প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৩:৩০ এএম
যেভাবে বর্তমান শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছিল
ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি: ১৯৫২ সালের ২১ ফ্রেব্রুয়ারি সকালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের হয়। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে সেদিনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, জব্বার ও শফিউরসহ আরও অনেকে। সেদিন ভাষাশহীদ আবুল বরকত পুলিশের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। তার পেটের নিচ দিয়ে রক্তক্ষরণ থাকা অবস্থায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাড়িতে খবর দেবেন। আমার নাম আবুল বরকত।’ বাঙালি জাতি আবুল বরকতের এ আহ্বান ভুলিনি, ভাষাশহীদের স্মরণে তৈরি করেছে শহীদ মিনার, তাদের ত্যাগের গুরুত্বকথা ছড়িয়ে গেছে বিশ্বব্যাপী।
১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ভাষাশহীদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ নির্মাণ করা হয়। স্মৃতিস্তম্ভের নাম দেওয়া হয় শহীদ মিনার। শহীদদের জানাযায় যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠি অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে, তখন ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনে তাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির কথা চিন্তা করে শিক্ষার্থীরা। পরে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেল সংলগ্ন যেখানে রফিকউদ্দিন শহীদ হন, সে স্থানটিতে সাদামাটাভাবে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। জিএস শরফুদ্দিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্মাণকাজ এক রাতের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। তখনকার শহীদ মিনারের উচ্চতা ছিল ১০ ফুট এবং প্রস্থ ছিল ৬ ফুট। পরেরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে শহীদ শফিউরের পিতা উক্ত শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন।
এর দুইদিন পরে ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য ও দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে এ স্মৃতিস্তম্ভটি ছাত্র-জনতার নিকট আদর্শ ও সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠে। কিন্তু ২৭ ফ্রেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পাকিস্তান আর্মি ছাত্রাবাস ঘেরাও করে শহীদ মিনারটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। তখন উক্ত স্থানটি ছাত্ররা কালো কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখে এবং প্রতিবছর সেখানে ২১ ফেব্রুয়ারির দিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে থাকে।
এরপর ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার প্রাদেশিক ক্ষমতা গ্রহণ করলে মুখ্যমন্ত্রী আবুল হোসেন সরকার, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পৃষ্ঠপোষকতায় শহীদ মিনার পুননির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। পরে ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক সরকারের সহযোগিতায় শিল্পী হামিদুর রহমানের ও স্থপতি নভেরা আহমেদের পরিকল্পনা ও নকশা অনুযায়ী নতুন শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু হয়। নানামুখী বাধা বিপত্তির মধ্যে দিয়ে তাদের দিনরাত পরিশ্রম ও তত্ত্বাবধানে শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।
নবনির্মিত শহীদ মিনারের মাঝখানে রক্তের মতো লাল বর্ণের বৃত্ত এবং দুইপাশে ২টি করে মোট চারটি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। পাশের চারটি স্তম্ভ দ্বারা ৪ জন ভাষাশহীদ এবং মধ্যখানে বৃত্ত সংবলিত উপর থেকে নিচের দিকে হালকা বাঁকানো স্তম্ভটি মায়ের কাছ থেকে পাওয়া বাংলা ভাষার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা, ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বোঝানো হয়েছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেই শহীদ মিনারটি আবারো ভেঙ্গে দেয়। এরপর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে শিল্পী হামিদুর রহমানের পূর্বের নকশা অনুযায়ী শহীদ মিনার পুননির্মাণ করা হয়।
ভাষাসৈনিক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৭২ সালে আমরা ওই ভাঙ্গা শহীদ মিনারের ওপরেই শহীদ দিবস পালন করি । উনিশশো তিয়াত্তর সালে আবার শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেখানে পুরনো নকশার অনেক কিছুই আর যোগ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৩ সালে শহীদ মিনারের চত্বর বিস্তৃত করে বর্তমান অবস্থায় আনা হয়।
...
প্রকাশ : ১ বছর আগে
আপডেট : ৪ মাস আগে
যেভাবে বর্তমান শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছিল