চৌহালী (সিরাজগঞ্জে) প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার দুর্গম চরে এক সময় বাহন হিসেবে চলতো শুধু গরুর গাড়ি। তবে গেল কয়েক বছর ধরে এই চরের মানুষের বাহনের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল।উপজেলার হাটাইল, হাঁপানিয়া, ছোল, দত্তকান্দি, মুরাদপুর, ফুলহারা ও বোয়ালকান্দি চরের অন্তত শতাধিক যুবক ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।যমুনা নদী বেষ্টিত চৌহালী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়নে আংশিক চর ও দুইটি ইউনিয়নে পুরোটাই চরাঞ্চল। এসব চরে যেতে নৌকায় চড়তে হয়। বর্তমানে যমুনা নদী ছোট হয়ে নৌপথ কমেছে। বেড়েছে পায়ে হাঁটার পথ। এই চরের বালু, কাঁদা আর হাঁটুপানিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। চরযাত্রা অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে মোটরসাইকেলগুলো। চরের চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও তারা এমন সংকীর্ণ পথের দক্ষ চালক। এনজিও কর্মী মো. সাইফ উদ্দিন বলেন, মোটরসাইকেল আমাদের চরাঞ্চলে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা সহজ করে দিয়েছে। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল থাকায় চরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত অনেক সুবিধা হয়ছে।ছোল গ্রামের যুবক মো.আনিছুর রহমান জানান, মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয় তার। নদীপাড় থেকে গ্রামের দূরত্ব অনুযায়ী একজন আরোহী ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দেন। যারা গ্রামে নিয়মিত আসেন তারা ফোন নম্বর রাখেন। ফোন করলেই তারা নদীপাড়ে চলে যানি এবং আরোহীকে নিয়ে আসেন।হাঁপানিয়া গ্রামের মো. রিপন মিয়া বলেন, কিছুদিন আগেও এসব চরে ৫, ৬টি মোটরসাইকেল ছিলো। এখন প্রায় শতাধিক মোটরসাইকেল ভাড়ায় চলছে। এ অঞ্চলে যমুনায় মাছ শিকার আর কৃষি কাজ ছাড়া তেমন কোন কর্মসংস্থান নেই। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
২৭ জানুয়ারী ২০২৪ ১০:৪৬ এএম
হাবিবুর রহমান, যমুনার চর থেকে ফিরে: টাঙ্গাইলের ভুইয়াপুর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন অর্জুনা আর গাবসারা। চারদিকে যমুনা নদী বেষ্টিত ইউনিয়ন দুটিতে মানুষ বসতি গড়েছে অনেক আগেই। বর্ষায় থাকে থৈথৈ জল আর জল। নৌকায় এপার-ওপার যাতায়াত এ জনপদের মানুষের। আর শুকনো মৌসুমে চরাঞ্চলের উর্বর মৃত্তিকায় মাঠ ভরে যায় নানা ফসলে। যেন সবুজের বৈচিত্র্যময় সমারোহ চারদিকে।শুকনো মৌসুমে চরে ভুট্টা, বাদাম, আলু, মাসকালাই, মরিচ, মূলা, শিম, লাউ, জিরা, পেঁয়াজ, রসুন, গম, কাউন, গবাদিপশুর খাদ্য ঘাসসহ নানা ফসলে ছেয়ে আছে মাঠ। চরের বাড়িগুলো যেন ছোট ছোট খামার। প্রতিটি বাড়ির আঙিনা আর পালানে সবজি চাষ, গরু-ছাগল পালন করা হয় এখানে। চরের নারী-পুরুষ সমান তালে মাঠ ঘাটে কাজ করে।ভুইয়াপুরের অর্জুনা আর গাবসারা দুটি ইউনিয়নই চর এলাকায়। স্থানীয়রা চরাঞ্চল হিসেবেই চিনে থাকে। এ সব চর বহু পুরানো। ভাঙা-গড়ার খেলার মতো একপাশ ভাঙে আরেক পাশ গড়ে। একবার এখানে চর, আরেকবার সরে যায় অন্যদিকে। তাই চরের জমি জমা নিয়েও অনেক সময় ঝগড়া-বিবাদ হয়। দখল নিয়ে দেখা দেয় বিরোধ-বিবাদ। পলি পড়ার কারণে চরের জমি খুবই উর্বর হয়। যা ফসলের জন্য যেন সৃষ্টি কর্তার আর্শীবাদ।চরের উর্বর জমিতে কৃষকের চাষ করা ভুট্টা, বাদাম, আলু, মাসকালাই, মরিচ, মূলা, শিম, লাউ, জিরা, পেঁয়াজ, রসুন, গম, কাউন, গবাদিপশুর খাদ্য ঘাসসহ নানা ফসলে ছেয়ে আছে মাঠ।কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের রবি মৌসুমে ভুইয়াপুর উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছে ৩৫৭০ হেক্টর। এর মধ্যে উফসী২৫৯৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৯৭৫ হেক্টর। ভুট্টা ২৮৫১ হেক্টর, চিনাবাদাম ১৩২০ হেক্টর, মুসুর ৫২২, খেসারি ১০১২ হেক্টর, কালোজিরা ১০ হেক্টর, মিষ্টি আলু ৫৭ হেক্টর, মরিচ ৮৫ হেক্টর, শাকসবজি ৪৭০ হেক্টর, পেয়াজ ৫২ হেক্টর, আলু ৩৮ হেক্টর, রসুন ৩৪ হেক্টর, ধনিয়া ২৪ হেক্টর, গম ৪৮০ হেক্টর, মাষকালাই ১২২৪ ও রোপা আমন ৬১১৫ হেক্টর।সরজমিনে অর্জুনা আর গাবসারা ইউনিয়নে গিয়ে জানা যায়, চরাঞ্চলের কৃষি ফসল চাষের নানা কথা। নলিন থেকে নৌকা যমুনা নদী পার হলে চরশুশুয়া গ্রাম। নদীর পাড় উঠে দেখা যায়, সবুজ আর সবুজ। দুই পাশে শস্য ভান্ডার মাঝ খানে মেঠো পথ। ডানপাশে মাষকালাই বাম পাশে ভুট্টার সমাহার। সামনে এগিয়ে দেখা আহাম্মদ খান (৫৫)আলী নামের এক কৃষকের সাথে। তার হাতে কাস্তে আর রশি। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, তাদের এলাকার নাম ভিন্ন ভিন্ন চরের নামে। এসব চরে এ সময়ে গম,ভুট্টা, সজ, সবজি, মরিচ, মূলা, ধান, শিম, লাউসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। তিনি হাত দিয়ে দূরে দেখালেন, ওই চরে তার ২ বিঘা মরিচের চাষ আছে। এখানে তার মাষকালাই তিন বিঘা, ধান দেড় বিঘা, ৫ বিঘা ভুট্টার আবাদ। এখন মাষকালাই তোলার জন্য এসেছেন। তিনি জানালেন, চরে চাষ করতে তেমন সার লাগে না। অল্প খরচে অধিক ফসল পাওয়া যায়।চর শুশুয়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় সরকারি ইবরাহীম খা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমানের সাথে। তিনি জানালেন, এ চরের প্রায় সবাই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। তার বাবাও একজন কৃষক। তাদের সব ধরনের ফসল চাষ করে। তার মতে, কম খরচে অধিক ফসল পাওয়া যায়। চরে বেশি চাষ হয় ভু্ট্টা। ভুট্টা চাষে ভালো লাভ পান চরের কৃষকরা।রাজীব মিয়া(২৩) নামের এক কৃষক জানালেন, এবার তিনি চরে তিন বিঘা ভুট্টা, দুই বিঘা মাষকালাই ও ১৫ শতাংশ কালো জিরা চাষ করেছেন।এখানকার মানুষদের প্রধান পেশা কৃষি কাজ। প্রতিবছর তারা কৃষি কাজে ভালো লাভ পান। বাড়িতে গবাদিপশু পালন করেও লাভ পেয়ে থাকেন । বর্ষাকালে কৃষি ফসল, কাজ থাকে না বিধায় এ মৌসুমে কৃষি ফসলের সাথে বাড়িতে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, ভেড়া ও ঘোড়া পালন করেন। তবে বর্ষার আগেই গবাদিপশু বিক্রি করে দিতে হয়।স্থানীয় চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব জানালেন, চরের কৃষকদের সরকারি কৃষি সেবা প্রণোদনা দেয়া হয়ে থাকে । তবে সবাই পান না। চরের মাটি উর্বর হওয়ার কারণে সোনা ফলে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ঘোড়ার গাড়ি আর মাথা করে চরের ফসল বাড়িতে উঠাতে হয়।ভুইয়াপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, চরাঞ্চলে কিছু কিছু ফসলের জন্য বিশেষ উপযোগী। বাদাম, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, মরিচসহ অন্যান্য ফসল ভালো জন্মে। বন্যায় চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পলি পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই ভালো ফলন হয়ে থাকে।
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৩৫ এএম
হাবিবুর রহমান, যমুনার চর থেকে ফিরে: টাঙ্গাইলের ভুইয়াপুর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন অর্জুনা আর গাবসারা। চারদিকে যমুনা নদী বেষ্টিত ইউনিয়ন দুটিতে মানুষ বসতি গড়েছে অনেক আগেই। বর্ষায় থাকে থৈথৈ জল আর জল। নৌকায় এপার-ওপার যাতায়াত এ জনপদের মানুষের। আর শুকনো মৌসুমে চরাঞ্চলের উর্বর মৃত্তিকায় মাঠ ভরে যায় নানা ফসলে। যেন সবুজের বৈচিত্র্যময় সমারোহ চারদিকে।শুকনো মৌসুমে চরে ভুট্টা, বাদাম, আলু, মাসকালাই, মরিচ, মূলা, শিম, লাউ, জিরা, পেঁয়াজ, রসুন, গম, কাউন, গবাদিপশুর খাদ্য ঘাসসহ নানা ফসলে ছেয়ে আছে মাঠ। চরের বাড়িগুলো যেন ছোট ছোট খামার। প্রতিটি বাড়ির আঙিনা আর পালানে সবজি চাষ, গরু-ছাগল পালন করা হয় এখানে। চরের নারী-পুরুষ সমান তালে মাঠ ঘাটে কাজ করে।ভুইয়াপুরের অর্জুনা আর গাবসারা দুটি ইউনিয়নই চর এলাকায়। স্থানীয়রা চরাঞ্চল হিসেবেই চিনে থাকে। এ সব চর বহু পুরানো। ভাঙা-গড়ার খেলার মতো একপাশ ভাঙে আরেক পাশ গড়ে। একবার এখানে চর, আরেকবার সরে যায় অন্যদিকে। তাই চরের জমি জমা নিয়েও অনেক সময় ঝগড়া-বিবাদ হয়। দখল নিয়ে দেখা দেয় বিরোধ-বিবাদ। পলি পড়ার কারণে চরের জমি খুবই উর্বর হয়। যা ফসলের জন্য যেন সৃষ্টি কর্তার আর্শীবাদ।চরের উর্বর জমিতে কৃষকের চাষ করা ভুট্টা, বাদাম, আলু, মাসকালাই, মরিচ, মূলা, শিম, লাউ, জিরা, পেঁয়াজ, রসুন, গম, কাউন, গবাদিপশুর খাদ্য ঘাসসহ নানা ফসলে ছেয়ে আছে মাঠ।কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের রবি মৌসুমে ভুইয়াপুর উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছে ৩৫৭০ হেক্টর। এর মধ্যে উফসী২৫৯৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৯৭৫ হেক্টর। ভুট্টা ২৮৫১ হেক্টর, চিনাবাদাম ১৩২০ হেক্টর, মুসুর ৫২২, খেসারি ১০১২ হেক্টর, কালোজিরা ১০ হেক্টর, মিষ্টি আলু ৫৭ হেক্টর, মরিচ ৮৫ হেক্টর, শাকসবজি ৪৭০ হেক্টর, পেয়াজ ৫২ হেক্টর, আলু ৩৮ হেক্টর, রসুন ৩৪ হেক্টর, ধনিয়া ২৪ হেক্টর, গম ৪৮০ হেক্টর, মাষকালাই ১২২৪ ও রোপা আমন ৬১১৫ হেক্টর।সরজমিনে অর্জুনা আর গাবসারা ইউনিয়নে গিয়ে জানা যায়, চরাঞ্চলের কৃষি ফসল চাষের নানা কথা। নলিন থেকে নৌকা যমুনা নদী পার হলে চরশুশুয়া গ্রাম। নদীর পাড় উঠে দেখা যায়, সবুজ আর সবুজ। দুই পাশে শস্য ভান্ডার মাঝ খানে মেঠো পথ। ডানপাশে মাষকালাই বাম পাশে ভুট্টার সমাহার। সামনে এগিয়ে দেখা আহাম্মদ খান (৫৫)আলী নামের এক কৃষকের সাথে। তার হাতে কাস্তে আর রশি। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, তাদের এলাকার নাম ভিন্ন ভিন্ন চরের নামে। এসব চরে এ সময়ে গম,ভুট্টা, সজ, সবজি, মরিচ, মূলা, ধান, শিম, লাউসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। তিনি হাত দিয়ে দূরে দেখালেন, ওই চরে তার ২ বিঘা মরিচের চাষ আছে। এখানে তার মাষকালাই তিন বিঘা, ধান দেড় বিঘা, ৫ বিঘা ভুট্টার আবাদ। এখন মাষকালাই তোলার জন্য এসেছেন। তিনি জানালেন, চরে চাষ করতে তেমন সার লাগে না। অল্প খরচে অধিক ফসল পাওয়া যায়।চর শুশুয়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় সরকারি ইবরাহীম খা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমানের সাথে। তিনি জানালেন, এ চরের প্রায় সবাই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। তার বাবাও একজন কৃষক। তাদের সব ধরনের ফসল চাষ করে। তার মতে, কম খরচে অধিক ফসল পাওয়া যায়। চরে বেশি চাষ হয় ভু্ট্টা। ভুট্টা চাষে ভালো লাভ পান চরের কৃষকরা।রাজীব মিয়া(২৩) নামের এক কৃষক জানালেন, এবার তিনি চরে তিন বিঘা ভুট্টা, দুই বিঘা মাষকালাই ও ১৫ শতাংশ কালো জিরা চাষ করেছেন।এখানকার মানুষদের প্রধান পেশা কৃষি কাজ। প্রতিবছর তারা কৃষি কাজে ভালো লাভ পান। বাড়িতে গবাদিপশু পালন করেও লাভ পেয়ে থাকেন । বর্ষাকালে কৃষি ফসল, কাজ থাকে না বিধায় এ মৌসুমে কৃষি ফসলের সাথে বাড়িতে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, ভেড়া ও ঘোড়া পালন করেন। তবে বর্ষার আগেই গবাদিপশু বিক্রি করে দিতে হয়।স্থানীয় চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব জানালেন, চরের কৃষকদের সরকারি কৃষি সেবা প্রণোদনা দেয়া হয়ে থাকে । তবে সবাই পান না। চরের মাটি উর্বর হওয়ার কারণে সোনা ফলে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ঘোড়ার গাড়ি আর মাথা করে চরের ফসল বাড়িতে উঠাতে হয়।ভুইয়াপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, চরাঞ্চলে কিছু কিছু ফসলের জন্য বিশেষ উপযোগী। বাদাম, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, মরিচসহ অন্যান্য ফসল ভালো জন্মে। বন্যায় চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পলি পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই ভালো ফলন হয়ে থাকে।
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৩৫ এএম
হাবিবুর রহমান, যমুনার চর থেকে ফিরে: টাঙ্গাইলের ভুইয়াপুর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন অর্জুনা আর গাবসারা। চারদিকে যমুনা নদী বেষ্টিত ইউনিয়ন দুটিতে মানুষ বসতি গড়েছে অনেক আগেই। বর্ষায় থাকে থৈথৈ জল আর জল। নৌকায় এপার-ওপার যাতায়াত এ জনপদের মানুষের। আর শুকনো মৌসুমে চরাঞ্চলের উর্বর মৃত্তিকায় মাঠ ভরে যায় নানা ফসলে। যেন সবুজের বৈচিত্র্যময় সমারোহ চারদিকে।শুকনো মৌসুমে চরে ভুট্টা, বাদাম, আলু, মাসকালাই, মরিচ, মূলা, শিম, লাউ, জিরা, পেঁয়াজ, রসুন, গম, কাউন, গবাদিপশুর খাদ্য ঘাসসহ নানা ফসলে ছেয়ে আছে মাঠ। চরের বাড়িগুলো যেন ছোট ছোট খামার। প্রতিটি বাড়ির আঙিনা আর পালানে সবজি চাষ, গরু-ছাগল পালন করা হয় এখানে। চরের নারী-পুরুষ সমান তালে মাঠ ঘাটে কাজ করে।ভুইয়াপুরের অর্জুনা আর গাবসারা দুটি ইউনিয়নই চর এলাকায়। স্থানীয়রা চরাঞ্চল হিসেবেই চিনে থাকে। এ সব চর বহু পুরানো। ভাঙা-গড়ার খেলার মতো একপাশ ভাঙে আরেক পাশ গড়ে। একবার এখানে চর, আরেকবার সরে যায় অন্যদিকে। তাই চরের জমি জমা নিয়েও অনেক সময় ঝগড়া-বিবাদ হয়। দখল নিয়ে দেখা দেয় বিরোধ-বিবাদ। পলি পড়ার কারণে চরের জমি খুবই উর্বর হয়। যা ফসলের জন্য যেন সৃষ্টি কর্তার আর্শীবাদ।চরের উর্বর জমিতে কৃষকের চাষ করা ভুট্টা, বাদাম, আলু, মাসকালাই, মরিচ, মূলা, শিম, লাউ, জিরা, পেঁয়াজ, রসুন, গম, কাউন, গবাদিপশুর খাদ্য ঘাসসহ নানা ফসলে ছেয়ে আছে মাঠ।কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের রবি মৌসুমে ভুইয়াপুর উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছে ৩৫৭০ হেক্টর। এর মধ্যে উফসী২৫৯৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৯৭৫ হেক্টর। ভুট্টা ২৮৫১ হেক্টর, চিনাবাদাম ১৩২০ হেক্টর, মুসুর ৫২২, খেসারি ১০১২ হেক্টর, কালোজিরা ১০ হেক্টর, মিষ্টি আলু ৫৭ হেক্টর, মরিচ ৮৫ হেক্টর, শাকসবজি ৪৭০ হেক্টর, পেয়াজ ৫২ হেক্টর, আলু ৩৮ হেক্টর, রসুন ৩৪ হেক্টর, ধনিয়া ২৪ হেক্টর, গম ৪৮০ হেক্টর, মাষকালাই ১২২৪ ও রোপা আমন ৬১১৫ হেক্টর।সরজমিনে অর্জুনা আর গাবসারা ইউনিয়নে গিয়ে জানা যায়, চরাঞ্চলের কৃষি ফসল চাষের নানা কথা। নলিন থেকে নৌকা যমুনা নদী পার হলে চরশুশুয়া গ্রাম। নদীর পাড় উঠে দেখা যায়, সবুজ আর সবুজ। দুই পাশে শস্য ভান্ডার মাঝ খানে মেঠো পথ। ডানপাশে মাষকালাই বাম পাশে ভুট্টার সমাহার। সামনে এগিয়ে দেখা আহাম্মদ খান (৫৫)আলী নামের এক কৃষকের সাথে। তার হাতে কাস্তে আর রশি। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, তাদের এলাকার নাম ভিন্ন ভিন্ন চরের নামে। এসব চরে এ সময়ে গম,ভুট্টা, সজ, সবজি, মরিচ, মূলা, ধান, শিম, লাউসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। তিনি হাত দিয়ে দূরে দেখালেন, ওই চরে তার ২ বিঘা মরিচের চাষ আছে। এখানে তার মাষকালাই তিন বিঘা, ধান দেড় বিঘা, ৫ বিঘা ভুট্টার আবাদ। এখন মাষকালাই তোলার জন্য এসেছেন। তিনি জানালেন, চরে চাষ করতে তেমন সার লাগে না। অল্প খরচে অধিক ফসল পাওয়া যায়।চর শুশুয়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় সরকারি ইবরাহীম খা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমানের সাথে। তিনি জানালেন, এ চরের প্রায় সবাই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। তার বাবাও একজন কৃষক। তাদের সব ধরনের ফসল চাষ করে। তার মতে, কম খরচে অধিক ফসল পাওয়া যায়। চরে বেশি চাষ হয় ভু্ট্টা। ভুট্টা চাষে ভালো লাভ পান চরের কৃষকরা।রাজীব মিয়া(২৩) নামের এক কৃষক জানালেন, এবার তিনি চরে তিন বিঘা ভুট্টা, দুই বিঘা মাষকালাই ও ১৫ শতাংশ কালো জিরা চাষ করেছেন।এখানকার মানুষদের প্রধান পেশা কৃষি কাজ। প্রতিবছর তারা কৃষি কাজে ভালো লাভ পান। বাড়িতে গবাদিপশু পালন করেও লাভ পেয়ে থাকেন । বর্ষাকালে কৃষি ফসল, কাজ থাকে না বিধায় এ মৌসুমে কৃষি ফসলের সাথে বাড়িতে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, ভেড়া ও ঘোড়া পালন করেন। তবে বর্ষার আগেই গবাদিপশু বিক্রি করে দিতে হয়।স্থানীয় চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব জানালেন, চরের কৃষকদের সরকারি কৃষি সেবা প্রণোদনা দেয়া হয়ে থাকে । তবে সবাই পান না। চরের মাটি উর্বর হওয়ার কারণে সোনা ফলে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ঘোড়ার গাড়ি আর মাথা করে চরের ফসল বাড়িতে উঠাতে হয়।ভুইয়াপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, চরাঞ্চলে কিছু কিছু ফসলের জন্য বিশেষ উপযোগী। বাদাম, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, মরিচসহ অন্যান্য ফসল ভালো জন্মে। বন্যায় চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পলি পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই ভালো ফলন হয়ে থাকে।
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৩৫ এএম