসারী ধারণার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এবার আসা যাক সমসাময়িক কিংবা তাৎক্ষণিক জনস্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ করতে এবং দেশে এর প্রভাব প্রশমিত করতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং অবদান রেখেছেন। কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বজুড়ে রোল মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির অসামান্য সাফল্যের জন্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে গ্যাভি ভ্যাকসিন হিরো অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছেন। সুতরাং, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহের দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক, শিশু টিকাদানের সর্বজনীন কভারেজ এবং কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা ও টিকাদানে সাম্প্রতিক সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হয়েছে। আর এই স্বীকৃতির রূপকার শেখ হাসিনা।সামগ্রিক স্যানিটেশন, হাইজিন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিশু ও মাতৃমৃত্যু, এইডস ও ম্যালেরিয়া সহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ অর্জনে শতভাগ সফলতা অর্জন করায়, প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস (এমডিজি) এর লক্ষ্য অর্জন করে। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ এখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ২০৩০ সালের ভিতর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) এর লক্ষ্য অর্জনে।নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে ২০ এর কম, শিশু মৃত্যুর হার ২১.৫/১০০০ জীবিত জন্মে এবং ৫ বছরের কম বয়সী মৃত্যুর হার ২২-এ নেমে এসেছে। মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ১৭০/১০,০০০-এর কমে নেমে এসেছে। মহিলাদের আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪.১ বছর এবং পুরুষদের জন্য ৭০.৮ বছর।২০১৩ সালে, বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রায় ক্ষুধা অর্ধেকে কমানোর জন্য জাতিসংঘের এফএও পুরস্কার পেয়েছে যা দেশের মানুষের পুষ্টির যোগানের স্বয়ংসম্পূর্ণতার বহিঃপ্রকাশ। সরকার খাদ্য নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা আইন ২০১৩ প্রণয়ন করেছে এবং বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছে।২০১৯ সালে বাংলাদেশ ৮৩..৯ শতাংশ বৈধ পূর্ণ টিকা কভারেজ অর্জন করেছে, যা ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভ্যাকসিন হিরো অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করেছে।২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্বারা বাংলাদেশ পোলিও-মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। অবহেলিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে এবং ম্যালেরিয়া রোগ কমাতেও বাংলাদেশ সফল হয়েছে। অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বহুক্ষেত্রীয় কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য, অটিজম, এবং প্রতিবন্ধী কল্যাণে বিগত বছরেরগুলোতে বিশেষ নজর দিয়েছে। প্রতিবন্ধী অধিকার আইন এবং নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটি প্রোটেকশন ট্রাস্ট আইনের মতো আইন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ একজন ডব্লিউএইচও (WHO) গুডউইল অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজমের জন্য আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন। টেলিমেডিসিন এবং ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ কল সেন্টার দেশব্যাপী স্বাস্থ্য সেবা এবং তথ্য প্রদান করে চলেছে। ২০১১ সালে, প্রধানমন্ত্রী আইসিটি ব্যবহার করে স্বাস্থ্য খাতে অগ্রসর হওয়ার জন্য 'ডিজিটাল হেলথ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট' গ্লোবাল হেলথ অ্যান্ড চিলড্রেনস অ্যাওয়ার্ড পান।গত দেড় দশকে স্বাস্থ্য খাতে অগ্রগতি হয়েছে সরকারের প্রতিশ্রুতি, নীতি, কৌশল, আইন প্রণয়ন এবং তাদের কার্যকর ও সময়োপযোগী বাস্তবায়ন, প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত ও কার্যকরী সাংগঠনিক নেটওয়ার্কের কারণে। এবং অ-প্রযুক্তিগত স্বাস্থ্য জনশক্তি, সরকারী, বেসরকারী সংস্থাগুলির সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং উন্নয়ন অংশীদারদের সহায়তা; এবং পরিবার পরিকল্পনা, ইমিউনাইজেশন, ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি, যক্ষ্মা, ভিটামিন-এ সহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে সামগ্রিকভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য। এ অগ্রগতি গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- স্বাস্থ্য বীমা, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনে সহনশীলতা অর্জন এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিশেষায়িত ভৌত কাঠামো নির্মাণ। যার পেছনে নিরলস কাজ করে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনস্বাস্থ্য সহ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত আজ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই উচ্চতা ধারণ করেন বলেই তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, ‘আমি অসুস্থ হলে এই দেশেই চিকিৎসা করো, বিদেশে যাওয়ার দরকার নাই’।লেখক: অধ্যাপক, পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০২:০০ পিএম